love this
তখন বয়সটা বোধ হয় পাঁচ ছয় হবে। জমজ বোন আমরা দুজন, সোহানী ও বনানী। বাবার চাকরী সুত্রে হরিয়ান সুগার মিলের কোয়াটারে থাকতাম। আমি খুবই চঞ্চল ছিলাম। আমাদের পরে একটা ভাই ছিল, নাম কংকন। আম্মা একদিন আব্বাকে বললেন ওদের স্কুলে ভর্তি করে দাও। বাসায় খুব বিরক্ত করছে। হরিয়ান সুগারমিল স্কুলে ভর্তি হলাম। আমাকে আর পায় কে? অফুরন্ত প্রাণের আনন্দে বেণী দুলিয়ে, গালে টোল ফেলে সেকি দুরন্তপনা। আমরা দুজনই ক্লাসে প্রথম, দ্বিতীয়ের মধ্যেই থাকতাম। আমার বোন বনানী খুবই শান্ত স্বভাবের ছিল। সারাদিন বই নিয়ে ব্যাস্ত আর আমাকে শাসন, এই ছিল ওর কাজ। এক পরীক্ষার ফলাফলের সময়ে আমাদের নাম ঘোষনা করা হলো। সুগারমিলের ম্যানেজার ছিলেন প্রধান অতিথী। আমার আম্মা গল্প, উপন্যাস খুব ভালো লিখতেন, সেই জন্যই আমাদের নামগুলো ছিল ব্যতিক্রম। আমার ভালো নাম তরঙ্গ লাজ বন্তী (সোহানী), আর বোনের নাম তটিনী লাজ বন্তী (বনানী)। নাম ঘোষনার সাথে সাথেই সুগারমিলের ম্যানেজার কটাক্ষ্য করে বললেন এ কি ধরনের নাম। এরা কি খ্রীষ্টান! প্রধান শিক্ষককে নাম বদলাতে বললেন, নাম না বদলালে স্কুল থেকে বের করে দিতে বললেন। আমার বাবা ম্যানেজারকে বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন । মাসটা ছিল ফেব্রয়ারী, আম্মাকে ঘটনাটা বলতেই প্রচন্ড রাগান্বিত হয়ে কাগজ কলম নিয়ে বসলেন। তখন রাজশাহী থেকে দৈনিক বার্তা পত্রিকা বের হতো। “সুমন-ইমন” এর ইতিকথা নামে একটা লিখা লিখে আব্বার হাতে দিলেন । তখন ঔ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন আহমেদ জামান চৌধুরী । আব্বাকে বললেন এই লিখাটা উনাকে দিয়ে এসো। উনি পড়লেই বুঝতে পারবেন।
কয়েকদিন পরে আব্বা একটা দৈনিক বার্তা পত্রিকা হাতে নিয়ে, উচ্ছসিত হয়ে আম্মাকে দেখালেন। দেখো দেখো কত বড় করে তোমার লিখাটা ছেপেছেন সম্পাদক।আম্মার মুখে গর্বের হাসি। আম্মা বললেন এবার বুঝবে ম্যানেজার, বাংলা ভাষা নিয়ে কটুক্তি করার ফল। ঠিক কিছুদিন পর আব্বা এসে বললেন, কল্পনা (আম্মার নাম) খুবই ভাল খবর আছে। ম্যানেজার কে বদলী করে দিয়েছে সম্ভবত চাকুরীও চলে যাবে।
আজ এই ভাষার মাসে হঠাৎই কথা গুলো মনে পড়ে গেল।