সিচুয়েশান যতো প্রতিকূলই হোক না কেনো, দ্বীনের দাওয়াত থেকে যেন আমরা কোনভাবেই গাফেল না হই

in #islam6 years ago

এক দেশের এক ইমামের কথা। ইমামের বড় ছেলেটার বয়স দশ বছর। ইমাম সাহেব করতো কী, প্রতি জুমা’বার দিন, জুমার পরে তাঁর দশ বছরের ছেলেটাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন দাওয়া’র কাজে। বাবা-ছেলে মিলে রাস্তায় হেঁটে হেঁটে, মানুষের বাসায় গিয়ে গিয়ে তারা ইসলামিক বইপত্র, ম্যাগাজিন বিলি করতো। সেসব বইপত্রে আল্লাহর পরিচয়, সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর অপার অনুগ্রহ, রহমত ইত্যাদির বর্ণনা থাকতো।

তখন শীতকাল। দেশে তুষারবৃষ্টি হচ্ছে। যেহেতু প্রতি জুমা’বারেই তারা দাওয়া’র কাজে বের হয়, সেদিনও তাদের বের হবার কথা।
ছোট্ট ছেলেটা শীতের গরম কাপড়-চোপড় পরিধান করে, কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে তাঁর বাবার কাছে এসে বললো,- ‘আব্বু, আমি রেডি...’

যেহেতু বাইরে তীব্র তুষারপাত, তাই ইমাম সাহেব ঠিক করে রেখেছিলেন যে আজ তিনি দাওয়া’র কাজে বের হবেন না। কিন্তু ছেলেকে এভাবে প্রস্তুত দেখে জিজ্ঞেস করলেন,- ‘কোথায় যাবে?’
ছেলেটা অবাক হয়ে বললো,- ‘আব্বু, আজকে তো দাওয়া’র কাজে বের হবার দিন। মনে নেই তোমার?’
বাবা বললেন,- ‘সোনা, আজকে বাইরে খুব বেশিই ঠান্ডা। দেখছো না বাইরে তুষার বৃষ্টি হচ্ছে?’
ছেলে বাবার দিকে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো। বললো,- ‘আব্বু, বৃষ্টি হচ্ছে বলে কী মানুষ জাহান্নামে যাওয়া থেকে মুক্ত হয়ে গেছে?’
ছেলের গাম্ভীর্যপূর্ণ প্রশ্নে বাবা কপাল কুঁচকালেন। বললেন,- ‘দেখো, আজকে আমি বের হচ্ছিনা, ব্যস! আর কিছু বলবে?’

বাবার এই কথার বিপরীতে ছোট্ট ছেলেটা বললো,- ‘আব্বু, আজ তুমি দাওয়া’র কাজে যেতে না চাইলে যেওনা। তবে, আমি কী যেতে পারি?’
বাবা কিছুটা অবাক হলেন। হালকা ইতস্ততবোধ করলেন। এরপর বললেন,- ‘ঠিক আছে। যাও। ওইদিকে দাওয়া’র বই এবং ম্যাগাজিনগুলো রাখা আছে। ব্যাগে নিয়ে নাও। আর শোন, সাবধানে যেও কিন্তু। খুব বেশিক্ষণ বাইরে থেকো না। দেখতেই পাচ্ছো বাইরের আবহাওয়া খারাপ...’

ছেলেটা মনোযোগ দিয়ে বাবার কথাগুলো শুনলো। টেবিলে রাখা বইপত্র এবং ম্যাগাজিনগুলো ব্যাগে ভরে নিয়ে বাবাকে সালাম দিয়ে বেরিয়ে পড়লো দাওয়া’র কাজে। আজ তার সাথে তার বাবা নেই। আজ সে একা।

এরকম তুষারপাতের মধ্যে রাস্তায় হেঁটে হেঁটে সে দাওয়াতের বই এবং লিফলেটগুলো বিলাতে লাগলো মানুষের কাছে। যাকেই পাচ্ছে, তার হাতে একটি করে কপি ধরিয়ে দিচ্ছে।
এভাবে কাটলো দুই ঘণ্টা। বরফ, শীত আর ঠান্ডা হাওয়ায় ছেলেটার শরীর যেন জমে আসছে। হাত-পা অবশ হয়ে আসার মতো অবস্থা। এই মূহুর্তে তার হাতে আর মাত্র একটি বই। কিন্তু, দেওয়ার মতো কাউকেই সে রাস্তায় খুঁজে পাচ্ছে না। রাস্তায় কেউ আর অবশিষ্ট নেই বললেই চলে।
সে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলো। যদি কেউ একজন আসে। কিন্তু না। কেউই এলো না।
সে মোড় ঘুরে যেই দিকে ফিরলো, তার সোজাসুজি একটা বাসা দেখা যাচ্ছে। সেই বাড়িটার কাছে এসে দাঁড়ালো সে। শীতে তখন সে থরথর করে কাঁপছে। সে বাসাটার কলিংবেল বাজালো। একবার... দুইবার... তিনবার...।
উহু। কারো কোন সাড়াশব্দ নেই। সে আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো। আরো কয়েকবার কলিংবেল বাজালো। দরজায় কড়া নাড়লো। কিন্তু কোন সাড়া শব্দই মিললো না। হতাশ হয়ে সে চলে আসার জন্য সামনে পা বাড়ালো। কিন্তু, কী এক অদ্ভুত টানে যেন সে আবার কলিংবেলটার কাছে এলো। এসে আবার সে কলিংবেলটা বাজাতে লাগলো এবং দরজায় ধাক্কা দেওয়া শুরু করলো। তার কেন যেন মনে হচ্ছে, ভেতরে কেউ আছে।

একটুপরে, ভিতর থেকে আস্তে করে দরজাটা কেউ একজন খুললো। ছেলেটা দেখলো, তার সামনে একজন মধ্য বয়স্কা ভদ্র মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। মহিলাকে দেখেই ছেলেটা ফিক করে হেসে দিলো। যেন শীতে শরীর জমে যাওয়ার সমস্ত কষ্ট সে মূহুর্তেই ভুলে গেছে।
মহিলার দিকে তাকিয়ে ছেলেটা হাসি হাসি মুখ করে বললো,- ‘আন্টি, আপনাকে বিরক্ত করার জন্য খুবই দুঃখিত আমি। আসলে, আমি আপনাকে যে কথাটা জানাতে এসেছি সেটা হলো, আর কেউ আপনাকে ভালো বাসুক বা না বাসুক, পৃথিবীর আর কেউ আপনার কেয়ার করুক বা না করুক, আপনার খোঁজ করুক বা না করুক, আমাদের রব, মহান আল্লাহ সুবাহান ওয়া’তালা আপনাকে ভালোবাসেন। আপনার কেয়ার করেন এবং আপনার প্রতি তিনি অবশ্যই রহমশীল। এই যে দেখুন, আমার হাতে থাকা এটিই শেষ বই। এই বইটি পড়লে আপনি আপনার রবের ব্যাপারে জানতে পারবেন। নিন, এই যে ধরুন...!’
মহিলা মুখ ফুটে কিছুই বললো না। ছেলেটা মহিলার হাতে বইটি দিয়েই দৌঁড় দিলো।

পরের জুমা’বার। ইমাম সাহেব নামাজের পর খুচরা বক্তব্য দিলেন। এরপর প্রতিবারের ন্যায় জিজ্ঞেস করলেন,- ‘কারো কী কোন ব্যাপারে কোন জিজ্ঞাসা আছে?’
মহিলাদের সাইড থেকে হিজাবে আবৃত একজন মধ্য বয়স্কা মহিলা স্পীকারের সামনে দাঁড়ালেন। তিনি সালাম দিয়ে বললেন,- ‘এখানে যারা যারা আছেন, তাদের কেউই আমাকে আমাকে চিনেন না। চেনার কথাও না। গত জুমা’বার অবধিও আমি ছিলাম একজন অমুসলিম। আমার স্বামী বছর দু’য়েক আগে মারা যায়। স্বামী মারা যাবার পর আমার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে উঠে। আমার আপনজনরাই আমাকে পর করে দেয়। আমাকে সবকিছু থেকে বঞ্চিত করে। আমার দুনিয়াটা এতোই বিষাদময় হয়ে উঠেছে যে, আমার মনে হচ্ছিলো আমি জীবিত থেকেও মৃত। সিদ্ধান্ত নিলাম- আত্মহত্যা করবো।
দরজা বন্ধ করে, ফ্যানের সাথে দড়ি ঝুলিয়ে তখন আমি আত্মহত্যার জন্য সবরকম প্রস্তুতি সেরে ফেলেছি। একটু পরেই আমি বিদায় নিবো এই নিষ্ঠুর পৃথিবী থেকে, যে পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই, কেউ না।
যেই আমি চেয়ারে উঠে আত্মহত্যার জন্য চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে যাবো, অমনি হঠাৎ আমার বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো। সিদ্ধান্ত নিলাম- দরজা খুলবো না। কিন্তু খেয়াল করলাম, আমার কলিংবেলটা অনর্গল বেজেই চলছে, বেজেই চলছে। কোন থামাথামি নেই। একটু পর দরজা ধাক্কার শব্দ পেলাম। ভাবলাম, কে হতে পারে? সাতপাঁচ ভেবে এসে দরজা খুললাম। দরজা খুলতেই দেখি, একটি ফুটফুটে ফেরেশতার মতো ছোট্ট ছেলে আমার দরজার বাইরে দাঁড়ানো। আমি বুঝতে পারছিলাম বাইরের হাঁড় কাপানো কনকনে ঠান্ডায় সে খুব কষ্ট পাচ্ছে। তবুও, আমাকে দেখে সে মিষ্টি একটা হাসি দিলো। এরপর বললো,- ‘আন্টী, পৃথিবীর কেউ আপনাকে ভালো না বাসলেও, একজন আছেন যিনি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসেন। আপনার কেয়ার করেন’। এরপর আমার হাতে একটি বই ধরিয়ে দিয়ে সে বিদায় নিলো।

সে চলে যাবার পরে আমি বইটি হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকলাম। আমার টাঙানো দড়ি তখনও ফ্যানের সাথে ঝুলছিলো। আমি আগ্রহবশঃত বইটা উল্টালাম। খুব মনোযোগ দিয়ে বইটির প্রথম পাতা থেকে শেষ পাতা পর্যন্ত পড়ে ফেললাম।এরপর?
এরপর আমি লাথি দিয়ে আমার আত্মহত্যার জন্য প্রস্তুত করা চেয়ারটাকে ভেঙে ফেললাম। হেঁচকা টানে ফ্যান থেকে দড়িটা ছিঁড়ে নিলাম। সেসবের আমার আর দরকার নেই। কারণ- খুব ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট উপকরণের সন্ধান ততোক্ষণে আমি পেয়ে গেছি। সেদিনই আমি কালেমা পাঠ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি।
মহিলা বলে যেতে লাগলো,- ‘মুহতারাম! ছোট্ট ছেলেটার দিয়ে যাওয়া বইটার পেছনে আমি এই মসজিদের ঠিকানাটা পেয়েছি। তাই আজ এখানে ছুটে এসেছি আমি। আমি কেবল সেই ছোট্ট ছেলেটাকে একবার কপালে চুমু খেয়ে একটা ধন্যবাদ দিতে চাই, এজন্য যে, একদম ঠিক সময়ে, সবকিছু শেষ হয়ে যাবার ঠিক একটু আগেই সে আমাকে চিরস্থায়ী জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে দিলো...’

ঘটনা শুনে উপস্থিত জনতা ‘হু হু’ করে কাঁদতে শুরু করলো। ইমাম সাহেবের সামনের আসনেই ছোট্ট ছেলেটা বসে ছিলো। ইমাম সাহেব অঝোর ধারায় কান্না শুরু করলেন এবং সামনে বসে থাকা তাঁর দশ বছরের ছোট্ট ছেলেটাকে কোলে নিয়ে চুমু খেতে লাগলেন। মনে হচ্ছে, এমন গর্বিত পিতা বোধকরি পৃথিবীতে আর একটিও নেই...

[গল্পটি একটি ইংরেজি সাইট থেকে অনুবাদ করলাম। সত্যাসত্য জানিনা। গল্পের ম্যাসেজটা ভালো লাগলো, তাই অনুবাদ করে ফেললাম।]

Sort:  

Congratulations @faysal-ahmmed! You have completed the following achievement on Steemit and have been rewarded with new badge(s) :

Award for the number of upvotes received

Click on the badge to view your Board of Honor.
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP

Do not miss the last post from @steemitboard:
SteemitBoard World Cup Contest - Quarter Finals - Day 2


Participate in the SteemitBoard World Cup Contest!
Collect World Cup badges and win free SBD
Support the Gold Sponsors of the contest: @good-karma and @lukestokes


Do you like SteemitBoard's project? Then Vote for its witness and get one more award!

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.028
SBD 2.34