💝সাহাবী আলী ও তাঁর ছোট্ট মসজিদ💝

💝আলী ও তার মনের তৃষ্ণা💝

একবারের কথা, মরুভূমির এক প্রান্তে একটি ছোট গ্রাম ছিল যার নাম মদিনাত আল-নুর। এই গ্রামে ছিল একটি ছোট মসজিদ, যা গ্রামবাসীদের জন্য প্রশান্তির স্থল ছিল। মসজিদটি খুবই পুরনো ছিল এবং অনেক বছর আগে গ্রামের প্রথম বাসিন্দারা সেটি তৈরি করেছিলেন। মসজিদের ইমাম ছিলেন হযরত আবদুল্লাহ, একজন দয়ালু ও জ্ঞানী ব্যক্তি যিনি গ্রামের সকলের শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন।

এই গ্রামে ছিল এক ছোট্ট ছেলে, যার নাম ছিল আলী। আলী ছিল মাত্র দশ বছর বয়সী, কিন্তু তার মন ছিল জ্ঞানের তৃষ্ণায় পরিপূর্ণ। সে প্রায় প্রতিদিন মসজিদে যেত এবং ইমাম আবদুল্লাহর কাছ থেকে কুরআন এবং হাদিস সম্পর্কে শিখত। আলীর সবচেয়ে প্রিয় সময় ছিল যখন ইমাম আবদুল্লাহ মসজিদে বসলেন এবং কুরআন থেকে আয়াত তিলাওয়াত করতেন।

দ্বিতীয় অধ্যায়: আলীর নতুন দায়িত্ব

একদিন, ইমাম আবদুল্লাহ আলীকে ডেকে বললেন, "আলী, তুমি খুবই মনোযোগী এবং জ্ঞানী হয়ে উঠছ। আমি চাই তুমি এই মসজিদের খিদমত কর এবং এর পরিচ্ছন্নতা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ কর।"

আলী খুব খুশি হল এবং বলল, "ইমাম সাহেব, আমি খুবই গর্বিত এবং আনন্দিত যে আপনি আমাকে এই দায়িত্ব দিলেন। আমি অবশ্যই এই দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।"

আলী প্রতিদিন সকালে উঠে মসজিদের ভিতর এবং বাইরের অংশ পরিষ্কার করত। সে দেখতে পেত গ্রামের মানুষরা মসজিদে এসে নামাজ পড়ছে এবং তাদের প্রশান্ত মুখ দেখে আলীর মন পূর্ণ হয়ে যেত।

তৃতীয় অধ্যায়: আকাশে নতুন আলোর সূচনা

একদিন, যখন আলী মসজিদের আঙিনা পরিষ্কার করছিল, তখন একটি বৃদ্ধ লোক এসে মসজিদের সামনে দাঁড়াল। লোকটি খুবই ক্লান্ত এবং পিপাসার্ত দেখাচ্ছিল। আলী তৎক্ষণাৎ দৌড়ে গিয়ে একটি পানির পাত্র নিয়ে এল এবং লোকটিকে পানি দিল। বৃদ্ধ লোকটি আলীর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল, "আল্লাহ তোমার উপর রহম করুন, বাছা। তুমি খুবই দয়ালু এবং মেহেরবান।"

আলী হেসে বলল, "এটি আমার কর্তব্য, দাদু। আল্লাহ আমাদের সকলকে পরস্পরের সাহায্য করার নির্দেশ দিয়েছেন।"

বৃদ্ধ লোকটি আলীকে জিজ্ঞাসা করল, "তুমি কি জানো আল্লাহ আমাদের কেন সাহায্য করতে বলেছেন?"

আলী কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, "ইমাম আবদুল্লাহ বলেছেন যে আল্লাহ আমাদের ভালো কাজ করতে বলেছেন যাতে আমরা তাঁর কাছ থেকে পুরস্কার পাই এবং আমাদের জীবন শান্তিতে ভরে যায়।"

চতুর্থ অধ্যায়: আলীর স্বপ্ন

আলী প্রতিদিন ইমাম আবদুল্লাহর কাছ থেকে নতুন কিছু শিখত এবং তার মন আরও উদ্দীপিত হত। সে ভাবত, কিভাবে সে আরও বড় কিছু করতে পারে যা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে। একদিন রাতে, আলী স্বপ্ন দেখল যে সে একটি বিশাল মসজিদ তৈরি করছে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ একসাথে নামাজ পড়ছে এবং কুরআন তিলাওয়াত করছে।

সকালে উঠে আলী ইমাম আবদুল্লাহর কাছে গেল এবং তার স্বপ্নের কথা বলল। ইমাম আবদুল্লাহ হেসে বললেন, "আলী, স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য পরিশ্রম করতে হবে এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে। আল্লাহ সবসময় তাঁর বান্দার সহায়ক হন যদি সে সত্যিকারভাবে চেষ্টা করে।"

পঞ্চম অধ্যায়: আলীর নতুন উদ্যোগ

আলী সিদ্ধান্ত নিল যে সে একটি নতুন মসজিদ তৈরি করবে যেখানে গ্রামের সকল মানুষ আসতে পারবে এবং আল্লাহর ইবাদত করতে পারবে। সে তার বন্ধুদের সাথে আলোচনা করল এবং সবাই একমত হল যে তারা আলীর সাথে থাকবে এবং তার এই মহান উদ্যোগে সাহায্য করবে।

তারা সকলে মিলে গ্রামের বিভিন্ন ঘরে ঘরে গিয়ে মসজিদ তৈরির জন্য দান সংগ্রহ করতে শুরু করল। গ্রামের মানুষরা আলীর উদ্যোগ দেখে খুবই খুশি হল এবং সবাই নিজেদের সাধ্যমতো দান করতে লাগল। ধীরে ধীরে, দানের অর্থ জমা হতে থাকল এবং তারা নতুন মসজিদ তৈরির কাজ শুরু করল।

ষষ্ঠ অধ্যায়: মসজিদের ভিত্তি স্থাপন

মসজিদ তৈরির জন্য জমি নির্বাচিত হল এবং গ্রামের সকলের উপস্থিতিতে নতুন মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করা হল। ইমাম আবদুল্লাহ আলীকে বললেন, "আলী, এই মসজিদ তোমার স্বপ্নের ফসল। তুমি আমাদের সবাইকে প্রেরণা দিয়েছ এবং আল্লাহর পথে একটি মহান কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছ।"

আলী বিনয়ের সাথে বলল, "ইমাম সাহেব, আমি কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করেছি। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাঁর পথে চলার তৌফিক দিন।"

সপ্তম অধ্যায়: মসজিদের নির্মাণ কাজ

মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হল এবং আলী এবং তার বন্ধুরা দিনরাত পরিশ্রম করতে লাগল। গ্রামের মানুষরা সবাই সাহায্য করল এবং কিছুদিনের মধ্যেই মসজিদের মূল কাঠামো দাঁড়িয়ে গেল। মসজিদটি ছোট হলেও খুবই সুন্দর এবং প্রশান্ত ছিল।

অষ্টম অধ্যায়: উদ্বোধনী নামাজ

অবশেষে, সেই দিন এলো যখন নতুন মসজিদটির উদ্বোধনী নামাজ পড়া হবে। গ্রামের সকল মানুষ একত্রিত হল এবং ইমাম আবদুল্লাহ উদ্বোধনী নামাজের ইমামতি করলেন। মসজিদের ভেতর ছিল প্রশান্তি এবং আল্লাহর রহমতের আলো।

আলী নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করল এবং বলল, "হে আল্লাহ, তোমার সন্তুষ্টির জন্য আমি এই কাজ করেছি। তোমার রহমতে আমাদের এই মসজিদ দীর্ঘদিন ধরে আমাদের প্রার্থনার স্থান হয়ে থাকুক এবং আমাদের সকলকে সঠিক পথে পরিচালিত কর।"

উপসংহার

এই গল্পের মাধ্যমে আমরা শিখতে পারি যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করলে এবং পরিশ্রম করলে সেই কাজ সফল হয়। আলীর মত ছোট্ট ছেলেও মহান উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে এবং তার দৃষ্টান্ত দিয়ে অন্যদেরও প্রেরণা দিতে পারে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং আমাদের সকল কাজ তাঁর সন্তুষ্টির জন্য করতে পারার তৌফিক দিন। আমিন।