ইডি কথন
শরীরটা ভালো না। আমার একটা পার্মানেন্ট অসুখ আছে। এটা আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। কিছুদিন পর পর ই এটা আসে এবং আমি এর আগমনের সিম্পটম গুলোর ক্রমধারা অবলীলায় বলে দিতে পারি। এই অসুখের অনেকগুলো উপসর্গের একটি উপসর্গ হচ্ছে মাথা ব্যাথা। মাথা ব্যাথা হলেই আমার কলেজের কিছু স্মৃতি মনে পড়ে যায়। অবশ্য স্মৃতি না বলে দু:সহ স্মৃতিও বলা যেতে পারে। এই মাথা ব্যাথা-ই আমার কলেজ জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনার কারণ হয়ে যায় পরবর্তীতে।
ক্লাশ সেভেনের শেষের দিকে শুরু করে ক্লাশ এইট এবং নাইন পর্যন্ত মাথা ব্যাথায় ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। মাথা ব্যাথার তীব্রতা এতটাই ছিল যে চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি ঝরতো। ইচ্ছে করতো মাথা কেটে ফেলে দেই। বৃহস্পতিবার মিল্ক ব্রেক এর পরে শুধু এক পিরয়ড হতো এবং তার পরে অডিটোরিয়াম এ যেতাম আন্তঃ হাউস বিভিন্ন যে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাগুলো হতো তার দর্শক হিসেবে। কোন এক অদ্ভুত কারনে অডিটোরিয়াম এর ঐ সময়টাতেই ব্যাথা বেশী হতো। একেকজন পারফরমার তাদের পারফর্মেন্স শেষ করতো আর অডিটোরিয়াম করতালিতে ফেটে পড়তো। তালে তালের সেই করতালির তালে আমার মাথা মনে হতো যেন বিস্ফোরিত হয়ে যাবে। আমি রীতিমত বৃহস্পতি ফোবিয়ায় ভুগতে শুরু করলাম মাথা ব্যাথার কষ্টের কারণে। কলেজ হাসপাতালে গেলেই প্যারসিটামল জুটতো। মাঝে মাঝে গরম পানির মধ্যে বেনজিন দিয়ে সেই ভাপ নাক দিয়ে নিতে হতো। তবে এসবে ব্যাথা কমার কোন লক্ষণ দেখা গেলনা।
ক্লাশ নাইনে আর না পেরে ছুটিতে ডাক্তার দেখালাম। আব্বা চক্ষু বিশেষজ্ঞ এবং নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ দু’জনকেই দেখালেন। নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ জানালেন সাইনোসাইটিস এবং মাইগ্রেন এর কারণেই এমন হচ্ছে। অন্যদিকে চক্ষু বিশেষজ্ঞ জানালেন চশমা নিতে হবে আমাকে। ইএনটি স্পেশালিষ্ট এর মতামত জানার পরে চক্ষু বিশেষজ্ঞ আমায় চশমার প্রেসক্রিপশনে “ফটো সান” গ্লাস রিকমেন্ড করলেন।
ছুটি শেষ করে ফেরত এসে কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মেডিক্যাল অফিসারকে প্রেসক্রিপশন দেখালাম এবং স্যার এর অনুমতিক্রমে চশমা ব্যবহার শুরু করলাম। দিনের বেলা রুমের বাইরে গেলেই চশমা সানগ্লাস এ পরিণত হয়ে যেত এবং রুমের মধ্যে আসলে আবার সাধারণ চশমায় পরিণত হতো। যাইহোক, একদিন এডজুট্যান্ট স্যারের চোখে পড়লো যে ক্লাশ নাইন এর একজন ক্যাডেট সানগ্লাশ চোখে একাডেমী ব্লক থেকে ডাইনিং হলে যাচ্ছে। স্যারের ভাষ্যমতে স্যার আমাকে ২/৩ দিন অবজার্ভ করেছেন কিন্তু কিছু বলেননি। অতঃপর একদিন ডাক পরলো এডজুট্যান্ট এর অফিসে। আমি সানগ্লাস কেন পড়ি জানতে চাইলেন। উত্তরে বললাম, স্যার আমি তো চশমা পড়ি, সানগ্লাস না। সিভিল ডাক্তার এর প্রেসক্রাইবড করা চশমা। আমি অত্যন্ত উতসাহ নিয়ে স্যারকে ফটো সান এর কেরামতিও বোঝাতে শুরু করলাম। স্যার সব কিছু শুনে কঠিন স্বরে মেডিক্যাল অফিসারের পারমিশন নিতে বললেন। আমি ঝটপট করে স্মার্টলি জানালাম যে পারমিশান নেয়া হয়েছে। আমার স্মার্টনেস এডজুট্যান্ট এর পছন্দ হলোনা। তিনি আমায় পারমিশান দেখাতে বললেন। আমি তো বেকুব। বললাম, মেডিক্যাল অফিসার প্রেসক্রিপশন দেখেছেন এবং আমায় চশমা ব্যবহার করতে বলেছেন। নতুন পাখনা গজানো ক্লাশ নাইন এর ক্যাডেটের পাখনা ভাংগার জন্য এডজুট্যান্ট তখন যারপর নাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ওনার সোজা সাপটা নির্দেশ, উনি মেডিক্যাল অফিসার এর লিখিত পারমিশান দেখতে চান এবং লিখিত পারমিশান না হলে এই চশমা ব্যবহার করা যাবেনা।
পরেরদিন হাসপাতালে গিয়ে মেডিক্যাল অফিসারকে জানালাম, যে এডজুট্যান্ট বলেছেন লিখিত পারমিশান লাগবে। মেডিক্যাল অফিসার এডজুট্যান্ট এর সিনিয়র ছিলেন। তিনি বললেন, লাগবেনা। আমি মুখে বলেছি এটাই যথেষ্ট। ফিরে গেলাম। সেদিন মিল্ক ব্রেক থেকে ফেরার পথে আবার এডজুট্যান্ট এর কাছে ধরা। মেডিক্যাল অফিসার যা বললেন তা স্যারকে জানালাম। তিনি সোজা সাপটা জানিয়ে দিলেন, মেডিক্যাল অফিসারের লিখিত অনুমতি ছাড়া আমি যেন আর কক্ষনো এই চশমা ব্যবহার না করি। এরই মধ্যে চশমা ব্যবহারের ফলে কিছুটা আরাম বোধ করতে শুরু করেছিলাম। তাই মেডিক্যাল অফিসারের কাছে আবারো গেলাম। কিন্তু ওনার ঐ একই কথা…..ওনার মুখের বলা-ই যথেষ্ট। দু’জনের মধ্যে কোন কমপ্লেক্স বা কোল্ড ওয়ার ছিলো কিনা আমি জানিনা, তবে ঐ মুহুর্তে আমার অবস্থা ছিল শিল পাটায় নিষ্পেষিত মরিচের মতো।
যাইহোক, শুরু হলো আমার লুকিয়ে লুকিয়ে চশমা পড়ার পালা। ভাগ্য খুব একটা সুপ্রসন্ন ছিলোনা আমার। এডজুট্যান্ট এর কাছে কট খেলাম। স্যার পারলে তখন আমাকে ছিড়ে ফেলেন। খুব আজে বাজে কথাও শুনিয়েছিলেন। সব কিছু খেয়ালে নেই। তবে এটুকু মনে আছে, ঐ বয়সেই আমার রিয়ালাইজেশন হয়েছিল যে স্যার আমাকে একজন “ইনডিসিপ্লিনড ক্যাডেট” হিসেবে টাইটেল দিয়েছিলেন। ক্ষেপে গিয়ে এডজুট্যান্ট আমাকে একটা ইডিও দিয়ে দিলেন। ক্যাডেট জীবনের প্রথম ইডি খাওয়ার জন্য গেমস ফলইন এ দাঁড়ালাম। মার্চ অফ এর পরে সবচেয়ে জল্লাদ স্টাফকে পাঠালেন আমাদের পাংগানোর জন্য। গেমসের অর্ধেক সময় পরে এডজুট্যান্ট নিজেই এসে ধরলেন। বাকিদের ব্রেক করে দিয়ে শুধু আমাকে ধরলেন। উনি অর্ডার দিচ্ছেন, আর দুইজন স্টাফ মিলে আমাকে দিয়ে সেই অর্ডার উপর্যুপরি পালন করিয়ে নিচ্ছেন। পাংগার ইনটেনসিটি এবং পৈশাচিকতা এতটাই এক্ট্রিম ছিলো যে, আমি চোখে অন্ধকার দেখা শুরু করলাম এবং চীতকার দিয়ে কষ্ট সইতে না পারার জানান দিচ্ছিলাম। একটু পরে সম্পূর্ণ ব্ল্যাক আউট হয়ে গেলাম……কিছুই আর খেয়াল নেই। কতক্ষণ অমন ছিলাম জানিনা। মুখে পানির ঝাপটা পেয়ে আস্তে আস্তে চোখ খুললাম। এডজুট্যান্ট কে আশেপাশে দেখলাম না। স্টাফরা উঠিয়ে বসালেন আমায়। তারপরে আস্তে আস্তে হাউসের দিকে চলে গেলাম।
এটিই ছিলো ৬ বছরের ক্যাডেট জীবনে আমার প্রথম ইডি। শুধু তাই নয়…..ক্যাডেট লাইফের একমাত্র ইডি। তবে দীর্ঘ ২৭ বছরেও আমি কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাইনি। কেন এডজুট্যান্ট আমার উপরে এত রেগে ছিলেন? কেন মেডিক্যাল অফিসার লিখিত পারমিশান দেননি? কি সমস্যা হতো লিখিত পারমিশান দিলে? লিখিত পারমিশান ছাড়াই বা কি সমস্যা হতো চশমাটা ব্যবহার করলে? ওনাদের দু’জনের মধ্যে কোন ঝামেলা হলে তার জের আমার উপরে কেন? কেনই বা আমাকে পাংগানোর জন্য দুই দুই জন স্টাফ এমপ্লয় করা লাগলো?
অবশ্য এতদিনেও কোন উত্তর খুঁজে না পাওয়ায় আর কখনো পাবো বলে আশাও করি না।
Welcome to Steem Community @shuvo611025! As a gentle reminder, please keep your master password safe. The best practise is to use your private posting key to login to Steemit when posting; and the private active key for wallet related transactions.
In the New Steemians project, we help new members of steem by education and resteeeming their articles. Get your articles resteemed too for maximum exposure. You can learn more about it here: https://steemit.com/introduceyourself/@gaman/new-steemians-project-launch
Welcome to Steem @shuvo611025.
Do read A thumb rule for steemit minnows - 50:100:200:25 for starter tips.
Spend time reading Steem Blue Paper to know how Steem blockchain works and if you still have any queries ask them on our Ask me anything about Steemit post and we will try to answer that.
All the Best!!!