পম্পেই - শেষ পর্ব
এই রণক্ষেত্রে ই আমরা প্রথম দেখতে পায় মুভির নায়ক বালক মাইলো কে। মাইলো দেখে, কারবাজ এর সৈন্যরা তার বাবা কে মেরে ফেলে,মাইলোর মা মাইলো কে নিয়ে পালিয়ে যাবার সময় কারবাজ তাকে ধরে ফেলে এবং মাইলোর চোখের সামনে তার মা কে ও মেরে ফেলে।মাইলো মৃতের ভান করে পড়ে থাকে।কারবাজের সৈন্যরা বাকি সব শিশু,বৃদ্ধ, নারী পুরুষ প্রায়ই সবাই কে মেরে ফেলে- মাইলো কে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়।ক্লান্ত মাইলো সৈন্যরা চলে যাবার পর দেখে, তার মৃত বাবা কে গাছে অন্যদের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছে।সে এক জংগলে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।ঘুমন্ত মাইলো কে দাস ব্যাবসায়ীরা জোর করে তুলে নিয়ে যায় বিক্রি করার জন্য...
এরপর ১৭বছর কেটে যায়.......
১৭বছর পরের দৃশ্যে ব্রিটেনিয়ার রাজধানী লন্ডনিয়ান কে দেখানো হয় যেখানে এক দাস বেচাকেনার লড়াইয়ে পম্পেই-র এক দাস মালিক কে।সে লড়াই থেকে সব চেয়ে সুদর্শন যুবক কেল্ট কে কিনে নেয়।আর এই দাস কেল্ট ই হলো আমাদের মাইলো। ততোদিনে রোমান সম্রাট হয়ে ক্ষমতায় বসেন সম্রাট টাইটাস এবং মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান সেনাপতি কারবাজ।যা হোক মূল কথায় আসি - এই দাস মাইলোর সাথে তৎকালীন পম্পেই শাসনকর্তার মেয়ে রাজকুমারী কেসিয়ার ভালোবাসার কাহিনী এবং মাত্র ১৫মিনিটের মধ্যে ভিসুভিয়াস এর ভয়ংকর লাভাস্রোত কি ভাবে পুরো পম্পেই নগরী কে গ্ৰাস করে ধ্বংস স্তূপে পরিণত করে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মর্মান্তিক প্রাকৃতিক ধ্বংসযজ্ঞের ইতিহাস রচিত হয় - মূভিতে সেটাই দেখানো হয়। তবে আমার মনে হয় বাস্তব আর ও ভয়াবহ ছিল, মুভিতে দেখানো ভয়াবহ দৃশ্যের চেয়ে ও।
মুভির এটিকাস চরিত্রের মাধ্যমে তৎকালীন বন্দি দাসদের নির্মম, অসহায় জীবন চিত্র টি ফুঠে উঠেছে। দাসদের তারা মানুষ ই মনে করতো না,ভাবতো তারা জন্ত।দাসরা ছিল তাদের মালিকদের হাতের পুতুল-তাদের কে যা করতে বলা হতো তা ই করতে তারা বাধ্য ছিল। মুভির একটি দৃশ্যে ছিল সেটা স্পষ্ঠ-
মুভি দেখলেই সেটা বোধগম্য হবে। এই এটিকাস চরিত্রের মাধ্যমেই বুঝানো হয়েছে চোখের সামনের ভয়ংকর করুণ পরিণতি ও কত তুচ্ছ হতে পারে বন্দিদশা থেকে মুক্তির আনন্দের কাছে ! মুভির একটি স্নায়ুবিক চাপা উত্তেজক আকর্ষন হলো - কাহিনীর ফাঁকে ফাঁকে ভিসুভিয়াসের আস্তে আস্তে জেগে উঠা, কি ভয়ংকর করুণ পরিণতি অপেক্ষা করছিল পুরো পম্পেই বাসির জন্য - তা তারা কল্পনাও করতে পারেনি,মোট কথা আগাম ছোট খাট দূর্যোগ বা পূর্বাভাস কে পাত্তা না দেওয়ার ব্যপারটা। এগুলো কে রোজকার ঘটে যাওয়া ঘটনার মতোই হালকা ভাবে নেওয়া ! অথচ শেষ পর্যন্ত মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে জলন্ত লাভা পুরো নগরীকে গ্ৰাস করে এবং দুই দিন ধরে অনবরত নির্গত লাভা পুরো শহর কে একেবারে মৃত্যু পুরীতে পরিণত করে- থাক এসব ইতিহাসের কথা, মুভিতে ফেরা যাক- মুভির শেষে দেখানো হয় - একদিকে আগ্নেয়গিরির জলন্ত লাভার স্রোত অন্যদিকে সোনামীর বিশাল জলরাশির ঢেউ পুরো নগর কে চারিদিক থেকে গ্ৰাস করছে আর অসহায় মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছে প্রান বাঁচাতে।তারা জানেনা তারা কেউ ই রেহাই পাবেনা প্রকৃতির এই ভয়ংকর অভিশপ্ত খেয়ালী ধ্বংস যজ্ঞ থেকে ! এরপরে তারা হবে শুধু ইতিহাস - নির্মম, ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা নিয়ে হবে শুধু ই ধ্বংসের এক ইতিহাস। ভাবুন তো ঐ দৃশ্যটা একবার - নিজেকে ঐ জায়গায় ঐ পরিস্থিতিতে কল্পনা করে ! ভাবা যায় !?
একবারে শেষ দৃশ্যে দেখা যায় - রাজকুমারী কেসিয়া আর মাইলোর সামনে এগুনোর আর কোন নিরাপদ পথ নেই,মাইলো কেসিয়াকে অন্য কোনো নিরাপদ পথে গিয়ে জীবন বাঁচাতে অনুরোধ করে, (যদিও লাভা সব দিক দিয়ে ঘিরে ফেলছে) কিন্তু রাজকুমারী মাইলো কে ছেড়ে যায়না, লাভা এগিয়ে আসছে, পুরো আকাশ জুড়ে আগুনের লেলিহান শিখা,মাইলো কেসিয়া কে বলে - ও দিকে (লাভার দিকে) তাকাইওনা, আমার দিকে দেখ....... না আর বলবো না, বললে মুভি দেখার ইচ্ছে টা আর থাকবে না। একেবারে শেষ দৃশ্যে যেটা দেখিয়ে পরিচালক মুভিটি সমাপ্ত করে, সেটা দেখে আমার চোখে জল এসেছে....... আপনাদের ?
শেষ তো করলাম কাহিনী কিন্তু আমার বোকা অবুঝ মনে কান্নার সাথে কেবল বিড়বিড় করে - প্রকৃতি একদিকে যেমন মোহময় অন্যদিকে তেমনি নির্মম - কি অদ্ভূত না !?