সত্যি সেলুকাস কি বিচিত্র- মনোজগৎ ! শেষ পর্ব।
প্রথম পর্ব প্রকাশের পর -
চোখের সামনে ই তো দেখলাম- বাচ্চা একটা ছেলে, পড়ালেখা এবং তার পাশাপাশি চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে দিব্যি বসে আছে! ছেলেটি বারবার বলছে, এখন সে খুব ভালো আছে - সুস্থ আছে। তার মধ্যে কোন টেনশন আর ভয় নেই।
বললাম,ঐ সাইক্রিয়াটিস্ট এর সংগে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবে, ঔষধ ঠিক মতো খাবে - আর চেষ্টা করো পড়ালেখা টা চালিয়ে যেতে।
আপনি দোয়া করবেন ম্যাম...
অবশ্যই তোমার জন্যে সবসময় দোয়া করবো। তবে এখন তোমাকে যা বলব তা শুনতে হবে এবং মানতে অবশ্যই চেষ্টা করবে ।
কি ম্যাম ? বলুন...
বললাম, আমি তোমাকে একটা ঔষধ বিহীন প্রেসক্রিপশন দেব,যাকে আমি মনোবৈলিক প্রেসক্রাইব বলি ! মনোবল বাড়ানোর জন্য Motivational tips বলতে পারো এটাকে !
বলুন ম্যাম, তার কন্ঠে আগ্ৰহ...
আজ থেকে প্রতিদিন একবার হলেও মনে মনে বলবে - ২৫ বছর বয়সে মরে গেলে গেলাম ! কিন্তু ভুলে ও পড়ালেখা,কাজ বন্ধ করা যাবে না। যদি বেঁচে যায়, এসব তো কাজে আসবে - বৃথা তো আর যাবে না। ধরো, বেঁচে গেলে ! এই যে মরবে বিশ্বাসে, মূল্যবান সময় টুকু নষ্ট করবে - সে গুলো কি, সেই সময় কি আর ফিরে পাবে ? জন্মেছ যখন একদিন মরতে তো হবেই, এটা এমন কি? স্বাভাবিক এক প্রক্রিয়া Nature এর।
কেউ না মরে তো সারা জীবন বেঁচে থাকতে পারে নাই! মরতে হবেই - ২০ হোক, ২৫ হোক, হোক ৫০ কিংবা ১০০ বছর - মরতে একদিন তো হবেই !
তাই বলে চুপ করে থেকে বাউন্ডেলের মতো জীবন ( যে টুকু সময় বেঁচে থাকার সুযোগ পাই) কাটানো টা কি বোকামি নয় ? শুধু বোকামি নয়, বিরাট অর্থহীন বলাই ভালো।
বই লিখবে - ভালো কথা, তার জন্য তো পড়ালেখা করাটা জরুরী। সবাই তো আর কবি নজরুল না,অল্প পড়ে অত অত কঠিন শব্দ, বাক্য - ছন্দ মিলিয়ে কবিতা লিখবে !
জী ম্যাম, আমি পারবো এখন, চেষ্টা করবো আপনার কথা মতো চলতে।
বললাম- এই তো Good boy, শুধু শুধু বাজে অদ্ভুত একটা চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ে কত গুলো সময় নষ্ট করলে বলতো?এখন থেকে আজেবাজে সব চিন্তা বাদ, মনে সাহস রাখো - তোমার খোঁজ খবর আমি নিয়মিত রাখবো এখন থেকে।
অপর প্রান্তে কেমন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাসের শব্দ শুনলাম যেন।
বললাম তো শুধু শুধু বাজে একটা চিন্তা মাথায় ঢুকিয়েছে ! আসলেই কি তা-ই ? সে কি ইচ্ছে করেই এমন একটা উদ্ভট কল্পনা তার চিন্তা চেতনায় নিয়ে দিনের পর দিন ভয়ে টেনশনে ধীরে ধীরে সব কিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে অন্য এক জগতে বাস করছিলো ? না সে ইচ্ছে করে তার ব্রেইন এ রকম একটি ধ্বংসাত্মক চিন্তা set up করেনাই। কোন না কোন কারণে, কোন না কোন ঘটনায় কিংবা পরিস্থিতি - তার মধ্যে এই মানসিক সমস্যা টা আস্তে ধীরে বীজ গজিয়ে চারা বের হয়ে ধীরে ধীরে সমস্যার বিশাল ডালপালা মেলে শেকড় অনেক গভীরে চলে যেতো, সেই শেকড় উপড়ে তার পক্ষে বের হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা আর সম্ভব হতো না ।
একটা সম্ভাবনাময় জীবনের এভাবেই অভিশপ্ত সমাপ্তি ঘটতো।যা এটা তার কাম্য ছিলো না কখনো। এই জীবন আসলেই কারো কাম্য নয়, সবাই সুস্থ সুন্দর একটা স্বাভাবিক জীবন চাই -অস্বাভাবিক জীবন কেউই চাই না।ভাগ্যিস সময় থাকতে ডাঃ এর সাথে যোগাযোগ করেছে, আর এখন তো সে নিজেই বলছে - সে সুস্থ। ডাঃ এর পরামর্শ মেনে চলছে, নিয়মিত ঔষধ খাচ্ছে বলেই হয়তো সে ধীরে ধীরে ভালো হয়ে উঠছে, জীবন হচ্ছে স্বাভাবিক আগের মতো।
এ যেন ঠিক এই রকম - একটা মৃতপ্রায় বৃক্ষ ( হোক পানির অভাবে কিংবা অন্য কোন কারণে ) ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছিল, এই অবস্থায় কারো নজরে পড়ে, এরপর প্রতিদিন সে ঐ গাছে পানি দিতে থাকে, এর ফলে গাছটি যেন প্রাণ ফিরে পায় - ফিরে পাচ্ছিলো তার পূর্বের সব সজীবতা !
মানুষের জীবন ও ঠিক এই রকম।কখন কোন্ ঘটনায়, মূহুর্তে বা পরিস্থিতিতে যে তার মনোজগৎ ওলট পালট হয়ে যেতে পারে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। গাছের মতো ধীরে ধীরে ঝরে পড়তে থাকে তার জীবন থেকে আশা,স্বপ্ন, ভালোবাসা নামক বেঁচে থাকার সব সজীবতা এবং প্রাণচাঞ্চল্য।
আমাদের উচিত,কারো মধ্যে মানসিক কোন অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই সে যেন দ্রুত কোন সাইকোলজিস্ট এর সাথে পরামর্শ করে তার সমস্যা নিয়ে। সাইকোলজিস্ট এর সাধ্যের মধ্যে না থাকলে ( মনোরোগ বা সমস্যাটি ভালো করার ) তাড়াতাড়ি যেন সাইক্রিয়াটিস্ট এর সাথে যোগাযোগ করেন। কোন কোন সাইকোলজিস্ট নিজ থেকেই পরামর্শ দেন সমস্যা গ্ৰস্থ মানুষটি কে - সাইক্রিয়াটিস্ট দেখানোর জন্য। সাইকোলজিস্ট যখন বুঝতে পারেন এই সমস্যা সমাধান করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। অর্থাৎ সমস্যা গভীরে চলে গেলে তখন সাইক্রিয়াটিস্ট এর ট্রিটমেন্ট জরুরী হয়ে পড়ে।যে কোন মানসিক সমস্যার চারটি ধাপ বা Step রয়েছে,এই Step অনুযায়ী ট্রিটমেন্ট দেওয়া জরুরি। সব সাইকোলজিস্ট এই পরামর্শ দেন কিনা জানিনা, তবে আমার জানা মতে এই পরামর্শ দেন। যদি না দিয়ে থাকেন, আপনার কোন উন্নতি হচ্ছে না বুঝতে পারলেই পাশাপাশি সাইক্রিয়াটিস্ট এর সাথে নিজ থেকেই বা নিজ বুদ্ধিতেই যোগাযোগ করবেন। তবে সাইকোলজিস্ট এর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করা যাবে না।
একটা কথা বলা খুবই জরুরি - যে কোন মানসিক সমস্যার চিকিৎসা করে নিজেকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে, অতি অবশ্যই। অনেক সময় দেখা যায়, মানসিক সমস্যা গ্ৰস্থ ব্যক্তি নিজ থেকে ডাঃ এর কাছে যেতে চাই না, এ ক্ষেত্রে পরিবার বা তার কাছের মানুষ বা আপন যিনি আছেন তিনি যেন তাকে বুঝিয়ে ডাঃ এর কাছে নিয়ে যান। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে - অসুস্থ মানুষটির মানসিক অবস্থা কিন্তু স্বাভাবিক নেই, তাই তার উপর কিছুতেই জোর জবরদস্তি করা মোটেও উচিত হবে না। তাকে বুঝাতে হবে, প্রয়োজনে
Counseling করতে হবে। বুঝাতে হবে সমস্যা টা তার জন্য কতটা ক্ষতিকর ! চিকিৎসা করা টা কতটা জরুরি।একজন অসহায় ডুবন্ত মানুষের প্রতি মানবিক হাত বাড়ানো টা জরুরী - এটা পরিবার বা আপন মানুষদের প্রতি নৈতিক দায়িত্ব পালন করা।
শেষ বাক্য গুলো সবসময় মন ভালো করে দেয়ার মতো কিছু একটা লিখতে ভালো লাগে। সেটা জটিল বা সরল যে কোন লেখার শেষে । আজ কি লিখব শেষ বাক্য টা !
ও হো ! এটা লিখলে কেমন হয় ?
' Human for Humanity ? নাকি
Humanity for Human !?'
না মশাই, আমি বলবো - মানুষের জন্যেই মানবতা - কিংবা হোক সব প্রাণীর জন্য।
মানুষ হিসেবে মানবিক হলেই তো বেশ মানাই,
দানবিক হলে কি মানাবে ?- বলুন তো !