আজ আমরা জীবিকা এবং জীবনের এক নির্মম পরিস্থিতির স্বীকার
আমি মোঃ তারেক হোসেন সাগর আমি একটি গ্যারমেন্টস ফ্যাক্টরিতে সহকারী আইটি অফিসার হিসাবে কর্মরত আছি। আজ নির্মম বাস্তবতা আমাদেরকে জীবন মরনের সন্ধিক্ষনে উপস্থিত করেছে। মহামারী করোনা ভাইরাস এর কাছে আজ আমাদের জীবন মূল্যহীন হয়ে গেছে। বাংলাদেশ সরকার এবং বি.জি.এম.ই.এ এর যৌথ সীদ্ধান্তে বিগত ২৫ মার্চ আমাদের কর্মময় ফ্যাক্টরী বন্ধ ঘোষনা করা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ার কারনের এই বন্ধ কয়েক দফায় বৃ্দ্ধি পেয়ে গত ২৫ শে এপ্রিল পর্যন্ত বলবৎ হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিকতার বিপরীতমূখী। দিনে দিনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা এবং তার সাথে তাল মিলিয়ে ক্রমানয়ে বেড়েই চলছে জনজীবনের ভোগান্তী এবং অস্থিরতা।
image credit
সাধারন মানুষের এই ভোগান্তী এবং অস্থিরতার মূলে মৃত্যূভয়ের তুলনায় মানুষের স্বাভাবিক জীবন থেকে ঝিটকে পড়ার এক করুন কাহিনী রচিত হচ্ছে। এই রচনাকার আর কেউ নয় এর রচনাকার আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের নিত্য দিনের পরম সঙ্গি দারিদ্রতা। দারিদ্রতা থেকে ক্ষুদার তীব্র জ্বালা, আর ক্ষুদার তীব্র জ্বালায় মানুষ তাদের হিতাহিত বোধগামাত্যতে হারিয়ে ফেলতে বসেছে। আমাদের দেশের পরিস্থিতি বিশ্বের ধনী দেশগুলোর সাথে কখনোই তুলনাময় নয়। ধনী দেশে গুলোর জনগোষ্ঠীর মাঝে আছে আর্থিক স্বচ্ছলতা, সরকার কর্তৃক জীবনের প্রয়োজনীয় সামাগ্রীক প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। আমাদের সরকার তাদের পক্ষ থেকে যথেষ্ঠ চেষ্ঠা চালিয়ে গেলেও, কিছু মানুষরূপি মানুষ পশুর কারনে সরকার সাহায্য থেকে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে।
আজ আমার বলতে লজ্জা লাগছে বিশ্ববাসির কাছে, আমাদের দেশের কিছু পশুশ্রেণীর মানুষের অমানবিক কার্জকালাপের করুন ইতিহাস। এই ইতিহাস সুস্থ মস্তিস্কের কিছু মানুষের বিবেকের কাছে এতো পরিমান যন্ত্রনাদায়ক তা লেখার ভাষায় বোঝানা খুবই কষ্টকর। লক্ষ লক্ষ মানুষ যেখানে ক্ষুদার জ্বালায় দিন পার করছে এবং অপেক্ষা করে আছে সরকারের কাছ থেকে সামান্য আহার সাহায্য পাওয়ার জন্য ঠিক সেই মহূর্তে কিছু পশু তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে সেই আহার চুরি করছে, সামান্য কিছু অর্থ উপাজর্নের জন্য, যা মানব ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্যতম খারাপ কাজের জায়গা দখল করে থাকবে, মানব সভ্যতা যতদিন এই পৃথিবীর বুকে শ্বাসন করবে ঠিক ততদিন পর্যন্ত।
রক্তচোষা সেই সব গিরগিটি, সরকার এবং বিজি.এম.ই.এ এর অপরিকল্পিত এবং বিভ্রান্তীমূলক সীন্তান্তের কারণে আজ বাংলাদেশের সর্বচ্চো বৈদেশিক মূদ্রা আয়কৃত শিল্প এবং এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ঠ সকল মালিকগন, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং সাধারন শ্রমিদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের এক অভয় আরণ্যের দিকে যাত্রাশীল। এই অপরিকল্পিত কিছু সীন্তানের কারণে আজ প্রায় পাঁচ মিলিয়ন মানুষের জীবন বড়ই সংকটময়। মালিকপক্ষ ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তাদের তিলে তিলে গড়ে তোলা ব্যবসাকে রক্ষা করার জন্য। সরকার পড়ে গেছেন বড়ই দোটানায়,কি করবে তারা, তারা যদি দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ডকে বাঁচাতে না পারেন তাহলে বাংলাদেশকে দেখতে হবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দূর্ভিক্ষ। তাই তার একটি বিভ্রান্ত মূলক সীদ্ধান্ত প্রদানে বাধ্য হয়েছেন।
যে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো ঢাকা এবং ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় যে কর্মচারী, কর্মকর্তা এবং শ্রমিক অবস্থান করছেন তাদেরকে নিয়ে তারা তাদের উৎপাদনের কাজ শুরু করতে পারে সকল প্রকার স্বাস্থ্যবিধী মেনে, এই সীদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে আজ প্রায় ৫০% পোশাক কারখানা তাদের উৎপাদনের কাজ আরম্ভ করছেন। তারা তাদের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সর্বচ্চো সংখ্যক শ্রমিকদের অবশ্যই ব্যবহার করার চেষ্ঠা করবেন, এবং যেসব শ্রমিক তাদের গ্রামের বাড়ীতে চলে গিয়েছেন তাদের উপর অপ্রকাশিত চাপ প্রদান করবেন কর্মক্ষেত্রে যোগদানের জন্য। এবং আজ আমি বাস্তবেই এই বিষয়টার সত্যতা পরিলক্ষিত করেছি। যা আমাকে আমার নিজের জীবনের সুরক্ষার কথা কথা আজকে বার বার স্মরন করিয়ে দিয়েছে।
image credit
আজ আমি নিজে বাধ্য ছিলাম শতাধিক শ্রমিককে ফোনকল করার জন্য। ফোনকলে করে আমি তাদের কর্মক্ষেত্রে যোগদান করার জন্য আজকে অনুরোধ করেছি। কিন্তু আগামীকাল হয়তোবা আমাকে তাদেরকে কর্মক্ষেত্রে যোগদানের জন্য আদেশ প্রদান করতে হতে পারে, এমনটা ভাবা আমার জন্য কোন অযৌতিক বিষয় নয় কারন বাস্তবতাই আমাকের যৌক্তিকতার সকল সংজ্ঞা উদাহরন সরূপ বুঝিয়ে দিচ্ছে। মালিক পক্ষ লোক দেখানো স্বাস্থ্যবিধীর পালন করছে। একটু চলিত ভাষা ব্যবহার করলাম ক্ষমা করে দিবেন। কিসের তোর স্বাস্থ্যবিধি, কিসের তোর সামাজিক দূরত্ব এক কথায় কিসের তোর করোনা ভাইরাস, তোরা গরীব তোদের কাম করেই খাইতে হবে, কাম না করলে তোরা খাবি কি, তখন তোরা করোনা ভাইরাসে না, নাই খাইয়া মরবি। তোরা যদি মনে করিস তোদের কাছে কোন বিকল্প ব্যবস্থা আছে, তোরা আমার কারখানা থেকে চলে যেতে পারিস। তোরা কাজ না করলে তোদের মতো হাজারো বেকার শ্রমিক আছে যারা তোদের চেয়ে কম বেতনে কাজ করবে। তোদের ভবিষ্যৎ তোরাই ভালো বুঝিস। এই কথাগুলো মালিকপক্ষ দ্বারা নিয়োজিত কিছু উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের।
তারা তাদের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এসব কথা বলতে বাধ্য আজ। আজ সাধারন শ্রমিকরা পড়ে গেছেন জীবন এরং জীবকার এবং করুন বাস্তবতায়। তারা তাদের জীবন বাঁচাবে না তারা তাদের জীবিকা রক্ষা করবে। এর এক বড়ই সহজ উত্তর আমার কাছে আছে। আমি অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে অত্র পোশাক কারখানায় সহকারী আইটি অফিসার হিসাবে কর্মের সুযোগ পেয়েছি, কারণ কর্ম আমাদের দেশে সোনার হরিণের মতো। আজ আমার জীবিকার উপর আমার পরিবার নির্ভরশীল, আমিতো স্বয়ং নির্ভরশীল। আমার জীবিকা রক্ষা হলে আমার জীবন রক্ষা হবে সাথে রক্ষা হবে আমার পরিবার কিন্তু আজ আমার জীবিকা রক্ষা না হলে আমি এবং আমার পরিবার উভয় সংকটে পড়ে যাব। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান না পারব আমারা কারো কাছে হাত পাততে না পারব আমরা আমাদের পরিবারের সম্মানকে খোয়াতে। আপনারাই বিচার করুন, আপনারাই আজ আমাকে সীদ্ধান্ত দিন। আজ যদি আমি আমার জীবনকে সবচেয়ে বেশী প্রাধান্য দেই সামান্য কিছুদিনের মধ্যে আমার পরিবারের সদস্যরা না খেতে পেরে মারা যাবে। কিন্তু আমি যদি আমার কর্মক্ষেত্রে বহাল থাকি হয়তবা মৃত্যু আমাকে উপহাস করে আমাকে জীবিত রাখতেও পারে অথবা আমি যদি কর্মক্ষেত্রে বহাল থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারাও যাই, তাহলে আমার মালিকপক্ষ হয়তোবা আমার পরিবারকে আমার জীবনের বিনিময়ে কিছু অর্থ প্রদান করবেন এবং সেই অর্থ দিয়ে আমার পরিবার তাদের জীবন যাপনের যেকোন একটি পন্থা তৈরী করে নিতে পারবেন।
তাই আমি গতরাতে আমার সীদ্ধান্ত নিতে কোন দ্বিধাবোধ করি নাই। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে, নামাজ পড়ে একটু কোরআন শরীফ পড়ে নিজের জন্য, নিজের পরিবারের জন্য, আমার দেশের জন্য দেশের মানুষগুলোর জন্য দীর্ঘ সময় দোয়া করেছি আমি, কারন অন্য দিনের মতো সকালের নাস্তা তৈরী করা এবং নাস্তা করার তাড়া আজকে ছিল না, কারন আজকে রোজা ছিলাম। তাই আজকে সকাল ৭ ঘটিকা পর্যন্ত আল্লাহ্তালার কাছে আমার নিজের জীবন, আমার পরিবারের জীবন এবং বিশ্বের প্রতিটি মানুষে জীবনের জন্য অশ্রুভরাক্রান্ত হয়ে দোয়া করেছি। ইফতারীর আগেই অফিস থেকে ফেরেছি এবং ইফতারের পর থেকে এখন পর্যন্ত আমি নিজেকে শুধু একটাই প্রশ্ন করে যাচ্ছি আমি কি করোনা ভাইরাসের মরন থাবা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত অবস্থায় বাসায় নিয়ে আসতে পেরিছি। যদি না পারি তাহলে আমার সাথে যারা আমার আবাসস্থল ভাগাভাগি করে তাহলে আমি কি তাদের জীবন ও ঝুঁকির কবলে ফেলে দিলাম। তারাতো আমাকে আবাধ বিশ্বাস করে, তাইতো আমার পাশের বিশানায় আমার রূমমেইট পরম শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন, কিন্তু আমিতো ঘুমাতে পারছি না, আমার চোখে ঘুম নাই একি জীবন এবং জীবিকার টানাফোড়নে আমি পড়ে গেলাম, শুধু মাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন এর সমাপ্তি কোথায়। আজ হয়তো নিজেকে কিছুটা শান্তনা দিয়ে ঘুম পাড়াতে পারব, আমার মতো যে লক্ষ লক্ষ মানুষের আজ একই পরিনতি। তাদের নিয়তিতে যা লেখা আছে আমার নিয়তিতেও হয়তোবা তাই লেখা আছে। চলিত ভাষায় বলতে গেলে, যা হবে দেখা যাবে নে, এহন একটু আরামে ঘুমাই লই।
image credit
আজ আমার মনের এই কথাগুলো শেয়ার করার জন্য আমি কাউকেই খুজে পাই নাই। কারন আজ সবাইকেই কেন জানি আমার কাজে মনে হয়েছে তারাও আমার মতো একই পরিস্থিতির স্বীকার এবং তারা হয়তো আমার মতো করে ভাবছে না, তারা সবকিছুকেই খুব স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিচ্ছে এবং বাস্তবতার সাথে তাল মিলিয়ে পথ চলার এক সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। আমি আমার এই মনের কথাগুলো তাদের সাথে শেয়ার করে তাদের মনোবল ভাঙ্গতে চাই না। তাই আমি আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম এবং আমার অস্তিত্ব যদি কোন একদিন এই পৃথিবীতে নাও থাকে তাহলে কোন এক ব্যক্তি যদি আমার লেখার টাইটেল ধরে গুগোল মহাশয়ের কাছে জানতে চায় তাহলে সে যদি আমার এই লেখা পড়ে আজকের এই পরিস্থিতির সামান্যতম প্রতিচ্ছবি নিজের মনে অঙ্কন করে আমাদের বিদেহী আত্মার জন্য দোয়া করেন আমি এবং আমার এই লেখা তখনি ধন্য হবে।
আজ আমি আমার মাতৃভাষায় লিখতে বাধ্য হলাম, কারন আমার মনের এই কথাগুলো আমি ইংরেজীতে সঠিকভাবে ব্যক্ত করতে পারতাম না। তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
সবাই সর্তক থাকবেন, নিরাপদে থাকার সর্বোচ্চো চেষ্ঠা করবেন, হয়তো আপনার কাছে আপনার জীবকার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।
ধন্যবাদান্তে,
মোঃ তারেক হোসেন সাগর।
Thanks a lot for reading my blog, if you are able to feel my word here I'm not asking for a vote on my post I just requesting you all pray for the millions of Garments workers in Bangladesh.
This post earned a total payout of 0.088$ and 0.044$ worth of author reward that was liquified using @likwid.
Learn more.