ফিচার | ঢাকা শহরের ছাদ বাগানের গল্প | ১০% @btm-school
ঢাকা শহরে বর্তমানে ছাদ বাগানের গুরুত্ব দিন দিন বহুলাংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেননা, এই ইট-কাঠ-পাথরের নগরে সবুজ তথা গাছের বড্ড অভাব। একদিকে গাছ রোপনের জায়গা নাই, অন্যদিকে শহরে যানবাহন এবং জনগণ উভয়ই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ফলে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমছে আর কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে। মানুষ একটু স্বস্তিতে শ্বাস পর্যন্ত নিতে পারছেনা। এজন্য আমরা খুব সহজেই হাপানি হার্টের নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছি বিশেষ করে আমাদের মধ্যে বৃদ্ধ ও বাচ্চারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আর এ সবকিছুর জন্য দায়ী শহরে পর্যাপ্ত গাছ না থাকা। আজ থাকবে আমাদের ছাদ বাগানে লাগানো আমার গাছগুলো সম্পর্কে একটা ফিচার।
যেহেতু শহরের বাসার সামনে বা আশেপাশে জায়গার অভাবে গাছ লাগানোর সুযোগ নাই তাই বাধ্য হয়ে মানুষ নিজেদের বাসার ছাদে নানা ধরনের গাছ-গাছালি লাগাচ্ছে। কারো ছাদে নানা জাতের ফুলে ভরা, কারো ছাদে বিভিন্ন ধরনের ফল গাছ যেমন: পেয়ারা, ডালিম, আম, ডুমুর, আমড়াসহ নানা জাতের লেবু গাছ লাগানো থাকে, আবার কারো ছাদে নানা প্রকারের ঔষধী গাছ লাগানো। কেউ আবার বিভিন্ন শাক-সবজি যেমন: বেগুন, টমেটো, ঢেঁড়স, ক্যাপসিকাম, কাঁচা মরিচ, পেঁপে, ছোট মাঁচা করে তাতে উচ্চে বা করোলা, শিম, চিচিঙ্গা, লাউ, ঝিঙে, বরবটি ইত্যাদির চাষও করে থাকেন এই ছোট্ট ছাদে। আবার অনেক সৌখিন মানুষজন বিদেশ থেকে নানা দূর্লভ ক্যাকটাস, নাম না জানা ফল ও ফুলের গাছ সংগ্রহ করে ছাদ বাগানে লাগান। বেশিরভাগ ছাদেই সব ধরনের গাছ কম্বাইনলি কম-বেশি একসাথে দেখা যায়। প্রয়োজন পড়লে যখন-তখন নিজেদের বাগান থেকে শাক-সবজি তুলে এনে রান্না করা যায়, তাতে করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বিষমুক্ত অর্গানিক খাবার খাওয়া যায়।
ছাদ বাগানে সাধারণত পরিবারের সদস্যরাই পরিচর্যা করে থাকেন। নারী সদস্যরাই বিশেষ করে নানা জাতের ফুল ও শাক-সবজির গাছ লাগাতে পছন্দ করেন। একটা ছাদ বাগান নিজেরা শুরু করতে হলে প্রথম কয়েক মাস অনেক পরিশ্রম করতে হয়। ড্রাম বা টব কিনে আনা, মাটি কিনে আনা, চারা গাছ বা বীজ কিনে আনা, গাছের জন্য উপকারী সার কিনে আনা, সময় নিয়ে পরিচর্যা করা, নিয়ম করে প্রতিদিন পানি দেয়া ইত্যাদি, এতসব করার পরেই একটা গাছ আস্তে আস্তে বড় হয়ে ওঠে। এর পেছনে অনেকটা পরিশ্রম ও সময় দেয়া লাগে, তা না হলে পরিচর্যার অভাবে গাছটি মারা যেতে পারে। দেখা যায় পরিবারের নারী সদস্যরা ছাদ বাগানে বেশি সময় দেন। অন্যান্যরাও সুযোগ পেলে বাগানের নানা কাজে হেলপ করে করেন। এতে করে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটা সুন্দর ছাদ বাগান গড়ে ওঠে। আর যারা শহুরে ভাড়া বাসায় থাকেন এবং ছাদে গাছ লাগানোর সুযোগ নাই, তারা ছোট ছোট টবে বারান্দায় গাছ লাগাতে পারেন। আজকাল অনেকেরই বারান্দায় এমন নানা ধরনের সবুজ গাছ-গাছালি দেখা যায়। মোটকথা, বাসায় অল্প হলেও একটু সবুজের হাতছানি যেন থাকে সেই চেষ্টাটা সবারই থাকা উচিত।
সন্ধ্যায় ছাদ বাগানে সঙ্গীর সাথে বসে গল্প করতে করতে চা খেতে খুবই মজা। উপরে খোলা আকাশ, ঝিরিঝিরি বাতাস, চারিপাশে নানা ধরনের সবুজ গাছ-গাছালি, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং রোমান্টিক একটা পরিবেশ বিরাজ করে সেসময়। বুক ভরে স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নেয়া যায় সেখানে, পরিবেশটা উপভোগ করা যায়। বৃষ্টির দিনে তো সেখানে আরও মজা। বৃষ্টিতে ভিজে গাছগুলো যেন তার যৌবন ফিরে পায়। সবমিলিয়ে ছাদ বাগানে বেশ কিছুটা সময় কোয়ালিটি সময় কাটানো যায়। আমরা সময় পেলেই ছাদে ছুটে যাই এবং ছাদ বাগানে সময় কাটাই। কেননা প্রকৃতির মাঝে আপনি যতক্ষণ থাকবেন ততক্ষণই আপনি একটা অন্য জগতে থাকবেন। সেখানে নেই কোন কোলাহল, টেনশন, ঝামেলা ইত্যাদি। সুতরাং আমাদেরকে বেশি বেশি প্রকৃতির মাঝে থাকা উচিত, তাতে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
বর্তমানে শহরে বিভিন্ন কোম্পানি রয়েছে যারা আপনার ছাদের সাইজ অনুযায়ী পুরো বাগান রেডি করে দেয়। নির্দিষ্ট পেমেন্টের বিনিময়ে তারা টব, মাটি, গাছ, প্রয়োজনীয় সার, লোহার ফ্রেম থেকে শুরু করে বাগানের জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবকিছু এনে নিজেদের দায়িত্বেই আপনার বাগান কমপ্লিট করে দিয়ে যায়। কিছু কিছু নার্সারি রয়েছে যারা ফুল গাছ ভাড়া দেয়, অর্থাৎ তাদের নার্সারির গাছ এনে আপনার ছাদে সাজিয়ে দিয়ে যাবে এর বিনিময়ে আপনাকে মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণে পেমেন্ট করতে হবে। আমাদের বাংলাদেশের সুপরিচিত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ সাহেব দীর্ঘদিন ধরে শহরের ছাদ বাগানের উপর শিক্ষামূলক নানা ভিডিও ফিচারের মাধ্যমে মানুষকে উদ্ভুদ্ধ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে মানুষ সচেতন হয়েছেও, প্রায় প্রত্যেকেরই ছাদে যতটুকুই খোলা জায়গা থাকুক না কেন সেখানে নানা জাতের গাছ লাগায়। এর ফলে শহরে কিছুটা হলেও আস্তে আস্তে সবুজের ঠাঁই হচ্ছে।
আমার বাসার ছাদেও আমরা বেশকিছু ফল ও ফুলের গাছ লাগিয়েছি। এই সবগুলো ছবিই আমার ছাদ বাগান থেকে তোলা। বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা বাগানে পর্যাপ্ত সময় দেয়। আমিও প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা নিয়ম করে ছাদ বাগানে গিয়ে প্রতিটি গাছে পানি দেই। সেখানে খোলা আকাশের নিচে একটু বসি, হাঁটাহাঁটি করি, বেশকিছুটা কোয়ালিটি সময় কাটাই। এতে করে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। ছাদ বাগান থাকার ফলে বাসার বাচ্চারা নানা ধরনের গাছ সম্পর্কে ভালো ধারণা পায়, কোনটা কি গাছ, কোন ফলটা কি গাছে জন্মায়, কোন সবজি গাছটা কেমন এসব তারা সহজেই জানতে পারে। শহরের বাচ্চাদের জন্য গ্রামে গিয়ে এসব বিষয় শেখাটা সবসময় হয়ে ওঠে না, তাছাড়া বই পড়ে কি আর বাস্তবের মতো শেখা যায়? সবমিলিয়ে শহরের জীবনে ছাদ বাগানের গুরুত্ব অপরিসীম।
আসুন আমরা গাছ লাগাই। যার যতটুকু জায়গা আছে সেখানেই গাছ লাগাই। জায়গা না থাকলে টবে করে বারান্দায় বা ছাদে গাছ লাগাই। তাতে করে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে এবং আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর পৃথিবী রেখে যেতে পারবো।
সবাইকে ধন্যবাদ।
খুব সুন্দর ভাবে আপনি পোস্টি উপস্থাপন করেছেন।
আমাদের অনেক সতর্ক হতে হবে, পাশাপাশি পরিবেশকে রক্ষা করতে হলে আমাদের সবাইকেই বৃক্ষ রোপন করতে হবে।
অনেক ধন্যবাদ দাদা!
খুব সুন্দর একটা পোস্ট দেখে খুব ভাল লাগলো
অনেক ধন্যবাদ রোমেন।
আপনার লেখনীতে একটা মেধার সমন্বয় দেখা যায়। আপনার লেখা যত দেখি ততো বেশি মুগ্ধ হয়ে যায়। এভাবে লিখে যান। অনেক দূর যেতে হবে আপনাকে। ধন্যবাদ।
ইনশাআল্লাহ ভাই, অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও।
আপনারা সবাই পাশে থাকলে নিশ্চয়ই অনেক দূর যেতে পারবো।
সত্যিকার অর্থে ভালো লাগার মত একটি পোস্ট।
অনেক ধন্যবাদ আপু।
অসাধারন ভাইয়া!!
অনেক ধন্যবাদ আপু।
Cultivating some plant joy 💚🌱 with a resteemed!
Many many thanks!
Blooming marvelous!🌺 This deserved a resteem.
Many thanks dear!