'বাংলায় তারার মেলা' কমিউনিটিতে আমার পরিচিতি মূলক প্রথম পোস্ট | ১০% বেনিফিসিয়ারি হবে @btm-school
আমি ও আমার জন্মস্থান সম্পর্কে কিছু কথা!
ছবি: স্টিমিটে আমার পথচলা শুরু।
আসসালামু আলাইকুম। আমি তাওহীদুর রহমান, জন্ম ১৯৮৫ সালের ৫ জুলাই। জন্মস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের সর্বশেষ জেলা সাতক্ষীরা, যেটা খুলনা বিভাগে পড়েছে। সাতক্ষীরা জেলার সদর উপজেলার অন্তর্গত ঘোনা ইউনিয়নের ভাড়ুখালী গ্রামের একটা সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে আমি জন্মগ্রহণ করেছি। আমার বাবা বর্তমানে গ্রামের বাড়িতে অবসর জীবন যাপন করছেন, তিনি জীবনের একটা বড় সময় দেশের বাইরে কাটিয়েছেন এবং আম্মা গৃহিণী। আমরা দুই ভাই-বোন, আমার ছোট বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে ঢাকার নামী একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে। সাতক্ষীরা একটা সীমান্তঘেষা জেলা, আমার গ্রাম থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে গেলেই ইন্ডিয়ান বর্ডার। সেখানে একটা স্থল বন্দর রয়েছে, যার নাম 'ভোমরা স্থল বন্দর'। এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াতসহ দুদেশের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পণ্য যেমন পেঁয়াজ, গম, পাথর, কয়লা ইত্যাদি আমদানি-রপ্তানী হয়ে থাকে। বর্ডার পার হলেই ওপাশে ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগণা তথা পশ্চিমবঙ্গ, এছাড়া কোলকাতা শহর এখান থেকে খুবই নিকটে, মাত্র পঁচাত্তর কিলোমিটার।
ছবি: এটা আমার বাড়ির পাশের একটা গ্রামীণ রাস্তা।
বাংলাদেশের আর দশটা সুন্দর গ্রামের মতো আমার গ্রামও ছবির মতো সুন্দর। ছায়াঢাকা, পাখিডাকা, শান্ত-সুনিবিড় ও প্রাকৃতিক পরিবেশের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এই গ্রামে মুসলমান, হিন্দু, কামার, কুমোর, জেলে, তাতী তথা সব জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও পেশার মানুষজন মিলেমিশে একসাথে বসবাস করে। বড় বড় উৎসবগুলো সকলে মিলে একসাথে পালন করে। আমাদের সাতক্ষীরায় গ্যাস লাইন যায় নাই, ফলে সেভাবে বড় কোন মিল-ফ্যাক্টরী গড়ে ওঠেনি। তাই কৃষি প্রধান অঞ্চল হওয়ায় প্রায় সব পরিবারেরই কম-বেশি কৃষি জমি রয়েছে। সেখানে ধান, পাট, গম, আখ, আলু, সরিষা, ভুট্টাসহ সব ধরনের খাদ্যশস্য ও শাক-সবজি উৎপাদন হয়। যেগুলো আবার এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রির জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়। ছোটবেলায় দেখেছি, প্রায় সবার বাড়িতেই উঠানের এক কোণে এক বা একাধিক গোলা বা গোলাঘর থাকতো, তার মধ্যে সারা বছরের খোরাকি ফসল রাখা হতো। আমাদের বাড়িতেও সেরকম দুটো গোলাঘর ছিল। এখন আর সেসব কারো বাড়িতেই দেখা যায় না। গ্রামের একপাশ দিয়ে একটা খাল (ছোট নদী) এঁকেবেঁকে চলে গেছে। সেই খালে সারাবছর ধরে কিছু মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। শুকনো মৌসুমে এই খালের পানি দিয়ে ফসলের ক্ষেতে পানি সেচ দেয়া হয়। এছাড়াও এই খালের মাধ্যমেই মাঠের সবগুলো মাছের ঘেরে (জলাধার) পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। সবমিলিয়ে আমাদের গ্রামের এই খালের বহুমাত্রিক ব্যবহার এবং উপকারিতা অপরিসীম।
ছবি: আমাদের গ্রামের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মহদান।
ছোটবেলার স্মৃতি হাতড়িয়ে খুঁজে পাই, তখনকার দিনে আমাদের গ্রামের প্রায় সবারই মাটির ঘর ছিল, আমাদেরও ছিল। যার ভিত (ফাউন্ডেশন) এবং চারিপাশের দেয়ালগুলো ছিল মাটির তৈরি আর ঘরের ছাউনি দেয়া হতো ধান ও গমের খড় বা বিচলি দিয়ে। সেসব ঘরের চারিপাশে অথবা তিনপাশে বড় বারান্দা থাকতো। বাড়ির চতুর্দিকে মাটির পাঁচিল বা সীমানা প্রাচীর ছিল। আস্তে আস্তে সময়ের বিবর্তনে বাড়িগুলোতে খড়ের ছাউনি সরিয়ে টালি বা খোলার ছাদ দেয়া শুরু হলো। আরও পরে টিন এসে সে জায়গাটাও দখল করে নিল। আর বর্তমানে সেখানে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই প্রকান্ড অট্টালিকা দোতলা, তিনতলা, পাঁচতলা উচু হয়ে স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। মাঠের ফসলি বড় বড় জমিগুলো ভাগ হতে হতে (বড় পরিবারগুলো ভেঙে ছোট ছোট পরিবার হওয়ায়) আইল বা বাতর দিয়ে দিয়ে ছোট হয়ে গেল। আগের মতো ফসলও সেসব জমিতে এখন আর হয়না। আগে যেখানে বছরে তিনবার ফসল ফলতো, বর্তমানে সেখানে বছরে মাত্র একবার ফসল (বোরো মৌসুমে) ফলে। বছরের বাকি সময়গুলোতে সেখানে মাছ চাষ হয়। মাঠের পর মাঠ ফসলি জমি এখন মাছ চাষের জন্য ঘের বানিয়ে রাখা হয়েছে। সেসব ঘেরে গলদা চিংড়ি, বাগদা চিংড়িসহ সব ধরনের দেশি মাছ উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমানে সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণাঞ্চলের (খুলনা বিভাগের) কয়েকটি জেলায় উৎপাদিত এই চিংড়িকে 'হোয়াইট গোল্ড' বা সাদা সোনা বলা হচ্ছে। এসব মাছ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে, ফলে এই খাত থেকে আমাদের দেশ বেশ ভালো পরিমাণেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারছে।
ছবি: মাছের ঘেরে উৎপাদিত গলদা চিংড়ি।
ছবি: চিংড়ির পাশাপাশি অন্যান্য সকল মাছও উৎপাদিত হয়।
আমাদের গ্রামে পর্যাপ্ত প্রাইমারি স্কুল, হাই-স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মক্তবসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভালো মানের শিক্ষা দেয়া হয়। ফলে আমাদের গ্রামে শিক্ষিতের হার তুলনামূলক অনেক বেশি। প্রায় সব ধরনের পেশা তথা ব্যবসায়ী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসর, শিক্ষক, আর্মি অফিসার, নৌবাহিনীর অফিসার, পুলিশ অফিসার, র্যাব, বিজিবি, আইনজীবী, বিসিএস ক্যাডারসহ প্রশাসনের প্রায় সকল ক্ষেত্রে আমাদের গ্রামের ছেলে-মেয়েরা সুনামের সাথে সারাদেশ জুড়ে কাজ করছে। গ্রামের যুবক শ্রেণির একটা বড় অংশ দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছে, তারাও সেখান থেকে প্রচুর রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে, ফলে আমাদের গ্রাম ও বাংলাদেশ একই সাথে অনেক উপকৃত হচ্ছে। সেসব টাকায় গ্রামের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা তৈরি হচ্ছে, নতুন নতুন ব্যবসা-কারখানা গড়ে উঠছে। সেসব কারখানায় আবার গ্রামের বেকার ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হচ্ছে। আমাদের গ্রামের মাঝামাঝি গেলে খুবই সুন্দর একটা ভিউ দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে এক জায়গাতেই অনেকগুলো শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমন প্রাইমারি স্কুল, হাই-স্কুল, হাফিজিয়া মাদ্রাসা এবং কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান। আর এসব গুলোকে কেন্দ্র করে সবার মাঝে রয়েছে বিশাল বড় একটা খেলার মাঠ। স্কুলের বাচ্চারা সেখানে দৌড়াদৌড়ি ও খেলাধুলা করে থাকে, তাছাড়া গ্রামের প্রায় সব বয়সী ছেলেরা সেই মাঠে ফুটবল, ক্রিকেটসহ সব ধরনের খেলা নিয়মিত খেলে থাকে।
ছবি: আমাদের গ্রামের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠ।
এই ভাড়ুখালী গ্রাম থেকেই আমি প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ২০০৩ সালে মাধ্যমিক পাশ করি এবং ২০০৫ সালে 'সীমান্ত আদর্শ কলেজ' থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করি। এরপর ঢাকায় চলে আসি, ২০০৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হই। সময়ের পরিক্রমায় ২০১১ সালে অনার্স এবং ২০১২ সালে সুনামের সাথে মাস্টার্স শেষ করে বের হয়ে আসি। ২০১১ সালে অনার্স শেষ হওয়ার সাথে সাথে ঢাকার একটা স্বনামধন্য কর্পোরেট আইটি প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবন শুরু করি। সেখানে চাকরিরত অবস্থায়ই জাহাঙ্গীরনগর থেকে মাস্টার্সটাও শেষ করি। প্রথম কর্মস্থলে একটানা সাত বছর কাজ করার পরে ২০১৭ সালে সেইম ক্যাটাগরির আরেকটা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে চাকরি পরিবর্তন করি। এখানে এসে পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে অনেকাংশেই সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই। এরপর ২০২১ সালে এসে এই চাকরি থেকেও ইস্তফা দিই এবং কাছের কয়েকজন মানুষকে নিয়ে নিজেদের পূর্ব-অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একটা ব্যবসা শুরু করি। যদিও ব্যবসা শুরুর প্রথম দিকে করোনা ভাইরাস এসে কিছুটা বাঁধাগ্রস্ত করেছিল কিন্তু আল্লাহর রহমতে বর্তমানে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি এবং আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা মূলত এইচ.আর (রিক্রুটমেন্ট, হেড হান্টিং, ট্রেইনিং, ডকুমেন্টেশন, পে-রোল ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি) এবং আই.টি (ইমেজ এডিটিং, অন ডিমান্ড সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, এপস ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি) বিষয়ক কনসাল্টেন্সী ও সার্ভিস দিয়ে থাকি।
ছবি: আমার কলেজের সামনে।
ছবি: আমার ক্যাম্পাস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
ছবি: ক্যাম্পাসে আমার হলের সামনে।
এরমধ্যে ২০১৩ সালে নিজের পছন্দে ও পরিবারের সম্মতিতে নিজের ক্যাম্পাসেরই এক মেয়েকে বিয়ে করি। ২০১৫ সালের শেষের দিকে আমাদের ঘর আলো করে আমাদের একমাত্র ছেলে তাহমিদুর রহমান আসে আমাদের কোলজুড়ে। বর্তমানে তাহমিদের বয়স প্রায় সাত বছর হতে চলল। তাহমিদের আম্মুও একটা বিদেশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত রয়েছে। চাকরি, ব্যবসা, সংসার, পরিবার নিয়ে বর্তমানে আমি ঢাকায় আছি এবং আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি আলহামদুলিল্লাহ। কাজের অবসরে বই পড়ি, লেখালেখি করি, সিনেমা দেখি, সন্তানকে সময় দেই।
আরেকটা কথা না বললেই নয়, বর্তমানে দিন দিন ক্রিপ্টো কারেন্সি জনপ্রিয় হচ্ছে। বিটকয়েন ছাড়াও আরও বেশকিছু ক্রিপ্টো কারেন্সির নাম আমরা শুনতে পাই। আমি আরও কয়েক বছর আগে থেকেই বিভিন্ন সাইটে মাইনিং করে ক্রিপ্টো উপার্জন করার ব্যাপারটা জানতাম। তবে সম্প্রতি কাছের এক ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে 'স্টিমিট.কম' সাইটের সন্ধান পাই। সাইটটা নিয়ে আমি গুগল, ইউটিউব ও উইকিপিডিয়া থেকে রিসার্চ করে অনেক পজিটিভ তথ্য পেয়েছি। এখানে মূলত লেখালেখির মাধ্যমে ক্রিপ্টো স্টিমিট উপার্জন করতে হয়, পরে উপার্জিত স্টিমিটগুলো ডলারে কনভার্ট করে নিজস্ব কারেন্সিতে ট্রান্সফার করা যায়। বর্তমানে স্টিমিট সাইটটি ঘরে বসে লেখালেখির মাধ্যমে অনলাইন থেকে উপার্জনের একটা জনপ্রিয় মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
এই হচ্ছে আমি ও আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আশাকরি সবাই আমার সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পেয়েছেন।
ভালো থাকবেন, সবার জন্য শুভ কামনা!
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
অনেক সুন্দর একটি লেখা। অসাধারণ মেধার সমন্বয়। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই।
খুব সুন্দরভাবে প্রকাশ পেয়েছে আপনার লেখা গুলা
অনেক ধন্যবাদ রোমেন।
আপনার সাথে পরিচয় হয়ে অনেক ভালো লাগলো।
আশাকরছি সবাইমিলে কাজ করে অনেক এগিয়ে যাবো।
ইনশাআল্লাহ!
ভাই আপনার পরিচিতি মূলক পোস্ট খুব ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ
আপনাকেও ধন্যবাদ আপু।
ভাইয়া আপনি জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির
জাহাঙ্গীরনগর এক্সাম দিয়েছিলাম বাট হয় নি আমার
হুম, আমি জাহাঙ্গীরনগরের।
আপনার ওখানে হয়নি শুনে দুঃখ পেলাম।