বেড়ানো | মোহাম্মাদী গার্ডেন | ধামরাই, ঢাকা | ১০% @btm-school
ঢাকা শহরে পরিবার-পরিজন বা ছোট শিশুদের নিয়ে ঘুরতে বা বেড়াতে যাওয়ার মতো জায়গার অনেক অভাব। চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন সহ অন্যান্য আরও যেগুলো রিক্রিয়েশন সেন্টার রয়েছে সেগুলোর অবস্থা ও পরিবেশ খুব একটা ভাল নয়। দেখা যায়, সেসব জায়গায় সবসময় প্রচুর ভীড়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নানা অব্যবস্থাপনা ইত্যাদির কারণে বর্তমানে যাওয়ার অবস্থা নেই। সেজন্য ঢাকার মানুষজন বর্তমানে ঢাকার আশেপাশে সকালে গিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসা যায় এমন স্বল্প-দূরত্বের জায়গাগুলোতে দিনব্যাপী ট্যুর দিয়ে থাকে। ঢাকার আশেপাশে সাভার, নরসিংদী, কেরাণীগঞ্জ, গাজীপুর ইত্যাদি জায়গায় একাধিক সুন্দর সুন্দর পিকনিক স্পট, হোটেল, রিসোর্ট, ক্যাম্পিং সাইট ইত্যাদি রয়েছে। আজ আমরা বেড়াতে যাবো তেমনই একটা পিকনিক স্পটে যার নাম মোহাম্মাদী গার্ডেন।
মোহাম্মাদী গার্ডেন অবস্থিত ঢাকার পাশের জেলা মানিকগঞ্জের ধামরাইয়ের মহিষাশী গ্রামে। ঢাকা থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার দূরের এই পার্কে যেতে হলে ঢাকার গাবতলী, সাভার পার হয়ে ধামরাইয়ের কালামপুর বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে, সেখান থেকে রাস্তার অপোজিটে সংযোগ সড়ক ধরে কিছুদূর এগিয়ে গেলেই পাবেন মহিষাশী বাজার, তার পাশেই এটার অবস্থান। উক্ত বাজারে গিয়ে যেকোন লোককে জীজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দিবে মোহাম্মাদী গার্ডেনের রাস্তা। পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রাইভেট কারে করে যেতে পারেন, বাস ভাড়া করে অফিসের কলিগদের নিয়ে যেতে পারেন, আবার বন্ধু-বান্ধব নিয়ে লাইনের বাসে করেও সেখানে যেতে পারেন। আমি যেসময় গিয়েছি তখন এখানে ঢোকার প্রবেশমূল্য ছিল পারহেড ৩০ টাকা। পরে মেবি কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। এখানে বিভিন্ন স্পট ভাড়া নিয়ে কর্পোরেট প্যাকেজের আওতায় সময় কাটানো ও নানা ইভেন্ট আয়োজন করা যায়, আবার নরমালী টিকেট কেটে সমস্ত পার্কে ঘুরে বেড়াতেও পারবেন। তবে কোন কর্পোরেট প্যাকেজের আওতায় গেলে আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখতে হয়, কেননা এরসাথে সবার খাওয়া-দাওয়া ও ক্যাটারিংয়ের বিষয় জড়িত থাকে।
পার্কটি প্রতিষ্ঠা করেছেন ঐ এলাকার সৌখিন শিল্পপতি জনাব শেখ আবদুস সামাদ। মহিষাশী গ্রামে অবস্থিত বলে তিনি পার্কের নাম দিয়েছেন মহিষাশী মোহাম্মদী গার্ডেন, কিন্তু সারাদেশে এটা মোহাম্মাদী গার্ডেন নামেই বেশি পরিচিত। প্রথমে পার্কের জায়গা একটু কম ছিল, পরে চারিপাশে জায়গা বাড়িয়ে বর্তমানে ২০ বিঘার মত করা হয়েছে। এখানে আগমনকারীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পার্কের চারিদিকে উচু পাঁচিল দেয়া রয়েছে। এখানে মোট ৪ টা পিকনিক স্পট রয়েছে যেগুলো কর্পোরেট প্যাকেজের আওতায় ভাড়া দেয়া হয়। খেলাধুলার জন্য কয়েকটা ছোট-বড় মাঠ রয়েছে, বড়দের ও বাচ্চাদের জন্য আলাদা সুইমিং পুল রয়েছে, বড় বড় পুকুর রয়েছে, পুকুরের উপর আড়াআড়ি দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ রয়েছে, সেই পুকুরে আবার হাঁসের আকৃতির নৌকা রয়েছে বাচ্চাদের নিয়ে চড়ার জন্য। পুকুরের মাঝখানে আবার শাপলা আকৃতির ফোয়ারাসহ নানা স্থাপনা রয়েছে। শিশুদের খেলার জন্য নানারকম খেলাধুলার ব্যবস্থা সহ আধুনিক সব রাইড রয়েছে, মিনি ট্রেন রয়েছে, মিনি চিড়িয়াখানা রয়েছে। কটেজ টাইপের তিন তলা একটা বিল্ডিং রয়েছে , সেখানে এসি রুমে রেস্ট করারও ব্যবস্থা রয়েছে।
আমরা গিয়েছিলাম ২০১৯ সালের কোন এক দিন অফিসের ফ্যামিলি গেড টুগেদারে। আমরা দুটো বাস ভাড়া করে অফিসের প্রায় সব কলিগ ও তাদের ফ্যামিলি মেম্বারদের নিয়ে গিয়েছিলাম। সারাদিনব্যাপী সেখানে আমরা নানা ইভেন্টের মাধ্যমে দিনটাকে পার করেছিলাম। বড়দের জন্য ফুটবল খেলা, দৌড় প্রতিযোগীতা, সুইমিং ছাড়াও ছোটদের জন্য নানা রকম খেলাধুলার আয়োজন ছিল। উচু নাগরদোলায় চড়া, ঘুর্ণয়মান দোলনায় চড়া, মিনি ট্রেনে চড়া, হাঁসের নৌকায় চড়া, সুইমিং পুলে গোসলসহ অনেক মজার মজার ইভেন্ট ছিল ছোটদের জন্য। সবশেষে মজাদার সব খাবার আমাদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল বহুগুনে। সন্ধ্যায় সারাদিনব্যাপী আয়োজিত বড় ও ছোটদের নানা ইভেন্টের বিয়জীয়দের জন্য ছিল পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আর ছোটদের সবার জন্যই উপহার ছিল নানারকম খেলনা।
এভাবে আমরা শহরের কর্মব্যস্ত জীবন থেকে ছুটি নিয়ে একটা দিন কোলাহলমুক্ত পরিবেশে প্রকৃতির কাছাকাছি পরিবার পরিজন নিয়ে মোহাম্মাদী গার্ডেনে বেড়িয়ে এসেছিলাম। অনেক মজা হয়েছিল আমাদের সেই দিনব্যাপী ট্যুরে। সময় ও সুযোগ পেলে আপনারাও ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকে। সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আমার জন্য দোয়া করবেন।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
অসাধারণ ভাইয়া!!
ধন্যবাদ।
অস্থির ভাই
ধন্যবাদ আশিকুর ভাই।
দারুন পোস্ট ভাইয়া।
অনেক ধন্যবাদ দাদা।
অফিস থেকে মনে হয় একবার পিকনিকে গেছিলাম এখানে সেই মাঠে আমি ক্রিকেট খেলেছিলাম মনে আসে
হুম, এটা সেই জায়গা।
আমি এখানে ২ বার গেছি, বিডিজবস থেকে একবার, এনআরবি জবস থেকে একবার।
মুটামুটি ভাল লাগছে ভাইয়া জায়গা টা
আসলেই অসাধারণ লেখনী আপনার। প্রতিটি বর্ণনা প্রাণ স্পর্শ করে। অপূর্ব।
অনেক ধন্যবাদ ভাই।