কে বড় দার্শনিক পাড়ার মুদির দোকানদার নাকি রবীন্দ্রনাথ?
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া একটি উন্মুক্ত প্লাটফর্ম যেখানে প্রত্যেক মানুষ নিজের স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতে পারেন।এবং যেটা অনেক সহজেই সবার কাছে পৌঁছে যায়।বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়াতে গঠনমূলক আলোচনা ও সমালোচনার পাশাপাশি অনেক নেতিবাচক বিষয় দেখা যায়।প্রত্যেক জিনিসেরই ভালো ও মন্দ দুটো দিকই থাকে।আমাদের উদ্দেশ্য হোক ভালোর প্রতি আলোকপাত।তো এই রকম একটি সোশ্যাল মিডিয়াতে খেয়াল করলাম আমার একটি পরিচিত জুনিয়র ছেলে স্ট্যাটাস দিয়েছে যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ে পাড়ার দোকানদারের দর্শন অনেক বেশি।তো এই স্ট্যাটাস টা দেখে আমার বিষয়টি ঠিক হজম হলো না।আমি সরাসরি তাকে প্রশ্ন করলাম তুমি কিভাবে এই সিদ্ধান্তে স্থির হলে যে রবীন্দ্রনাথ থেকে পাড়ার দোকানদারের জীবন দর্শন অনেক বেশি ?
ছেলেটির বয়স অল্প এবং কিঞ্চিৎ বেয়াদব ও বটে।সে অনেক বিজ্ঞের মত আমাকে জ্ঞান দিলো যেটা আমার কাছে স্পষ্ট হলো যে সে অন্যের বুলি আওড়াচ্ছে।আমি তাকে বললাম তুমি কি রবীন্দ্রনাথ এর ব্যাপারে পড়াশোনা করেছো?উত্তরে সে জানালো অনেক কবিতা ও গল্প সে পড়েছে।আমি বললাম যে একজন মানুষের লেখা পড়ে তাঁকে সম্পূর্ণ চেনা যায়না।একটি লেখার মাধ্যমে একজন মানুষের সেই সময়ে তার উপলব্ধি ও চিন্তা চেতনার প্রতিফলন টা লক্ষ্য করা যায়।তাঁকে সম্পূর্ণ ভাবে জানতে হলে তার সামগ্রিক জীবন সম্বন্ধে অনুসন্ধান করা উচিত।কিন্তু ছেলেটি তর্ক করেই গেলো।আমিও আর তর্ক বাড়ালাম না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র।রবি ঠাকুরের বড় ভাই দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন দার্শনিক ও কবি ,মেঝো ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন ICS এর প্রথম ভারতীয় সদস্য।আর সেজো ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন composer ও playwright।কিন্তু রবির পড়াশোনায় মন ছিল না।স্কুল ও ছেড়ে দিলো।চলতে থাকলো গৃহ শিক্ষকের কাছে পাঠদান।রবির দিদির দারুণ আক্ষেপ ছিল তার ছোট ভাইটি মানুষ হলো না।এত বড় শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত পরিবাবের ছেলের এই ব্যর্থতা রবির দিদিকে মর্মাহত করতো।
কিন্তু সেই রবির পরিচয়ে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের মানুষের কাছে ঠাকুর পরিবার পরিচিত হয়েছে।রবি ঠাকুর সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন।জীবনের নানা সংঘর্ষ ও দুঃখ যন্ত্রনা তিনি ভোগ করেছেন।একে একে হারিয়েছেন অনেক প্রিয়জনকে অকালে।নিজের স্ত্রী পুত্রদের।এমন কি কনিষ্ট পুত্র রথীন্দ্রনাথ এর চলে যাওয়া ও তিনি সহ্য করেছেন অনেক যন্ত্রণাকে হৃদয়ে ধারণ করে।এতো স্বজন বিয়োগ তবু রবি ঠাকুর জীবন বিমুখ হননি।এই প্রসঙ্গে রবির দাদা একবার বলেছিলেন যে আমাদের সকলের পা পিছলিয়েছে কিন্তু রবির কোনোদিন ও নয়।এমনি ছিল মজবুত জীবন দর্শন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের।
একবার একটি লেখায় রবি ঠাকুর লিখছেন যে বালক বয়সে তিনি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের "মেঘনাদ বধ" মহাকাব্য টি পড়েছিলন।মহাকাব্যটি পড়ে রবি বলেছিলেন এই রচনায় কোনো অসাধারণ ঘটনার বর্ণনা নেই নেই কোনো চরিত্রের মহত্ব।একদম শেষে তিনি বলেছিলেন এটা মহাকাব্য নয়।তারপর বহুদিন কেটে গেছে এখন তিনি যুবক।বাল্য বয়সে সেই লেখার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলছেন"বহু পূর্বে মাইকেল বাবুর মেঘনাদ বধ মহাকাব্য লইয়া একটি তিক্ত সমালোচনা লিখিয়াছিলাম।অল্প বয়সের স্বল্প জ্ঞান আর অপরিপক্ব মন সেদিন ইহার মাহাত্ম বুঝতে পারে নাই।ইহা মাইকেল বাবুর অসাধারণ সৃষ্টি।কাঁচা আমের স্বাদ টক হইয়া থাকে,সেই আম পাকিলে তাহা সুমিষ্ট হয়।"
তো এই কিঞ্চিৎ বেয়াদপ ছেলেটি আসলে একটি কাঁচা আম।আম পাকার অপেক্ষায় রইলাম।
ধন্যবাদ সবাইকে।।
Support @amarbanglablog by Delegation your Steem Power
100 SP | 250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP |
![](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmcvMsV4X3jHamsDPXsntpwf6ovhnU3g43AwEewtjdfChN/20210630_010817_0000.png)