জনপ্রিয় বাঙালি কবি কাজী নজরুল ইসলামsteemCreated with Sketch.

in Steem Bangladesh3 years ago

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো বন্ধুরা!

কেমন আছেন সবাই। আমি @mamunxxx 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। আজ আমি অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে লিখবো।


FB_IMG_1630066880244.jpg

FB_IMG_1630066883052.jpg

FB_IMG_1630066886336.jpg

FB_IMG_1630066889583.jpg

FB_IMG_1630066892461.jpg

FB_IMG_1630066886336.jpg

FB_IMG_1630066895166.jpg

FB_IMG_1630066900406.jpg

" জাগরণের কবি
কাজী নজরুল ইসলাম "
বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ কাজী নজরুল ইসলামের আজ ৪৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭ আগস্ট, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র; কাজী নজরুল ইসলাম চিরতরে অন্য ভুবনে পাড়ি জমান। যিনি বলেছিলেন, ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো, তবু আমারে দেবো না ভুলিতে।’ সত্যিই নিজেকে ভুলতে দেননি আপন সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে।

বিদ্রোহী কবি হিসেবে তাঁকে বিশেষায়িত করা হলেও প্রেমিক ও মানবিক কবি হিসেবে তাঁর সাহিত্য ও সংগীতকর্ম প্রোজ্জ্বল। বাঙালির চিরকালের চেতনাকে সমুন্নত করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সকল কালের, সকল জাতির কবি। বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, এই কবি দুই বাংলায় সমানভাবে সমাদৃত।

ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের তরঙ্গকে নজরুল তাঁর সাহিত্যে বিপুলভাবে ধারণ করেছেন। সেই সময়ে ধর্মান্ধ মানুষদের তিনি পুনর্জাগরণের ডাক দিয়েছেন এবং এক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল একজন বলিষ্ঠ নেতার মতো। কোরআন, গীতা ও মহাভারতের গভীর জ্ঞান এবং আরবি, ফারসি, সংস্কৃত ও বাংলার শব্দভান্ডারে দুর্লভ বিচরণ ছিল তার। ছিল উদাত্ত কন্ঠ ও রাগ-রাগিণীর জ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গে বাংলার কীর্তন বাউল জারি-সারি- ভাওয়াইয়ার প্রতি প্রাণের টান। সেই সাথে ফারসি গজলের প্রাণ মাতানো সুরবাহারের প্রতিও ছিল তার গভীর অনুরাগ।

অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ কাজী নজরুল; তাঁর লেখনির মাধ্যমে জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। ব্রিটিশ আমলে সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে তিনি বাংলা ও বাঙালির জয়গান গেয়েছেন। ‘বাঙালির বাংলা’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন: বাংলা বাঙালির হোক! বাংলার জয় হোক! বাঙালির জয় হোক। মহান মুক্তিযুদ্ধে কবির গান ও কবিতা অনিঃশেষ প্রেরণা জুগিয়েছে। তাঁর লেখনী থেকেই আমরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা পেয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।

আধুনিক বাংলাকাব্যের ইতিহাসে কাজী নজরুল ইসলামই একমাত্র কবি, যিনি সমান দক্ষতার সঙ্গে হিন্দু ও মুসলমান উভয় ঐতিহ্যকে আপন কাব্যে ব্যবহার করতে সমর্থ হয়েছেন। উভয় ঐতিহ্য থেকে অবলীলাক্রমে তিনি বিষয়, উপমা, রূপক, বাকভঙ্গি প্রভৃতি আহরণ করেছেন। তিনি একদিকে যেমন বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কালীকীর্তন রচয়িতা (রাঙ্গাজবা, ১৯৩৬), তেমনি অন্যদিকে তিনি বাংলা ইসলামী গানের প্রবর্তক (জুলফিকার, ১৯৩২) এবং কাব্যে আমপারা (১৩৩৩), মরুভাস্কর (১৩৬৪) প্রভৃতির প্রণেতা।

নজরুল মানসে হিন্দু ও মুসলমান বৈপরীত্যের দ্যোতক না হয়ে পরিপূরক হতে পেরেছে তাঁর সাম্যবাদী চিন্তার ফলে। নজরুলের মতো চরম দু:সাহস নেই আমাদের যে নির্ভয়ে উচ্চারণ করি,
"তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয়!
মানুষেরে ঘৃণা করি’
ও’ কা’রা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি’
ও’ মুখ হইতে কেতাব-গ্রন্থ নাও জোর ক’রে কেড়ে,
যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে
পূজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল! মূর্খরা সব শোনো,
মানুষ এনেছে গ্রন্থ;-গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো!’

দেশ ও জাতির সকল সঙ্কটে, বৈশ্বিক সকল দুর্যোগে আজো অবিস্মরণীয় মহিমায় কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা গান আমাদের দোলায়িত করে প্রাণায়িত করে। নবযুগের লেখক, ধুমকেতুর উজ্জীবক, লাঙ্গলের সম্পাদক, সব্যসাচী সাংস্কৃতিক, কিংবদন্তী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সময়ের প্রয়োজনেই সকল বাঙালির কাছে চিরঞ্জীব।

কাজী নজরুল কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। কিছুদিন তিনি সাংবাদিক হিসেবেও কাজ করেছেন। এসময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। এসময় তিনি ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মত কবিতা; ধূমকেতুর মত সাময়িকী। জেলে বন্দী হলে পর লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী।

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আরম্ভ হলে তিনি সেনাদলে যোগ দেন। স্কুলে পড়া ছেড়ে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে করাচি চলে এলেন। যুদ্ধ শেষ হলে নজরুল হাবিলদার হয়ে ফিরে এলেন। তখন তার বয়স আঠারো-উনিশ। এ সময়ে বিপ্লবী বীর বারীন ঘোষ এবং কমরেড মোজাফফর আহমদ এর সাথে ঘনিষ্ঠতার সুত্রে তিনি বাঁধা পড়লেন। স্বদেশী আন্দোলন, হাঙ্গামা, জেলখাটা বেদুইন নজরুল অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা নিলেন। 'ভাঙার গান’ লেখার প্রেরণা পেলেন। এভাবেই ’বিদ্রোহী’ কবির জীবনের ক্ষেত্রটি প্রস্তুত হতে লাগল। নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ’অগ্নিবীণা’ বেরুল ১৯২২ সালে।

একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে ও কাজেও “বিদ্রোহী কবি”।

নজরুল অসাম্প্রদায়িক চেতনার একজন অগ্রদূত ছিলেন। তিনি মুসলিম হয়ে ও চার সন্তানের নাম হিন্দু এবং মুসলিম উভয় নামেই নামকরণ করেন। যেমন: কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ(বুলবুল), কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধ।

১৯২৭ সালে একদিকে সাপ্তাহিক 'শনিবারের চিঠি' প্রকাশের পর থেকে তিনি রক্ষণশীল হিন্দু বিশেষত ব্রাহ্মণ সমাজের একটি অংশ এবং একই সাথে মৌলবাদী মুসলমান সমাজের রোষানলে পড়েন। ইসলাম দর্শন, 'মোসলেম দর্পণ' প্রভৃতি পত্রিকায় নজরুল-সাহিত্যের বিরূপ সমালোচনার ঝড় ওঠে। শনিবারের চিঠি-তে নজরুলের বিভিন্ন রচনার প্যারডি প্রকাশিত হতে থাকে। তবে নজরুলের সমর্থনে কল্লোল, কালিকলম প্রভৃতি প্রগতিশীল পত্রিকা এগিয়ে আসে। ১৯২৭ সালে নজরুলের কবিতা ও গানের সংকলন ফণি-মনসা এবং পত্রোপন্যাস বাঁধন হারা প্রকাশিত হয়। ওদিকে ১৯২৮ সালে কলকাতায় মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ-র মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকায় নজরুল-বিরোধিতা শুরু হয়, কিন্তু মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের সওগাত পত্রিকা বলিষ্ঠভাবে নজরুলকে সমর্থন করে।

১৯২৯ সালের ১০ ডিসেম্বর কলকাতার এলবার্ট হলে বাঙালীর পক্ষ থেকে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে এক বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাতে সভাপতিত্ব করেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, অভিনন্দন-পত্র পাঠ করেন ব্যারিস্টার এস ওয়াজেদ আলি, শুভেচ্ছা ভাষণ দেন বিশিষ্ট রাজনীতিক সুভাষচন্দ্র বসু (নেতাজী) এবং রায়বাহাদুর জলধর সেন। কবিকে সোনার দোয়াত-কলম উপহার দেওয়া হয়। এ সংবর্ধনা সভায় প্রফুল্লচন্দ্র রায় বলেছিলেন, ‘আমার বিশ্বাস, নজরুল ইসলামের কবিতা পাঠে আমাদের ভাবী বংশধরেরা এক একটি অতি মানুষে পরিণত হইবে।’ সুভাষচন্দ্র বসু বলেছিলেন, ‘আমরা যখন যুদ্ধ ক্ষেত্রে যাব তখন সেখানে নজরুলের যুদ্ধের গান গাওয়া হবে! আমরা যখন কারাগারে যাব, তখনও তাঁর গান গাইব।’

নজরুলের কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যকে দিয়েছে বিপুল সমৃদ্ধি। বৈচিত্র্যময় বাংলা গানের সবচেয়ে বড় ভান্ডারটিরও স্রষ্টা তিনি।
ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্য তিনি এক নতুন ধারার ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল এবং পাশাপাশি অনেক শ্যামাসংগীত ও ভক্তিগীতিও রচনা করেন। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং বহু গানে সুরারোপ করেছেন। সুর বৈচিত্র্যে ভরপুর এসব গান বাংলা সঙ্গীতকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে। তাঁর সৃষ্ট রাগ বিস্মিত করে বড় বড় পন্ডিতকে।

ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো মহান পুরুষ কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবি হলেও মূলত তার প্রেমিক রুপটিও ছিল প্রবাদপ্রতিম। তাইতো তিনি বলেছিলেন - ’‘বিশ্বাস করুন, আমি কবি হতে আসিনি আমি নেতা হতে আসিনি, আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম প্রেম পেতে এসেছিলাম। সেই প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নিরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম...।" এভাবেই অগ্রিম বিদায় নিয়েছিলেন চির অভিমানী কবি।

মধ্যবয়সে তিনি পিক্স ডিজিজে আক্রান্ত হন। ১৯৪২ সালে চির বিদ্রেহী রণক্লান্ত নজরুল বাকশক্তি ও মানসিক ভারসাম্য হারান। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে, বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে এবং আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তাঁকে সপরিবারে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদা দেয়া হয়। ধানমন্ডির ২৮ নম্বর রোডে বর্তমানে যে বাড়ীটি নজরুল ইন্সটিটিউট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেই ‘কবি ভবন’ ছিল বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের শেষ আবাসস্থল। ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক বিশেষ সমাবর্তনে কবিকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ এর ২১ ফেব্রুয়ারীতে তাঁকে ‘একুশে পদকে’ ভূষিত করা হয়।

১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭ আগস্ট ঢাকার পিজি হসপিটালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।কবির রচিত শাশ্বত গানের অমর বাণী "মসজিদের ও পাশে মোরে কবর দিও ভাই, যেন গোরের থেকে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই ” এই আবেদনকে প্রাধান্য দিয়ে কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।

বাঙালি জাতির সামনে চলার পথে অন্তহীন প্রেরণার উৎস নজরুলের কালজয়ী সৃষ্টিকর্ম বাংলা সাহিত্যে তো বটেই, বিশ্বসাহিত্যেও অমূল্য সম্পদ।
শ্রদ্ধা! হে বিদ্রোহী কবি! সাম্য ও মানবতার চিরঞ্জীব কবি।


সকলকে ধন্যবাদ!

Sort:  

This post has been upvoted by @boss75 from @steemcurator07 Account with support from the Steem Community Curation Project.

For more updates, keep following @steemitblog.

Best Regards!!!

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 62070.52
ETH 2422.73
USDT 1.00
SBD 2.64