আশা করি ,মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে সবাই অনেক ভালো আছেন।আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। আমি @rumana12 আজকে এ সপ্তাহের আয়োজিত কনটেস্টে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি।এই সপ্তাহের প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল আমাদের এলাকার একটি বিল অথবা নদী নিয়ে লিখতে হবে। আজকে আমি আমাদের এলাকার আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা কাঁকড়া নদী নিয়ে লিখব।আশা করি আপনাদের সকলকে আমার এই পোষ্টটি ভালো লাগবে । চলুন তবে দেরি না করে শুরু করা যাক।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। আমাদের দেশে ছোট বড় অসংখ্য নদনদী রয়েছে। মিঠা পানির এক অন্যতম উৎস হলো এই নদী। বড় বড় জলাশয় কিংবা সমুদ্র এর শাখা প্রশাখা হিসেবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে এই নদীগুলো।আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে তেমনি একটি শাখা নদী বয়ে গেছে। আমাদের এই নদীটিকে কাঁকড়া নদী নামে সবাই চিনে। তবে এই নদীর একটি অন্য নামও আছে। কাঁকড়া নদীর আরেকটি নাম হলো চিরি নদী। যদিও বেশিরভাগ মানুষ কাঁকড়া নদী বললে আমাদের এই নদীটি চিনবে। আমাদের নদীটি মোহনপুর রাবার ড্যাম পর্যন্ত গিয়ে আত্রাই নদীর সাথে মিলেছে। নদীর ধারে প্রতিদিন বেশ কিছু মানুষ গরু-ছাগল নিয়ে আসে এবং ঘাসে বেঁধে দিয়ে যায়। নদীটির এই পাড়ে থেকে ঐ পাড় দেখতে যেমন সুন্দর লাগে ঠিক তেমনি ওই পাড় থেকে এই পাড়টা দেখতে ততটাই সুন্দর লাগে। তবে বর্তমানে নদী ভাঙ্গন আমাদের এই পাড়ে বেশি। আর এই নদী ভাঙ্গন কৃষকদের চাষের জমি গুলোর ক্ষতি সাধন করছে। কয়েকদিন যাবৎ বৃষ্টি হওয়ার কারণে আমাদের নদীটির পানি অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীর তীরে বসে সময় কাটাতে এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য গুলো উপভোগ করতে আমার অসম্ভব ভালো লাগে।
আমাদের এই নদীটিতে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে জেলেরা নৌকা নিয়ে আসেন মাছ ধরার জন্য। আমাদের এলাকার বেশ কিছু জেলে আমাদের এই নদীতে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করে। আমাদের নদীটিও এর ব্যতিক্রম নয়। নদীর দুই তীরে সবুজে ঘেরা বিভিন্ন ধরনের গাছপালা ও সবুজ ঘাস যে কাউকেই মুগ্ধ করে। শরৎকালে ফোঁটা কাশফুল নদীর তীরের সৌন্দর্য আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে। নদীর তীরের জমি গুলোতে মানুষ বিভিন্ন ধরনের ফলের বাগান তৈরি করেছেন। আমাদেরও দুটি লিচুর বাগান আমাদের নদীর পাড়ে আছে। এখানে একটি কবরস্থান, একটা নার্সারি আর অনেক সুন্দর ও অনেক বড় একটি বালুচর আছে। আমাদের নদীর ধারে বর্তমানে একটা গুচ্ছগ্রাম তৈরি করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত নদীটিতে গোসল করার জন্য অনেক ছেলেমেয়ে ও বিভিন্ন বয়সের সাধারণ মানুষজন যায়।নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় তা আমরা সবাই জানি। নদীর মাছের স্বাদ পুকুরের মাছের স্বাদ এর তুলনায় ভিন্ন। নদীর মাছগুলো খেতে কম বেশি আমরা সবাই অনেক পছন্দ করি।
নদীতে যখন পানি কম থাকে তখন বিভিন্ন ধরনের মানুষ এপার থেকে ওপার হেঁটে হেঁটে পার হয়। আবার অতি বৃষ্টির কারণে বা অন্য কোন কারণে যদি কখনো নদী ভর্তি হয়ে যায় তখন ফলের বাগান গুলোতে আর কৃষি জমিতে পানি ঢুকতে শুরু করে। ভর্তি নদীতে স্রোত এতটাই বেশি থাকে যে নদীটি তার রূপ পাল্টে এক ভয়ানক রূপ ধারণ করে। নদীর পার্শ্ববর্তী যেই এলাকা গুলো একটু নিচু সেই এলাকা গুলোতে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। ভর্তি নদীতে মাছ মারার জন্য জেলেরা বিভিন্ন ধরনের জাল ব্যবহার করেন। আবার যখন নদীতে পানি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে তখন স্রোত কম থাকে এবং জেলেদের মাছ ধরার সুবিধা হয়। আমাদের এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু মানুষজন প্রায়ই নদীতে ঝিনুক মারতে যায়। তবে গত বছর নদী খননের কাজ হয়েছিল যার কারণে নদীর গভীরতা এখন অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমাদের এই নদীটিতে আমার সাথে ঘটে যাওয়া একটি স্মরণীয় মজাদার ঘটনা আছে। যা আপনাদের সাথে আজকে শেয়ার করব। ঘটনাটি ২০১৬ সালের। আমরা বেশ কয়েকজন মিলে নদীর ওপারে একটি পিকনিকের প্ল্যান করি। প্ল্যান অনুযায়ী পিকনিকের জন্য প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ জিনিস রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে নৌকায় করে নদী পার হচ্ছিলাম। কিছু দূর এগোতেই আমাদের নৌকাটি উল্টে যায় এবং সব জিনিস ভিজে যায়। নৌকায় আমরা চারজন ছিলাম। পানি স্বাভাবিক থাকায় স্রোত কম ছিল এবং আমরা সবগুলো জিনিস ধরতে পেরেছিলাম। আমরা সবাই সাঁতার জানতাম তাই কারো কোনো ক্ষতিও হয়নি। তারপর সব জিনিসগুলো পুনরায় সংগ্রহ করে নদী পার হয়ে পিকনিক শেষ করি। তখন রাত হয়ে গেছে। আমরা নৌকার অপেক্ষায় সবাই বসে ছিলাম। কিন্তু আড়াই থেকে তিন ঘন্টা অপেক্ষা করার পরেও মাঝি নৌকা নিয়ে আর আসেনি। এখন বাসায় কিভাবে ফিরব সেই ভয়ে তিনজন এতটাই কান্না করেছে যে তাদের সামলাতে রাত ১১ টা বেজে গেছে 🙃। সে রাতে মশাল জ্বালিয়ে প্রায় ৪ কিলো রাস্তা হেঁটে হেঁটে আমাদেরকে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। আসার পথে রাস্তায় মশালটি বারবার নিভে যাচ্ছিল এবং দু একজন খুব ভয় পাচ্ছিল। কয়েকজন দুষ্টামি করে ভূতের ভয় দেখাচ্ছিল তাদের। আর তারা আরো বেশি ভয় পাচ্ছিল এবং মাঝে মাঝেই চিৎকার দিচ্ছিল। আর এসব করতে করতে যখন বাড়িতে ফিরি তখন রাত ১ টা বাজে। দিনটি আমাদের জন্য অনেক মজাদার ছিল। যদিও কিছু অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটে। কিন্তু এই ঘটনা গুলোতে আমরা সবাই মজা নিয়েছি ,কারো মন খারাপ কিংবা অভিযোগ হয়নি। সেদিনের সেই ঘটনাটা মনে পড়লে এখনো আমাদের প্রচন্ড রকমের হাসি পায়। আর যে তিনজন কেঁদেছিল তাদেরকে আমরা এখনো মাঝে মাঝেই খুব করে খেপাই।
আশা করি, আমার পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন । সকলে ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আপনাদের কাছে আমার আজকের শেয়ার করা সম্পূর্ণ আলোচনা কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
ডিভাইস | Redmi Note 11 |
ফটোগ্রাফার | @rumana12 |
লোকেশন | দিনাজপুর |
ধন্যবাদান্তে,
@rumana12
আসসালামু আলাইকুম, আমার নাম রুমানা পারভীন। আমার steemit আইডি নাম @rumana12 আমার বাসা দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলায়।আমি দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা করি। আমি ভ্রমণ করতে এবং নতুন কিছু শিখতে খুব পছন্দ করি। অবসর সময় গান শুনতে আমার অনেক ভালো লাগে। আমি steemit এ কাজ উপভোগ করি।
You can also vote for @bangla.witness witnesses
আপনি অনেক সুন্দর ছবি তুলেছেন আপা। আমি একবার এই নদী দেখার জন্য গিয়েছিলাম। নদীর উপরে থাকা রেললাইন দিয়ে হাটতে আমার হার্টে ব্যথা শুরু হয়ে গেছিলো।আপনার নদীর পাড়ে থাকা ফুলের গাছ গুলো অনেক সুন্দর। আপনার সাথে ঘটে যাওয়া কাহিনীটা বেশ মর্মান্তিক। এমন নদীর পাড়ে বসে থাকলে মন ভালো থাকে।আপনি অনেক সুন্দর লিখেছেন। প্রতিযোগিতায় আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।
https://twitter.com/rumana4102/status/1696502718779760953?t=P4NO44nN0MFJHCOXiS7QIg&s=19
কাঁকড়া নদী বেশ বড় একটি নদী। দিনাজপুর যাওয়ার পথে কারেন্ট হাটে এই নদীটি দেখা মিলে।আপনাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি খুব দুঃখজনক আবার রোমাঞ্চ করও।আমরা এভাবে কখনো পিকনিক করিনি। এখানে একটি পিকনিক স্পটও রয়েছে। কাঁকড়া নদীর বালুচর দেখতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাছাড়া এই নদীটির পাশে কাশফুলও লক্ষ্য করা যায়। প্রতিযোগিতার জন্য শুভকামনা জানাচ্ছি। ধন্যবাদ।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
কাঁকড়া নদী নিয়ে খুব সুন্দর উপস্থাপন করেছেন আপু। চিরিরবন্দর উপজেলায় এই নদী টি দেখতে অসাধারণ। আমি একবার কাঁকড়া নদী দেখতে গিয়েছিলাম ।নদীর পরিবেশ আমাকে মুগ্ধ করেছে। এই নদীর উপর দিয়ে একটি রেল সেতু রয়েছে, যেটা কাঁকড়া রেল ব্রীজ নামে পরিচিত। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। আপনার ফটোগ্রাফি অসাধারণ হয়েছে। সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন। শুভকামনা রইলো।
ধন্যবাদ ভাই আপনাকেও।
আপনি নদীর সাথে আপনাদের যে মজাদার ও স্মরণীয় ঘটনাটি শেয়ার করেছেন সেটি পড়ার পর আমার কাছে মোটেই মজাদার ঘটনা মনে হয়নি। বরং ঘটনাটি পড়ে আমার কাছে ভয় লেগেছে। আপনার তোলা নদীর সবগুলো ছবিই বেশ সুন্দর হয়েছে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
ঘটনাটা আমার কাছে সবসময়ই হাস্যকর মনে হয়।
ধন্যবাদ আপনাকে।
এই কাঁকড়া নদীটি অনেক বড় একটি নদী। চিরিবন্দরে আমার খালার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে এই নদীতে গোসল করেছি আমি। নদীতে প্রায় সবসময় পানি থাকে। তার নদী পার হওয়ার জন্য এবং মাছ ধরার জন্য এই নদীতে অনেকগুলো নৌকাও চলে। অনেক সুন্দর ফটোগ্রাফি করেছেন আপু। কাঁকড়া নদী সম্পর্কে সুন্দর লিখেছেন। কন্টেস্টের জন্য শুভকামনা রইলো।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই।
আপনি নদী নিয়ে সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার এলাকার যে কাঁকড়া নদী সেখানে আমি অনেক বার গিয়েছি।আবার কাঁকড়া নদীতে গোসল ও করেছি। সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন।