সবাইকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন, আপনাদের দোয়ায় এবং আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে আমিও ভালো আছি। সবার প্রিয় কমিউনিটিতে আজকে আমি বঙ্গোপসাগরের মাঝে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে বিস্তারিত কিছু আলোচনা করবো:--------------
বঙ্গোপসাগর
বঙ্গোপসাগর হলো বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর। এই উপসাগরটি ত্রিভুজাকৃতির উপ মহাসাগর। এই উপসাগরের পশ্চিম দিকে রয়েছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা, উত্তর দিকে রয়েছে ভারত ও বাংলাদেশ এবং পূর্ব দিকে রয়েছে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড। বিশার আকৃতির এই বঙ্গোপসাগরের আয়তন হলো ২১,৭২,০০০ বর্গকিলোমিটার। এই বঙ্গোপসাগরের গভীরতা ২৬০০ মিটার। বঙ্গোপসাগরে সর্বোচ্চ গভীর খাদের নাম হলো সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড যার গভীরতা ৫,২৫৮ মিটার। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত হলো আমাদের বাংলাদেশে অবস্থিত কক্সবাজার।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়ার জন্য আমরা কক্সবাজারে টিকিট কাউন্টারে শিফের টিকিট কেটে নেই। আমরা যদি সরাসরি টেকনাফের নাফ নদীর মোহনায় গিয়ে দমদমিয়া ঘাটে গিয়ে টিকিট কাটার চিন্তাভাবনা করি এমনও তো হইতে পারে আমরা কোন রকমের টিকিট পেলাম না তখন আমাদের কি হবে তাই আমরা ভেবে চিন্তে কক্সবাজারে দুই দিন আগে টিকিট কেটে নেই। দমদমিয়া ঘাটে গিয়ে যখন আমাদের শিফটি দেখি তখন আলাদা রকমের একটা অনুভূতি সৃষ্টি হয় আমার মনে আহারে কতদূর পাড়ি দিয়ে আমি সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাবো। কত পড়েছিছেন মার্টিন দ্বীপের কথা বইয়ে কত দেখেছি টিভির পর্দায় আজ তারা সরাসরি নিজের চোখে দেখবো আলাদা রকমের একটা অনুভূতি। আমরা মোটে চারজন ছিলাম আমাদের কলেজের শিক্ষক সহ আমরা তিনজন স্টুডেন্ট। অবশ্য আমাদের সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়ার জন্য শিক্ষক আমাদের উৎসাহ প্রদান করে। আমাদের এলাকার শিক্ষক হওয়ায় আমরা তাহাকে ভাই বলে ডাকি। আমরা সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়ার আগে ইউটিউবে অনেক ভিডিও দেখেছি সেখানে যখন লঞ্চ ছেড়ে দেয় তখন লঞ্চের কাজ দিয়ে পাখি উড়াগড়ি করে আর সবাই চিপস বিস্কিট ছুড়ে মারে সেগুলো তারা ভক্ষণ করে। আবারো দেখেছি হাতের চিপস রাখলে পাখিগুলো হাত থেকে সিট নিয়ে যায়। তার জন্য আমরা দুইটি পটেটো চিপস নিয়ে নেই।
নাফ নদীর মোহনা দিয়ে আমাদের সাগরে প্রবেশ করতে হবে। নাফ নদীর এক প্রান্তে বাংলাদেশ এবং অপরপ্রান্তে মিয়ানমার। আমাদের রওনা দেওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে কোথা থেকে যে আসন করে পাখিগুলো চলে আসলো আমি ভাবতেই পারিনি। এত এত পরিমান আমাকে খুশি লাগতেছিল যেন মনে হয় আমিও পাখিগুলোর সাথে উড়ি। আর পাঁচ মিনিট রওনা দেওয়ার পর আমাদের ফোনের নেটওয়ার্ক কানেকশন ডিসকানেক্ট হয়ে মিয়ানমারের নেটওয়ার্ক পায়। আরো পাঁচ মিনিট রওনা দেওয়ার পর কারো ফোনে বাজে বাংলাদেশের রিয়েল টাইম কারো ফোনের বাজে মিয়ানমারের টাইম।
আমাদের ফোনে নেটওয়ার্ক কানেকশন ছিল N. পাখিগুলোকে আমরা চিপ ছুড়ে দিলাম পাখিগুলো টিপস সুন্দরভাবে মুখে নিলো। সমুদ্রে হালকা ঢেউ এবং জাহাজের শব্দ অসাধারণ লাগছিল আবার সাথে ছিল সামুদ্রিক পাখি। আমরা সুন্দরভাবে ছাদের উপর থেকে প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সাগরের গর্জনগুলো অনুভব করছিলাম। আমি দু একটি ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করি যা আমার কাছে অসাধারণ লাগছিলো।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ঘাট:------ |
অবশেষে আমরা তিন ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পৌঁছায়। সেন্টমার্টিন দ্বীপে যখন আমাদের লঞ্চটি দাঁড়ায় তখন হৃদয় কাঁপানো অনুভূতি মনে হচ্ছে যে এখানেই থেকে যাই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতো সুন্দর তা বলে বোঝানো যাবে না। দ্বীপে লঞ্চটি দাঁড়ানোর পর আমরা যখন ঘাটে নামলাম এবং আমাদের বুকিং করা উঠে গেলাম তখন সেখানেই আমরা ব্যাগগুলো রেখে আবার সঙ্গে সঙ্গেই সেখান থেকে চলে আসি সমুদ্রের তীরে। সমুদ্র তীরে দাঁড় করানোর ট্রলার গুলো দেখতেও বেশ অসাধারণ লাগছিল সেগুলোতে জেলেরা মাছ ধরার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
রংবেরঙের ট্রলারগুলো আশপাশে অনেক রয়েছে যেগুলোতে যাত্রীগুলোকে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করানো হয়। ট্রলার বেশি দূর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না কারণ পর্যটকদের বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। আমরা যখন কক্সবাজারে ছিলাম তখন কক্সবাজারের তীরে গোসল করতাম তখন পানির রং ছিল ঘোলাটে। আমরা যখন তিন ঘন্টার পর পাড়ি দিয়ে অর্ধেক সমুদ্রের মাঝে যাই তখন পানির রং হঠাৎ দেখি নীল হয়ে।
যখন দেখি পানির রং নীল তখন আমার মনটা একটু শান্তি পেলো। যাইহোক সকলে বেশ সুন্দর ঘুরাঘুরি করলাম। সমুদ্র তীরে রয়েছে বিল্ডিং রিসোর্ট এগুলো যদি কোন ক্ষয়ক্ষতি না হয় তাই সেখানে সিমেন্ট ভর্তি বড় বড় ব্যাগ সেখানে ফেলে দেওয়া রয়েছে যাতে করে সমুদ্রের ঢেউ কোন প্রকার ক্ষতি না করতে পারে। যাই হোক আসলে সমুদ্র তীরে সৌন্দর্য একেবারে অসাধারণ লাগছিলো।
সমুদ্র তৈরে গোসল করার সময়:-------- |
সমুদ্র তীরে যখন আমরা গোসল করতে যাই তখন সমুদ্রের জোয়ার ছিলো। সেন্টমার্টিন দ্বীপের পানি লবণাক্ত এবং নীল রংঙ্গের হয়ে থাকে। আমরা যখন পানিতে গোসল করছিলাম তখন পানি গুলো বেশ ঠান্ডা ছিল তার জন্য বেশিক্ষণ গোসল করতে পারিনি। আমরা সেন্টমার্টিন দ্বীপে মোট তিন দিন ছিলাম তিন দিনে আমরা দুইদিন সেখানে গোসল করেছিলাম আর বাকি একদিন আমরা ঘুরাঘুরি করেছিলাম।
সমুদ্রের ঢেউ যখন আসছিল তখন বেশ মজা লাগছিলো গোসল করতে। সমুদ্রের গর্জন হাহাহা করে বাতাস আসতেছে কিছু কিছু ছেলেপেলেরা ভেসে বেড়ানোর জন্য টিউব ব্যবহার করে বেশ দূরে গিয়ে মজা করতেছে। তবে আমাদের হালকা ভয় করছিলো বলে আমরা বেশি দূরে যায়নি।
প্রবাল দ্বীপে:----------- |
ফেরিঘাটের অপরদিকে রয়েছে সমুদ্রের প্রবাল যা প্রবাল দ্বীপ নামে পরিচিত। প্রবাল দ্বীপে অনেক প্রকারের সামুদ্রিক শামুক পাওয়া যায় যা দেখতে অসাধারণ লাগে। প্রবাল দ্বীপে যখন পানি ভরপুর থাকে তখন সেখানে নামা নিষেধ কারণ ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়। পানির তলে প্রবালের ধারালো অংশ দিয়ে যেকোনো সময় ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের ছেড়াদিয়া দ্বীপ:---------- |
সেন্টমার্টিনের মূল কেন্দ্র থেকে সেরা দিয়া দ্বীপ যেতে সময় লাগে অটোতে ৩০ মিনিট বাইকে ১৫ মিনিট এবং বাইসাইকেলে প্রায় দেড় ঘন্টার মতো। অটো এবং রিস্কাতে সেখানে ভাড়া অনেক বেশি তাই আমরা ঘণ্টা হিসেবে বাইসাইকেল নিয়েছিলাম। ঘণ্টা প্রতি বাইসাইকেলের চার্জ ছিলো ৩০ টাকা। সেখানকার রাস্তাঘাট আঁকাবাঁকা ইসনিচু যানজটে পরিপূর্ণ।
তো বন্ধুরা এই ছিলো আমার আজকের সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণ বিষয়ক পোস্ট। আশা করি আপনাদের সবার ভালো লাগবে সকলের সুস্বাস্থ্য এবং মঙ্গল কামনা করি সকলে ভালো থাকবেন।
আমার নাম মোঃ পারভেজ আকতার, আমার স্টিমিট ইউজার আইডির নাম
@mdparvaj. আমি পড়ালেখার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করি। আমি দিনাজপুর জেলায় পার্বতীপুর থানায় জমিরহাট তোকেয়াপাড়ায় বসবাস করি। আমি খেলাধুলা এবং ভ্রমণ করতে অনেক ভালোবাসি।
Vote for @bangla.witness
সেন্টমার্টিন নিয়ে অসাধারণ লেখছেন ভাই, আমি কখনো সেন্টমার্টিন দেখি নাই, আপনার পোস্ট পরে আমি অনেক কিছু জানতে পারলাম, আপনি অনেক সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন ভাই। আপনার ভ্রমন অনেক সুন্দর হয়েছে ভাই, আপনার প্রতিটা ছবি অসাধারণ হয়েছে, আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই সুন্দর একটা পোস্ট উপস্থাপন করেছেন।
ধন্যবাদ
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঘুরেছে কিন্তু পাথর কুড়াইনিএমন লোক হয়তো বা খুব কম পাওয়া যাবে। বুঝা যাইতেছে আপনি একজন ভ্রমণপ্রিয় লোক। ছবিগুলো অনেক সুন্দর তুলেছেন আপনার জন্য শুভকামনা রইল। নতুন নতুন জায়গা সম্পর্কে আমাদের তথ্য দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ ভাই
আপনার লেখাগুলো পড়লাম আমি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতাগুলো খুব ভালোই।সেখানে গিয়েছেন খুব ভালো সময় কাটিয়েছেন দেখে খুব ভালো লাগলো।কখনো যাওয়ার সুযোগ হয়নি তবে আপনার পোস্টটি দেখে যাওয়ার খুব ইচ্ছে করতেছে যাব একদিন ইনশাল্লাহ।খুব সুন্দর ফটোগ্রাফি করেছেন আপনি ধন্যবাদ ভাই এত সুন্দর একটি পোস্ট করার জন্য।
ধন্যবাদ ভাই
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কিছু ছবি নিয়ে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন।সেন্ট মার্টিন দ্বীপ আমি কখনো যায়নি। তবে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে সেয়ার করেছেন।সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে লিখেছেন ভাই। অসাধারণ হয়েছে পোস্ট। ধন্যবাদ ভাই।
ধন্যবাদ ভাই
সেন্টমার্টিন গিয়ে আপনি খুবই ইনজয় করেছেন।সেন্টমার্টিন নিয়ে খুব বিস্তারিত আলোচনা করছেন। ভ্রমনের অন্যতম জায়গা হচ্ছে সেন্টমার্টিন। তবে আপনার ফটোগ্রাফি গুলা খুব সুন্দর হয়েছে। আমি খুব মুগ্ধ হলাম আপনার ফটোগ্রাফি দেখে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই রকম ভ্রমনের জায়গা নিয়ে আলোচনা করার জন্য
ধন্যবাদ ভাই
সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের জন্য এক গৌরবের দ্বীপ।যার আদী নাম নারিকেল জিঞ্জিরা, আপনি সেন্টমার্টিন দ্বীপ সম্পর্কে অনেক সুন্দর জানা অজানা তথ্য শেয়ার করছেন। কক্সবাজার গিয়েছি তবে সেন্টমার্টিন যাওয়া হয়নি। এবার কক্সবাজার গেলে অবশ্যই সেন্টমার্টিন যাবো।আপনার ফটোগ্রাফি অনেক সুন্দর হয়েছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
ধন্যবাদ ভাই
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ নিয়ে আপনি খুব সুন্দর একটি পোস্ট লিখেছেন। সেন্টমার্টিন দ্বীপ সম্পর্কে আমি বইয়ে পড়েছি। কখনো এই দ্বীপে যাইনি কিন্তু যাওয়ার ইচ্ছা আছে। আপনার ভ্রমণ পোস্টটি পড়ে আমি সেন্টমার্টিন দ্বীপ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আপনার তোলা ছবি গুলো ও অসম্ভব সুন্দর হয়েছে। এতো সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
ধন্যবাদ আপু
সেন্টমার্টিন সম্পর্কে অনেক শুনেছি কিন্তু কখনো সামনে থেকে দেখা হয়ে ওঠেনি। এ দ্বীপের আদী নাম নারিকেল জিঞ্জিরা।সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্রতিটি দৃশ্যই মনমুগ্ধকর হয়ে থাকে। বিশেষ করে পাখিগুলো দেখতে বেশ ভালো লাগে। কারণ এগুলো সব খাবার নিমিসের মধ্যেই ধরে ফেলে কোন খাবার পানিতে পড়তে দেয় না।এছাড়া ও এ দ্বীপ দেখতেও অনেক আকর্ষণীয়।ভ্রমণ প্রিয় মানুষদের জন্য একটি উপযুক্ত স্থান হচ্ছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। সমুদ্র সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম আপনার পোষ্টের মাধ্যমে। আপনার ফটোগ্রাফি গুলো সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট উপস্থাপন করার জন্য।
ধন্যবাদ ভাই
সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে সবচেয়ে চমৎকার যে দৃশ্য দেখা যায় সেটি গাঙচিলের ঝাঁক। গাঙচিলের ঝাঁকের তীক্ষ্ণ নিশানা দেখে আমি অবিভূত হয়েছিলাম। আমি জাহাজের ক্যান্টিন থেকে চিপস আর রুটি এনে নীচে ছুড়েছিলাম কিন্তু গাঙচিল এক টুকরোর পানিতে পরতে দেয় নি। সেন্টমার্টিন নিয়ে আপনি খুব দারুণ একটি পোস্ট করেছেন। এটি একটি পরিপূর্ণ পোস্ট আমার মতে। ধন্যবাদ আপনাকে এই পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ আপু