আমাদের এলাকার ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার, যে খাবার আমাদের এলাকাকে প্রসিদ্ধ করে তুলেছে😋😋😋
০১-০৮-২০২৩ ইং
রোজ বুধবার
আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আপনাদের দোয়ায় এবং আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে আমিও ভালো আছি। সবার প্রিয় কমিউনিটির পক্ষ থেকে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। আসলে প্রতিযোগিতা করার আয়োজনটা অনেক সুন্দর একটি দিক। এরকম প্রতিযোগিতার আয়োজন করলে বেশ ভালই লাগে। আজকে আমি কমিউনিটির পক্ষ থেকে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি। কমিউনিটির পক্ষ থেকে আয়োজিত প্রতিযোগিতার বিষয় হলো, এমন একটি খাবারের নাম যা আমাদের এলাকাটিকে প্রসিদ্ধ করে তুলেছে। তো বন্ধুরা চলুন দেরি না করে আজকের বিষয়টা নিয়ে আপনাদের সামনে আলোচনা করা যাক।
আমাদের দিনাজপুর জেলার বিখ্যাত খাবার সিঁদল যা পুরো বাংলাদেশকে তার সাধে প্রসিদ্ধ করে তুলেছে।
আমাদের বাংলাদেশ একটি দারিদ্র্য দেশ। আমাদের এই বাংলাদেশের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অবহেলিত মানব। আমাদের রংপুর বিভাগের লোকজনেরা একবারেই হতদরিদ্র। কিছু সংখ্যক লোকেরা শুধু রয়েছে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত। আমাদের রংপুর বিভাগের লোকজনদের মাছ-মাংস এবং সখের খাবারগুলো কিনে খাওয়ার মতো সাধ্য জোটে না। আমাদের রংপুর বিভাগের লোকজনেরা মাছ-মাংসের থেকে শাকসবজি এবং অন্যান্য কিছু দিয়ে অনেক মজাদার তরকারি রান্না করে থাকে।
তেমনি আমাদের রংপুর বিভাগের লোকজনেরা প্রচুর পরিমাণে সিঁদল বানিয়ে থাকে। এটি আমিষের ঘাটতিও পূরণ করে। সিঁদলে আমিষ,প্রোটিন ও খনিজ লবণের পরিমাণ বেশি থাকে । এই সিঁদলে আমাদের রাতকানা রোগ দূর হয় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর কর। বাংলাদেশে এই সিঁদল ব্যাপক পরিমাণে সাড়া তুলেছে। বাজারের চাহিদা অনেক যা প্রায় এই সমস্ত সিঁদলকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। এখন মানুষ মাছ মাংস ইত্যাদি বেশি পরিমাণে খেয়ে যাচ্ছে যার কারণে পিছে পড়ে যাচ্ছে আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী সিঁদল।
- ছোট বা বড় মাছের শুটকি,
- পাটের পাতা,
- হামানদিস্তা বা ঢেকি,
- সোডা,
- কচুর ডাটা,
- সিঁদল পেচানোর জন্য সুতির কাপড়,
- চুলার ছাই,
- ধনেপাতা
আমাদের দেশের মহিলা মানুষেরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এইসব উপকরণ সামগ্রী জোগাড় করে সিঁদল তৈরি করে। আমাদের উত্তরবঙ্গে এই সিঁদল সারা বছর খাওয়া যায়। আমাদের এই উত্তরবঙ্গে সিঁদল আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে পাঠানো হতো। বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক ছিল কিন্তু এখন এর সঠিক রান্নার নিয়ম জানা নেই বলে কেউ রান্না করে না।
সিঁদল সম্পূর্ণ তৈরি করার পর রোদে অল্প একটু শুকাতে হবে। তারপর কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে পানিতে ভিজিয়ে শুকনো ছাইয়ে সিঁদলের গায়ে ভরাতে হবে। তারপর সেগুলোকে নির্দিষ্ট একটি পাত্রে রেখে ছাই দিয়ে পরিপূর্ণ করতে হবে। ছাইয়ের সাথে আপনারা শুকনো নিম পাতাও ব্যবহার করতে পারেন যাতে কোন রকমের পোকার আক্রমণ করতে না পারে। হালকা ভেজা থাকলে উপকরণগুলো সবগুলো পচে খাঁটি সিঁদলে পরিপূর্ণ হবে।
তারপর এগুলোকে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় রাখতে হবে যেমন ঘরের কোণে বিছানার নিচে রাখতে পারেন। এই নিয়মগুলো মেনে সিঁদল সংরক্ষণ করা অত্যন্ত সহজ। এই নিয়মে অনেক যুগ যুগ ধরে গৃহিণীরা সংরক্ষণ করে আসতেছেন। তাহলে বন্ধুরা আপনারাও এই নিয়মে বাড়িতে তৈরি করতে পারবেন।
আমাদের উত্তরাঞ্চলের লোকজনেরা বেশিরভাগ সিঁদল দিয়ে মাছ রান্না করে খাই। |
---|
আমাদের এলাকার লোকজনেরা সিঁদল দিয়ে বেশিরভাগ মাছ রান্না করে খায়। তাহলে বন্ধুরা চলুন আজকে আমি আপনাদের সিদল দিয়ে মাছ রান্না করা রেসিপিটি দেখিয়ে দেই, যেভাবে আমাদের বাড়িতে রান্না করে। আমরা সর্বপ্রথম রান্না করার উপকরণগুলো দেখে নেই।
উপকরণ | পরিমান | ফটোগ্রাফি |
---|---|---|
মাছ | ৩ পোয়া | |
আদা | ১ কোয়া | |
পেয়াজ | ৩-৪ টা | |
রশুন | ৩-৪ টা | |
মরিচ | পরিমান মতো | |
লবন | ৩ চামচ | |
হলুদ | ১ চামচ | |
তেজপাতা | ২-৩টা | |
গরম মসলা | পরিমান মতো | |
তেল | পরিমান মতো |
এবারে চলুন সিঁদল দিয়ে মাছ রান্না করার ধাপগুলো দেখে নেয়া যাক।
- প্রথমত আমাদের মাছের আঁশ তুলে পরিস্কার করতে হবে। এক কথায় মাছ ভালোভাবে কুটা বাচা করতে হবে।মাছের আঁকার অনুযায়ী আমাদের মাছ কাটতে হবে। মাছের নাড়িভুড়ি আঁশ সম্পূর্ণ পরিষ্কার করতে হবে।
- মাছগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করার পর সাইজ অনুযায়ী মাছগুলোকে কেটে নিতে হবে। কাটা মাছগুলো আবার একবার চেক করতে হবে যাতে ময়লা লেগে না থাকে। বালু এবং মাছের নাড়িভুড়ি থাকলে খাওয়ার সময় অরুচি এসে যায়। আমি খাওয়ার সময় নোংরা কিছু পেলে খাওয়ার ইচ্ছে হয় না।
একবার মেসের খালার উপর সবার ভরসা উঠে গেছিলো। তিনি কোনরকম কুটা বাচা করে রান্না বসাই দিছিলো পরে খালি বালুর উপস্তিতি পাওয়া যায়।
তারপর মাছগুলোকে তেলে ভাজতে হবে। মাছগুলোকে তেলে ভাজার কারণ হলো, রান্না করার সময় যদি ভেঙে না যায়। মাছগুলো ভেজে না নিলে রান্না করা কালীন সময়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যায়। তাই সুন্দরভাবে আমাদের মাছ গুলোকে ভেজে নিতে হবে।
- এরপর হলুদ, মসলা, মরিচ, পেঁয়াজ,যাবতীয় উপকরণ গুলো যেগুলো আমরা বেটে নিয়েছি সেগুলোকে কড়াইতে ছেড়ে দিব। সবগুলো পরিমাণ মতো দেওয়া হয়ে গেলে পানি দিয়ে ঢাকনা দিয়ে দিব যাতে করে সবগুলোই সেদ্ধ হয়। আমরা মাছগুলোর সাথে কিছু পরিমাণ বেগুন যোগ করে দিয়েছি।
আমাদের বাড়িতে লোক সংখ্যা বেশি দেখে আমরা আলু এবং বেগুনো যোগ করে দিয়েছি যাতে তরকারি সাদ একটু বৃদ্ধি হয়। অবশ্য বেগুন দিয়ে মাছ খেতে বেশ ভালোই লাগে আরো রয়েছে সঙ্গে সিঁদল। ভাবলেই কেমন জিভে জল এসে যায়।
- আলু, বেগুন, মাছ, মসলা, গুলো সিদ্ধ হওয়ার সময়কালীন আমাদের সিদল আগুনে পুড়তে হবে। আগুনে পুড়ার পর সেগুলো পানিতে ভালোভাবে ভিজিয়ে নিয়ে ময়লাগুলো পরিষ্কার করতে হবে। সিঁদলে ছাই বালু ইত্যাদি লেগে থাকে, তাই ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
সিঁদল যেগুলো পানিতে পরিষ্কার করব সেগুলো পানির রং একেবারেই চায়ের মত হয়ে যায়। এইসব পানিগুলো নির্দিষ্ট একটি জায়গায় ফেলতে হবে কারণ এগুলো পানি গায়ে পড়লে গা চুলকায়।
- পানি থেকে তুলে ভালোভাবে পরিষ্কার করার পর সুন্দরভাবে মিহি করে নিতে হবে। মিহি করার জন্য আপনারা যে কোন জিনিস ব্যবহার করতে পারেন। আমরা এখানে ব্যবহার করেছি আমাদের গ্রাম অঞ্চলের নোরা এবং সারোয়া। আপনারা এখানে ব্যবহার করতে পারেন শিল পাট্টা।
আর যারা এখানে বড়লোক রয়েছেন তারা ব্যালেন্ডার মেশিন ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের রান্না করতে গেলে এটি আগে প্রচুর পরিমাণে মিহি করে দিতে হবে। মিহি করা হয়ে গেলে সেগুলোতে হালকা পানি দিয়ে নরম করে নিতে হবে।
- সবগুলো সুন্দরভাবে মিহি করার পর কড়াইয়ে দেওয়ার পালা। সবগুলো সুন্দর ভাবে করাইতে ঢেলে নিতে হবে ঢেলে নেওয়ার পর ভালোভাবে মিক্স করতে হবে মিক্স করার পর ঢাকনা লাগিয়ে দিতে হবে। ঢাকনা লাগিয়ে দেওয়ার পর সেখান থেকে কোথাও যাওয়া যাবে না কারণ অল্প একটু পোড়া লাগলে একটুও স্বাদ থাকবে না। গলা যদি খুসখুস না করে এর জন্য আপনারা লেবু ব্যবহার করতে পারেন।
- পাঁচ থেকে সাত মিনিট ঢাকনা লাগিয়ে দেওয়ার পর তরকারির কালার আসবে এরকম। তারপর আমাদের লবণ, ঝাল ইত্যাদি চেক করতে হবে। কোন কিছুর পরিমাণ কম হলে সঙ্গে সঙ্গেই দিয়ে দিতে হবে।
- সর্বশেষে সবকিছু চেক করে আমাদের তরকারি নামিয়ে নিতে হবে। নামিয়ে নেওয়ার পর আমাদের খাওয়া-দাওয়া শুরু করে দিতে হবে। আমি এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য বাড়িতে কত কি বুঝাইছি। যাইহোক বাড়িতে বুঝা আমার সার্থক হয়েছে।
তো বন্ধুরা এই ছিলো আমার আজকের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ। আশা করি আপনাদের সবার ভালো লাগবে। সকলে সুস্বাস্থ্য এবং মঙ্গল কামনা করে এখানে শেষ করছি। |
---|
এই সুন্দর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য ভিন্ন কমিউনিটির আমার তিনজন বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
আশা করি আপনারা এই তিনজন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন এবং আমাদের কমিউনিটি সাথে থাকবেন।
ডিভাইস | রিয়ালমি ছি১৫ |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @mdparvaj |
বিষয় | প্রতিযোগিতা |
স্থান | পার্বতীপুর, জমির হাট |
🙋♂️আমার পরিচয়🙋♂️ |
---|
Vote for @bangla.witness
সিদল উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার।সিদল আমার পছন্দের একটি তরকারি। সিদল সাধারণত বোয়ালমাছ,বা শোল মাছ দিয়ে খেতে বেশ ভালই লাগে। এই প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ ভাই
https://twitter.com/ParvejAkter1/status/1686299194540380160?t=3QD9ZjhDF9A1a5RWOYQyEQ&s=19
বাহ ভাইয়া আপনি অনেক চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছেন। আপনার পোস্টটি পড়ে যারা সিদল সম্পর্কে কিছু জানেন না তারাও অনেক কিছু জানতে পারবেন। পুরোপুরি ডিটেলসে বর্ণনা করেছেন আপনি। আপনার উপস্থাপন টি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আর আপনার তোলা ছবিগুলোর প্রশংসা করতে হয়। প্রতিযোগিতার জন্য শুভকামনা জানাচ্ছি। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ আপু
This is a manual curation from the @tipu Curation Project.
Also your post was promoted on Twitter by the account josluds
@tipu curate
Upvoted 👌 (Mana: 7/8) Get profit votes with @tipU :)
খুবই সুন্দর ভাবে সিদল রান্না করার রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। কিভাবে রান্না করতে হবে সেটার ও বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। অবশ্য এই খাবার আমার বেশি পছন্দ করি না। দারুণ লিখেছেন। ধন্যবাদ
ধন্যবাদ ভাই
বাহ্ চমৎকার রেসিপি, উত্তরাঞ্চলের মানুষ বেশি সিদল খেয়ে থাকে, তবে আমার আমি কখনো সিদল খাইনি , আপনার পোস্ট খুবই মনোযোগ সহকারে পড়েছি, আমার কাছে বেশ ভালো লাগলো। মাছ দিয়ে সিদল রান্না করার পুরা প্রক্রিয়া খুবই সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। আপনার রান্নাটি মনে হয় খুবই সুস্বাদু হয়েছিল। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই এতো সুন্দর একটি রেসিপি শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ ভাই আপনাকে
সিদল আমাদের উত্তরাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। আমাদের এলাকার কমবেশী প্রতিটি বাড়িতেই সিদল আছে। সিদল দিয়ে মাছ রান্না করলে সেই মজা লাগে। আপনি খুবই চমৎকারভাবে সিদল দিয়ে মাছ রান্নার রেসিপিটি দেখিয়েছেন। ফটোগ্রাফিগুলো চমৎকার হয়েছে। শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
ধন্যবাদ ভাই
সিদল উত্তরবঙ্গের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। সিদল দিয়ে টাকি মাছ আমার কাছে অনেক সুন্দর লাগে। সিদল নিয়ে অসাধারণ একটি পোস্ট করেছেন। ছবিগুলো চমৎকার হয়েছে ভাইয়া।
ধন্যবাদ আপু
বাহ! এই প্রতিযোগিতায় এত ডিটেইল পোস্ট খুব কমই দেখেছি আমি। সিঁদল নিয়ে আপনার উপস্থাপনাটিকে পরিপূর্ণ একটি কনটেন্ট বলা যায়। শুরুর ছবিগুলো দেখে আমি ভেবেছিলাম এগুলো কিভাবে রান্না হবে এত বালু মাখা খাবার তারপর পুরোটা দেখে বেশ ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। শুভ কামনা রইল।
ধন্যবাদ আপু