গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য মাটিতে বসে নাপিত বা নরসুন্দরের কাছে চুল কাটা।
স্টিম ফর ট্রেডিশন |
---|
প্রিয় ব্লগারবাসী,
আসসালামু আলাইকুম, স্টিম ফর ট্রেডিশন কমিউনিটির সকলকে জানাই আমার ছালাম। সকলেই কেমন আছেন? আশা করি সকলেই ভাল আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে ও আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য নাপিত বা নরসুন্দর এর চুল দাড়ি কাটা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
![]() |
---|
নাপিত বা নরসুন্দর।
আমাদের ছোট বেলার স্মৃতির সাথে মিশে আছে একজন। আমরা গ্রাম অঞ্চলে যারা জন্ম গ্রহন করে থাকি তাঁদের সাথে অর্থাৎ আমাদের নাপিত বা নরসুন্দর এর একটি যোগসূত্র রয়েছে। আমি ছোট বেলায় নাপিত বা নরসুন্দরকে নাউয়া বলে চিনতাম। বড় হয়ে জানতে পারি নাউয়া হলে আমাদের আঞ্চলিক ভাষা। আসলে সব ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষা প্রয়োগ করা উচিত নয় বলে আমি করি। আমাদের জন্মের পরেই আমাদের মাথার চুল চেঁচে ফেলার একটি রেওয়াজ তো আছেই বটে। এখন জন্মের পরে আমাদের মাথার চুল চেঁচে ফেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজটি নাপিত বা নরসুন্দর করে থাকেন। তাদের নামটি নরসুন্দর কেন হলো? আমার যা মনে হয় তা হলো। নর অর্থ পুরুষ, এখন আসুন আমাদের চুল বা দাড়ি নিয়মিত বাড়তে এবং অগোছালো হয়ে যায়। নাপিত বা নরসুন্দর সুন্দর ভাবে অগোছালো চুল বা দাড়ি গুলো ছেঁটে দেয় তখন অগোছালো ব্যক্তি বা পুরুষকে সুন্দর দেখায়। যেহেতু পুরুষদের সুন্দর বানাবো হচ্ছে তাই পুরুষ সুন্দর না বলে নরসুন্দর নামটি বলা হয় (ব্যক্তিগত মতামত)।
![]() |
---|
আমার মনে আছে!
আমি যখন ছোট প্রতি শুক্রবার সুধীর কাকা আসতেন আমাদের পাড়ায়। সকাল থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত তিনি একাধারে চুল, দাঁড়ি সাইজ করে দিতেন। আমার মাথা কিছুটা নড়লে তিনি তার পায়ের হাঁটুতে আমার মাথা লাগিয়ে নিয়ে চুল কেটে দিতেন। চুল কাটা শেষ হলে আমার দাদা সুধীর কাকাকে কোন দিন ৬ টাকা আবার কোন দিন ৭ টাকা দিতেন।
![]() |
---|
চুল/দাড়ি কাটতে তিনি তেমন সরঞ্জাম নিয়ে আসতেন না। আগে যা দেখেছি গতকাল তাই দেখেছি তবে আগের একটি সরঞ্জাম দেখাতে না পেয়ে কাকাকে জিজ্ঞেস করলাম। কাকা ক্ষুর কোথায়? (এই ক্ষুর লোহা জাতীয় ধাতব। এই উপরিভাগ মোটা এবং নিচের অংশ বা যে অংশ দিয়ে কাটা সেই অংশ সরু হয়ে থাকে। সেখানে শান দিয়ে বা ধার দিয়ে আরো চুক্ষা করে মানুষের চুল চেঁচা বা দাঁড়ি চেঁচা হয়)। কাকাকে বললাম ক্ষুর দেখতে পাচ্ছি না যে। কাকা মুচকি হেসে বললো মানুষ এখন ক্ষুর দিয়ে চুল/দাঁড়ি কাটার জন্য রাজি হন না। কেনকা এতে অন্য জনের HIV ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই এখন সাথে আর খুর রাখার প্রয়োজন হয় না।
![]() |
---|
![]() |
---|
আমরা কয়টি সরঞ্জাম দেখতে পেলাম?
সরঞ্জামের নাম | পরিমাণ |
---|---|
চিরুনি | ২টি |
ব্লেট ক্ষুর | ২টি |
পানির পাত্র বা খোরা/বাটি | ১টি |
চুল কাটা কেঁচি | ১টি |
এই কয়েকটি সরঞ্জাম দিয়ে গ্রামে ফাঁকা জায়গায় চুল কাটা হয়। আর শহরের নাপিত বা সেলুনের দিকে এক বার তাকালে দেখা যায়। দেখারমত ডেকোরেশন করে থাকেন তারা। আর গ্রামের নাপিত বা নরসুন্দরদের কাজ আমার আজীবন মনে থাকবে। চিরুনি ২টির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে যেমন একটি চিকন চিরুনি আর একটি মোটা চিরুনি। দুই চিরুনি দিয়ে দুরকম কাজ হয়। ব্লেট ক্ষুর দুইটি থাকে একটি রেডি থাকে সবসময়ের জন্য।
![]() |
---|
এভাবেই নরসুন্দরের সামনে মাটিতে বসে গ্রামে চুল কাটাতে হয়।
আর পানির পাত্রটিতে পানি থাকে সেই পানি দিয়ে চুল কাটা শেষ হলে মাথার সাইট দিয়ে হালকা ভিজিয়ে নেওয়া হয় যেন ব্লেট ক্ষুর দিয়ে চেঁচার সময় স্কিনে ব্যথা না লাগে। কারন পানি দিয়ে ভিজিয়ে না নিলে চেঁচার স্কিনে ব্যথা অনুভব হবে এবং কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এই বাটি থেকে নরসুন্দর তার আঙ্গুল পানিতে ভিজিয়ে হালকা ভিজিয়ে নিয়ে তার চেচতে শুরু করেন।
![]() |
---|
আমি গ্রামে চুল কাটাতে বসলে দাদার গামছা নিয়ে আসতাম আর দাদা আমাকে পরে বকে দিত। তখন আমার দাদী গামছাটি ধুয়ে দিত।
চুল কাটা কেঁচিতে ধার থাকলে প্রায় ২৫-৩০ জনের চুল কাটা যায়। এখন কতজনের চুল কাটা যাবে সেটা অবশ্য আমার অজানা। কাকার কাছে সেই সময়ের রিপোর্ট তুলে ধরলাম।
![]() |
---|
অনেক সময় দেখা যায় মাথা সঠিক দিকে মুভ বা নড়াচড়া করলে নরসুন্দর তার নিজের হাটুতে সামনের ব্যক্তির মাথাটি লাগিয়ে দিয়ে চুল কাটতে থাকেন। তাতে নরসুন্দরের কাজের সুবিধা হয়। কারন মাথা নরলে বা সঠিন ভালে ঘুরাতে না পরলে চুল কাটা ভালো হয় না। তাই নরসুন্দর নিজে থেকেই এই কাজ করে থাকেন।
![]() |
---|
আমি অনেক বার নরসুন্দরের কাছে চুল কাটাইছি। আপনারা কেউ কাটিয়ে থাকলে অবশ্যই জানাবেন। তাহলে ভালো লাগবে। আসলে সেই দিন গুলোর স্মৃতি আজও চোখে ভাসে।
পরিশেষে
সকলের সুসাস্থ কামনা করে আমি আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করতেছি। সকলেই ভাল থাকবেন এবং পরবর্তী পোস্টে আবার দেখা হবে। ইনশাআল্লাহ।
লোকেশনঃ
- পশ্চিম হোসেনপুর, মোমিনপুর।
** আপনার মূল্য সময় দিয়ে আমার পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ** |
---|
এইটা গ্রাম বাংলার মানুষের ঐতিহ্য। আগে মানুষকে বাজারে যেয়ে চুল কাটতে হতো না।বাসায় এই রকম করে চুল কেটে দিতো নাপিত কাকা রা। এখন এই দিন গুলো হারিয়ে গেছে। আপনি সুন্দর একটা পোস্ট করেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
আপনার মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
We expected you to be friendly and active in the Steem For Tradition Community. We appreciate your effort. Thank you for sharing your beautiful content with us ❤️.
আপনি বেশ পুরাতন একটি বিষয় আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আগে এভাবে আমরাও চুল কাটাতাম।একজন নাপিত এসে সবার চুল এভাবে মাটিতে বসিয়ে কেটে দিত।ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনি সুন্দর একটি মন্তব্য করেছেন আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ
সত্যি কথা এভাবে নাপিতের কাছে বসে বা মাটিতে বসে নাপিতের কাছে কখনো চুল কাটা হয়নি।তবে এটা জানি এই জিনিসটা হলো গ্রামীনে এক ঐতিহ্য।আমি অবশ্য কখনো দেখিনি। খুব সুন্দর উপস্থাপন করেছেন ভাই লেখাগুলো পড়লাম খুব ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে।
সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ
নাপিত এর কাছে গিয়ে চুল কাটা পিরি তে বসে চুল কাটতাম, এটা একটা ঐতিহ্য। এখন সেই দিন আর দেখা যায় না আগে গ্রামে গ্রামে নাপিত আসতো, এখন সেলুন এ গিয়ে কাটতে হয়, সব ভি আই পি হয়ে গেছে, তবে আগের দিনগুলো অনেক সুন্দর ছিলো। অনেক সুন্দর লিখছেন ধন্যবাদ ভাই
সুন্দর মন্তব্য করেছেন আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ
আপনি অনেক সুন্দর একটি পোস্ট উপস্থাপন করেছেন ভাইয়া। গ্রামে এখনো এই দৃশ্য দেখা যায়।তবে আগের থেকে অনেক কম ।আপনার পোস্ট এ আর একটি নতুন বিষয় জানলাম যে, নাপিত কে নরসুন্দর বলা হয়। পোষ্টটি দেখে ভালো লাগলো ভাইয়া।আপনাকে ধন্যবাদ।
জ্বি আপু নরসুন্দর ও বলে থাকে। আপনি সুন্দর একটি মন্তব্য করেছেন আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ
নাপিত নিয়ে খুব সুন্দর লেখছেন ভাই, এই ভাবে আমি কখনো চুল কাটি নাই, তবে আমার এক ফ্রেন্ড এই ভাবে কেটে দিছিলো,এই ভাবে চুল কাটতে অনেক মজা লাগে, আপনার পোস্টের ছবি গুলো দেখে খুব ভালো লাগলো, আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর একটা পোস্ট উপস্থাপন করার জন্য।
গ্রামের নাপিতদের চুল কাটা নিয়ে আপনি সুন্দর মন্তব্য করেছেন আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
চুল কাটা নিয়ে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন।এটি আমাদের প্রাচীনকালের ঐতিহ্য। চুল কাটতে কি কি প্রায়োজন কিভাবে চুল কাটা হয় সে সম্পর্কে অনেক সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে ধাপে ধাপে লিখেছেন ভাই। অনেক ভালো লাগলো আপনার পোস্টি দেখে। ধন্যবাদ ভাই সুন্দর একটি পোস্ট করার জন্য।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য
অনেক সুন্দর একটি দৃশ্য ছিলো। গরমের সময়ে গ্রামে এমন নাপিত আসলে জোর করে বাসা থেকে ন্যাড়া করে দেওয়ার জন্য বসাই দিতো নাপিতের কাছে। ছোট কালের কথা মনে পড়ে গেলো। আপনি অনেক সুন্দর লিখেছেন ভাইয়া। ছবি গুলাও সুন্দর হয়েছে।
হা হা হা 😆😛🫣😛😆 ভাই আমার সাথেও এই ঘটনা ঘটছে। ন্যাড়া করে দিছে দাদা। সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ।
এক সময় দেখতাম এরা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চুল কেটে দিয়ে আসতো। বর্তমানে এরকম দৃশ্য খুব কম দেখা যায়। একসময় দেখে যেত বছর চুক্তিতে চুল কাটাতো প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি গিয়ে। অনেক ভালো লিখেছেন শুভকামনা রইল
আপনার সুন্দর মন্তব্য আমাকে আরো ভালো মানের ব্লগ তৈরীতে অনুপ্রেরণা যোগাবে। আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
আপনার সুন্দর মন্তব্য আমাকে আরো ব্লগ তৈরীতে অনুপ্রেরণা যোগাবে। আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।