ঘুড়ি ও ফানুস উৎসবে মজার অভিজ্ঞতার পাশাপাশি কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা
আসসালামু আলাইকুম
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করছি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভাল আছি।
বন্ধুরা আজ আবারো আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। মূলত আজ আমি ঘুড়ি ও ফানুষ উৎসবে মজার অনুভূতির পাশাপাশি কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব ।আসলে যে কোন জায়গায় গেলে সেখানে যেমন কিছু ভালো অনুভূতি হয় আবার কিছু খারাপ অনুভূতিরও সৃষ্টি হয় । তেমনি আমার ঘুড়ি ও ফানুস উৎসবে যেমনটি ভালো লেগেছিল আবার কিছুটা খারাপও লেগেছিল বিভিন্ন কারণে।সেই অনুভূতিই আজ আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।
ঘুড়ি ও ফানুস উৎসবে মজার অভিজ্ঞতার পাশাপাশি কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা
মূলত আমাদের যাবার সময় এমনিতেই অনেকটা পথ হাঁটতে হয়েছিল । যেহেতু ঘুড়ি ও ফানুষ উৎসবে অনেক লোকের ভিড় ছিল। যার কারণে শহরে জ্যাম লেগে গিয়েছিল। সে কারণে অনেক দূরে থেকেই যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যার কারণে রিকশা থেকে নেমে আমাদেরকে বহু পথ হেঁটে তারপর ওখানে পৌঁছাতে হয়েছিল ।কিন্তু ওখানে পৌঁছানোর পর দেখি হাজার হাজার লোকের সমাবেশ। আসলে যে কোন জায়গায় গেলে অতিরিক্ত লোকজন হলে সেখানে কোন কিছু দেখেই শান্তি পাওয়া যায় না ।কেননা একটু ফাঁকা জায়গায় থাকতে হয়। আমরা মূলত ফাঁকা জায়গা গুলোতেই বেশি ঘোরাফেরা করেছি ।কেননা মেইন স্টেজ এর কাছে তো যাবার উপায় ছিল না।
উপরের ফটোগ্রাফ দুটিকে দেখা যাচ্ছে মেইন স্টেজের যাবার পথ এবং সামনের অবস্থা। সেখানে যাবার মতো কোনো অবস্থাই ছিল না ।এখানে আমাদের শহরের সকল লোকজন তো উপস্থিত ছিলই, আশেপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসেছিল। যার কারণে এই অবস্থা হয়েছিল। আসলে অতিরিক্ত লোকজনের কারণে কোন কিছু ঠিকমতো দেখা যায় না। সেটা যেমন একটা সমস্যা তেমনি বিভিন্ন অঘটন ঘটারও সম্ভাবনা থাকে। যদিও সেখানে ব্যাপক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছিল। তাছাড়াও পুরো জায়গাটিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
দিনের বেলায় যদিও তেমন কোন সমস্যা হয় না ।সন্ধ্যার পর অতিরিক্ত লোকজনের ভেতরে একটু সাবধানে থাকতে হয় ।তারপর আবার আমার হাজবেন্ড মাগরিবের নামাজ পড়তে গেল। তারপর আমরা একটি চটপটির দোকানে বসে চটপটি খেলাম। যদিও চটপটি টা খুবই বাজে ছিল। এত বাজে চটপটি আমি আমার জীবনে খাইনি। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পরও সে আসছিল না। লোকজনের ভিড়ের কারণে সে আসতে পারছিল না। তারপর দোকানের সামনে আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম ।এদিকে মোবাইল নেট ছিল না যার কারণে ফোন দিয়েও পাচ্ছিলাম না। তখন বেশ একটা বিরক্তিকর অবস্থার মধ্যে ছিলাম ।কেননা দীর্ঘ সময় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা খুবই কষ্টকর। তারপর আবার মেয়ে ফুচকা খেতে চাইছিল ।সেখান থেকে ফুচকার দোকান একটু দূরে ছিল। কিন্তু আমি সেখান থেকে যেতে পারছিলাম না কারণ মেয়ের বাবা এসে এখানে না পেলে খুঁজে পেতে সমস্যা হবে। যেহেতু মোবাইলে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। তারপর আবার রাত হয়ে গিয়েছিল।
যাইহোক অপেক্ষা করতে করতে ফানুষ উৎসব উপভোগ করছিলাম, বেশ ভালই লেগেছিল। তারপর দীর্ঘ সময় পর যখন মেয়ের বাবা ফিরে এলো তখন অনুষ্ঠান শেষ। তখন সবাইকে দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করতে বলা হচ্ছিল।যার কারণে সবাই হুড়মুড় করে বাড়ি ফেরার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ছিল। কিন্তু মেইন রোড ছিল একটা সেখানে হাজার হাজার লোকের ভিড় ছিল। যার কারণে আমরা একটা ফুচকার দোকানে বেশ কিছুক্ষণ বসে ছিলাম লোকজনের ভিড় কিছুটা কমার জন্য। কেননা এত ভিড়ে হাটাও যায় না। আর বেশ কিছু পথ হাঁটতে হবে বুঝতে পারছিলাম। দীর্ঘ সময় বসে থাকার পর চিন্তা করলাম আমরাও বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। কিন্তু হাঁটার মতো কোনো অবস্থা ছিল না এত লোকের ভিড় ।তখন আমার হাসবেন্ড বলে একটা অন্য রাস্তা আছে যেখান দিয়ে শর্টকাটে যাওয়া যাবে ।তো আমরাও সেখান দিয়ে যেতে শুরু করলাম।
সেখান দিয়ে যাবার শুরুতে কিছু লোক ছিল।কিছুদূর যাবার পর দেখি কোন লোকজন নেই।শুধু আমরা তিন জন হাঁটছি। মাঝে মাঝে দু একটি বাইক যাচ্ছিল।রাস্তার একপাশে ছিল নদী আরেক পাশে ছিল বিশাল মাঠ ।মাঝখান দিয়ে রাস্তা। জন মানবহীন অন্ধকার রাস্তা ।তখন আমার ভীষণ ভয় লাগছিল ।কিছুদূর যেতে যেতে তালগাছ বাঁশ ঝাড় পাশে পড়ল। খুবই ভয় লাগছিল তখন। কোন লোকজন ছিলনা অন্ধকার রাস্তা। তখন মনে হচ্ছিল ছিনতাইকারি না ধরে ।এমনিতে রাত হয়ে গিয়েছিল সাড়ে আটটা। তখন হাজবেন্ডের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছিল ।মনে হচ্ছিল এত জন মানবহীন রাস্তার থেকে মেইন রোড দিয়ে যাওয়াই ভালো ছিল। সত্যি ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম ।তারপর খুব দ্রুত হেঁটে আমরা মেইন রোডে পৌছালাম । সেখান থেকেও দীর্ঘ পথ আমাদের হাঁটতে হলো। রাস্তায় কোনো রিক্সা ছিল না। দীর্ঘ সময় হাটতে হাঁটতে একটা সময় এসে যেখানে দাঁড়ালাম সেখানেও অসংখ্য লোক দাঁড়িয়েছিল রিক্সার জন্য। কেউ কিছু পাচ্ছিল না ।সেদিন কি পরিমান হেঁটে ছিলাম তা বলার বাহিরে ।গত কয়েক বছরে এত হাঁটা আমি হাঁটিনি ।বেশ কয়েক কিলো হাঁটতে হয়েছিল।
আমার হাজবেন্ডেরও বেশ রাগ হচ্ছিল আমাদের নিয়ে এরকম অবস্থার মধ্যে পড়ার জন্য। সে তো বলল এটাই শেষ আর জীবনে কোনদিন এই উৎসবে তোমাদেরকে আনবো না ।এর পর থেকে আমি একা আসবো। যদিও কিছু বলার ছিল না ।কেননা খুবই বাজে একটা অবস্থার মধ্যে পড়েছিলাম। দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় দাঁড়ানোর পর অবশেষে একটা অটো পেয়েছিলাম। সেটায় করে বাজার পর্যন্ত এসেছিলাম। সেখান থেকে আবার রিক্সায় করে বাসা পর্যন্ত এসেছিলাম। যাইহোক অভিজ্ঞতাটা খুবই বাজে ছিল। বাসায় আসার পর আমার দু পা ব্যথা ছিল কয়েকদিন। কেননা এত হাঁটার অভ্যাস নেই। যাইহোক এবারে ঘুড়ি ও ফানুস উৎসবের তিক্ত অভিজ্ঞতা খুবই বেশি ছিল। এটা মনে পড়লে এখনো ভীষণ খারাপ লাগে।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।আগামীতে আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।আমার ব্লগ টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফার: | @wahidasuma |
---|---|
ডিভাইস: | OPPO Reno8 T |
লোকেশন: | পদ্মার পাড়,ফরিদপুর |
🔚ধন্যবাদ🔚
@wahidasuma
আমি ওয়াহিদা সুমা।আমি একজন হাউজ ওয়াইফ। সমাজবিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স করেছি।ঘুরে বেড়াতে , ঘুমাতে এবং গান শুনতে আমি ভীষন পছন্দ করি।বাগান করা আমার শখ।এছাড়াও আর্ট , বিভিন্ন রেসিপি ট্রাই করতেও ভালো লাগে। আমি 🇧🇩বাংলাদেশি🇧🇩।বাংলা আমার মাতৃভাষা।আমি বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে ভালোবাসি।ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।


ঘুড়ি এবং ফানুস পুরানো উৎসব দেখতে গিয়ে দেখছি মজার চেয়ে খারাপ মুহূর্ত টাই বেশি কেটেছে। আসলে এরকম উৎসবমুখর পরিবেশে এত লোক একসঙ্গে সমবেত হলে সেখানে সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করার চেয়ে খারাপ মুহূর্ত টাই বেশি কেটে যায়। তাছাড়া ফুচকা ওয়ালার ফুচকা খাওয়ার অপেক্ষায় যে বাজে লেগেছে তাহলে তো আরো খারাপ লাগবে।
লোকজন অতটা না হলে বেশ ভালো লাগতো। এর আগে অনেকবার গিয়েছি তখন এতটা লোকজন দেখিনি ।যাইহোক চটপটি টা খুবই বাজে ছিল, ফুচকা নয় ।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
ঘুড়ি ও ফানুস উৎসবে বেশ সুন্দর মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন। ঘুড়ি ও ফানুস উৎসবে অনেক মানুষের সমাগম হয়েছে। আসলে বেশি মানুষ হলে একটু সমস্যা হবে এইটাই স্বাভাবিক। বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন জেনে খারাপ লাগলো। বেশ সুন্দর ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আসলে এই ধরনের উৎসবে গেলে খুবই ভালো লাগে। ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
হ্যাঁ ভাইয়া বেশ উপভোগ করেছিলাম। তবে শেষের দিকে এই সমস্যাগুলোর কারনে কিছুটা খারাপ লেগেছিল। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
আপনারা খুব সুন্দর একটি মুহূর্ত উপভোগ করেছেন। তবে অপেক্ষা করা খুবই কঠিন, সেটা আমি ভালো করে জানি। আপনার হাসবেন্ড যখন মাগরিবের নামাজ পড়তে গিয়ে আর সহজ আসতে পারছিল না, ভিড়ের জন্য তখন সেই মুহূর্তটা খুবই কষ্টকর হয়েছিল, কারণ সময় পার করা অনেক কঠিন। তারপরে আপনি চটপটি খেয়েছেন আর বাজে এরকম চটপটি জীবনে খান নেই, আসলে এই ঘটনাটি আপনার মনে থাকবে সারা জীবন।
হ্যাঁ ভাইয়া অপেক্ষা করাটা খুবই কঠিন ।আর চটপটিটা সত্যি খুবই খারাপ ছিল। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
আপনি এবং আপনার পরিবার আপনারা ঘুড়ি ও ফানুস উৎসবে দেখতে গেলেন। যদিও এই উৎসবগুলো কখনো সামনে থেকে দেখা হয়নি। তবে যেখানে অতিরিক্ত হোক সেখানে সমস্যায় পড়তে হয়। আর এত মানুষের ভিড়ে খারাপ মানুষও থাকে যারা মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। তবে ফুচকা খেয়ে আপনাদের ভালো অভিজ্ঞতাই হয়েছে। জীবনে এত বাজে ফুচকা খাওয়ার হয়নি আপনার। অনেকটা পথ হেঁটে গেলেন আবার হেঁটে আসলেন। আর এরকম হলে যে কোন মানুষের কাছে খারাপ লাগবে। ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ভাইয়া এই উৎসবগুলো বেশ ভালো লাগে উপভোগ করতে। যদিও আপনি কখনো যাননি গেলে বুঝতে পারতেন ।তবে অতিরিক্ত লোকজনের কারণে একটু সমস্যা হয়। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।