কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা ।। ১০% পেআউট লাজুক খ্যাঁক ভাই কে
প্রায় মাস দুয়েক পর ফেরা। আসলে চূড়ান্ত ব্যস্ততার সাথেই কাটলো কয়েকটা মাস। এবার আশা করি প্রতিদিনই আসতে পারবো। দেখা যাক কি হয়। অনেক দিন পর লিখতে চেস্টা করেছি, জানিনা কততা পারবো। বলে নাকি লেখনী থেমে গেলে লেখাও নাকি থেমে যায়... তবুও চেস্টা করলাম। দেখা যাক।
তো হয়েছে কি পাক্কা ৪ মাস পর কলকাতায়। সন্ধ্যা মুখে শহরে পৌঁছে দেখি বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে শহর। জন্মাষ্টমীর রাত এয়ার পোর্ট প্রায় ফাঁকা। ডোমেস্টিক অ্যারাইভালে গুটি কয়েক প্যাসেঞ্জার মাত্র। দিব্যি হাঁটতে হাঁটতে বাইরে এসে দেখি তুমুল জলপ্রপাত।
আসলে সত্যি বলতে কি কলকাতার ওপর প্রেম নাকি আবেগ নাকি অনুভূতি কি আছে জানি না তবে বেশিদিন এই শহর কে ছেড়ে থাকা যায় না। কি যেন একটা আছে আটকে রাখার মত। ধুলো ধোঁয়া যা-ই থাকুক না কেন, ওই একটা গান আছে না
" শহর জুড়ে যেন প্রেমের মরসুম/ আলোতে মাখামাখি আমার শীতঘুম "
আর সত্যি বলতে কি , বৃষ্টিতে কলকাতার রূপ যেন আরো একটু বেশিই খোলে। ভেজা রাস্তা দিয়ে গাড়িটা এগোতেই প্রথম চোখে পড়লো বিরাট একটা ব্যানার মা আসছেন। আর মাত্র ৪০ দিন।
আমার যাবার ছিল না কোথাও। ভেবেছিলাম কলকাতা পৌঁছে দিন দুই কোথাও একটা মাথা গুঁজে লম্বা শুয়ে বসে কাটাব তারপর বাকি কিছু। কিন্তু ভবি ভোলার নয়, হোটেলে পৌঁছে সবেমাত্র বিছানায় গা এলিয়েছি আর সঙ্গে সঙ্গে তেনার ফোন। এই ফোন কল গুলো এড়িয়ে যাব এমন সাহস বা সাধ্যি কোনোটাই আমার নেই। ফোন ধরে হ্যালো বলতেই উল্টা দিকে থমথমে গলায় এক্ষুনি দেখা করতে হবে ফরমান দিলেন তিনি। অনেক কষ্ট ১ ঘণ্টার বিরতি টাইম চেয়ে নিয়ে যখন বেরোলাম তখন রাত নামছে তিলোত্তমার বুকে।
কোথায় যাব জিজ্ঞেস করতেই খ্যাক করে উঠলেন তিনি। যা-ই হোক অনেক কষ্টে তাকে ঠাণ্ডা করে যখন দেখা হলো তখন ঘড়িতে রাত ৯ টা ছুঁই ছুঁই।
দেখুন পাঠক, ইহা অনস্বীকার্য যে পুরুষ মাত্রেই তাহারা অলমোস্ট অবলা জীব। এবং প্রেমিকা বা হবু স্ত্রী সম্মুঝে স্বয়ং নেপোলিয়ন ও নাকি কালাজ্বরের রুগীর মত ঠকঠক করে কাঁপতেন। আর কোন হরিদাস পাল যে মুখে মুখে তর্ক করবো।
তবে শাস্ত্র মতে ইহাও সত্য যে ক্রুদ্ধ প্রেমিকাকে ঠাণ্ডা করার সবথেকে সহজ এবং সস্তা উপায় হচ্ছে তার সৌন্দর্য সংক্রান্ত প্রশংসা। এবং ভদ্রমহিলা বেশ হিংসাযোগ্য সুন্দরী।
" উফ কি লাকচে " মার্কা প্রশংসা সূচক দুটো কিছু বলতেই মোটামুটি তিনি ঠাণ্ডা। অতএব সমস্যা সর্টড। প্রায় দিন দশেক বাদে ফোন করেছি, খিস্তি যে আমি পাইকারি রেট ধরে খাবো সেটা কনফার্ম ছিল। এমত অবস্থায় ম্যাডামের মুড ঠাণ্ডা হয়েছে ভেবেই আমার ক্ষিদে পেতে শুরু করলো।
তারপর শুরু হলো হন্টন। তখন রাত ১০ টা প্রায়। সাথে তুমুল বৃষ্টি। এবং ভারতবর্ষে জন্মাষ্টমী। ছোট বড় সব মিলিয়ে , লোকাল বা বহুজাতিক সব খাবারের দোকান বন্ধ, সুরালয় বন্ধ। অগত্যা পদব্রজে শুরু হলো আমাদের হন্টন।
প্রায় ক্যামাক স্ট্রিট ছাড়িয়ে যখন মিন্টো পার্ক ধরব ধরবো করছি তখন এক ছোট রোল কাবাবের সুঘ্রাণ নাকে এলো। বৃষ্টি ভেজা রাতে এরকম সুঘ্রানের বর্ণন দেওয়া আমার কম্ম নয় এদিকে পেটেও ছুঁচো ডাকছে। গোগ্রাসে দুটো ভেজ রোল আর খানিকটা পনীর পাসিন্দা খেয়ে পেট ঠাণ্ডা হলো।
অতঃপর কি ? ততক্ষণে বুঝেই গেছি আজকে রাতের ঘুম গেল। এই ডাকসাইটে সুন্দরী যে মেজাজে আছেন তাতে তাকে ফিরবো বলা আর আত্মহত্যা করা একই জিনিস। অবশ্য এমন বৃষ্টি দিনে যদি প্রেয়সীর সঘন কেসরাশী থেকে একথোকা জুঁই এর গন্ধ নাকে আসে তাহলে কারই ইচ্ছে হবে ফিরতে !
উদ্দেশ্য হীন হাঁটতে হাঁটতেই পৌছালাম পার্ক স্ট্রিটের উল্টো দিকে মোহর কুঞ্জ। ততক্ষণে তুমুল একটা বৃষ্টি নেমেছে। ভেজা কাক হয়ে মেট্রোর সেড এর তলায় দাঁড়াতেই রাজকন্যার ঠাণ্ডা লাগা শুরু।
হিন্দি সিনেমার দৌলতে এমত অবস্থায় হিরো সাধারণত নিজের জামা বা জ্যাকেট খুলে দেন, কিন্তু আমি হচ্ছি গিয়ে নিজেই পেট রোগা মানুষ। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি থামতে আবার বেরোলাম। ফ্লুরিজ পেরিয়ে উল্টো ফুটে তখন ওশেন ব্লু। মধ্যে রাত্রিতে সুমধুর জ্যাজ মিউজিক আর মন কেমন করা সুরার মৌতাত। এমন রাতে কি দুয়েক পাত্র সমেত প্রেয়সীর কাছকাছি বসে তার চোখের গভীরতায় হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে না ?
দুটো লার্জ সুরার সাথে তখন হ্যানক পেত্রসি গাইছেন নাওমি লেট আস ওয়াক ইনটু দ্যা স্কাই । গোটা ফ্লোরে গুটিকয়েক সুরারসিক আর এই অভাগার সাথে এক রাজকন্যে।
আসলে.. থাক, কিছু জিনিস খুব গোপন যেগুলো সেগুলো গোপন থাকাই ভালো, অভিমানী তিনি, আর সেটা স্বাভাবিক, আমি নিজে ভূভারত ঘুরে বেড়াই, সময়ে ফোন ধরি না, করিও না। সাথে যুক্ত হয়েছে আরো নতুন দুটো প্রজেক্ট, সেসব নাহয় পরে লিখবো আবার।
ওখান থেকে বেরিয়ে উদ্দেশ্য হীন হাঁটার মাঝেই এলো inc 42 । সেখান থেকে আবার এগিয়ে টাটা বিল্ডিং ছাড়িয়ে এক গোপন ঠিকানায়, কলেজ কালে এই "ঠেকা" র সন্ধান পেয়েছিলাম । সেখানেও কিছুক্ষণ কাটিয়ে ঘড়ি তখন রাত তিন প্রহর ছুঁই ছুঁই।
এবার ফেরা যাক ... নিস্তব্ধতা সবসময় সম্মতি সূচক হয় না, সময় হয়তো সবকিছু আল্যাও ও করে না। যাইহোক তাকে আগামী সপ্তাহে পুরো একদিন একসাথে থাকবো এই মর্মে চুক্তি সই করে একটা উবেরে তুলে দিতেই শুরু হলো ঝিমঝিম বৃষ্টি। ভরা শ্রাবণের রাত গুলো বড্ড মন খারাপের হয়। একটা হলুদ ট্যাক্সি নিয়ে হোটেলে পৌঁছে দেখি রাজকন্যার মেসেজ। " পৌঁছে গেছি " ।
সারাদিনের শেষে বিছানায় শুয়েই আওয়াজ পেলাম আবার। বাইরে ততক্ষণে শুরু হয়েছে বানভাসি।
আর এফ এমে আমার খুব প্রিয় একটা হেমন্তের অল টাইম ফেবারিট -
আজি ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে..
( ক্রমশ )