পর্ব - ৩ ★ আলোকচিত্রের অলৌকিক ছায়া★ [ ১০% shy-fox ভাই এর জন্য ]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

image.png

image source

★★★★★ আলোকচিত্রের অলৌকিক ছায়া ★★★★★

তৃতীয় পর্ব

দ্বিতীয় ্পর্বের লিঙ্ক

source

*************

ইন্টারনেটের শরনাপন্ন হয় সুদীপ্ত।
প্রায় ঘন্টা তিনেকের পরিশ্রমের দরুন যখন আন্তর্জালের একেবারে শেষ স্তরে এসে ঠেকেছে, তখন হঠাৎই একটি মিনিট তিনেকের একটি ভিডিও ক্লিপ হস্তগত হয় তার, যা তার অজ্ঞতার নিগুঢ় অন্ধকার পথে, আলোর সন্ধান দেয়।

সাধারণ অবস্থায় ভিডিও টি, একটি অতি সাধারণ ট্রিক দেখানোর ভিডিও হিসেবেই মনে হয়, কিন্তু ভিডিও টি শুরু হওয়ার পরই, কেমন যেন একটু খটকা লাগে তার। ক্লিপিংসটিতে দু জন অদ্ভুত দর্শন মানুষকে দেখা যায়। একজন প্রৌঢ় , অপরজন সদ্য যৌবনের উপকন্ঠে পা দেওয়া প্রায় বছর উনিশের এক যুবক। মানুষ দুটোর চেহারায় কেমন যেন একটা অস্বস্তিকর অস্বাভাবিকত্ব রয়েছে। ভালো করে লক্ষ্য করতেই, সুদীপ্তর চোখে ধরা দিল,তাদের চেহারার সেই অস্বস্তিকর অস্বাভাবিকত্বের বৈশিষ্ট্যগুলি।

লোকদুটোর চেহারা কেমন যেন অদ্ভুত রকমের ফ্যাকাসে সাদা.. যেন তাদের শরীরের শেষ রক্তবিন্দু অবধি শুষে নিয়েছে কেউ। বহু বছরের সুর্যের আলোর অভাবে তাদের গায়ের চামড়া গুলি সাপের মত বিশ্রী স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় এসে পৌছেছে। তাদের সেই শীর্ণকায় কোরোটি সর্বস্ব অস্থিচর্মসার মুখাবয়বে, কোটরাগত দুটি চোখ থেকে যেন ঝরে পরছে রক্তাভ আভা।

মানুষের চোখও এত লাল হতে পারে?.... এরা কি আদৌ মানুষ? গভীর বিস্ময়ে ও ভয়ে, নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে সুদীপ্ত। উত্তর পায় না। ভিডিও তে দেখা যায়, একটি ছোট ঘরের সিলিং এর ঠিক মাঝখান থেকে ঝুলছে একটি গাঢ় নীল রঙের বাল্ব । সেই বাল্ব থেকে ক্রমশ বিচ্ছুরিত হয়ে চলেছে তীক্ষ্ণ অথচ ক্ষীণ নীলাভ আলোর ছটা। বয়স্ক লোকটি একটি কাঠের চেয়ারে বসা। পরনে একটি ধুলি ধূসরিত টি শার্ট এবং ট্রাউজার। পায়ে একটি আধছেঁড়া স্পোর্টস শু। অভিব্যাক্তিতে অস্বাভাবিকতার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট। চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে, অল্পবয়সি যুবকটি। ভাবলেশহীন ওর মুখে, অভিব্যাক্তির কোন চিহ্ন চোখে পড়েনা।

এবার বয়স্ক লোকটি ফ্যাশফ্যাশে গলায়, খুব সম্ভবত রাশিয়ান ভাষায় কিছু একটা বক্তব্য রাখা শুরু করেন। খুবই আস্তে এবং অস্পষ্ট ভাবে।
আর তার সাথে সাথে ওই বক্তব্যের ইংরেজি সাবটাইটেলও দেওয়া হতে থাকে স্ক্রীনে। সেই ইংরেজি সাবটাইটেল পড়ে সুদীপ্ত যেটুকু যা বুঝেছে তা দেখে, সুদীপ্তর গা শিউড়ে উঠলেও সে তার উত্তর পেয়েছিল। লোকটির মন্তব্যের বাংলা অনুবাদ করলে যা দাঁড়ায় তা নিম্নরুপ, ↓

" স্বাগতম...। স্বাগতম...। স্বাগতম....। প্র‍্যাক্টিকালিটি অফ দ্য ডার্ক আননৌন ফ্যাক্টস এর আরেকটি এপিসোডে, আমাদের প্রিয় নরকবাসী বন্ধুদের জানাই হায়নার রক্তলোলুপ হৃদয়ের গভীর অভিনন্দন। আপনারা সবাই জানেন যে এই বিশেষ গোপন শো এর প্রতিটি এপিসোডে আমরা একেকটি করে অজানা গোপন তথ্য উপস্থাপন করি এবং তার মজাদার প্র‍্যাক্টিকাল এক্সপেরিমেন্ট করে দেখাই। এই শোতে আমরা,যারা নিজেদের কষ্ট দিতে ভালোবাসি তারা এই শো এর দ্বায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে চলেছি শান্তির অন্ধকারের পথে। আসুন নারকীয়তার আরেকটি পর্বে আপনাদের স্বাগতম।

আজ আমরা কথা বলব ফটোগ্রাফি নিয়ে , এমন অনেক সময় দেখা যায় , কিছু মানুষের অপঘাতে মৃত্যু হলে পরবর্তীতে তাদের অনেকের বিদেহী আত্মাকে, অনেক সময় তাদের কোন না কোন নিকটাত্মীয় তথা পরিবারের সদস্যের পারবারিক ছবিতে অস্বচ্ছ অথবা স্বচ্ছ প্রতিকৃতির বেশে ধরা দিতে দেখতে পাওয়া যায়।

এবার প্রশ্ন ওঠে, তবে সকল অপঘাতে মৃত মানুষের বেলায় এমন টা হয়না কেন? দেখুন ডিজিটালাইজ ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে এই সূত্র খাটে না কারন, সেটা যথেষ্ট ভিন্ন ধাঁচের গঠন প্রক্রিয়া। কিন্তু পারম্পরিক নিয়মে বিশেষ কিছু কেমিক্যাল ও অ্যাসিডিক সলিউশনের ব্যাবহার করা হয়।

পৃথিবীর বুকে প্রকৃতির খেয়ালে এমন কিছু মানুষ এমনও জন্মায়, যাদের শরীরে ঋণাত্মক এবং ধনাত্বক উভয় ভাইব্রেশনের উৎসস্থল থাকে৷ বিশেষ সময়ে বিশেষ ভাইব্রেশনের প্রভাব তার প্রাত্যহিক জীবনের ওপর পরে। এবার ফটো ডেভেলপের সেই বিশেষ কেমিক্যাল অ্যাসিডিক সলিউশনটির সাথে কাকতালীয় অথবা বিধি নির্দেশিত প্রক্রিয়ায় যখন সেই উভয় তরঙ্গ সমন্বিত মানুষটির দেহ নিঃসৃত অধিকন্তু কার্যকরী ঋণাত্মকতা সাথে ফটোগ্রাফিক ফিল্মের যোগসাজশ ঘটে, তখনই অনুষ্ঠিত হয় আরো এক নতুন নাটক।

আপনারা এই যে ছেলেটিকে দেখছেন, এ হল সেরকমই একটি ছেলে, তবে এর মধ্যে শুধু মাত্র ঋণাত্মক ভাইব্রেশনের অস্তিত্ব আছে। ওই আপনাদের প্র‍্যাক্টিকালি করে দেখাবে, কিভাবে অপঘাতে মৃত আত্মার ছায়া কিভাবে ছবির ফ্রেমে ধরা দেয় এসে। ও প্রথমে আমাকে বেশ ভালো করে গলার নলি কেটে মারবে। তারপর নিজের ছবি তোলার পর সে ছবি ডেভেলপ করে আপনাদের আমার প্রতিকৃতি দেখাবে।

হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন আমার নরকাভীলাষি বন্ধুরা। আমি ওর বাবা। তাই ফ্যামিলি কানেকশনও রয়েছে। মহামতি শয়তানে নিকটে আমি এই এক্সপেরিমেন্ট স্বার্থক হওয়ার জন্য বিনীত প্রার্থনা করছি। আমি... " প্রৌঢ়ের মুখের কথা শেষ হওয়ার আগেই, এতক্ষন তার পাশে মোমের পুতুলের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকা সেই ছেলেটি হঠাৎ হিংস্র শাপদের ন্যায় ক্রুর স্বরে দাঁতে দাঁত চেপে গোঙাতে শুরু করে। ফ্যাকাসে সাদা নির্লোম মুখটিতে, চেড়া হাসি ফুটে ওঠে। সে এক হাতে বৃদ্ধের চুলের মুঠি খামচে ধরে, মাথা পেছনের দিকে টেনে আনে, বৃদ্ধ ততক্ষণে উন্মাদের মত হাসা শুরু করেছে।

দেখতে দেখতে ছেলেটি একটি ছোট মরচে ধরা হাত ছুরি বের করে বৃদ্ধের গলায় আমুল গেঁথে দেয়, তারপর একটি মোচড় দিয়ে গলা চিড়তে চিড়তে গলার মাঝ বরাবর এগোতে থাকে। এবার আর বৃদ্ধর গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোয় না। তার বদলে খল খল করে গলা নাক মুখ থেকে ফিনকি দিয়ে বেরতে থাকে লাল উষ্ণ রক্ত প্রবাহ। পরবর্তী কিছুক্ষনের মধ্যেই ছেলেটি পরম যত্নে ও তৃপ্তির সাথে বৃদ্ধর গলার নলির শেষ অংশটুকুও আসতে আসতে কেটে আলাদা করে দেয় ছেলেটি।ফিনকি দিয়ে রক্ত ছিটকে আসে মুখে, জীভ দিয়ে নিজের সেই রক্তমাখা ঠোঁট ট চেটে নেয় একবার।

এবার নিজের রক্ত মাখা হাত দুটির দিকে ধীরে ধীরে তাকায় সেই ছেলেটি। যে উৎকট কাঁচা রক্তের গন্ধে সাধারণ মানুষের বিবমিষা বোধ হয়, সেই কাঁচা রক্তের আঁশটে গন্ধে ছেলেটির জীভে জল আসে, লম্বা লক্ লকে জিভ বের করে পরম তৃপ্তিতে নিজের হাতে লেগে থাকা শেষ রক্তবিন্দু অবধি চেটে খেয়ে নেয় সে।

এবার একটি ক্যামেরায় নিজের কয়েকটি ছবি তোলে সে। তারপর দ্রুত সেই ফিল্ম ডেভেলপ করে প্রধান ভিডিওর ক্যামেরার সামনে ধরতেই, আরও একবার গভীর বিস্ময়ের মুখোমুখি হয় সে। ছেলেটির এইমাত্র তোলা প্রতিটি ছবিতে, ভাসা ভাসা ছায়া মিশ্রিত স্বরুপতায় সহাস্য বদনে উপস্থিত রয়েছেন সদ্য মৃত সেই বৃদ্ধ।

( ক্রমশ )

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 56577.01
ETH 2981.05
USDT 1.00
SBD 2.14