বন্ধুদের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি ভ্রমণ (১০% shy-fox ভাইয়ের জন্য বরাদ্দ)
সেই গত সপ্তাহের পর আজকে কম্পিউটার খুলেছি। আসলে মাঝে মাঝে এরকম সময় আসে জীবনে, কিছুই ভালো লাগে না। এটা হয়তো অনেকেই বিশ্বাস করবেন না যে আমি পাক্কা ৭ দিন পর সিস্টেম খুলেছি। আসলে একটা চুড়ান্ত রকমের ট্রান্সফরমেশনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। জীবন নতুন ভাবে শুরু করতে গেলে এই হয়।
যাই হোক আসল কথা বলি, গত সপ্তাহে কোলকাতায় পোঁছে ( আগের পোস্টের বর্ণনা ) ফাইন্যালি পরের দিন ঘুম থেকে উঠলাম বেলা ২টোর সময়। উঠে তো খানিকক্ষণ ভ্যাবলার মত বসে রইলাম। কারণ পেটের ভেতর থাকা খাবার এবং পানীয় ততক্ষনে হজম হলেও তার আফটার ইফেক্ট পুরোমাত্রায় রয়ে গেছে।
তারপর গুটি গুটি পায়ে স্নান সেরে আরেক দফা বাঙালি ভোজন করে যখন উঠলাম তখনে ঘড়িতে বাজে বেলা ৩টে। এরপর হাতে অগাধ সময়। যেহেতু সোমবার তাই তেনার দেখা রাত ৮ টা অবধি হবে না। হাতে ঘন্টা ৫ সময় আছে। সেজে গুজে চপ্পল জোড়া গলিয়ে বাইরে এসে দেখি বৃষ্টি সবে শেষ হয়েছে, ভরা শ্রাবণের ধারা রাস্তা দিয়ে বসে চলেছে। আকাশ কালো অন্ধকার। কি করা যায় ভাবতে ভাবতেই মনে পড়লো বন্ধুর কথা। কয়েকজন কে ফোন করে অফ পেলাম। স্বাভাবিক ব্যাপার। সোমবার সবাই অফিসে।
যায় হোক কয়েকজন কে না পেয়ে মনে হলো হলদিরামে কেশর চা খাওয়া যাক। যখন মেট্রোর দিকে এগোচ্ছি হঠাত চেনা মুখ...
একেই বলে জীবন, এই ছোকরা কে ফোন করতে গিয়েও করিনি কারন ভাবলাম ব্যাস্ত থাকবে।
এদিকে পথের মাঝখানেই দেখা।
পার্ক স্ট্রীটের বাজার কোলকাতার উলটো দিকের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে শুরু হলো গল্প। আর বাঙ্গালি গল্পে যে অস্তাদ সে কথা কে না জানে।
সেই বেলা তিনটে থেকে আড্ডা চলল বিকেল সাড়ে পাঁচটা অবধি। এরপর বন্ধু বললো চ আমার ফ্লাটে চ, সামনেই থাকে, মিন্টো পার্ক ছাড়িয়ে এ যে সি বোস রোডের ওপরেই একটা দারুন সুন্দএ ফ্লাট ভাই এর। গেলাম সেখানে, গিয়ে দেখি নামেই ফ্লাট। ভেতরটা পুরো
হোস্টেল। জনা ৪ থাকে, এবং প্রত্যেকেই ততোধিক লেবেলের ছন্নছাড়া। এবং আমি যেহেতু কলেজ বন্ধু তাই বাকিদের সাথে বন্ধুত্ব হতে
বেশি সময় লাগলো না। অতি কষ্টে জানালাম আমার ঠিক ৮ টাই দেখা করার কথা, আজকে যদি সময়ে না পৌঁছাতে পারি তাহলে তিনি
নির্ঘাত এই জন্মের মত সাক্ষাৎ হবার আশা মিটয়ে দেবেন। সবাই মিলে অভয় দিল হয়ে যাবে, কুছ পরোয়া নেহি।
কিন্তু হে পাঠক, সবাই জানে বন্ধু, মৌতাত আর এরকম আবগারী সন্ধ্যে হলে কোণ মানুষের পক্ষেই উঠে যাওয়া সম্ভব না। ফলত যা হবার তাই হলো, আমি বেমালুম ভুলে গেলাম। খেয়াল হলো উনি যখন ফোণ করলেন ঠিক রাত্রি ৮ টা ১৫ নাগাদ। কোণ মতে মিন মিন করে বললাম আমার অবস্থা। ফোনের মধ্যেই এক প্রস্থ খিস্তি খেয়ে আমি যখন জেরবার তখন হাল ধরলো স্কুল কলেজ দিনের বন্ধু।
বুঝিয়ে সুঝিয়ে যে যখন তাকে রাজি করালো তখন ঘড়িতে বাজে সাড়ে আটটা। এরপর আমি বেরোলাম এবং তার সাথে সাক্ষাৎ। এই সাক্ষাৎ পর্ব টুকু বাকি থাক এখন। কিছু জিনিষ একান্ত ব্যাক্তিগত থাকে। এটাও সেরকম।
তারপর আবার রাত ১১ টা নাগাদ বন্ধুর ফোণ, তারা নাকি গন্ধরাজ বিরিয়ানি নামক কি একটা আনিয়েছে এবং সাথে ধূমায়িত সুপক্ক কচি পাঁঠা। অগত্যা বান্ধবীকে উবেরে তুলে দিয়ে বন্ধুর কাছে ফিরলাম আবার। আর এইসব ক্ষেত্রে সবাই জানে শুধু খাদ্য দিয়ে ঠিক মত মনঃসংযগ হয় না, সাথে একটু পানীয়ও দরকার হয়। অতএব সুদুর গোয়া থেকে আসা আম্রুত নামক উৎকৃষ্ট পানীয় এবং গন্ধরাজ বিরিয়ানি। আহাঃ অহোঃ কি তার সুবাস । এখনো জীভে জল আসছে।
রাত গভীরে যখন সব শেষ, চোখ ঢুলু ঢুলু তখন এক হতভাগার ইচ্ছে হলো ঘুরতে গেলে হয় না !!
এমন নয় যে আমার ইচ্ছে ছিল না, তবে রাত্রি ২টোর সময় দীঘার উদ্দেশ্যে বেরোনো মোটেই সুবিধে জনক প্রস্তাব নয়। বেশ কিছুক্ষন বাক বিতণ্ডার পর ঠিক হল যাওয়া হবে পুরুলিয়া। ইয়েস পুরুলিয়া মানে আমার গ্রামের বাড়ি। ভাবুন একবার।
যায় হোক অতো রাতে তো বাড়িতে ফোন করা যায় না, সকাল বেলা বেরোনোর পর সময় মত বাড়িতে ফোন করে দেব ভেবে প্লান শুরু করলাম। প্ল্যান হলো ভোর বেলা বেড়িয়ে পুরুলিয়া আমার গ্রামের বাড়ি পৌঁছাবো বিকেল ৪টে নাগাদ। রাস্তায় খাওয়া দাওয়া করে নেব। মাঝে শুধু একবার আমাকে হোটেলে ফিরতে হবে লাগেজ আর চেক আউটের জন্য। তারপর গ্রামের বাড়িতে পাক্কা ৩ দিন থাকবো সবাই।
সেখানে খাওয়া দাওয়া করবো। আনন্দে থাকবো। গ্রামে এখন চাষের সময়। আমিও অনেকদিন গ্রামে যায়নি। চাষার ব্যাটা হয়ে বর্ষার সময় যদি গ্রামে না যায় তাহলে বড্ড পাপ লাগবে। যায় হোক, প্লান মাফিক বেরোলাম আমরা সবাই সকাল ৭ টা নাগাদ।
মাঝে একবার হোটেলে গিয়ে আমি চেক আউট করে নিলাম। এরপর এক রাত্রের পরিচয়ে নতুন ৩ জন বন্ধুর সাথে পুরণো এক প্রিয় বন্ধু মিলে টোটাল পঞ্চ পান্ডব মিলে শুরু হলো মিশন পুরুলিয়া। শুরুর দিকে রাতে অত্যধিক পানীয়ের এফেক্ট ছিল পেটে, কাজেই একটু টলমল করছিলাম সবাই, কিন্তু কিছুক্ষন পরেই অল সেট।
এবার শুরু হলো সবাই মিলে আমার গ্রামের বাড়ি যাত্রা।
লোকেশন: পুরুলিয়া
ডিভাইস: Vivo F19