পর্ব - 2 ★ আলোকচিত্রের অলৌকিক ছায়া★ [ ১০% shy-fox ভাই এর জন্য ]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

image.png

image source

★★★★★ আলোকচিত্রের অলৌকিক ছায়া ★★★★★

দ্বিতীয় পর্ব

প্রথম ্পর্বের লিঙ্ক

source

*************

" আচ্ছা ঠিক আছে। ছাড়ছি তবে এখন, গুড নাইট ভাই" - বলে ফোন টা রেখে দেয় সুদীপ্ত। সে জানে, সে এতটাও টায়ার্ড নয়, যে চোখে ভুল দেখবে। কিন্তু অনুপকে তো আর সেকথা মুখের ওপর বলা যায় না। তারপর আবার সে ফিরে গিয়েছিল ল্যাবে। খুব ভালো করে ফটো খানা ডেভেলপ করেছিল সে।

এইই তো !! এবার আরও স্পষ্ট ও স্বচ্ছ হয়ে ফুটে উঠেছে আগের সেই ছবির আবছা ছায়ামুর্তি গুলি। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এখন, এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক, আর এক বৃদ্ধ ভদ্রমহিলা, আবছায়াতে দাঁড়িয়ে আছেন। পরদিন সকাল হতে না হতেই সুদীপ্ত ছুটে গিয়েছিল অনুপদের বাড়িতে। ওয়াশ করা ছবিটা দেখিয়েছিল অনুপকে। অনুপ ভীষণ অবাক হয়.. বিস্ফারিত চোখে ছবির দিকে চেয়ে থেকে সে বলে, " আমি তো ঠিক কিছু বুঝতে পারছিনা। দাঁড়া আমার বাবাকে ডেকে আনি, বাবা নিশ্চয়ই বলতে পারবে।

অনুপের বাবা একজন নামজাদা সাংবাদিক। রাসভারী মানুষ। তবে, সুদীপ্তর সাথে ভালো সম্পর্ক আছে তার। অনুপের বাবা এলেন। কিছুক্ষণ ভালো ভাবে ছবিটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার পর, তিনি চিনতে পারলেন। উত্তেজনায় এবং বিস্ময়ে ভদ্রলোকের কপালে ভাঁজ দেখা দিলো। তিনি বিস্ময়ের স্বরে বললেন, “ আরে এতো আমার ঠাকুরদা আর ঠাকুমা..!!! ”

সুদীপ্তকে এবার সত্যিই, বেশ ভালো মত অবাক হতে হয়!! বয়সটা একটু কম হলেও, ফটোগ্রাফির লাইনে সে নতুন নয়। এত বছরের ফটোগ্রাফির জীবনে এমনতর অভিজ্ঞতা এর আগে হয়নি তার কখনো। সুদীপ্ত দ্রুত হাতে, স্মৃতির ডায়েরীর পাতা ওল্টায়! তার বেশ মনে পরছে। এই বিষয় সম্বন্ধীয় কোন একটি লেখা সে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন পড়েছিল।

বছর দুয়েক আগে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ ওরেগন থেকে প্রকাশিত একটি জার্নালে সে পড়েছিল, যে কালের গতির উথ্বান পতনের মাঝে, কোন কোন সময়.. বা বলা ভালো, কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এমন ধরনের কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। যেখানে একজন পুর্ণদেহী মানুষ , এই স্থুল প্রাণীজগৎ এবং সুক্ষ ঋণাত্মক উর্জাজগতের মাঝে এক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। যাকে সাধারণ চলিত বাঙ্গলায় ‘দেহে আত্মা ভর করা’, ‘ঘাড়ে ভূত চাপা ’ ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে। সেই জার্নালে আরও বলা হয়েছে যে, সবক্ষেত্রেই মানব দেহ যে সরাসরি মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহৃত হবে, তা নাও হতে পারে.. কিছু কিছু ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র অথবা কিছু কেমিক্যাল রিয়াকশনও অনেক সময়, অযাচিত ভাবেই মাধ্যম হিসেবে নির্বাচিত হয়। যেমন টা এক্ষেত্রে হয়েছে। এমনই সারা পৃথিবী জুড়ে বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে যেখানে এই একই ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। যেখানে, অপঘাতে মৃত কোন মানুষের বিদেহী আত্মা, কোন একটি মাধ্যম কে আশ্রয় করে, নিজের অস্তিত্বের জানান দেওয়ার চেষ্টা করে। যেমন এক্ষেত্রে ক্যামেরা বা নেগেটিভ ডেভেলপারকে মাধ্যম হিসেবে ইউজ করে, ক্যাপচার করা ছবিতে অ সুপার ইমপোস্ট হয়ে ছায়া ছায়া তবে মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে ধরা দেওয়ার চেষ্টা করে। এবার এই মাধ্যম নির্বাচন, আত্মার উপিস্থিতি এসবকিছু, কিন্তু সব ক্ষেত্রে হয় না। এই সবটাই হয় কোন এক অজ্ঞাত কারনে যা এখন পর্যন্ত নির্ণয় করা সম্ভব হয় নি।

সুদীপ্ত এবার অনুপের বাবা কে জিজ্ঞাসা করে, " কাকাবাবু কাইন্ডলি যদি বলেন, ওনারা কিভাবে মারা গিয়েছিলেন? "

কাকাবাবু, সুদীপ্তর কথায় সম্মতি জানিয়ে বলা শুরু করেন, “ সে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা সূদীপ্ত। আমার ঠাকুরদা আর ঠাকুমা দুজনেই গিয়েছিলেন মাতা রাণী বৈষ্ণো দেবী ধামের যাত্রায়। কিন্তু দেবীর মন্দির অবধি আর পৌছোনোর সৌভাগ্য হয়নি তাদের। যেই বাসে করে সব তীর্থ যাত্রীদের সাথে ঠাকুরদা ঠাকুমা যাচ্ছিলেন , বাঁক নিতে গিয়ে, চকিতের অসতর্কতায় সেই বাস, পাহাড় থেকে গভীর গিরিখাতে পরে যায়। বলাই বাহুল্য! বাসের ড্রাইভার খালাসি সহ সমস্ত তীর্থযাত্রীদের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে সেনা ও এনডিআরএফ জওয়ানদের জয়েন্ট সার্চ অপারেশনের মাধ্যমে, সেই গভীর গিরিখাত থেকে হতভাগ্য তীর্থ যাত্রীদের মৃতদেহ উদ্ধার। জ্যাঠামশায় আমার বাবা ও ছোট কাকাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে হাসপাতালের মর্গ থেকে ঠাকুরদা আর ঠাকুমা এর শবদেহ শনাক্তকরে শিলিগুড়ি নিয়ে আসেন। যখন এই দুর্ঘটনা ঘয়াতে তখন আমার বয়স খুবই কম। এখোনো আবছা আবছা মনে পড়ে সবকিছু।

আরও একবার ধাক্কা খেতে হয় সুদীপ্ত দাশগুপ্ত কে। ওই জার্নালে সে পড়েছিল, অপঘাতে মৃত আত্মার দ্রুত মুক্তি ঘটে না। পরিবারের মায়া ছেড়েও খুব বেশি দুরে যেতে পারে না। উপযুক্ত সময় এবং উপযুক্ত মিডয়াম পেলে, তারা সেই মাধ্যমের সাহায্যে তাদের অস্তিত্বের আভাস দিয়ে যায়। তার মানে এক্ষেত্রে , 'ক্যামেরা' টি একটি উপযুক্ত মাধ্যম হিসাবে কাজ করেছে আর অনুপ হয়েছে সংবাহক।

ব্যাপারটা তাকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল। সে ভাবছে এ বিষয়ে কি করে আরও বেশি তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে । যখন এভাবে দুটি আত্মা ক্যামেরায় লেন্সে ধরা দিতে পারে, তখন ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যে আর ঘটবে না, তা কে আর বলতে পারে। অতএব, শুরু হয় সুদীপ্ত দাশগুপ্তের নতুন অনুসন্ধান।

পরিচিত প্রিয়জনদের কাছে প্রশ্ন রাখে সে, আপনাদের পরিবারের কেউ কি অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে? তারা অবাক হয়ে যায়। জানতে চায় সুদীপ্তর এই অদ্ভুত প্রশ্নের অর্থ? সুদীপ্ত সংক্ষেপে বুঝিয়ে বলে _ যদি আপনারা চান, সেই মৃত আত্মাকে আবার ফিরিয়ে আনতে ছবির মাধ্যমে, তাহলে আমি আপনাদের সাহায্য করতে পারি।

বলে তো দেওয়া হল, কিন্তু সুদীপ্তর মন তখনও, অন্য একটি দুশ্চিন্তার মেঘে আচ্ছন্ন। সে মানুষের সেন্টিমেন্ট নিয়ে খেলছে না তো? সে কি সত্যিই পারবে মহাকালের ওপার থেকে, বিদেহীদের ছায়াকে আকর্ষণ করে ছবিতে সাজাতে? তাছাড়া একটা রিস্ক আছে! কেননা, অনুপ যে ক্যামেরাতে মৃত আত্মার ছবি তুলেছে, সেটাতো সুদীপ্ত পাবে না!! তার নিজস্ব ক্যামেরাতে এমন ঘটনা কি ঘটবে?

পরক্ষনেই সেই আমেরিকান জার্নালে পড়া, তথ্য ও বক্তব্য গুলো মনে পরে যায়। সুদীপ্ত ভাবতে থাকে, কি সেই প্রক্রিয়া? যার মাধ্যমে এমন অদ্ভুত ঘটনা ঘটে যেতে পারে? এমন কোন্প্র ক্রিয়ায় একটি সাধারণ আধুনিক ক্যামেরা হয়ে ওঠে , উন্নত যোগ্য পারলৌকিক মাধ্যম। নাকি যে সব বিশেষ কেমিক্যাল দিয়ে সে ছবি ডেভেলপ করে তাতেই কিছু রহস্য লুকিয়ে?

ইন্টারনেটের শরনাপন্ন হয় সুদীপ্ত। প্রায় ঘন্টা তিনেকের পরিশ্রমের দরুন যখন আন্তর্জালের একেবারে শেষ স্তরে এসে ঠেকেছে, তখন হঠাৎই একটি মিনিট তিনেকের একটি ভিডিও ক্লিপ হস্তগত হয় তার, যা তার অজ্ঞতার নিগুঢ় অন্ধকার পথে, আলোর সন্ধান দেয়। সাধারণ অবস্থায় ভিডিও টি, একটি অতি সাধারণ সাক্ষাৎকারের ভিডিও হিসেবেই মনে হয়, কিন্তু ভিডিও টি শুরু হওয়ার পরই, কেমন যেন একটু খটকা লাগে তার। ক্লিপিংসটিতে দু জন অদ্ভুত দর্শন মানুষকে দেখা যায়। একজন প্রৌঢ় , অপরজন সদ্য যৌবনের উপকন্ঠে পা দেওয়া প্রায় বছর উনিশের এক যুবক।

( ক্রমশ )

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 56608.36
ETH 2976.28
USDT 1.00
SBD 2.15