লাইফ স্টাইল :- রমজান মাসের ২৯ তারিখ।
আমি @tuhin002, আমি আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যগনকে আমার পক্ষ থেকে জানায় সালাম," আসসালামু আলাইকুম" সবাই কেমন আছেন ? আশা করি, মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমি ও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহুর অশেষ রহমতে ভাল আছি। আমি আজকে আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো রমজান মাসের ২৯ তারিখ। ঐ দিনে আমাদের গ্রাম জুগীর গোফায় বিশাল এক ইফতারের আয়োজন করা হয়েছিল। রমজান মাসের সেই ইফতারের বিষয় নিয়ে আজকে আমার ব্লগ.....।
আজকে আমি যে পোস্ট শেয়ার করতে যাচ্ছি, এই পোস্ট অনেক আগে শেয়ার করা দরকার ছিল। যেহেতু রমজান মাসেকে নিয়েই এই পোস্ট। রমজান মাসের মধ্যেই করা উচিত ছিল। কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিল শাবান মাসে যে ছয়টি রোজা করা হয়, এই ছয়টা রোজার মধ্য দিয়ে পুনরায় মানুষকে মনে করে দেয়ার জন্যই আমার এই আয়োজনটা। এটা দেখে হয়তোবা অনেকের মনে এটাই জাগবে ইস কয়দিন আগেই রমজান মাসে রোজা রেখেছিলাম। সন্ধ্যার সময় ইফতারিতে কত আনন্দ করেছি। একটা বিষয় ভাবেন তো বর্তমান সময়ে যে আবহাওয়া যাচ্ছে তাতে মানুষের রোজা করা কতটা কঠিন হয়ে যেতো। মানুষের শুকরিয়া আদায় করা উচিত। এজন্যই বলে রমজান মাসের রোজা হলো আল্লাহর জন্য। আর রমজান মাসের পুরস্কার আল্লাহ নিজেই দিবেন। একটা পুরস্কার আল্লাহ এডভান্স দিয়েই রাখেন। সেটা হল রমজান মাসের সময় আর অন্য সময়ের মধ্যে অনেক তফাৎ থাকে। মানুষ পনোর ষোল ঘন্টা না খেয়ে থাকে, দিনটা কত ঠান্ডা যায় সবমিলিয়ে একটা রহমতের অবস্থার মধ্যে থাকে রোজাদার গণ ।
রমজান মাসের রোজা গুলো প্রত্যেকটা গুরুত্ব বহন করে থাকে। প্রতিটা মানুষের কাছে প্রতিটা রোজায় হলো সমান। তবে আমাদের গ্রাম অর্থাৎ জুগীর গোফার মানুষের কাছে প্রতি রমজান মাসের ২৯ রোজাটি একটু ভিন্ন হয়ে থাকে। আমাদের গ্রামে শিক্ষিত মানুষের হার অনেক। বলতেই হয় প্রায় ৯৭ পার্সেন্ট লোক শিক্ষিত। আর এই ৯৭% লোকের মধ্যে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ পার্সেন্ট লোক চাকরিজীবী। এই চাকুরী জিবি মানুষ গুলো সবাই একতাবদ্ধ হয়ে ২৯ রোজার দিন সবাই একত্রিত মিলিত হয়ে ইফতারির করে থাকে। আসলে এই বিষয়টি করার একটাই কারণ সেটা হল যারা বাহিরে চাকরি করে অনেক দিন তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হয় না। এক কথায় বলা যায় ২৯ তম রোজাটি হলো আমাদের একটা মিলন মেলা। যেখানে ছোট বড় সবাই একত্রিত হয়ে নিজেদের ভাব গুলো একে অপরের কাছে প্রকাশ করার একটা সুযোগ তৈরি করা।
এই ইফতারির ব্যবস্থা করতে বিশাল একটি অংকের টাকার প্রয়োজন হয়। বুঝতেই পারছেন সারা গ্রাম মিলে এই ইফতারের আয়োজনটা করা হয়ে থাকে। আলহামদুলিল্লাহ এ বছরে প্রায় আমরা ৭০০ লোকের আয়োজন করেছিলাম। এই সাতশ লোকের আয়োজন করার জন্য আমাদের প্রায় ৬৩ হাজার টাকার বাজেট ছিল। আমরা এই টাকা গুলোকে সরকারি চাকরিজীবী ব্যবসায়ী এবং যারা প্রবাসে থাকে তাদের কাছ থেকেই সংগ্রহ করে থাকি। এছাড়াও যারা ছাত্র বা অন্য কাজে নিয়োজিত রয়েছেন এ ধরনের মানুষের কাছ থেকে আমরা এই টাকা গুলো নিয়ে থাকি। অবশ্য এটা আমাদের গ্রামের মধ্য থেকেই কালেকশন করা হয়ে থাকে। প্রতিবছরে আমরা ইফতারের জন্য বিভিন্ন ফল মূল দিয়ে থাকি। প্রায় ১৫ থেকে ১৬ টা আইটেম ব্যবহার করি এখানে। কিন্তু এবার আমরা যারা আয়োজন হিসেবে ছিলাম তাদের একটাই কথা ছিল আমরা বিরানি দিব। অবশ্যই এটা আমার ইচ্ছা ছিল না। কারণ ইফতারিতে ফল টাই হলো উত্তম। সবার সম্মতি যখন একদিকে ছিল তখন আমার অন্য কিছু সম্মতি দেওয়াটাও ভুল হতো। তাই আমি সেখানে কোন কিছুই বলি নাই। সবশেষে বিরানির ব্যবস্থাটাই হয়েছিল।
আমরা ইফতারের জন্য বিরানির ব্যবস্থা করেছিলাম এবং তার পাশাপাশি কয়েকটি ফলেরও ব্যবস্থা করেছিলাম এর মধ্যে ছিল খেজুর শসা আপেল তরমুজ। তবে বলতেই হয় ,সারাদিন রোজা থাকার পর রোজাদারদের জন্য সবচেয়ে তৃপ্তিদায়ক হলো শরবত। সারাদিন রোজা থাকার পরে এক গ্লাস শরবত খেতে পারলে মনে হতো সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়েছে। তাই শরবতের আইটেম তো আমাদের অনেক বেশি করতে হয়েছিল। অন্য বছরের ন্যায় এবারে আয়োজনটার বিশাল ছিল তাই শরবতের পরিমাণটা বেশি লেগেছিল।
আমরা এই ইফতারি আয়োজনের বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবক থাকে। প্রত্যেক বছরে মতো এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানে প্রায় ১৫ থেকে ২০ টা ছেলে আমরা পরিশ্রম করি। যাদের মধ্যে অনেকে রোজায় থাকেন আবার অনেকে রোজায় থাকে না। যেহেতু এবার আয়োজনটা বিশাল ছিল তাই চেষ্টা করেছি যত দ্রুত সম্ভব কাজ গুলো সম্পন্ন করার। ইফতারির সময় শুরু হওয়ার ঠিক আধা ঘন্টা আগে থেকেই আমরা মানুষের কাছে ইফতারি পৌঁছে দিয়েছি। সবাই সারিবদ্ধ হয়ে বসেছিল তাদের হাতে একটি করে প্যাকেট এবং এক গ্লাস করে শরবত। প্রতিবার আয়োজনটা বিশাল থাকে তারপরে এবার আরো বেশি আয়োজন ছিল মানুষ ও ছিল অনেক। আমরা শুধু এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকি না। যারা এখানে পরিশ্রম করে অর্থাৎ কাজ করে তাদের প্রত্যেকটা বাড়িতে তাদের মায়ের জন্য একটি করে প্যাকেট আমরা দিয়ে থাকি। এবারও সেই বিষয়ের কোন ব্যতিক্রম হয়নি। নিশ্চয় আপনারা এই ফটোগ্রাফির মধ্য দিয়েই বুঝতে পারছেন কত লোকের সমাগম হয়েছিল আমাদের এই ইফতারিতে। ২৯ রোজায় ইফতারি পার্টিতে আমরা ভীষণ আনন্দ উপভোগ করে থাকি। এতগুলো মানুষ সবাই একত্রিত হয়ে রোজায় থাকার পরেই ইফতার করাটা সত্যিই একটা অন্যরকম অনুভূতি।
আপনাদের আমি অনেক আগেই অবগত করেছি আমাদের গ্রামের শিক্ষিত হার অনেক বেশি। আমাদের চাচা রয়েছেন যিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটি টিচার। এছাড়াও অনেক ব্যাংকার শিক্ষক বিন্দু রয়েছেন। ইফতারির আগে আমাদের একটা আলোচনা সভা হয়। এই আলোচনায় থাকে কিভাবে আমাদের গ্রামের কেউ উন্নয়ন করা যায় কিভাবে গরীব দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায় কিভাবে আমাদের সকল কার্যক্রম গুলোকে সুস্থ সুন্দর ভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সে সম্পর্কে কিছু আলোচনা হয়ে থাকে। আমাদের মসজিদে ইমাম সাহেব থাকেন ঠিক পাঁচ মিনিট আগে কিছু কোরআন হাদিসের কথা হয়ে থাকে। এক কথায় সবমিলে এই দিনটা আমাদের একটা পরিপূর্ণ দিন। আমাদের সবার কাছে ঈদের আগে আর একটা ঈদ আমরা পালন করে থাকি। আমাদের গ্রামের মানুষের মধ্যে একটা বিষয় লক্ষ্যনীয় সেটা হল সবাই একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল। আর এই বিষয়টা আমাদের গ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
ভুল ত্রুটি হলে অবশ্যই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশায় নিয়ে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ। |
---|
আজ এই পর্যন্ত। সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ডিভাইস | poco M2 |
---|---|
লোকেশন | https://w3w.co/tots.undertones.demanded |
👨🦰আমার নিজের পরিচয়👨🦰
আমি আবুল বাশার খায়রুল আলম তুহিন। আমার জন্ম ১১ এপ্রিল ১৯৯৫ সালে। আমার বাসা মেহেরপুর জেলা,গাংনী থানা, জুগীর গোফা গ্রাম। আমি বিবাহিত। বর্তমানে আমার একটা পুত্র সন্তান আছে। আমি গ্রাজুয়েশন শেষ করেছি রাজশাহী নিউ গভমেন্ট ডিগ্রী কলেজ থেকে। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমার মাতৃভাষা বাংলা। আমি বাংলা ব্লগে কাজ করতে অনেক ভালোবাসি। এই ব্লগে কাজ করার মাধ্যমে আলাদা প্রশান্তি পায়। আমি ছবি আঁকতে,গান গাইতে,কবিতা লিখতে অনেক পছন্দ করি। এছাড়া আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে খুব পছন্দ করি। আর আমি স্টিমেটে জয়েন করেছি (২৭ - ০৬ - ২০২২) সালে। সংক্ষিপ্ত আকারে আমার নিজের পরিচয় আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য শুভকামনা রইলো।
(১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য )
VOTE @bangla.witness as witness

OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://twitter.com/ABashar45/status/1785863858999210378?t=5LIjZ8zUy6-Sggh0WXcfQQ&s=19
আলহামদুলিল্লাহ প্রতি বছর আমাদের গ্রামে ২৯ তারিখে ইফতারের আয়োজন করা হয়। রমজান আমাদের জন্য রহমত একটি মাস। এই মাসে আল্লাহ তার বান্দাদের উপর রহমত নাজিল করেন। ইফতারের এই আয়োজন দেখে খুবই ভালো লাগলো৷ সবাই একসাথে বসে ইফতার কারার মজায় আলাদা৷ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই অনেক সুন্দর একটি মূহুর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
এটা ঠিক রমজান মাসের ফজিলত অত্যাধিক। এই ফজিলত পূর্ণ মাসে সবচেয়ে আনন্দের সময় হলো ইফতারি। প্রতিবছর আমাদের গ্রাম এটা হয় এটা আমার কাছে বেশি ভালো লাগে। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
সু স্বাগতম ভাই
বাহ মামা আপনি আজকে আমাদের মাঝে বেশ দারুন একটি পোস্ট লিখে শেয়ার করেছেন। আসলে আপনাদের গ্রামে প্রায় প্রত্যেক বছর ২৯ রমজান এমন ইফতারের আয়োজন হয় তা অনেক আগে থেকে জানা ছিল। তবে ইফতারিতে আমিও এবার উপস্থিত ছিলাম। আসলে গ্রামের সকল মানুষ যদি একসাথে ইফতারি করা যায় সত্যি বেশ ভালো লাগে। ধন্যবাদ মামা এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
সত্যি বলতে ওই দিনটা ছিলো একটি অসাধারণ মুহূর্ত। এমন একটা দিনে গ্রামে সকল মানুষেরাএকত্রিত হয়ে ইফতারি করাটা অনেক আনন্দের একটা বিষয়। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
এই দিনটা আমাদের গ্রামের একটা ঐতিহ্যবাহী দিন। ছোটবেলা থেকেই লক্ষ্য করে আসছি যে এই দিনে আমাদের গ্রামের সকল মানুষেরা একত্রিত ভাবে আমাদের গ্রামের খেলার মাঠে আসে এবং সকলে ইফতারি করে। অন্যান্য বছরে তুলনায় এ বছরে মানুষের সমাগম একটু বেশি হয়েছিল।
এটা আমিও ছোট থেকেই দেখে আসছি আমাদের বড় ভাইয়েরা রোজার এই দিনে এ আয়োজনটা করতো। সে ধারাবাহিকতায় আমরাও এখন করছি। আশা করি সামনের দিন গুলো চলবে।