ভিডিওগ্রাফি : আমার সেল্ফ ডিফেন্স জার্নি
|| আজ ২৪ মে, ২০২৪ || রোজ: শুক্রবার ||
হ্যাল্লো বন্ধুরা
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসী, সবাইকে আমার নমষ্কার /আদাব। আশা করছি আপনারা সকলে ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমিও মহান সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদে পরিবার সহ বেশ ভালো আছি। সকলের সুস্থতা কামনা করেই আমি আমার আজকের নতুন পোস্ট শুরু করছি।
আমি বরাবরই নতুন নতুন জিনিস শিখে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে ভীষণ ভালোবাসি। আমি মানি যে যে কোন জিনিস ই জানা থাকা ভালো। হয়তো একজন মানুষের পক্ষে সবকিছু জানা সম্ভব নয়। তবে যার যে দিকে আগ্রহ, ইচ্ছে আছে, সুযোগ পেলেই সেসব বিষয়ে নিজেকে দক্ষ করে তোলা উচিত সকলেরই। এক একজন আলাদা আলাদা মানুষ হওয়ায় একেক জনের ইন্টারেস্ট একেক দিকে থাকে। আমি চেষ্টা করি যখন নিজের ইন্টারেস্ট এর কিছু শেখার সুযোগ পাই, সেটা আত্বস্থ করে নেয়ার।
সালটা তখন ২০১৮। আপনাদের মনে আছে কি না জানি না, তখন চারপাশে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা অহরহ ঘটতো মেয়েদের সাথে! পেপার বা নিউজ এ প্রতিদিনই কোন না কোন ধর্ষনের নিউজ থাকতোই। এমনকি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে কড়া নিরাপত্তার ঢাকা এলাকাতেও যখন তনু নামের একজন তরুণীকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়, তারপরেও তার কোন সঠিক তদন্ত-বিচার হয় না। এই ঘটনা আমার মনে বিশাল দাগ কেটে যায়। লোভাতুর হায়নাদের দৃষ্টি থেকে বাদ যায় না ৪ বছরের শিশু অথবা ৭০ বছরের বৃদ্ধাও! একজন মেয়ে হিসেবে তখন নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগতো! ওদিকে আমার বাবা বাংলাদেশ পুলিশের সি.আই.ডি তে একজন উর্ধতন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিতো! সেদিক থেকেও আলাদা একটা রিক্স ফ্যাক্টর কাজ করতো! অনেকদিন থেকে অনিশ্চয়তা, মনে ভয় নিয়ে চলে হুট করে একদিন মনে হলো, ভয় মনে কতদিন চলবো? এটা তো সমাধান নয়! নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে এমনভাবে, যেন বৈরি পরিবেশে রুখে দাঁড়াতে পারি। সেই ভাবা থেকেই ডিসিশন নিলাম সেল্ফ ডিফেন্স শিখবো! যেমন ভাবা, তেমন কাজ! খোঁজ লাগালাম কোথায় মেয়েদের সেল্ফ ডিফেন্স শেখায়। খুঁজেও পেলাম তেমন একটি ঠিকানা! শুরু হলো আমার সেল্ফ ডিফেন্স জার্নি!
শুনতে যতটা সহজ, জার্নি ততটা সহজ ছিলো না মোটেও! ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়েছে। আমি বাসায় কখনোই নিজে নিজে বুক ডাউন দিতে পারতাম না। সেই আমি হাতের নাকলস এর উপর ভর দিয়ে বুক ডাউন দিতে শিখেছি! নিজেকে ভেঙে গড়ে তৈরি করতে হয়েছে। নিজের কোর কে শক্ত করতে হয়েছে। স্ট্রেচিং, বুক ডাউন, পুশ আপ, ক্রাঞ্চ তো ছিলো দৈনন্দিনকার দুধ-ভাত। আমার সেল্ফ ডিফেন্স শেখার সময়ের কিছু ক্লিপস একসাথে করে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম আজ। আমরা যে পদ্ধতি তে সেল্ফ ডিফেন্স শিখেছি, সেটা কারাতের একটা ফর্ম মাত্র। সেই ফর্ম এর নাম ছিলো - " কিয়োকুশিন"। দীর্ঘ ৬ মাস শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেকে তৈরি করেছিলাম। ৬ মাস সময় দেয়ার পর আগের আমি আর ৬ মাস পরের আমিতে ছিলো অনেকখানি তফাৎ! সেই নতুন আমি যেন ছিলাম অকুতোভয়! ঠিক তখন ই আমার প্রথম চাকরি জীবন শুরু হয়। নারায়নগঞ্জের কাচপুরে। অচেনা পরিবেশ, অচেনা মানুষের মাঝেও নিজেকে তখন অসহায় লাগতো না। কারণ আমি জানতাম, আমি প্রস্তুত আছি যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য। যদিও নিজেকে প্রস্তুত রাখাটাও প্রাকটিসের বিষয়। যেখানে থাকতাম ওইসময়, যখন আমি আমার মতো প্রাকটিস করতাম, অনেক মেয়েই অবাক হতো আমাকে দেখে! আমি তাদের বারবার বলতাম, মেয়েদের আত্ন- সুরক্ষার জন্য নিজেদের সচেতন হওয়ার কোন বিকল্প নেই!
এখনো আমি একই কথা বলি। আপনাদের যাদের বাসায় ছোট্ট পরী আছে, আপনারা ছোট থেকেই তাদের সেল্ফ ডিফেন্স শেখাবেন প্লিজ! মেয়েদের আর্ট, গান, নাচ, ঘরের কাজ বা রান্না শেখার চেয়েও সেল্ফ ডিফেন্স শিখাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, অনেক বেশি জরুরী। আমরা কেউই চাই না আমাদের কারোর সাথেই অপ্রীতিকর কিছু ঘটুক! কিন্তু এটাই চরম সত্য যে মেয়েরা এমনকি নিজেদের বাসাতেও সেইফ না! অথচ এই বিষয় টি কে অধিকাংশ মানুষ ই গুরুত্ব দেই না। আমার আজকের জার্নি টা আপনাদের সাথে শেয়ার করার একটাই উদ্দেশ্য, নিজেদের ঘরের মেয়েটিকে নিজেকে রক্ষা করতে শিখান, প্লিজ! মেয়েদের জন্য সেল্ফ ডিফেন্স শেখা বিলাসিতা নয়, ভীষণ ভীষণ ব্যাসিক!!
এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে 🌼 ধন্যবাদ 🌼
আমি- তিথী রানী বকসী, স্টিমিট আইডি @tithyrani। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। বিবাহিতা এবং বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছি।২০২৩ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে স্টিমিটে জয়েন করেছি।
ভ্রমণ করা, বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া, কবিতাবৃত্তি করা আমার শখ। পাশাপাশি প্রতিদিন চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখতে, ভাবতে। যেখানেই কোন কিছু শেখার সুযোগ পাই, আমি সে সুযোগ লুফে নিতে চাই৷ সর্বদা চেষ্টা থাকে নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নত করার।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
করোনা কালীন সময়টাতে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বেশি ঘটেছিলো। আপনি সেল্ফ ডিফেন্স শেখার জন্য ছয় মাস ধরে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এটা সত্যিই দারুণ ব্যাপার। আমার কাছেও মনে হয় মেয়েদের রান্না বা ঘরের যেকোনো কাজ শেখার থেকে সেলফ ডিফেন্স শেখাটা বর্তমানে অধিক জরুরি। অনেক সুন্দর এবং শিক্ষনীয় একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি।
এটা করোনারও দুই বছর আগের কথা ভাই! তখনো অহরহ এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতো! আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্ট টি পড়ে দারুণ মতামত শেয়ার করার জন্য। তবে পরিবারের মেয়ে সদস্যদের সেল্ফ ডিফেন্স শেখানোর চেষ্টা করবেন। তবেই আমার এই পোস্ট সার্থক।
হুম দিদি পড়েছিলাম ২০১৮ সালে এটা শিখেছেন। আসলে দিদি গ্রামের মেয়েদের জন্য এটা শেখা প্রায় অসম্ভব মতো। শহরে থাকলে অনেক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। তবে তারপরেও নিজের আত্মরক্ষার জন্য একটু কষ্ট করে হলেও এটা শেখা উচিত প্রতিটি মেয়েরই।
মেয়েদের নিরাপত্তা হীনতার জন্য অনেক টা আমরা পুরুষেরা দায়ী। এই ধরনের ঘটনা গুলো লজ্জাজনক। তবে আমাদের দেশের মেয়েদের কাছে সেলফ ডিফেন্স তৈরি করার ব্যাপার টা একটু কঠিন। অনেক সময় তারা এটা বুঝতেও চাই না কিন্তু। যাইহোক আপনার জার্নিটা দেখে এবং পড়ে বেশ ভালো লাগল। আপনার জন্য শুভকামনা আপু।
আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ ভাই। আমাদের দেশের পরিস্থিতিতে মেয়েদের সেল্ফ ডিফেন্স অনেকটাই কঠিন ব্যাপার, সেটা আমিও মানি। তবে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই ভাই!
পুরো ভিডিওটা দেখলাম আপু। সত্যি ভীষণ ভালো লেগেছে। এই জিনিসটা শিখার প্রতি এক সময় আমারও ভীষণ আগ্রহ ছিল। তবে আর শিখা হয়নি। আসলেই মেয়েদের সুরক্ষার জন্য নিজেদের সচেতন হওয়ার বিকল্প কিছুই নেই। প্রত্যেকটা মেয়ের সেল্ফ ডিফেন্স শেখাটা সত্যিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। লেখাগুলো পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো আপু।
অনেক সময় নানা ধরনের প্রতিকূলতার জন্য শেখার আগ্রহ থাকলেও অনেক কিছুই শেখা হয়ে উঠে না৷ তবে এখন ইন্টারনেট এর যুগে কিছু ব্যাসিক জেনে রাখা এবং প্রাকটিস করা ভালো আপু৷ সাবধাণতার চেয়ে ভালো আর কিছুই হতে পারে না! আপনাকে ধন্যবাদ আপু।
আসলেই তাই আপু, চেষ্টা করবো বেসিক কিছু জিনিস শিখে রাখার।
বাহ ব্লগটি পড়ে ও বিডিওটি দেখে অনেক ভালো লাগলো। এভাবে নিজেকে প্রস্তুুত করতে পারলে সত্যিই কোন ভয় থাকে না। আর এটা সবারই দরকার। এগুলোতে দুই দিকেই লাভ। নিজেকে রক্ষা করা যায় আবার শরীর ফিট থাকে। ধন্যবাদ।
জি ভাই। একদম ঠিক কথা! এভাবেই আসলে নিজেকে প্রস্তুত রাখলে কনফিডেন্স ও আসে, শরীর ও ফিট রাখা যায়! দুদিকেই লাভ!