|| স্মৃতি কথন : মতি || ( প্রথম পর্ব )
প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজ যে মানুষটাকে নিয়ে লেখা হল সে আমার ছেলেবেলার বন্ধু মতি। তার দূরদর্শী জীবনবোধ আমাকে অবাক করেছিল। তার গভীর জীবনবোধ ও এই নিমিত্তে তার কঠিন লড়াই - আজকের পোস্ট-এ লিপিবদ্ধ করলাম। চাইলে আপনিও পড়তে পারেন।
মাঝে মাঝে নানান ঘটনা মনে পড়ার দরুন কিছু কিছু মুখ ভেসে ওঠে। হিসেব করলে দেখা যায় ছেলেবেলার এক সময়ের বন্ধু যাদের সাথে একান্ত আপন হয়ে মিশেছি কথা বলেছি তারা সবাই নেই। অথবা সময়ের সাথে সাথে জীবিকার তাগিদে সবাই নিজের নিজের কাজে ছুটে চলায় পরিচিতিটা কোথাও একটু ফিকে হয়েছে।
মতি আমার বাড়ির পাশেরই ছেলে। মতি আমার থেকে বয়সে বড় ছিল। বেঁটে খাটো দোহারা চেহারার মতিকে দেখে বয়স আন্দাজ করবার জো নেই।
মতির বাবার মোষ, গরুর ব্যবসা ছিল। আমরা সবদিনই দেখেছি বড় বড় মোষ গলির ওপর বসে দেদার খড় চিবোচ্ছে। মোষ এর যাবতীয় খাবার দাবার এর যোগান দিতো মতি। ধানের খড় তো সারাবছরই থাকে। তবে দুটি সবুজ ঘাস এনে দিতে হলে মাঠেই যেতে হত। আর এ কাজ মতি ছাড়া কেউ করার ছিলনা।
মতিকে দেখে আমার হিংসে হত। সে কোনদিনও স্কুলে যেতনা। তার বাবা মা কোনোদিন তাকে স্কুলে যেতে বলতনা। আমার বাড়িতে যেমন স্কুল পাঠানোর জন্য রোজ পীড়াপীড়ি করা হত, মতির জন্যে এসবের কোনো বালাই ছিলনা।
আমার হিংসের কারণ এখানেই, তাকে কেনো স্কুলে পাঠানোর জন্য পীড়াপীড়ি করা হয়না? তার বাবা মা কত ভালো!
কিন্তু মতির স্বভাবে আমি মাঝে মাঝে চমকে যেতাম। সে তার ওই স্বাধীন জীবনটাকে ভালোবাসতো না। এ কথা মুখে কোনোদিন বলত না তবে তার ব্যবহারে আমি দেখেছি। আমার তো বাবা রোজ স্কুলে যাওয়া। একদিন কামাই করলেই বাড়িতেও এক দফা মার, আর স্কুলে এক দফা। মতিকে স্কুলে যাবার জন্যে মার খেতে হয়না। বরঞ্চ মতির বাবা তাকে মাঠে পাঠানোর জন্য পীড়াপীড়ি করে।
মতি মাঝে মাঝে না করলে তাকে ধমক দিত তার বাবা। আমি ভাবতাম মতি কি বোকা। মোষ নিয়ে মাঠে যাবার আনন্দ কত! স্কুলে যেতে হয়না। গোটাদিন মাঠে থাকো। খাবার ও জল তো সাথেই নিয়ে যাওয়া হয়। মোষ এর পিঠে চড়ে যাওয়ার এমন সুখের দিন আর কি আছে!
এখন মতিকে দেখতে পায় দেশবিদেশে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করে। মাঝে মাঝে মনে হয় সব দোষ নিজের হয়না। কখনো কখনো মানুষ অসহায় হয়ে যায়। সেতো কোনোদিনই চাইনি মোষ নিয়ে মাঠে যেতে। মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেত এ কারণে, আসতো বেলা গড়িয়ে। আর ফিরলেই খেতে হত মার। ছেলেবেলার-মনে আমার ও-সকল ভাবনা অস্বাভাবিক ছিলনা, কিন্তু এখন তো সত্যটা জানি। মতি তখনই বুঝেছিল।
এখনও মতির সাথে কথা হয়। বিদেশ খেটে ঈদের সময় বাড়ি ফেরে। বেশিদিন থাকতে পায়না সংসারের ঠেলায় ফের ছুটে যেতে হয়।
তার সাথে নানান রকম আলোচনা হয়। ও নিজেও কাজকর্মের কথা বলে। নানান ঘটনা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার সামনে সাহস করতে পারিনা আজও। মতি তখন শিশু ছিল, কিন্তু তার লড়াই দাবি শিশুর মতো ছিলনা। আমিও তো ছোট ছিলাম তখন, কিন্তু তার মতো জীবন-বোধ ছিলনা। একজন শিশু কখনো নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা, এই দায়িত্বটা বাবা মা-ই পালন করে। যেমন আমার শিশু অবস্থার দায়িত্ব আমার বাবা মা নিয়েছিল। স্কুলে যাওয়ায় সেই সময় আমার জীবনের সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে - তাই বাবা মা আমার হয়ে সেটাই করেছিলেন, আমাকে স্কুলে দিয়ে। কিন্তু মতিকে নিজেই সেটা করতে হয়েছিল। সে নিজেই নিজের পিতা মাতা ছিল। এই মতির কাছে আমি কোথায়! এই বিরাট জীবন-বোধের কাছে আমি তুচ্ছ। একটি শিশির বিন্দু মাত্র।
আজ আজ এই অব্দি রইল। আগামীকাল পরবর্তী পর্ব নিয়ে হাজির হবো এবং সেটাই হবে সমাপ্তি পর্ব। ততক্ষণ ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
মতির মতো বেশ কিছু চরিএ রয়েছে আমাদের চারপাশে। সত্যি ভুলটা তো মতির না তবু এখন ও বয়ে বেড়াচ্ছে। এবং একটা কথা কী ভাই আমরা কেউই নিজের অবস্থান নিয়ে খুশি না যেমন আপনি এবং মতি ছিলেন। বেশ ভালো লাগল একটা শিক্ষনীয় বাস্তব পড়ে। অনেক সুন্দর লিখেছেন ভাই।।
আপনি বিষয় টা বুঝতে পেরেছেন বলে ভালো লাগছে। ধন্যবাদ নেবেন আমার তরফ থেকে।
আপনার গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। আপনি খুব চমৎকার গল্প আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। আসলে লেখাগুলো বেশি দুর্দান্ত হয়েছে । এত সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
ভালো থাকবেন। মন্তব্য করে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য অনক ধন্যবাদ দাদা।