বাংলা রূপকথা " সিরিয়াল পাগল বউ"১ম পর্ব

image source: copyright freepixabay || image credit: FrankundFrei
Hello
বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন। অনেক দিন হলো কোনো রূপকথার গল্প বলি না। রূপকথা আমরা ছেলেবেলায় কমবেশি সবাই শুনেছি। ছেলেবেলায় আমরা ঠাকুমা ও দীদার কাছে অনেক রূপকথা শুনতে শুনতে ঘুম পড়েছি। আজ আমার মা টিনটিন বাবুকে বিকালে গল্প বলছিলো। হটাৎ গল্পটি শুনে আজ সেই পুরনো দিনের কথা খুব মনে পড়ে গেল। ঠিক তখনই একটি গল্প লিখেছিলাম। তাই ভাবলাম আজ আপনাদের সাথে সেই গল্পটি শেয়ার করি। গল্পটি হলো " সিরিয়াল পাগল বউ"। বর্তমান সময়ে অনেক বাড়ির বউ রা সন্ধ্যা থেকে শুরু করে সিরিয়াল দেখা আর রাত ১২ টা পর্যন্ত। প্রায়ই শুনি আমাদের কাজের মহিলা এসে সিরিয়ালের গল্প করে। সেই গল্প শুনে ভাবলাম একটি গল্প লিখি।তাহলে চলুন গল্পটি শুরু করা যাক।
অনেক দিন আগে সিন্দু গ্রাম নামে একটি গ্রাম ছিল। সেই গ্রামে কবিতা নাম করে একটি মেয়ে বাস করতো। সেই গ্রামটি একেবারে অজ পাড়াগাঁ। সেখানে টিভি, মোবাইল ফোন, ফ্রিজ ইত্যাদি কিছুই নেই। যাকে বলে কোনো আধুনিকতার ছোঁয়া নেই। সেই অজ পাড়াগাঁয়ের মেয়ে কবিতার বিয়ে হয় শহরের বড় লোক বাড়ীতে। সে ওই বাড়ির এক একটা বউ।সে বাড়ীতে কোনোকিছুর অভাব নেই। কবিতার শশুর বাড়িতে তিন জন কাজের লোক আছে।তার সারাদিন প্রায় কোনো কাজ করতে না। কবিতা শশুর বাড়িতে এসে সে তো খুব অবাক টিভি, ফ্রিজ, কাজের দেখে অবাক হয়ে গেছে। সে গ্রামে থাকতে এগুলো কিছুই দেখিনি। তাই একদিন সকালে কবিতার শাশুড়ি ডাকছে - বৌমা ও বৌমা তুমি কোথায় গেলে এ দিকে এসো।
কবিতা : এই তো মা আসছি। বলুন মা কি হয়েছে?
শাশুড়ি : তুমি রান্নাঘরে কি করছো?
কবিতা : মা, আমি রান্নাঘর গুছিয়ে রাখছিলাম। খুবই এলোমেলো ছিল মা।
শাশুড়ি : বৌমা তুমি নতুন আসছো এত তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে ঢুকতে হবে না। তোমার যা কিছু দরকার হবে কাজের লোক আছে তাদের বলবে। আমাদের সব কাজ তো ওরা করে।
কবিতা : কিন্তু মা আমাদের বাড়িতে তো আমরা তিন জন লোক। এর জন্য এত কাজের লোক। আমাদের গ্রামে যখন অনেক লোকের রান্না হয় তখন রান্নার ঠাকুর আছে। আর এখানে তিন জনের জন্য রান্না করে দিয়ে যায়।
শাশুড়ি : এখানে রান্নার জন্য রান্নার লোক আছে। ঘরবাড়ি পরিস্কার করার জন্য আলাদা লোক। সবকিছুর জন্য আলাদা আলাদা লোক। ও সব তুমি এখন বুঝবে না আর কয়েক দিন গেলে তুমি সব কিছু বুঝতে পারবে। তার থেকে এসো আমরা টিভি দেখি।
কবিতা : মা টিভি কি? সেখানে কি দেখা যায়?
শাশুড়ি : টিভি হচ্ছে এমন একটা যন্ত্র যেখানে আমরা ছবি সহ বিভিন্ন ধরনের অভিনয় দেখতে পারি। এসো আমরা দু জনে মিলে টিভি দেখি।
কবিতা তার শাশুড়ির সাথে টিভি দেখতে বসলো। সেই থেকে কবিতার সিরিয়াল দেখা শুরু। কবিতা টিভি দেখে আর সময়ে কাঁদে আবার হাসে। একদিন কবিতা টিভি দেখতে দেখতে হঠাৎ চিৎকার করে
কেঁদে উঠলো। শাশুড়ি কান্না শুনে এসে বললো।
শাশুড়ি : বৌমা কি হয়েছে তোমার কাঁদছো কেন? তোমার মা বাবার জন্য মন খারাপ করছে?
কবিতা: না, মা। আমি টিভি দেখে কাঁদছি মা। খড়কুটো সিরিয়ালে নায়ক বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।
একথা শুনে শাশুড়ি হেসে বললো।
শাশুড়ি : বৌমা এ গুলো তো সব অভিনয়। ও গুলো সব মিথ্যা। আমাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য এসব অভিনয় করে। কবিতার শাশুড়ি বার বার বলে ও কিছুই হলো না। এই ভাবে কবিতার দিন কাটে। দিন যত যাচ্ছে ততই কবিতা সিরিয়াল পাগল হয়ে যাচ্ছে। কবিতা তাড়াতাড়ি সবাইকে ভাত দিয়ে টিভি দেখতে বসে যায়। এভাবে দু সপ্তাহ কেটে গেল। একদিন কবিতার স্বামী ডেকে বললো।
স্বামী : কবিতা বিয়ের পর থেকে তোমাকে একটু ও সময় দিতে পারিনি। অফিসের কাজে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। সামনে কয়েকটা অফিস ছুটি আছে। কবিতা চল আমরা কয়টা দিন দার্জিলিং থেকে ঘুরে আসি।সেই সাথে আমাদের হানিমুনটাও হয়ে যাবে।
কবিতা : না না, এখন আমার কোথাও যাওয়া হবে না। আমার ঘুরতে যাওয়ার সময় নেই।
স্বামী : কেনো কবিতা ? সারাদিন তোমার কি কাজ? আমাদের অনেক গুলো কাজের লোক আছে। তোমার তো কোনো কাজ নেই।
বর্তমান সময়ের মেয়েরা টিভির সিরিয়াল দেখার জন্য একদম পাগল হয়ে যায়। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়ে হলেও নিয়মিত টিভি সিরিয়াল দেখে। আপনার লেখার মাঝে বর্তমানে সময়ের মেয়েদের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম। আপনার লেখা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম বৌদি।
আমি এই গল্পটিতে বর্তমান সময়ের কিছু প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে চেয়েছি। বর্তমান সময়ের ঘরের বউদের কিছু ঘটনা তুলে ধরতে চেয়েছি
বৌদি আমি কিন্তু সিরিয়াল দেখি না শুধু কার্টুন দেখে খুব ভালো লাগে।
আর হিন্দি যতো মুভি আছে সব।
রূপকথার গল্প খুব ভালো লেগেছে প্রিয় বৌদি।
কয়দিনেই সিরিয়ালে এতো পাগল হয়ে গেছে? 😆
যাক মনে হচ্ছে খুবই মজা হবে গল্পটি। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম আপু🙂🙂
পরের পর্ব আজ লিখবো। গল্পটি অনেক মজার এবং শিক্ষণীয়।
দিদি,আপনার লেখা গল্প সিরিয়াল পাগল বউ গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লেগেছে। সত্যি কথা বলতে কি দিদি, রূপকথার গল্প গুলো শুনলে খুবই ভালো লাগে।সিরিয়াল পাগলা বউ কবিতা আধুনিকতার ছোঁয়া পায়নি বলে শ্বশুরবাড়িতে এসে টিভি দেখে টিভির সিরিয়ালে প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গিয়েছে। দিদি, গল্পটি পড়ে শৈশবের স্মৃতি গুলো মনে পড়ে গিয়েছে। ছোটবেলায় একসময় টিভি দেখে হেসেছি আবার কত যে চোখের জল ফেলেছি তার কোন হিসাব ছিল না তখন অভিনয় গুলোকে মনে হতো বাস্তব।
দিদি, আপনার সিরিয়াল পাগল বউ গল্পের দ্বিতীয় পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ দিদি
আপনাকেও ধন্যবাদ আপু আমার গল্পটি পড়ার জন্য।
আসলেই বৌদি সিরিয়ালের নেশা গুলো মানুষের এমনই হয়। আগে আমার আম্মু এরকম সিরিয়াল গুলো দেখতো। তখন সিরিয়ালের সময় আসলেই আর কোনো দিকে একেবারে চোখ দিত না, সোজা টিভির সামনে।
কিন্তু আজকাল ব্যস্ততার কারণে আর একদম ওইসব দেখেনা। আর দেখতে বললেও বলে একবার দেখলে আবার নেশা হয়ে যাবে। গল্পটি সত্যিই খুব দারুন লেগেছে আর ভীষণ হাসির ছিল। আপনি পারেনও বৌদি! সবকিছুই এত সুন্দর ভাবে লিখেন কি আর বলবো।
ঠিক বলেছেন আপু সিরিয়ালের নেশা করে খুব বাজে নেশা। এরকম অনেক পরিবার আছে সিরিয়াল দেখতে না পারলে মাথা খারাপ হয়ে যেতো।
"স্বামী : কবিতা বিয়ের পর থেকে তোমাকে একটু ও সময় দিতে পারিনি। অফিসের কাজে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। সামনে কয়েকটা অফিস ছুটি আছে। কবিতা চল আমরা কয়টা দিন দার্জিলিং থেকে ঘুরে আসি।সেই সাথে আমাদের হানিমুনটাও হয়ে যাবে।
কবিতা : না না, এখন আমার কোথাও যাওয়া হবে না। আমার ঘুরতে যাওয়ার সময় নেই।
স্বামী : কেনো কবিতা ? সারাদিন তোমার কি কাজ? আমাদের অনেক গুলো কাজের লোক আছে। তোমার তো কোনো কাজ নেই।" কি বলবো বৌদি, ভেবে পাচ্ছি না। বাকিটা জানার অপেক্ষায় থাকলাম, তবে কবিতা যে সিরিয়ালের নেশায় পড়েছে, তা কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি।
হ্যা আপু কবিতা সিরিয়ালের নেশায় পড়ে গেছে।
আমি আমাদের বাসায় সিরিয়াল চললে খুবই রাগ করতাম আর দেখতে দিতাম না।একদিন মনোযোগ নিয়ে দেখছিলাম যে এর মধ্যে কি আছে যার জন্য সবাই পাগল আমি দেখতে দেখতে আমার নিজেরো নেশা লেগে গেছিলো অন্যান্য নেশার মতো এগুলোও হলো নেশা।
অনেক সুন্দর হল্প লিখেছেন দিদি সিরিয়াল নিয়ে।
হ্যা ভাইয়া এটা খুবই খারাপ নেশা। ধন্যবাদ, আমার গল্পটি আপনাদের ভালো লাগলে আমার লেখা সার্থক।
সিরিয়াল এর মতই সম্পূর্ণটা হয়েছে, আজকের পর্ব দিদি লিখেছেন কিন্তু বাকি কিছু আগামীর জন্য রেখে দিলেন৷ আমি যদিও সিরিয়াল দেখি না তবে আপনার এই সিরিয়াল গল্প দেখার অপেক্ষায় থাকব দিদি। তারাতারি চাই আপনার বাকি গল্প। অনেক ধন্যবাদ খুব সুন্দর করে গল্পটি উপস্থাপন করার জন্য।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আমার গল্পটি পড়ার জন্য।
সিরিয়াল দেখতে দেখতে বউ দেখি সিরিয়াল পাগল হয়ে গেল। আসলে বর্তমান সময়ের সিরিয়াল গুলো দেখলে কেন জানি এক নেশা হয়ে যায়। পরবর্তী পর্বের জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকি। আপনি দারুন একটি বিষয় আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে বৌদি।
আপনাকেও ধন্যবাদ। আমার গল্পটি পড়ার জন্য।
এমনকি কবিতা টেলিভিশনের ক্ষমতার মধ্যে পড়ে 😆।
আমি অস্বীকার করতে যাচ্ছি না যে সোপ অপেরা বা মুভিতে কেউ মারা গেলে আমি সাধারণত কাঁদি, যদিও আমি জানি এটা মিথ্যা, আমার মস্তিষ্ক এক কথা বলে কিন্তু আমার আবেগ অন্য কথা বলে।
খুব ভালো গল্প।
ধন্যবাদ, আপনার মূল্যবান মতামত শেয়ার করার জন্য।