"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা -১৬" রাজকীয় স্বাদের জাফরানি ক্রিমি বাদশাহী সেমাই"
বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। প্রথমে ধন্যবাদ জানাই " আমার
বাংলা ব্লগ" কমিউনিটিকে এত সুন্দর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য। আজ আমি প্রতিযোগিতা - ১৬তে অংশ গ্রহণ করতে যাচ্ছি।
এত সুন্দর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য আমরা অনেক নতুন নতুন রেসিপি দেখতে পারবো এবং শিখতে পারবো। আপনাদের দাদার মুখ থেকে প্রতিযোগিতার কথা শুনে পর থেকে আমি ভাবছি কি রেসিপি শেয়ার করবো। কিন্তু এখন নতুন কিছু রান্না করার মন মানসিকতা কিছুই আমার নেই। প্রতিটা
প্রতিযোগিতা নিয়েই আমার যে উদ্যোগ উদ্দীপনা থাকে তার কিছুই আমার এই মুহূর্তে নেই। তারপর ও আমার একজন খুব কাছের মানুষের জন্য আমার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা। বলতে পারেন তার অনুরোধ আমি ফেলতে পারিনি। সে অল্প দিনেই আমার খুব কাছের মানুষ হয়ে হয়ে উঠেছে। আমি যখন নতুন কিছু তৈরি করি তখন আমার মনের ভিতর আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করে। কিন্তু যা আজ আমার নেই।যাইহোক তবে আজ আমি আপনাদের সাথে
শেয়ার করবো সম্পূর্ণ আমার নিজের তৈরি "জাফরানি ক্রিমি বাদশাহী সেমাই "। আসলে আমি রেসিপি তৈরি করতে পারি কিন্তু তার নামকরন করতে পারি না। এই রেসিপিটি নাম আমার শাশুড়ী মা বলে ছিলো। শুনেছি মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব ঈদের দিন নাকি তারা অনেক নতুন নতুন সেমাইয়ের তৈরি করেন। আমার খুব ইচ্ছা আছে সেই রেসিপি দেখার এবং টেস্ট করার। আমি ব্যক্তিগত ভাবে সেমাই তেমন
রান্না করতে পারিনা। কারণ আমাদের কোনো উৎসবে সেমাই রান্না করা হয় না। তাই আমি খুব একটা ভালো জানিনা। মাঝে মধ্যে বাড়ীতে সেমাই আনলে আমার দেবোর রান্না করে। খুব একটা সেমাই আনা হয় না বাড়ীতে। আপনাদের দাদা তো সেমাই খুবই অপছন্দ করেন। কারণ সেমাই তার দু চোখের বিষ। তাই টিনটিন বাবুকে ও সেমাই খেতে দেয় না। আমি খেতে লাগলে রাগারাগি করে খুব।তাহলে বুঝতে পারছেন আপনারা সেমাই রান্না করতে একদম জানিনা। তারপরও নিজের মনে যা আসছে সেই ভাবে রান্না করছি। খুব ভয়ে ভয়ে রান্না করছি। রান্নার শেষে আমার শ্বশুর কে দিলে খেয়ে বলে মা অনেক সুন্দর হয়েছে এবং টেস্টি হয়েছে। পরে আমি সবাইকে দিলে সবাই বলে এত সুন্দর হয়েছে তুমি কি ভাবে রান্না করেছো যে এত টেস্টি লেগেছে। সবার কথা শুনে আপনাদের দাদা এক চামচ খেয়েছিলো।শুধু বললো ভালো লেগেছে। সত্যি খেতে অনেক ভালো লেগেছিলো। চাইলে আপনারা ও বাড়ীতে আত্মীয়-স্বজন আসলে ঝটপট এই সেমাইয়ের রেসিপি তৈরি করে দিতে পারবেন। যে পছন্দ করে না সেমাই সেও পছন্দ করতে বাধ্য। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
উপকরণ:
১. লাচ্ছা সেমাই - ১ প্যাকেট
২. লিকুইড দুধ - ২ লিটার
৩. গুঁড়া দুধ - ২ কাপ
৪. কনডেন্স মিল্ক - ২ কাপ
৫. কাজু বাদাম গুঁড়ো - ২ চামচ
৬. কিসমিস - ২ চামচ
৭. কর্নফ্লাওয়ার - ৪ চামচ
৮. দুধের ছানা - ১ কাপ
৯.লাল ফুড কালার - ১ চামচ
১০. ঘি - ১ কাপ
১১.চিনি - ১ কাপ
লাচ্ছা সেমাই
গুঁড়ো দুধ
লিকুইড দুধ
![IMG_20220428_065123.jpg](
চিনি
কিসমিস
কাজু বাদামের গুঁড়ো
দুধের ছানা
ঘি
কনডেন্স মিল্ক
কর্নফ্লাওয়ার
লাল ফুড কালার
প্রস্তুত প্রণালী:
১. প্রথমে কড়াইতে ২ লিটার দুধ নিতে হবে। এবার লিকুইড দুধের সঙ্গে ২ কাপ গুঁড়ো দুধ ভাল করে মিশিয়ে দিতে হবে।
২. ভালো করে মেশানো হয়ে গেলে চুলার উপর বসিয়ে দিতে হবে। এবার মিডিয়াম আঁচে রেখে অনবরত নাড়তে থাকতে হবে। তা না হলে কড়াইয়ের নিচে লেগে যেতে পারে।
৩. এভাবে নাড়তে নাড়তে দুধ ফুটতে শুরু করলে দুধের ভিতর ২ কাপ কনডেন্স মিল্ক দিয়ে দিতে হবে।
৪. কনডেন্স মিল্ক দেওয়ার পরও আবার অনবরত নাড়তে থাকতে হবে। কিছুক্ষণ পর দুধের ছানা দিয়ে দিতে হবে। আমি ছানা বাড়িতে কেটে নিয়েছি এবং ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিয়েছি। আপনারা চাইলে বাইরে থেকেও কিনে আনতে পারেন। ছানা দিয়ে দুধের সাথে ভাল করে মিশিয়ে দিতে হবে।
৫.একটা বাটিতে চার চামচ কর্নফ্লাওয়ার নিয়ে সামান্য জল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।
৬.এভাবে বেশ কিছুক্ষন মিডিয়াম আছে রেখে নারতে
থাকতে হবে। দুধ হালকা ঘন হয়ে হয়ে আসলে গুলে রাখা কনফ্লাওয়ার এক পাশ দিয়ে দিতে হবে আর অন্য পাশ দিয়ে নাড়তে থাকতে হবে তা না হলে কর্নফ্লাওয়ার লেগে যেতে পারে।
৭. কর্নফ্লাওয়ার দেওয়ার পর অনবরত নাড়তে থাকতে হবে। নাড়তে নাড়তে গারো প্রকৃতির হয়ে আসলে দুই চামচ কাজুবাদাম গুঁড়ো ও দুই চামচ কিসমিস টুকরো করে দিয়ে দিতে হবে। দেওয়ার পর ভালোভাবে কিছুক্ষণ ধরে নাড়তে থাকতে হবে।
৮. দুধের তৈরি ক্রিম গারো থকথকে ভাব হয়ে আসলে নামিয়ে নিতে হবে। কারণ ক্রিম ঠান্ডা হয়ে গেলে অনেকটা গারো হয়ে যাবে।
৯. আবার চুলার উপর আর একটা কড়াই বসিয়ে দিতে হবে। কড়াই গরম হয়ে গেলে লাচ্ছা সেমাই গুলো গুঁড়ো করে দিতে হবে। এরপর সেমাইয়ের উপরে ১ কাপ ঘি দিয়ে দিতে হবে। এবার সেমাই ঘি দিয়ে ভাল করে ভেজে নিতে হবে। চাইলে আপনারা বাটার দিয়ে ভেজে নিতে পারেন। তবে ঘি দিয়ে ভাজলে অনেক সুন্দর একটি ফ্লেভার বের হয়। কিন্তু ভুলেও রান্নার তেল দিয়ে সেমাই ভাজবেন না।
১০. সেমাই ভাজা হয়ে গেলে ১ কাপ চিনি ও এক কাপ গুঁড়ো দুধ দিয়ে দিতে হবে। এবার চিনিও গুঁড়ো দুধের সঙ্গে ভালো করে সেমাই মিশিয়ে নিতে হবে।
১১. সেমাই মেশানো হয়ে গেলে হাফ কাপ কনডেন্স মিল্ক দিয়ে আবারো ভাল করে ভেজে নিতে হবে।
১২. সেমাই ভাজা হয়ে গেলে অর্ধেক সেমাই আলাদা পাত্রে উঠিয়ে নিতে হবে। আর অর্ধেক সেমাইয়ের ভিতর সেই ফুড কালার দিয়ে দিতে হবে। ফুড কালার দেওয়ার পর আবারো ভাল ভাবে বেশ কিছুক্ষণ ধরে ভেজে নিতে হবে। ভাজা হয়ে গেলে একটা পাত্রে নামিয়ে নিতে হবে।
১৩. এবার সাদা সেমাই রং মেশানো সেমাই এক জায়গা করে নিতে হবে।
১৪. এবার একটা পাত্রে ভিতরে হালকা ঘি ব্রাশ করে দিতে হবে। এরপর সাদা সেমাইয়ের লেয়ার দিতে হবে। এবং হালকা হাতে চাপ দিয়ে দিতে হবে। এবার সাদা সেমাইয়ের উপর ক্রিমি লেয়ার দিতে হবে। একটু বেশি করে ক্রিম দিতে হবে তাহলে খেতে অনেকটাই স্বাদ হবে। আবার ক্রিম এর উপর রং মেশানো সেমাই দিয়ে দিতে হবে। এবং হালকা হাতে চাপ দিতে হবে। ঠিক একইভাবে আরেকটি লেয়ার দিয়ে দিতে হবে। আমি দুই লেয়ার করে দিয়েছি চাইলে আপনারা এক শেয়ার করতে পারেন।
১৫. এবার ক্রিম এর এক পাশে সাদা সেমাই ও অন্য পাশে লাল সেমাই দিয়ে দিতে হবে। মাঝ বরাবর ক্রিম দিতে হবে। এতে করে দেখতে অনেকটা সুন্দর লাগবে। এবার আমি এর উপর কিছু কিসমিস ও চেরি ফল এবং কিছু কাজু বাদামের গুঁড়ো ছড়িয়ে দিয়েছি। এতে করে দেখতে অনেকটা সুন্দর লাগবে।
তৈরি হয়ে গেল আমার রাজকীয় স্বাদের জাফরানি ক্রিমি বাদশাহী সেমাই। এটি খেতে অনেক টেস্টি খাবার। আশা করি এই রেসিপিটি আপনাদের ভালো লাগবে।
এটি আপনারা দিনের দিন সকালে তৈরি তৈরি করতে পারেন।
লাচ্ছা সেমাই আমিও খুব একটা পছন্দ করি না দাদার মতো। তবে অল্প একটু খাই, তাও আম্মু জোরাজুরি করলে। আপনার রেসিপিটি সত্যিই একেবারেই অনেক ছিল বৌদি।
আমার তো জোরে একটা লাফ দিতে মন চাচ্ছে বৌদি, মাঝখানে বর্ডার না থাকলে হয়তো লাফ দিয়ে চলে আসতাম হি হি হি । দেখেই অনুমান করা যাচ্ছে স্বাদের পরিমানটা কি রকম হতে পারে, সত্যি বেশ স্বাদের কিছু দেখলাম। দেখবো একটা ট্রাই করে আপনার মতো বানাতে পারি কিনা? হে হে হে। ধন্যবাদ
ভাইয়া আপনাকেও ধন্যবাদ। আপনি চলে আসুন আমাদের বাড়িতে সেমাই খাওয়ার মানুষ নেই। আপনি তো অনেক সুন্দর সুন্দর রেসিপি শেয়ার করেন । আপনার রেসিপি দেখে আমি অনেক রেসিপি তৈরি করা শিখেছি।
প্রিয় বৌদি কি দেখালেন, দেখে যেন চোখ আমার ছানাবড়া হয়ে যাচ্ছে। এতো সুস্বাদু করে রাজকীয় স্বাদের জাফরানি কৃমি বাদশাহী সেমাই রেসিপি তৈরি করে দেখালেন যা দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আপনার রেসিপিটি দেখতে যেমন লোভনীয় মনে হচ্ছে খেতেও নিশ্চয়ই অনেক অনেক মজার হয়েছে তা বেশ বুঝতে পারছি।আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা ১৬তে আপনার অংশগ্রহণের জন্য আপনি যে রেসিপিটি নির্বাচন করেছেন তা অত্যন্ত চমৎকার হয়েছে। এই প্রতিযোগীতায় আমার দেখা সর্ব শীর্ষস্থানীয় রেসিপি হচ্ছে আপনার তৈরি রাজকীয় স্বাদের জাফরান কৃমি বাদশাহী সেমাই। তাই আপনার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা সফল হোক এই প্রত্যাশা করছি। অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
দিদি এত কিছুর মধ্যেও তুমি যে আমার এই অনুরোধটা রেখেছো আমি যে কি খুশি হয়েছি আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না। তোমার এই সেমাই রেসিপি দেখে তো আমার খেতে ইচ্ছা করছে। কি সুন্দরভাবে সাজিয়ে করেছো। আবারও একটা নতুন রেসিপি শিখতে পারলাম। অনেক অনেক ভালোবাসা নিও ❤️❤️
শুধু মাত্র তোমার জন্য রেসিপিটি তৈরি করেছি। তোমাকে খাওয়াতে পারলে অনেক বেশি ভালো লাগতো।
দিদি তুমি একটু রেখে দাও। সে আসলে নিয়ে আসতে বলবো।
দেখেই মনে হচ্ছে, রাজকীয়।খেতে নিশ্চয়ই অনেক মজা হয়েছে। ক্রিমি ক্রিমি লেয়ার দেওয়া।সব মিলিয়ে মনে খেতে অনেক দারুন হয়েছে।প্রতিটি ধাপ আপনি খুব সুন্দর করে দেখিয়েছেন। সব মিলিয়ে অসাধারন।ভালো ছিলো।ধন্যবাদ
আপু রেসিপি টি দেখে কেউ নিজেকে ধরে রাখতে পারবেনাহ। ইসসস যদি একটু খেতে পারতাম😋। ফ্রুট কালার ব্যাবহার করায় কালারটা যা লাগছেনাহ। ডেকোরেশনটা সেই হয়েছে আপু। আসলেই রাজকীয় রাজকীয় একটা ভাব আছে রেসিপিতে।
ওরে বাবা! কি পরিমাণ পরিশ্রম হয়েছে! দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমার কিন্তু এই মিষ্টি জাতীয় সব খাবার ভালো লাগে বৌদি। তুমি যা বানিয়েছো। পুরো বাটি ধরে মনে হচ্ছে নিজের কাছে রেখে দিই।
অও,বৌদি আমি তো আপনার রেসিপির অপেক্ষায় ছিলাম।তারপর ভাবলাম মনে হয় এই সুন্দর রেসিপিটা মিস করে যাবো এই প্রতিযোগিতায়।তবুও শত ব্যস্ততার মাঝেও আপনার অংশগ্রহণ দেখে খুবই ভালো লাগছে।অনেক সুন্দর করে 👌সিমুই রেসিপি বানিয়েছেন।দেখেই লোভ লেগে গেল, এটি আমার খুবই প্রিয়।
রাজকীয় স্বাদের জাফরানি ক্রিমি বাদশাহী সেমাই রেসিপি খুবই লোভনীয় হয়েছে। বৌদি আপনি অনেক মজার একটি রেসিপি শেয়ার করেছেন। ঈদ মানেই হচ্ছে বিভিন্ন রকমের সেমাই খাওয়ার উৎসব। আপনার এই সেমাই রেসিপি দেখে অনেক ভালো লেগেছে। আশা করছি সকলেই আপনার এই সেমাই রেসিপি দেখে নিজেরা বাসায় তৈরী করার চেষ্টা করবে। আমিও চেষ্টা করব আমার বাসায় এই রেসিপি তৈরি করার জন্য। অনেক সুন্দরভাবে রেসিপি তৈরির প্রসেস উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি ধন্যবাদ। সেই সাথে আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
ওরে বাবা! প্রতিটি ধাপ দেখছিলাম আর যেন জিভ থেকে জল টপটপ করে পড়ছিল। দারুণ মজাদার দেখতে হয়েছে বৌদি। দুঃখের বিষয় হল এত সুন্দর একটা রেসিপি দেখেই শুধুমাত্র পেট ভরাতে হচ্ছে। বাটি টা তুলে যদি খেতে পারতাম!!! অসাধারণ হয়েছে পুরো আয়োজন টা 👌👌👌👌। সব কিছু সামলে নিয়ে এভাবে যে পোস্ট টা করেছেন এটা সত্যিই অনেক বড় একটা ব্যাপার।