ক্রিয়েটিভ রাইটিংঃ একটি মেয়ের ঘুরে দাঁড়ানো গল্প।
🌿আমি তানহা তানজিল তরসা। আমি বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে বলছি। আমার স্টিমিট আইডির নাম @tanha001।
কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে আমি আপনাদের মাঝে ক্রিয়েটিভ পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। লিখালিখি করতে আমার কাছে বেশ ভালোই লাগে। যদিও এই বিষয়ে অনেক আগে আমি একটু দুর্বল ছিলাম তবে এখন ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু ছোট কালে অনেক আগ্রহ ছিলো লেখা লেখির কাজে।সময়ের অভাবে এখন আর লেখালেখি করা হয়ে ওঠেনা। যাই হোক এখন যতটুকু সময় পাচ্ছি লেখার চেষ্টা করছি আর সেটা আপনাদের মাঝে শেয়ার করছি। আশা করি আমার ক্রিয়েটিভ রাইটিং আপনাদের অনেক ভালো লাগবে।
সন্ধ্যার আগমনী বার্তা নিয়ে শেষ বিকেলের রোদ্দুর মায়াবী আলো ছড়াচ্ছে। জানালার পাশে বসে রিমি এক কাপ চা হাতে নিয়ে হারিয়ে যায় অতীতের স্মৃতির ঝড়ো হাওয়ায়। কিছুদিন আগেও এমন একটা বিকেলে রিমির জীবনের সবকিছু ছিল রঙিন, কিন্তু এখন সবকিছু যেন মলিন, বিষণ্ণ।
রিমির বিবাহিত জীবন শুরু হয়েছিল অনেক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে। সোহানের সাথে তার বিয়ে ছিল একটা রূপকথার মতো। প্রথম প্রথম সবকিছুই ছিল সুন্দর, সুখের পরশে ভরা। সোহান ছিল রিমির স্বপ্নের রাজকুমার, যে তাকে সুখের রাজ্যে নিয়ে যাবে। কিন্তু কালের পরিক্রমায়, সেই রাজকুমারই ধীরে ধীরে পরিণত হলো এক দুর্বিষহ কষ্টের কারণ।বিয়ের পর প্রথম বছরটাই কেটেছিল মধুর স্মৃতির সাথে। কিন্তু ধীরে ধীরে সোহানের স্বভাব-চরিত্রে পরিবর্তন আসতে থাকে। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া, রিমির প্রতি সোহানের অবহেলা, সবকিছুই যেন রিমির জীবনে বিষাদের ছায়া ফেলতে থাকে। সোহানের কর্মব্যস্ততা, রাত-বিরাতে বাড়ি না ফেরা, রিমির সাথে সময় না কাটানো—এসব যেন তাদের দাম্পত্য জীবনের রঙিন দিনগুলোকে ধূসর করে দেয়।রিমি অনেক চেষ্টা করেছিল সবকিছু ঠিক করতে। সোহানের সাথে খোলাখুলি কথা বলার চেষ্টা করেছিল, তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে উভয়ের সমান প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কিন্তু সোহান ছিল অনড়। তার জন্য সম্পর্ক মানে ছিল শুধুই সামাজিক বাধ্যবাধকতা, ভালোবাসার কোনো স্থান ছিল না সেখানে।দিন দিন রিমির জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠতে থাকে। একদিন সোহান রাগের মাথায় হাত তুললো রিমির উপর। সেইদিন রিমি বুঝতে পারল, আর সহ্য করার মতো কিছু নেই তার জীবনে। সেইদিনই সে সিদ্ধান্ত নিলো মুক্তির।ডিভোর্সের সিদ্ধান্তটা সহজ ছিল না। সমাজের নানা বাঁকা কথা, আত্মীয়-স্বজনের প্রশ্ন, সবকিছু মোকাবেলা করে রিমি নিজের পায়ের উপর দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল। প্রথম প্রথম একাকীত্ব, অনিশ্চয়তা, ভয়—সবকিছুই রিমিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারলো নিজের স্বাধীনতা, নিজের সুখ—এই দুটো জিনিসই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ডিভোর্সের পর রিমি নিজেকে নতুন করে খুঁজে পায়। নিজের ক্যারিয়ারে মনোযোগ দেয়, নিজের শখ, নিজের ভালোবাসার জিনিসগুলো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সে বুঝতে পারে একা থাকাও একটা শক্তি একটা সাহসের পরিচায়ক। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার পথে সে এক নতুন রিমিকে আবিষ্কার করে, যে সাহসী, আত্মবিশ্বাসী এবং সুখী।রিমি জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখে, সূর্য ডুবে যাচ্ছে, কিন্তু তার মন আলোতে ভরা। সে জানে, জীবনের পথটা সহজ নয়, কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে চলার মধ্যে একটা অনন্ত সুখ আছে। নিজের মুক্তি, নিজের স্বপ্ন, নিজের ভালোবাসার সন্ধান—এইসবকিছু নিয়েই সে জীবনের নতুন পথচলা শুরু করেছে।রিমি বুঝতে পারে, ডিভোর্স তার জীবনের শেষ নয়, বরং একটা নতুন শুরু। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস আর নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখার মধ্যেই সে খুঁজে পায় জীবনের প্রকৃত অর্থ। আর সেই সন্ধ্যাবেলায়, শেষ বিকেলের রোদ্দুরে রিমি খুঁজে পায় এক নতুন দিনের আশ্বাস।
বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং সম্পর্কের সংকট সত্ত্বেও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া এবং নিজের সুখ ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। রিমির গল্পে উঠে এসেছে কিভাবে একক সংকল্প এবং আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে তিনি তার দুর্বিষহ বিবাহিত জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে এক নতুন, সুখী এবং স্বনির্ভর জীবন শুরু করেন।
পোস্টের বিষয় | ক্রিয়েটিভ রাইটিং |
---|---|
পোস্টকারী | তানহা তানজিল তরসা |
ডিভাইস | রেডমি নোট ১১ |
লোকেশন | পাবনা |
![](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmWGoS5zPMRvmPuU6Skd5iAtBd79jZHH4CtMENF3iZMM9L/IMG_20240507_160723.jpg)
এমন দাম্পত্য জীবনে অবহেলা প্রায় অনেক সংসারে।স্বামী ওওয়াইফ মানে একে অপরকে কম্প্রোমাইজ করা, কিন্তু এমন হয় না বিদায় সেপারেশনের সংখ্যা বাড়ছে। তবে রিমির মত অনেকেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে আবার অনেকেই পারছে না। ধন্যবাদ
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপু আপনার মূল্যবান অভিমত ব্যাক্ত করার জন্য।
আপনার পোস্টটি পড়ে মনে হলো এটি অনেক সুন্দর ও অনুপ্রেরণামূলক। রিমির গল্প এবং তার জীবনের পরিবর্তনের যাত্রা পাঠকদের জন্য এক অসাধারণ উদাহরণ যে, জীবনে কঠিন সময়েও আশা ও সাহস হারানো উচিত নয়। আপনার লেখনীর মাধ্যমে আপনি যে সুন্দর বার্তা প্রচার করেছেন তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
ধন্যবাদ ভাই আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।
রিমির জীবনের কাহিনি নিয়ে আপনার গল্পটি লেখা হয়েছে। গল্পটি অনেক শিক্ষানীয় এবং অনুপ্রেরণা মূলক। সংসার জীবনে নানা ঘাত প্রতিঘাত কে গুরুত্ব না দিয়ে নিজে পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবনকে পরিবর্তন করেছে। আমাদের সমাজে এখন এই বিষয়টি অহরহ দেখা যাচ্ছে। এখান থেকে অনেক মেয়ে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করছে আবার অনেক মেয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ধন্যবাদ অনেক সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে আমাদের মাঝে আলোচনা করার জন্য।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর মতামত শেয়ার করে পাশে থাকার জন্য।
আসলে একটা মেয়ে বিয়ের পর আর কি বা চায়। শুধু ভালোবাসার মানুষটার থেকে ভালোবাসা আর নিজেদের দাম্পত্য জীবনে সুখটা চায়। কিন্তু এরকম অনেক মেয়ে রয়েছে যারা এগুলো পায় না। এগুলোর বদলে পায় অবহেলা। আর ঠিক ওরকমটা রিমির ক্ষেত্রেও হয়েছে। ডিভোর্সের পর রিমি নিজের নতুন জীবন গড়ে তুলেছে, এই কথাটা শুনে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। আমি মনে করি প্রত্যেকটা মেয়েরই এরকমটা করা উচিত। নিজের ইচ্ছা নিজের ভালোবাসা সবকিছুকে প্রাধান্য দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত।
জি আপু আপনি ঠিকই বলেছেন আমাদের সমাজে এমন অনেক মেয়ে আছে যারা একটু সুখের জন্য পথ চেয়ে থাকে।আর যখন অত্যাচার সহ্য করতে না পারে তখন ডিভোর্সের পথ বেছে নেই। আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর মতামত দিয়ে পাশে থাকার জন্য।
আপু একটি মেয়ে বিয়ের পরে চাই সুখে বসবাস করতে। হয়তোবা অনেকের কপালে সুখ পাখি দরা দেয় না। রিমিও চাইলেও বিয়ের পর সোহানকে নিয়ে সুখে থাকতে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় ডিভোর্স নেওয়াটাই বেটার মনে করে। এবং ডিভোর্স নেওয়ার পিছনে অনেক কিছু কারণ থাকে। এবং ডিভোর্সের পরে রিমি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে শুনে ভালো লাগলো। সুন্দর করে গল্পটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।
রিমির মতো সাহসী যদি সব মেয়েরা হতো তাহলে হয়তো অনেক মেয়েই অবহেলা,অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের জীবনটাকে খুব সুন্দর ভাবে সাজাতে পারতো। কিন্তু না কিছু মেয়ে রয়েছে যারা সমাজের ভয়ে সেই জায়গায় পড়ে থাকে আর একসময় সহ্য করতে না পেরে জীবন শেষ করে দেয়। কিন্তু রিমি তা না করে খুব ভালো কাজ করেছে। এত সুন্দর জীবন কি শুধু একজন নিয়ে বাঁচার জন্য সৃষ্টি হয়েছে। নিজেকে নিয়েও তো ভালো থাকা যায়। আপনার গল্প পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ এত সুন্দর গল্প শেয়ার করার জন্য।
পিছনের সব কথা ভুলে গিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায় হলো বুদ্ধিমানের কাজ। নিজেকে গুটিয়ে রেখে কোন লাভ নেই সব বাধা পেরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। ধন্যবাদ আপু অনেক সুন্দর মতামত শেয়ার করার জন্য।
দুইটি মানুষ একত্রিত থাকার জন্য ভালোবাসা থাকা খুবই জরুরি।রিমির মধ্যে থাকলেও সোহানের মধ্যে ছিল না।তার মধ্যে ভালো বাসা মানে ছিল শুধু সামাজিক বাধ্যবাধকতা। একপর্যায়ে রিমি একা থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। সে একা থেকে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে শুরু করে। নিজেকে নিয়ে বাঁচতে শিখে।সব বাঁধা পেরিয়ে সে নিজের মতো জীবন গড়তে থাকে।ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
আপনি অনেক সুন্দর সাবলীল ভাবে আমার পোস্টে যথাযথ মতামত শেয়ার করেছেন। ভালোবাসা এক পক্ষ থেকে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ভালোবাসা টিকে থাকতে হলে দুইজনের প্রচেষ্টা থাকা লাগে। ধন্যবাদ আপু