বাবা চলে যাওয়ার ২য় বছর পূর্ন হলো আজ

in আমার বাংলা ব্লগ8 hours ago
আসসালামুআলাইকুম

বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন ? আশা করি ভালোই আছেন, আমিও আলহামদুল্লিাহ ভালো আছি।

IMG_6039.jpeg

Image

দেখতে দেখতে চোখের পলকে কেটে গেল দুটি বছর।২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির দুই তারিখে বাবা আমাদেরকে সবাইকে ছেড়ে চিরতরে চলে যায় পরপারে।মৃত্যুর খবরটি পেয়েছিলাম discord থেকে। খবরটি শুনে কেমন অনুভূতি হয়েছিল তা বুঝতেই পারছেন আপনারা।সাথে সাথেই বাংলাদেশে কল দিয়ে বাবার মুখখানি দেখে সহ্য করার মত অবস্থা ছিল না।এটা কি সহ্য করা যায়? আমি আমার জীবনে কাছ থেকে আমার দাদিকে প্রথম দেখেছি পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া।এরপর আমার নানু (নানা) মারা যায়।কিন্তু মৃত্যুর সময় কাছ থেকে দেখতে পারিনি।আপনজনের মৃত মুখ খানি দেখা যে কত কষ্টের যারা তাদের আপনজনকে হারিয়েছেন শুধু তারাই বোঝেন।আজ পৃথিবী উন্নত। ইন্টারনেটের কারণে আমি আমার বাবার মুখ খানি শেষবারের মতো দেখতে পেরেছিলাম, তা না হলে সারা জীবন শুধু আফসোসই করতে হতো।চার, পাঁচ বার কল দিয়ে দিয়ে বাবার মুখখানি দেখেছিলাম। সবসময় সেই মুখখানি ছবির মত ভেসে উঠে।একে একে এভাবেই কেটে যাবে বছরের পর বছর।শুধু রয়ে যাবে স্মৃতিগুলো।ধীরে ধীরে স্মৃতিগুলোও সব মুছে যাবে স্মৃতির পাতা থেকে।কারণ এটাই দুনিয়ার নিয়ম।

ছোট থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত কত স্মৃতি রয়েছে বাবার সাথে।বাবা সাথে করে সব জায়গায় নিয়ে গিয়েছে আমাদের ভাই বোনদেরকে।হাঁটে, বাজারে, মেলায় এমন কি সিনেমাও দেখতে গিয়েছিলাম বাবার সাথে।আমার আবার একটু বেশি টান ছিল বাবার প্রতি, সবসময় মা থেকে বাবার সাইডেই থাকতাম।মনে পড়ে সন্ধ্যা লাগলেই গল্প অবশ্যই শুনতে হবে বাবার কাছ থেকে। বিশেষ করে যখন কারেন্ট চলে যেত তখন বসে বসে গল্প শুনতাম।বাবা একটার পর একটা তাঁর ছোটবেলার গল্প, ভূতের গল্প সহ নানান রকমের গল্প আমাদেরকে শুনাতেন।কত যে ভালো লাগতো সেই মুহূর্তগুলো।এরপর ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলাম।তখন শুধু ব্যস্ত থাকতেন আমাদের পড়ালেখা নিয়ে। একবার বই খাতা নিয়ে বসলে সহজেই শেষ করতেন না, একটানা তিন চার ঘন্টা পড়ানোর পর তারপর উঠতাম।আর আমাদের পরীক্ষার সময় বাবার যেন নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে যেত।খুব বেশি পরিশ্রম করতেন তখন আমাদেরকে নিয়ে।কত হাজার হাজার স্মৃতি রয়েছে যা সারা দিন বলেও শেষ করা যাবে না।

লন্ডনে আসার পর মোট তিন থেকে চারবার বাংলাদেশে গিয়েছি।প্রথম বাংলাদেশে গিয়েছিলাম পাঁচ বছর পর।সে যে কি আনন্দ ছিল বাবার চোখে মুখে আমরা যাওয়ার পর।প্রতিবার যাওয়ার পর যে কত খুশি হতেন তা বলে বোঝাতে পারবো না।লাস্ট প্রায় তিন বছর আগে বাংলাদেশে গিয়েছিলাম।তখন বাবার অবস্থা খুব খারাপ ছিল।বাবার ব্রেন শুকিয়ে যাচ্ছিল।ধীরে ধীরে শুধু অবনতিই হচ্ছিল। কোন কাজ হচ্ছিল না ট্রিটমেন্টে।আর ডক্টর বলেছিলেন এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই।লাস্ট এক বছর শুধু ওষুধের উপরেই বেঁচে ছিলেন।প্রতিদিন অনেকগুলো করে ওষুধ খেতে হতো।আর ওষুধই তাকে আরও বেশি শেষ করে দিচ্ছিল। এভাবে চলতে চলতে একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বাবা।সবাইকে কাঁদিয়ে চিরতরে বিদায় নেন।এখন শুধু একটাই কষ্ট বাংলাদেশে যাওয়ার পর আর বাবাকে দেখতে পাব না।একথা চিন্তা করলেই কষ্টে বুক ফেঁটে যায়।বাংলাদেশে গিয়ে সবাইকে পাব, শুধু পাবো না বাবাকে।এটাই নিয়ম, সবাইকে চলে যেতে হবে।এটা জানার পরও এই চিরন্তন সত্য আমাদের মেনে নিতে কষ্ট হয়।তারপরও মেনে নিতে হয়।সিরিয়েলি একের পর এক সকলকে এভাবে বিদায় নিতে হবে।যাইহোক, আর লিখতে পারছি না।সকলে আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন, বাবা যেন জান্নাতুল ফেরদৌসে দাখিল হন।

বন্ধুরা এটিই ছিল আমার আজকের আয়োজন।পরবর্তীতে নতুন কিছু নিয়ে হাজির হব আপনাদের মাঝে।

ধন্যবাদ,

@tangera

1927F0BC-A81B-459C-A2F6-B603E4B2106C.png


👉 আমাদের discord চ্যানেল এ JOIN করুন :

👉 আমাদের discord চ্যানেল এ JOIN করুন :

VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


[witness_vote.png](https://steemitwallet.com/~witnesses

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 4 hours ago 

সকালবেলা পোস্টটি পড়ে চোখ দুটো জলে ভরে উঠছিল আপু।সেদিন ডিসকোডে খবরটি দেখতে পেয়েও একই অনুভূতি হয়েছিল আমার।আমার বাবার মুখটিও মনে পরে গেলো।তিন মাস হলো বাবা নেই।ক্ষত এখনো আছে।সবই করছি কিন্তু কি যেনো তার মাঝেও নেই তা অনুভব করি প্রতি মুহুর্তে।সন্তানের কাছে মা-বাবা যে কি তা একমাত্র সেই ই বুঝতে পারে যার পাশে পরম আপন মানুষটি না থাকে।এতিম হয়ে গেছি আপু।😔 পৃথিবীর প্রতিটি বাবাকে আল্লাহ ভালো রাখুন।আপনার বাবাকে আল্লাহ জান্নাতবাসী করুন এই দোয়া ই করি, আমিন।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.24
JST 0.037
BTC 100268.39
ETH 3112.20
SBD 3.68