জীবনে প্রথম বাড়ি থেকে রাগ করে দূরে যাওয়ার গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago


আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।

IMG_20250101_170213_245.jpg

photography device:
Infinix Hot 11s

What3words Location



গল্প:


২০২৫ সালের প্রথম দিনটা অনেক সুন্দর ভাবে অতিবাহিত করলাম। আমার পরিচিত এবং প্রিয় একটি গাছ রয়েছে। গাছটির নাম জাম গাছ। এটা করিয়ান জাম গাছ নামে পরিচিত। ২০০৭ সালের সেভেনে পড়াকালে, বাড়িতে একটু রাগারাগী হয়। মন খারাপ হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম। কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি, কতক্ষণ থাকব তার তেমন কোন চিন্তা ছিল না। সময়টা এমন শীতের সময়। মাঠে তামাক লাগানো চলছে। পথ চলতে চলতে দেখতে পারলাম ফসলের মাঠে আমাদের একটি স্যার গমের জমিতে পানি দিচ্ছে। স্যারের সাথে দু-একটা কথা হল। প্রথমত সালাম দিলাম, স্যার প্রশ্ন করলেন এখানে কি। আমি বলেছিলাম ঘুরতে এসেছি। এরপর রাস্তা থেকে ফসলের মাঠের দিকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়েছিল দূরে মাঠের মধ্যে একটি গাছ দেখা যাচ্ছে। যেখানে এসেছিলাম সেটাও বাড়ি থেকে অনেক দূর। এখান থেকে যদি আবার সেই গাছের কাছে যায় তাহলে আরো দূর। কিন্তু কেন যাব? ভাবনা চিন্তা করার এমন কোন কিছু মনের মধ্যে ছিল না। শুধু মনে হচ্ছিল, ওটা কি গাছ সেটা দেখব। এদিকে বিকেলটা শেষ হয়ে আসার দিকে।

IMG_20250101_170039_722.jpg


পড়ন্ত বেলায় লক্ষ্য করে দেখলাম সূর্য দক্ষিণ পশ্চিমের কোনে ঢলে পড়েছে। মনের মধ্যে যখন ইচ্ছে হয়েছে, দূরে ওটা কি গাছ দেখি আসবো। দ্রুত হাঁটা শুরু করলাম। শীতের ফসলের মাঠ সবে মাত্র ছোট ছোট গমের গাছ বের হয়েছে আর কৃষকেরা তামাক লাগিয়েছে। মাঠে ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে, তায় ফাঁকা মাঠ পরে রয়েছে ব্যাপক। আমিও হাঁটা শুরু করলাম দ্রুত গতিতে। বিলের দিকে লক্ষ্য করলাম কোনজন মানুষ নাই। এখন সেই সমস্ত বিল পুকুরে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম কাঙ্ক্ষিত গাছের কাছে।

IMG_20250101_162601_382.jpg

IMG_20250101_162600_730.jpg


উপস্থিত হয়ে দেখতে পারলাম এটা একটি জাম গাছ। জাম গাছের পাশের একটু জায়গা ফেলে রাখা হয়েছে। জাম গাছটার গোড়ায় ব্যাপক বন জঙ্গল ও আগাছা রয়েছে। জাম গাছটির উত্তর সাইডে পূর্ব-পশ্চিম লম্বা পানি যাওয়ার ড্রেন। ফসলের জমিতে পানি সরবরাহ করার জন্য বেশ বড় ড্রেন ছিল গাছটার পাশ দিয়ে। মনোযোগ সহকারে সব দেখলাম। আরো উত্তরে অর্থাৎ নুনার বিল নামক স্থানের দিকে লক্ষ্য করে দেখলাম দু একজন মানুষ কি যেন করছে। সেখানে সবেমাত্র সরিষা ফুল ফুটেছে। গাছের গায়ে হাত লাগালাম। এরপর চারিদিকে নজর করে দেখতে থাকলাম। যেখান থেকে রাস্তা বাদ দিয়ে মাঠে নেমেছি, সেখানে তাকালাম। দেখলাম সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। স্যার সহ অন্যান্য কয়েকজন মানুষ কাজ করছিল তারা সব চলে গেছে। কতক্ষণে আমার বিবেক হলো, আমি যদি এখন বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করি তাও বাড়ি পৌঁছাতে রাত হয়ে যাবে। মনের মধ্যে ভয় জেগে উঠলো। যদি চোর ডাকাত অথবা শিয়াল কুকুর আমাকে একা পেয়ে যদি ক্ষতি করে! হঠাৎ মনের মধ্যে ভয় জেগে ওঠায় আমি গাছটার গায়ে শেষ বারের মত হাত রেখে আবার বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলাম। এবার বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলাম গাছ থেকে একদম সোজা আমাদের বাড়ি যেদিকে। রাস্তার দিকে উঠলাম না। রাস্তার দিকে উঠে বাড়িতে যেতে হলে আরো বেশি দেরি হবে। হাঁটতে হাঁটতে খেয়াল করলাম মাঠে মাত্র একটি বড় পুকুর ছিল তখন, আপনি আমাদের গ্রামের কয়েকজন মানুষ কাজ করছিল। সে মানুষগুলোও চলে গেছে। চারি পাশে নজর করে দেখলাম, মাঠে শুধু আমি একা। আশেপাশে কোন জন মানুষ নেই।

IMG_20250101_170644_534.jpg


কেমন জানি ভয়তে আমি জড়ো হয়ে আসছিলাম। বেশি দ্রুত হাঁটছি বাড়ির দিকে। এদিকে মাগরিবের আজান শুরু হয়ে গেছে। গাছটা থেকে মাঠের মাঝখানে আমাদের গ্রামের বড় পুকুরটা অনেক দূরে। সেই জায়গা অতিক্রম করে মাঠ, এরপর আরো বাগান পেরিয়ে তারপর বাড়ি। আশেপাশে খেয়াল করে দেখছি কোন মানুষজন নেই। দূর থেকে শিয়ালের ডাক ভেসে আসছে। আমি এতটাই ভীতু হতে থাকলাম বাড়ির দিকে যেন আমার পা উঠছে না। তবুও হাঁটছি একা। ক্লাস সেভেনে পড়া ছোট মানুষ, বুঝতে পারছেন। হাঁটতে হাঁটতে লক্ষ্য করে দেখলাম বিলের পাশ দিয়ে ধানের আইল, সেখানে বেশ শক্তপোক্ত একটি বাঁশের দুই থেকে তিন হাত সাইজের কাবারি পড়ে রয়েছে। আমি দ্রুত কাবারি টা হাতে তুলে নিলাম। তখন জানে একটা স্বস্তি আসলো। আমি খালি হাতে নই। হাতে একটা প্রটেকশনের জিনিস আছে। যদি কুকুর অথবা শিয়ালে আক্রমণ করে তাও নড়িটা দিয়ে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে পারব।

IMG_20250101_171105_6.jpg


এরপর আমি একপ্রকার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে যেন দ্রুত হাঁটতে পারছিলাম। ততক্ষণে বিলের কাছ থেকেই মাগরিবের আযান। শীতের সময় যেন মাগরিবের আজান আগেই হয়ে যায় মনে হয়। এরপরেও কিছুটা আলো থাকে। ততক্ষণে বিলের কাদামাটি, নরম মাটি অতিক্রম করে শক্ত ফসলের জমি। আমিও দ্রুতগতির সাথে চলতে চলতে গ্রামের একমাত্র সেই কাঙ্ক্ষিত পুকুর এসে উপস্থিত। পুকুরটা আমার কাছে বেশ পরিচিত ছিল। দিনের বেলায় ছাগল অথবা গরুর ঘাস কাটার জন্য এই পুকুরটাতে উপস্থিত হতাম। পুকুরে এসে যেন স্বস্তিরিনিশ্বাস ফেললাম। এরপর পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম সেই গাছের দিকে। গাছটা আমার থেকে অনেক দূরে। ভাবলাম অতদূর থেকে হাঁটতে হাঁটতে আসছি আমি! আবার ভাবলাম অতদূর হাঁটতে হাঁটতে গিয়েছিলাম। এরপর আবারো হাঁটা শুরু করলাম। কিছুটা পথ অতিক্রম করে পৌঁছে গেলাম আমাদের ফসলের জমিতে, যেখানে আমাদের একমাত্র স্যালো মেশিন রয়েছে। এখনো হাতে সেই বাঁশের কাবারিটা রেখে দিয়েছি। এরপর একটা ফসলের জমি। অতিক্রম করে বাগান। এতক্ষণ যেই জিনিসের ভয় করেছি, সেই জিনিস যেন বাগানের মধ্যে দেখতে পেলাম। বাগানের মধ্যে দুইটা শিয়াল হাঁটাহাঁটি করছে। আমি তো দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। তবে খেয়াল করে দেখলাম, শিয়াল দুইটা আমার দিকে না এসে পশ্চিম সাইড করে ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল। আমিও হাতে থাকা বাঁশের কাবারি এটা দিয়ে, বাগানের আগাছা গুলার উপর এলোপাতাড়ি বাড়ি মেরে শব্দ করতে করতে রাস্তায় উঠে পড়লাম। এরপর যেন দীর্ঘ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারলাম। এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম, কোনদিন কোন কারণে রাগারাগি হলে; বাড়ি থেকে কোন জায়গায় রাগ করে যাবো না। বিশেষ করে যেখানে জন মানুষ নেই, সেখানে তো যাওয়া যাবে না।


গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিজাম গাছ
বিষয়অতীত ঘটনা
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
লোকেশনগাংনী-মেহেরপুর
ব্লগার@sumon
দেশবাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png


file-g5jU1EzEHAcdc41yLeGvhd2C.webp


Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 months ago 

আরে বাবা,আপনি ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় বাড়ি থেকে রাগ করে মাঠের মধ্যে জাম গাছের নিচে বসে ছিলেন। তবে বসে থাকতে থাকতে মাগরিব হয়ে আসছিল আর তখন বাড়ি ফেরার সময় কার অনুভূতিটা পড়ে আমারও ভীষণ ভয় লাগলো। এরকম একা একা মাঠের মধ্যে দিয়ে সন্ধ্যা বেলায় যাওয়া সত্যি ভয়ানক। তবে কাবারিটা হাতে পাওয়ার পর আপনি একটু স্বস্তি পেলেন। এরকম সময় ছোটখাটো হাতিয়ারও অনেক কাজে দেয়। খুবই ভালো লাগলো আপনার গল্পটি পড়ে ধন্যবাদ।

 2 months ago 

হ্যাঁ একদম ঠিক

 2 months ago 

অনেক ভালো লাগলো ভাই আপনার ছোটবেলার গল্প পড়ে। নতুন একটা অভিজ্ঞতা অর্জন হল আপনার অতি জেনে। হয়তো ছোটবেলায় আপনার সাথে অনেক খেলাধুলা করেছি একসাথে চলেছি কিন্তু ঘটনাটা আমার জানা ছিল না। আমিও চেষ্টা করব আমার অতীতের এমন ঘটনা শেয়ার করতে।

 2 months ago 

ধন্যবাদ ভাই

 2 months ago 

আপনার রাগ করে বাড়ি থেকে যাওয়ার গল্প পড়ে অনেক ভালো লাগলো। সত্যি ভাইয়া বাড়ি হচ্ছে আমাদের সবার নিরাপদ স্হান। বাড়ি থেকে আমাদের কোথাও যাওয়া উচিত নয়। একবার গেলে আর কেউ যেতে চাবে না। ধন্যবাদ আপনাকে বেশ ভালো লাগলো।

 2 months ago 

সুন্দর মন্তব্য করেছেন

 2 months ago 
 2 months ago 

19-01-25

Screenshot_20250119-181537.jpg

Screenshot_20250119-181800.jpg

 2 months ago 

অনেক সুন্দর ভাবে ছোটবেলার স্মৃতি স্মরণ করেছেন ভাইয়া। যেখানে আপনি ক্লাস সেভেনে পড়াকালীন মুহূর্তে বাড়ি থেকে রাগ করে ফসলের মাঠ দিয়ে একটি গাছের কাছে গিয়েছিলেন। এরপর সেখান থেকে এই জাম গাছটার সাথে পরিচয় লাভ করেছেন। অনেক অনেক ভালো লাগলো আপনার ভয় ভয় মুহূর্তের গল্পটা পড়ে।

 2 months ago 

হ্যাঁ, গল্প পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ

Coin Marketplace

STEEM 0.13
TRX 0.22
JST 0.030
BTC 83297.26
ETH 1903.68
USDT 1.00
SBD 0.74