সবজির বীজ কিনতে গিয়ে বাস্তবতার সম্মুখীন
হাই বন্ধুরা!
কেমন আছেন সবাই? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাই-বোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বামুন্দি বাজার থেকে শাকসবজির বীজ কেনার অনুভূতি শেয়ার করব এবং বাস্তব পরিস্থিতির সম্পর্কে ধারণা দেব।
Infinix Hot 11s
কিছুদিন আগে আমি আর আমার বন্ধু মারুফ দুইজন মিলে বামুন্দি বাজারে গেলাম বাচ্চাদের জামা কাপড় কেনার জন্য, শাকসবজি কেনার জন্য, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য এছাড়াও শাকসবজির বীজ কেনার জন্য। প্রথমে আমরা আমাদের জামাকাপড় কেনাকাটা শেষ করে নিলাম, এরপর শাক সবজি হাট-বাজার যা প্রয়োজন দুজনার কেনাকাটা হলো। লাস্টের দিকে বীজ কিনতে এসে লক্ষ্য করে দেখলাম আমরা যেই দোকানের সাথে পরিচিত সেই দোকান বন্ধ করে চলে গেছে। অর্থাৎ ততক্ষণে মাগরিবের আজান হয়ে কিছুটা সময় পার হয়েছে। দেখলাম পাশে দু-একটা ভান্ডার খোলা রয়েছে। তবে বীজ ভান্ডারের লোকটা ভান্ডারে নাই। দুই বন্ধু দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকলাম কি করা যায় আজকে তো বীজ নিয়ে যেতে হবে। কিছুক্ষণ পর দেখলাম হাত ইশারা করে বলছেন আমি এখানে আছি চা পান করছি। যাক বাবা মানুষটা তো আছে। কারণ দিনকাল দেরি হয়ে যাচ্ছে, জমি জায়গা রেডি করা রয়েছে বীজ প্রয়োজন।
এরপর ওনার কাছে প্রশ্ন করলাম আচ্ছা আঙ্কেল এত সকাল সকাল সব কিছু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারণ কি। উনি বললেন যারা নিকটের লোকজন তারা ঘর খোলা রেখেছে কিন্তু যারা দূরদূরান্তে তারা দ্রুত চলে গেছেন। আমি প্রশ্ন করলাম এর আগে তো কোনদিন এমনটা হয়নি। শীতকাল বলে কি কথা। তখন জানতে পারলাম দেশের অবস্থা তো ভালো নয় তাই যে যার মত দ্রুত ব্যবসার কাজ গুছিয়ে সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় বাড়ি চলে যাচ্ছে। তখন আমি বললাম কথাটা সত্য আমারও কয়দিন কানে আসছে এবং আমরা যে পথ ধরে আপনাদের এই বাজারে এসে থাকি সেই পথ ধরে এখন আর সন্ধ্যা সময় যেতে পারি না। সন্ধ্যার সময় থেকেই ছিনতাই শুরু হয়ে যায় যে কোন মুহূর্তে। আগে দুই বন্ধু রাত সাড়ে আটটা নয়টার সময় বাড়ি গেছি মাঠের এই পথ দিয়ে মোটরসাইকেলে। আর এখন মাগরিবের আজান হলেই যেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এ রাস্তায়। চারপাশটা ঘটনা ঘটে গেছে অলরেডি ছিনতাইয়ের। যাহোক উনাকে বললাম আপনার পাশের ওই দোকান থেকে আমি বীজ নিয়ে থাকি। উনারা তো চলে গেছেন হয়তো সৃষ্টিকর্তা ভাগ্যে রেখেছে আপনার দোকান থেকে নিতে হবে। ভালো মানের বীজ দিবেন।
উনি বিভিন্ন সবজির বীজ দেওয়া শুরু করলেন। মুলার বীজ, গাজর পালং শাক সহ বিভিন্ন রকমের বীজ সংরক্ষণ করলাম। হঠাৎ একটি ছেলে এসে বলল এই দোকানে না থাকলে আমাদের দোকান থেকে নিন। তখন তাকে বললাম বাবু এখানে রয়েছে যদি না পাই তাহলে তোমার ওখান থেকে নিব। তোমরা দোকান গোছাবে না। ছেলেটা বলল আমাদের গোছানো হয়ে গেছে। তারাও চলে যাওয়ার জন্য রেডি। তখন ভাবলাম দেশের পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যাবেলায় বেচাকিনা সহ এখানে ফুচকা বিভিন্ন রকমের ভাজাপোড়া খাওয়ার আইটেম শুরু হয়ে যেত। আর এখন সন্ধ্যা না হতেই বাজারের লোকজন উধাও হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। এর আগে সন্ধার পরে রাস্তায় মোটরসাইকেলের ভিড়ে পার হওয়াটাই কঠিন ছিল। আর এখন রাস্তাঘাট হয়ে গেছে ফাকা চুল ডাকাতের ভয়ে। কি একটা দেশের পরিস্থিতি। আমি আমার বন্ধুকে বললাম আমাদের কেনাকাটাও দ্রুত করতে হবে। এখনো বেশ কিছু জিনিস নিয়ে বাকি রয়েছে দোকান থেকে।
এরপর উনি আমাদের সকল সবজির বীজগুলো একটা প্যাকেটের মধ্যে দিয়ে দিলেন। বললেন আজকে প্যাকেটে দিতে পারছি আগামী দিন কিছু নিতে আসলে প্যাকেটেও দিতে পারবো না সরকার পলিথিন প্যাকেট বন্ধ করে দিয়েছে। তখন আমি ভেবে দেখলাম আমার তো পলিথিন প্যাকেট নেয়া একান্ত প্রয়োজন পুকুরপাড়ে বেগুন রয়েছে কুলঝুটি পাখি দেখে যায়। তাই বেগুনগুলো ছোট থাকতে প্যাকেট বন্দি করতে হয়। তাই চিন্তা বেঁধে গেল সে দোকান থেকে প্যাকেট নেওয়া লাগবে। দ্রুত টাকা পরিশোধ করে আমরা বাজারের দিকে চলে আসলাম।
তখন সবেমাত্র সন্ধ্যা সাতটা সাড়ে সাতটা বাজে। এসে দেখি বাজারের দোকান প্রায় সব বন্ধ হয়ে গেছে। আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। সাড়ে আটটা নয়টার সময় যে সমস্ত দোকানগুলো বন্ধ হয়। সে সমস্ত দোকানগুলো এত দ্রুত সব বন্ধ করে ফেলেছে। চারিপাশে লক্ষ্য করে দেখলাম বাজারে সিটি ফোটা কয়েকজন মানুষ রয়েছে আমরা। তখন মনের মধ্যে কেন জানি ভয় লেগে উঠলো। আমি যেই মানুষ রাত্রে পুকুর পাহারা করে বেড়াই কোন ভয় পায় না। কিন্তু বাজারে এমন থমথমে এ অবস্থা দেখে মনে হলো কেউ যদি আমার কাছ থেকে মোবাইল সহ ছিনতাই করে নিয়ে চলে যাই তাও তো কিছু করার থাকবে না। তবে ভয়ের কোন কারণ ছিল না ওখানেই আমার খালাম্মার বাসা। কিন্তু মনের মধ্যে একটা অন্যরকম খারাপ লাগা অনুভূতি। ততক্ষণে আমার পাশে আমার বন্ধু মোটরসাইকেল নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল। মোটরসাইকেলে মোবাইল পাল্টানোর জন্য সে একটা সার্ভিসিং এর দোকানে গেছিল। সে বলল মোটরসাইকেল সার্ভিসিং এর দোকান গুলো সব বন্ধ হয়ে গেছে শুধু একটা খোলা ছিল। যাহোক নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস আর তখন কিনা হলো না এমন কি আমার পলিথিনের প্যাকেটটাও পেলাম না। আগে দুই বন্ধু ইচ্ছে মতো ঘুরতাম বাজারে ফুচকা খেতাম, 12 মিশালি খেতাম, ঝাল মুড়ি খেতাম। এখন যেন ভয় পালানোর মতো অবস্থা। তবে আমরা যেই গ্রামীন রাস্তা দিয়ে চলাচল করতাম সম্ভব হলো না সেই রাস্তা দিয়ে যাওয়া। কারণ গ্রাম থেকে অনেকেই মানা করে দিয়েছিল সন্ধ্যার পর যেন ওই রাস্তা দিয়ে আমরা বাড়ি না ব্যাক করি। তাই হাইরোড ধরে অর্থাৎ মেহেরপুর কুষ্টিয়ার হাইরোড ধরে পার্শ্ববর্তী একটা গ্রাম এর রাস্তা দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেই। সত্যি কতটা খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে চলে গেছে আমাদের দেশ।
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
পোস্ট বিবরণ
ব্লগার | sumon09 |
---|---|
ডিভাইস | Infinix Hot 11s |
লোকেশন | বামুন্দি বাজার |
ক্যামেরা | 50mp |
দেশ | বাংলাদেশ |
পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন ভ্রমণ বিষয়ক পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকবেন সবাই। সকলের জন্য শুভকামনা রইল,আল্লাহ হাফেজ। |
---|
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
X-promotion
22-09-2024
আমি কখনো বীজ ভান্ডার দেখিনি বা এতগুলো বীজ একসঙ্গে এভাবে বাজারে বিক্রি করতে দেখিনি। তবে আজকে আপনার পোস্টের মাধ্যমে দেখতে পেরে খুবই ভালো লাগলো। সবজির পিস কিনতে গিয়ে বিভিন্ন কাজের ব্যস্ততা সম্মুখীন হতে হয়েছে । তবে এই ব্যস্ততা গুলো সবই নিজেদের জন্য। যতদিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হবে ততদিন এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তাই আমরা যত ব্যস্ত থাকি নিজের সাথে মিলিয়ে নিতে পারবো ততই ভালো।