মায়ের ঔষধ কিনতে ঢাকা সাভারে একদিন

in আমার বাংলা ব্লগ3 months ago


আসসালামু আলাইকুম




হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজকে আমি আপনাদের মাঝে একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চলেছি। আর তা হচ্ছে ঈদের আগে আমার জন্য ওষুধ কিনতে যাওয়ার মুহূর্তে কিছুটা হয়রানির শিকার হওয়া। হয়তো এই পোস্ট সম্পূর্ণ পড়লে আপনারা বেশ অনেক কিছু বিষয়ে অবগত হতে পারবেন। আশা করবো আপনারা মনোযোগ সহকারে আমার এই পোস্ট পড়বেন।


IMG_20240614_132145.jpg


ফটোগ্রাফি সমূহ:



ইতোমধ্যে আমাদের মাঝ থেকে ২০২৪ সালের কোরবানির ঈদ বিদায় নিয়েছে গত ১৭ তারিখে। তখন আমি ঢাকা সাভারে অবস্থান করেছিলাম মায়ের অসুস্থতার জন্য। জুন মাসের ১২ বা ১৩ তারিখের দিকে আম্মার জন্য ঔষধ কিনতে হবে। ১৪ তারিখের ঔষধটা কোনো রকম রয়েছে ১৫ তারিখের আর কোনো ঔষধ নাই। এদিকে আমি ভেবেছিলাম ১৪ তারিখেই ওষুধ ম্যানেজ করব কারণ দীর্ঘদিন পথে হসপিটালে দৌড়াতে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। যাই হোক পান ধোয়া গ্রাম থেকে জাহাঙ্গীরনগরের এরিয়া পার হয়ে বিশ-মাইল বাস স্ট্যান্ড। ঢাকা সভার বিশমাইল থেকে ঢাকা সাভার বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ১০ টাকা ভাড়া। কিন্তু ঈদের তিনদিন আগে, এই স্থানের রূপ চেঞ্জ হয়ে গেল বিশেষ করে যাত্রীদের জন্য। ফ্লাইওভার ক্রস করে ওই পারে গেলাম ঢাকা সাভারে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সাভারমুখী যে কয়টা বাস সম্মুখে আসছে তারা সবাই একটাই কথা ভাড়া ১০০ টাকা দেওয়া লাগবে। প্রশ্ন করলাম কেন ১০০ টাকা দেওয়া লাগবে, কোন উত্তর নাই। পাশে আমার মত যাত্রী জমা হয়ে গেল ১০-১২ জন। দশ টাকার পথে কেন ১০০ টাকা দেওয়া লাগবে সবাই একই প্রশ্ন। ঠিক এভাবে ছয় থেকে সাতটা বাস মিস করলাম। এ মুহূর্তে আমাদের পাশে দুইটা পুলিশ ছিল। জানিনা বাস আলাদের এই কার্যকলাপ তারা কতটা ফলো করছে বা অবগত রয়েছে এ বিষয়ে। মায়ের ঔষধ পান ধোয়া বাজারে কোন ফার্মেসিতেই নাই। পড়লাম বেশ ঝামেলায়। এদিকে ঔষধ প্রায় দেড় হাজার টাকা লাগবে। ইতোমধ্যে মায়ের অপারেশন পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার খরচ হয়ে গেছে আমার। মাত্র কয়েক হাজার টাকা কাছে রয়েছে সেগুলো ভাই বিকাশ করে পাঠিয়েছিল। তাই বেশ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়লাম। তবে একটা বিষয় ঢাকা মুখী রাস্তা কিন্তু বেশ যানজট মুক্ত ফাঁকা ছিল তারপরেও কেন তারা এমন ভাড়া চাচ্ছে। ঢাকার বাইরের দিকে অর্থাৎ মানিকগঞ্জ চন্দ্রা অর্থাৎ উত্তরবঙ্গের দিকে গাড়ির চাপ অধিক, ফটো দেখলে বুঝতে পারবেন।


IMG_20240614_122138.jpg

IMG_20240614_122646.jpg

IMG_20240614_122851.jpg

IMG_20240614_122949.jpg



আবার ফ্লাইওভার এর উপর এসে গেলাম, কারো নিচে বেশ রোদ গরম ছিল। মনে মনে ভাবতে থাকলাম কি করা যায়। সাভারে যাব নাকি নবীনগরে যাব। নবীনগর যেখানে জাতীয় স্মৃতিসৌধ রয়েছে। সেখানে আর্মিদের বড় একটি মার্কেট রয়েছে। তবে চিন্তা করে দেখলাম সেখানে সব ওষুধ নাও পেতে পারি এছাড়া তেমন কোনো ফার্মেসি নাই। তারপরেও নবীনগরমুখী হলাম সেখানেও বাসে একই কথা। ১০ টাকার জায়গায় ১০০ টাকা দিতে হবে। মনের মধ্যে বেশ রাগ জমে উঠলো, নিজের উপর রাগ সৃষ্টি হল। কেন দুইদিন আগে ওষুধ আনতে গেলাম না। আবার ফ্লাইওভার ক্রস করলাম সাভার মুখী হলাম। নিরবে দাঁড়িয়ে থাকলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর দেখলাম সাভারগামী সাভার নামক বাস এসে দাঁড়ালো। ভেতরে যাত্রী খুবই কম। কন্টাকটার কে প্রশ্ন করলাম ভাই কত ভাড়া দিতে হবে সাভারে। উনি বলে বসলেন ভাই ১৫ টাকা দিলেই হবে। কিছুটা স্বস্তি লাগলো বাসে উঠে বসলাম। এরপর সাভার বাসস্ট্যান্ডে এসে নামলাম। তারপর পাকিজার মোড় পার হয়ে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর ফার্মেসিতে গেলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য বিষয় এই বাজারের সবচেয়ে বড় ফার্মেসি সেখানে ওই ঔষধ নাই। আর ঠিক এভাবেই এই বাজারে যতগুলো ফার্মেসি রয়েছে তন্ন তন্ন করে খোঁজার মতো খুঁজতে থাকলাম। ঔষধ পেলাম না। কেউ বলে এগুলো আমাদের কাছে পাবেন না কেউ বলে শেষ হয়ে গেছে।


IMG_20240614_125508.jpg

IMG_20240614_131801_1.jpg

IMG_20240614_133045.jpg

IMG_20240614_133838.jpg

IMG_20240614_134604.jpg



অবশেষে এক ফার্মেসির ভাই দয়া করে একটা কথাই বললেন, ভাই হয়রানি হয়ে কোথাও পাবেন না আপনি 'সাভার প্রাইম হসপিটালে' চলে যান, সেই ফার্মেসিতে সব পাবেন। উনার কথামতো আমিও চলতে থাকলাম ঐদিকে। এরপর তার নিকটস্থ একটি ফার্মেসিতে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে এগুলো পাওয়া যাবে কিনা। উনি বললেন সব আছে আমাদের ফার্মেসিতে। যেন স্বস্তির বাতাস অন্তরে বয়ে গেল। প্রশ্ন করলাম আপনাদের এখানে ওষুধের ছাড় কেমন কি। উনি বলেছিলেন আমরা ১০ থেকে ১২% করে ছাড় দিয়ে থাকি। এ কথা শুনে আরো ভালো লাগলো। আমি আমার মোবাইলে ক্যামেরায় ধারণ করা ফটো দেখালাম বললাম এগুলো দিয়ে দিন। উনি একের পর এক ঔষধ বের করে দিতে থাকলো। তবে আমার ট্যাবলেট জাতীয় ওষুধ গুলোর সব প্রয়োজন ছিল না। এগুলো পান ধোয়াতেও পাওয়া যায়। তবে ভেবে দেখলাম এসে যখন পড়েছি কমিশন যখন ঠিক আছে সবগুলোই নিয়ে যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমার যেটা বেশি প্রয়োজন সেটা মাত্র একটা রয়েছে। আর তা হচ্ছে 'এরিটনের এন' ওই মুহূর্তে আমার দুইটা হলেও চলবে। কিন্তু উনাদের কাছে মাত্র একটা। সবগুলো ওষুধ হিসাব করে নেওয়ার পর উনি দেখিয়ে দিলেন হসপিটালের ফার্মেসিতে যান।


IMG_20240614_134629.jpg

IMG_20240614_134705.jpg



ঢাকা সাভার প্রাইম হসপিটালের ফার্মেসিতে ওই মাল্টিভিটামিন টা পেয়ে গেলাম। তারপর প্রশ্ন করলাম ভাইয়া এই সমস্ত ওষুধগুলো কি আপনাদের কাছে সব পাওয়া যায়। উনি বলেছিলেন হ্যাঁ ভাইয়া আপনি যা নিয়েছেন, এগুলো সব আমাদের কাছে এবল এবল রয়েছে। কে জানতো এখানে সব পাওয়া যায়। আর বাস স্ট্যান্ড থেকে এই জায়গায় প্রায় হাফ কিলোর বেশি দূরে। আর আমি তো এখানে নতুন। তবে বাসস্ট্যান্ডের ওখানে বেশ অনেকবার আসা-যাওয়া করেছি মায়ের দুই ভাগ রক্ত দেওয়া হয়েছিল সিটি ল্যাব হসপিটাল থেকে। কিন্তু এই পাশে তো কোনদিন আসা হয়নি। যাইহোক কপালে গুনে পেয়ে গেলাম। এরপর হসপিটালে বেশ কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম ওয়াশরুমে ফ্রেশ হলাম। এরপর স্বস্তির অনুভূতি নিয়ে হাই রোডের দিকে চলে আসলাম মাথার ভিতর তখনও আরেকটা চিন্তা না জানি এখন আবার বাসের ভাড়া কত চায়। বাসে উঠার পর দশ টাকা বের করে দিলাম, তারা নীরবে নিয়ে নিল। বাসের মধ্যে তখন ভাড়া নিয়ে কথা চলছিল। বাসের মধ্যে থেকে তাদেরই একজন বলে বসলো "আমরা হারাম খাইনা, পাবলিক কে ধোকা দেয় না" কথাটা শুনে বেশ জানে শান্তি লেগেছিল। সারাদিন পরে যেন একটা মনে শান্তি লাগা সেন্টেন্স শুনেছিলাম। এরপর এক আঙ্কেলের সাথে বেশ এই সমস্ত বিষয়ে গল্প করতে করতে পৌঁছে গেলাম বিশমাইলে।


IMG_20240614_135631.jpg

IMG_20240614_135739.jpg

IMG_20240614_135747.jpg

IMG_20240614_141307.jpg


পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

পোস্ট বিবরণ


বিষয়ঔষধ কেনার অনুভূতি
লোকেশনLocation
ফটোগ্রাফি ডিভাইসHuawei P30 Pro-40mp
ফটোগ্রাফার@sumon09
দেশবাংলাদেশ


পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকুন সকলে। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 3 months ago 

আসলে ঢাকা শহরে প্রচুর পরিমাণে ট্রাফিক জ্যাম থাকে তাই যে কোন কাজ করতে গেলেই যেন ক্লান্তির পরিমাণটা বৃদ্ধি পেয়ে যায়। তারপরও আপনি সাভার থেকে দেখছি মায়ের জন্য ওষুধ কিনে এনেছেন। যদি ট্র্যাফিক জ্যাম না থাকতো তাহলে আপনার এতটা বেশি কষ্ট হতো না।

 3 months ago 

হ্যাঁ একদম ঠিক কথা।

 3 months ago 

ঢাকা শহরে আমি দীর্ঘদিন থেকেছি তাই আমিও এই বিষয়টা লক্ষ্য করে দেখেছি যে বাস মালিকেরা যেন একটা সিন্ডিকেটের মতো তৈরি করে রেখেছে। তারা ছুটির এই দিনগুলোতে বাসের ভাড়া বৃদ্ধি করে দেয়। যাইহোক অবশেষে আপনি সাভারে অল্প টাকার মধ্যে যেতে পেরেছেন এটা দেখে ভালো লাগলো। আসলে ঢাকা শহরে চলাচল করতে গেলে একটু বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়।

 3 months ago 

হ্যাঁ বেশ বিভ্রান্তিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়ে যায়।

 3 months ago 

ভাই, আপনি আপনার মায়ের জন্য ওষুধ আনতে গিয়ে তো অনেক হয়রানির মধ্যে পড়েছেন, পুরো ব্লগটি পড়ে যা বুঝতে পারলাম। তাছাড়া আপনার মায়ের অপারেশনে যে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে, সেটাও জানতে পারলাম আপনার এই পোস্ট টি পড়ে। যাইহোক, শেষ পর্যন্ত যে ঢাকা সাভার প্রাইম হসপিটালের পাশের একটি ফার্মেসি এবং এই হসপিটালের ফার্মেসি থেকে আপনার মায়ের ওষুধগুলো কিনতে পেরেছেন, সেটা জেনে খুবই ভালো লাগলো।

 3 months ago 

হ্যাঁ ভাই অসুস্থ মানুষকে নিয়ে বাইরে গেলে হয়রানির শিকার হতে হবে এটা স্বাভাবিক।

 3 months ago 

ঈদের সময় বাস গুলোতে বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে হয়।সিন্ডিকেট চক্র এই কাজটি করে।আসলে সাধারণ জনগণের এখানে ভোগান্তি ছাড়া আর কিছুই করার নেই ।অবশেষে আপনি গিয়ে আপনার আম্মার ওষুধ কিনে এনেছেন জেনে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

 3 months ago 

হ্যাঁ আমার তো ওষুধ কিনতেই হবে, তাই কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে তারপর যাওয়ার চেষ্টা করেছি।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 62178.11
ETH 2509.69
USDT 1.00
SBD 2.66