বাস্তব গল্প || স্কুল পালানোর অভিজ্ঞতা || ১০% লাজুক খ্যাঁকের জন্য।

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি। আজকে আমি আমার সোনালী অতীতের স্কুল পালানোর একটি ঘটনা নিয়ে হাজির হয়েছি। আশা করি সবার ভালো লাগবে। যদি আমাকে কেউ প্রশ্ন করে আমার কাটনো সব চেয়ে ভালো মুহুর্তের কথা তাহলে অবশ্যই আমি আমার স্কুল লাইফের কথাই বলবো। এই সময়টা কখনোই ভুলার মতো না। বন্ধুদের সাথে কাটানো সেই মুহুর্তগুলো আজও মনে মনে যায়। তবে এখন আর সবাইকে এক সাথে পাওয়া যায় না। সবাই সবার লাইফ নিয়ে বিজি হয়ে গেছে। তবে মোটামুটি ঈদের সময় সবাই এক সাথে মজা করা হয়। যাইহোক আজকে আমি আমার স্কুল জীবনের মজার অভিজ্ঞতার মধ্যে একটি অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। সেই অভিজ্ঞতা হলো স্কুল পালানো অভিজ্ঞতা। চলেন তাহলে শুরু করা যাক।

Source

আমি তখন ক্লাশ সেভেনে পড়ি। মোটামুটি ক্লাশ সিক্স থেকেই সবার সাথে ভালো বন্ধুত্ব হয়। আমার ভালো বন্ধুর মধ্যে ছিলো কৌশিক, শিফাত, নাহিদ, ইমন, আলভী, জাহিদ যদিও জাহিদ আমার আপন ভাই। আমরা সবাই এক সাথেই থাকতাম সব সময়। যেকারো কোনো প্রোবলেম হলে সবাই এক সাথেই সেইটার সমাধান করতাম। তবে যাইহোক ক্লাশে ভালো ছাত্রের মধ্যে আমরাই ছিলাম আবার দুষ্টুর দিক থেকেও আমরাই। আমাদের সবার বসার জায়গা আমরা নিজেরাই নির্ধারণ করে রাখতাম। আমাদের জায়গা ফাঁকা থাকলেও কেউ বসতো না। সবাই মোটামুটি আমাদের এই দলকে ভয় পেতো। এক এক সময় এক এক প্লান করতাম তবে সব কিছুতেই মোটামুটি সাক্সেস হয়েছি। যাইহোক, গ্রীষ্মের সময় ছিলো আমাদের বন্ধুদের মধ্যে নাহিদের বাসা ছিলো একটু দূরে। নাহিদের বাসা থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে একটা নদী ছিলো। যদিও যদিও নদীটি ভৌতিক নদী হিসেবে পরিচিত ছিলো। আমরা সবাই মিলে সেই নদীতে গোসল করার প্লান করি৷ মানে আমরা স্কুল পালাবো এর পর নদীতে গোসল করতে যাবো। দিনটি ছিলো বৃহস্পতিবার অর্থাৎ পরের দিন শুক্রবার। আমরা তাই বৃহস্পতিবার স্কুল পালানোর জন্য দিনটা সিলেক্ট করি। আমাদের প্রথম ক্লাশ এর পর আবার ৫ম ক্লাশে নাম প্রেজেন্ট করা হতো। তাই আমরা প্রথন ক্লাশ করে এরপর স্কুল পালানোর সিদ্ধান্ত নেই।

Source

যেকথা সেই কাজ, আমরা প্রথম ক্লাশ করে সবাই আমাদের ব্যাগ নিয়ে আমাদের ক্লাশের পেছনের ওয়াল পার হয়ে বাইরে চলে আসি। ব্যাগ নিয়ে যদি যাই তাহলে রাস্তায় ধরা পরার সম্ভবনা থাকে তাই ব্যাগ একটা পরিচিত ভাইয়ের দোকানে রাখি। তার দোকান থেকেই আমরা সবাই কেনাকাটা করতাম। এর পর আমরা সবাই নাহিদের বাসার উদ্দেশে রওনা দেই। নাহিদের বাসায় যাওয়ার পর সবাই কিছুক্ষন আড্ডা দেই এর পর আমরা বেরিতে পড়ি সেই ভয়ংকর নদীর উদ্দেশ্যে। নদীটি ভয়ংকর বলতে সেখানে সন্ধ্যার পর মানুষ পানিতে নামতো না। তবে দিনের বেলা অনেকেই গোসল করতো। যেহেতু নাহিদের বাসা থেকে ৫ কিলো দূরে নদী তাই আমরা একটা অটো ভাড়া করি। এর পর অটো করে আমরা সেই নদীতে পৌঁছে যাই।

Source

নদীটি দেখতে অনেক সুন্দর ছিলো বিশেষ করে নদীর পাড়ে সাঁরি সাঁরি গাছগুলো খুব সুন্দর ছিলো। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে এক মাত্র আলভী সাঁতার পারতো না। তাই আলভী পানিতে নামে নাই। আমরা সবাই পানিতে নামে পড়ি। সেখানে একটা কলাগাছের ভেলা ছিলো। ভেলা দিয়ে আমরা সবাই নদীর মাঝখানে যাই। নদীর পানি অনেক স্বচ্ছ ছিলো পানির নিচে আমাদের পা একদম স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো। আতশ কাঁচ দিয়ে দেখলে যেমন সব কিছু বড় দেখা যায়, পানিতে ভিজিয়ে রাখা আমাদের পা ও তেমন মোটা দেখা যাচ্ছিলো। আমরা অনেক ঝাপাঝাপি করি। এক এক জনের চোখ একদম লাল হয়ে গেছিলো। তবে আলভী বেচারি আমাদের সাথে থেকেও পানিতে নামার মজা উপভোগ করতে পারে নাই। কারণ সে সাঁতার পারে না।

Source

এর পর আমরা বিকালের দিকে সেখান থেকে বাসায় ফিরে আসি। যেহেতু অনেক ঝাপাঝাপি করেছিলাম তাই আমার কিছুটা জ্বর আসে। শুক্রবারে আমাকে সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়ে জ্বরের কারনে বাসায় আম্মুর বকা এর পর শনিবার যখন ক্লাসে যাই আমরা যারা স্কুল পালিয়েছিলাম সবাইকে এক পায়ে দাঁড়া করিয়ে রাখা হয়েছিলো আমাদের ধর্ম ক্লাসে। তবে সেই স্কুল পালানোর দিনটা এখনো মনে করে অনেক ভালো লাগে। মাঝে মাঝেই মিস করি সেই স্মৃতিগুলো।

এই ছিলো আমার সোনালী অতীতের স্কুল পালানোর অভিজ্ঞতা। আমার লাইফের বেস্ট মুহুর্তগুলোর মধ্যে এটি একটি। যাইহোক আশা করি সবার ভালো লেগেছে। আজকের মতো এই পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন।

"আমি সাইদুল ইসলাম কাকন। আমি বর্তমানে অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। আমি ভ্রমন প্রিয় মানুষ। ছবি আঁকতে অনেক ভালোবাসি। এছাড়াও রান্না করতে পছন্দ করি। আমি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তবু্ও চেষ্টা করি গরীবদের সাহায্য করতে। "