শান্তিময় কিছুসময়
মানুষ যত বড় হয়, তত ভাল লাগার জিনিস গুলো থেকে দূরে চলে যেতে থাকে। দায়িত্ব আর প্রয়োজনীয়তার চাপে হারিয়ে যায়। হারিয়ে যেতে হয় কাজের মাঝে।আপনারা অনেকেই জানেন আমি ছোট থেকেই খেলাপাগল।হাইস্কুল লেভেলে থাকতে সারাদিন খেলার উপরেই থাকতাম। খেলা পেলে আর কিছুই লাগত না। নাওয়া খাওয়া সব ভুলে যেতাম খেলা পেলে।
কিন্তু এখন বড় হয়েছি।বাড়ির বড় ছেলে হিসেবে বাড়ির দায়িত্ব এসে পড়েছে কাধে।এখন চাইলেও আর মাঠে যাওয়া হয়ে ওঠে না। কারন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টিউশন। তবে কোথাও ছেলেদের খেলতে দেখলে নস্টালজিক হয়ে যেতাম। মনে হত খালি আবার যদি মাঠে ফিরতে পারতাম।
সরস্বতী পুজার দিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম,তখন বন্ধু প্রণব বলল,"কি রে মাস্টার,শুক্রবার করে তো প্রাইভেট থাকে না।শুক্রবার খেলতে আসলেই তো পারিস।"আমি যেন হাতে চাঁদ পেলাম।ওকে জিজ্ঞেস করলাম কখন খেলা হয়।ও বলল শুক্রবার এগারোটা থেকে খেলা।শর্টপিচ খেলা টেপটেনিস দিয়ে। আমি ওকে বললাম খেলা শুরুর আগে যেন কল দেয়।
শুক্রবার সকাল থেকেই খুব এক্সাইটেড ছিলাম।মনে হচ্ছিল অনেকদিন পর আবার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। সাড়ে দশটার দিক বন্ধু ফোন দিল,আমি সাথে সাথেই দৌড় দিলাম।গিয়ে দেখলাম সবাই মাঠে চলে এসেছে,একজন বলে টেপ লাগাচ্ছে একজন মাঠ ঝাড়ু দিচ্ছে।বাকিরা প্লেয়ার ডেকে নিচ্ছে মানে কে কার দলে খেলবে তা ভাগ করে নিচ্ছে।
আমি বন্ধুত্ব কোটায় প্রণবের দলেই জায়গা পেলাম।কারন অনেকদিন মাঠের বাইরে থাকা প্লেয়ার কে কেউ দলে নেবে না। তবে ভয়ে ছিলাম, কারন টেপটেনিস এর খেলা আর আমরা যে বল দিয়ে খেলতাম দুইটার বাউন্স পুরাই আলাদা।
তবে একটা মজার বিষয় বলি,সেটা হল বাজি। এই শর্টপিচ ম্যাচেই বাজি খেলা হয়। কারন পুরস্কার এর হাতছানি না থাকলে কেউ খেলায় সিরিয়াস হয়না।এজন্য বাজি রাখতে হয়।তবে মজার বিষয় হলো বাজি রাখা হয় বিস্কুট।প্রতি দল থেকে প্লেয়ার রা নিজের ইচ্ছামত দুইতিন প্যাকেট বিস্কিট বাজি ধরে। তারপর যে দল বিজয়ী হয় তারা দ্বিগুণ পায়৷ তবে খাওয়াদাওয়ার সময় কিন্তু সবাই মিলেই খাওয়াদাওয়া করা হয়।
যাই হোক খেলা শুরু হল। প্রথম ম্যাচ আমি প্রথমে ব্যাটিং করেছিলাম শেষের দিকে। তাও এক ওভাবে ৩টা চার মেরেছি। তবে আফসোসের বিষয় ম্যাচটা হারি। এক বোলার ঘাড় ত্যারামি করে বোলিং নিয়ে এক ওভারে ২২ রান দিয়েছে। যাই হোক ঐ ম্যাচ আমরা হেরে যাই।পরের ম্যাচে আমরা প্রথমে ব্যাট করে ১০ ওভারে ৮২ এর টার্গেট দেই।ওপেনার রাই এই রান করে। এই ম্যাচে অবশ্য ভয়ে ভয়ে এক ওভার বল করেছিলাম। ৮রান দিয়ে ১উইকেট পেয়েছিলাম।
এই ম্যাচ অবশ্য আমরা ২০রানে জিতি। প্রথম ম্যাচ আর এই ম্যাচের বাজির বিস্কুট এর পরিমান সমান হওয়ায় কোন দলেরই আর বিস্কুট খাওয়া হল না।তবে তাতে কোন আফসোস নাই৷ ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সময় কোন দিক দিয়ে চলে গেছে বুঝতেই পারিনি। মাথায় কোন টেনশন আসে নি,মনে হচ্ছিল আমার কোন দুশ্চিন্তাই নেই।দারুন উপভোগ করেছি সময়টুকু। আবার অপেক্ষায় আছি,কবে শুক্রবার আসবে কবে খেলতে যাব।
Twitter link
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
একটি সময় ছিল বিকেল হলেই খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তাম। কি দারুন মুহূর্ত ছিল যেটা হারিয়ে ফেলেছি । আপনি দেখছি শুক্রবারে অনেক সুন্দর মুহূর্ত খেলাধুলার মাধ্যমে পার করেছেন । আমার কাছে অনেক ভালো লাগলো।
আহ ভাই রঙিন স্মৃতি গুলো মনে করিয়ে দিলেন এক সময় নিয়মিত শর্ট পিস খেলা হত। বিশেষ করে এই ধরনের ম্যাচগুলো আমরাও শুক্রবারে খেলতাম। শুক্রবারে ক্রিকেট খেলার মুহূর্ত গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।