রবিবারের আড্ডা -৭৬ | উন্মুক্ত আড্ডা - ৬ পর্ব
ব্যানার ক্রেডিটঃ @hafizullah
আমার বাংলা ব্লগের আয়োজন রবিবারের আড্ডার নতুন সংযোজন হচ্ছে এবিবি উন্মুক্ত আড্ডা । মূলত এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকে তাদের সামনে একটা বিষয় তুলে ধরা হয়। যে সকল সদস্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেই বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী হয়, তাদের নিয়েই মূলত এই অনুষ্ঠানটা পরিচালিত করা হয়।
তাছাড়া এই অনুষ্ঠানটি তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেহেতু চার-পাঁচজন অতিথি থাকে প্রথমত দুইবারে সকল অতিথির মতামত শোনা হয়, দ্বিতীয়তঃ কিছুটা বিরতি দিয়ে উপস্থিত দর্শকদের মতামত গ্রহণ করা হয় এবং নিজেদের পছন্দের গান শোনা হয়। সর্বশেষে উপস্থিত সকল দর্শক ও শ্রোতাদের জন্য থাকে শুভেচ্ছা পুরস্কার ।
বর্ষাকাল কে ঘিরে শৈশবের স্মৃতিচারণ?
প্রথম অতিথিঃ @maksudakawsar
ভেরিফাইড সদস্যঃ আমার বাংলা ব্লগ
মতামতঃ
যেহেতু বাবার চাকরির সুবাদে ছোটবেলা থেকেই সরকারি কোয়ার্টারে ছিলাম, তাই আমার শৈশবটা কেটেছে কোয়ার্টারেই। আমাদের কোয়ার্টারের সামনেই মাঠ ছিল আমরা সেখানে বৃষ্টির দিনে খেলতে যেতাম। বিশেষ করে কাদা পানিতে নানা ধরনের খেলা খেলতাম। এজন্য অবশ্য মাঝে মাঝে বাড়িতে বকাও খেতাম। তাছাড়া বৃষ্টির জমাট বাঁধা পানির ভিতরে আমরা সকলে মিলে নৌকা বানিয়ে ছেড়ে দিতাম, কারটা আগে যেতে পারে এসব নিয়ে প্রতিযোগিতা চলতো। তাছাড়া মা আগে থেকেই ছোলা বুট কিংবা শিমের বিচি ভেজে রাখতো এগুলো বৃষ্টির দিনে আমরা খেতাম। তাছাড়া মাঝেমাঝে মা খিচুড়ি রান্না করত এটাও বেশ মজার ছিল। বেশি মজা হতো আমরা যখন সবাই পানি সংগ্রহ করতে যেতাম বৃষ্টির সেই সময়টায়, কেননা কোয়ার্টারে পানি থাকতো না। তাই বৃষ্টি আসলেই যে যা পারতাম সেটা নিয়েই বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে নিতাম। আসলে এগুলোই শৈশবের মুহূর্ত যা আমাকে এখনো ভাবায়।
দ্বিতীয় অতিথিঃ @kausikchak123
সদস্যঃ আমার বাংলা ব্লগ
মতামতঃ
আমার জীবনের শৈশবের বর্ষাকালের স্মৃতি বলতে, ঐ ঘুরেফিরে স্কুল জীবনেই যেতে হবে। আমার স্কুলটা ছিল মূলত কলেজ স্ট্রিট এলাকায়। কলেজ স্ট্রিট হচ্ছে পুরো ভারতবর্ষের সব থেকে বড় বইয়ের বাজার এলাকা। এখানে মূলত সারা বছরই বই মেলা চলে। যেহেতু আমার স্কুল এই এলাকাতেই ছিল আর এখানে বৃষ্টি হলেই প্রচুর জল জমে যেত। একবার সেকি কান্ড বৃষ্টির দিনে আমি মার সঙ্গে স্কুলে গিয়েছি, ফেরার পথে রাস্তায় দেখি একদম গলা অবধি জল। দোকানদারদের বইপত্র সব রাস্তায় বৃষ্টির জলে ভাসছে। দোকানিরা রীতিমত গামছা পড়ে লেগে পড়েছে তা সংগ্রহ করার জন্য। অনেকে আবার বৃষ্টির মাছ ধরার চেষ্টা করছিল বিশেষ করে বয়স্ক লোকেরা। এখন তো আর স্কুলে রেনি ডে দেখা যায় না। আমাদের বেলায় আমরা রেনি ডে পেয়েছি। দেখা গিয়েছে যে ঠিকঠাক মত স্কুলে গিয়েছি, হঠাৎ করেই গিয়ে দেখি যে স্কুলের গেটে লেখা রেনি ডের ছুটি আজ। সেকি আনন্দ, তখন আমরা বন্ধুরা মিলে ফুটবল ক্রিকেট খেলায় মেতে উঠতাম ঐ বৃষ্টির মাঝেই। কত যে অসুখ এভাবে বাধিয়েছি তার হিসাব নেই। আমরা আসলে সেই সময়কার ছেলেপেলে, যারা কিনা বল নর্দমাতে পড়ে গেলেও বল উঠিয়ে দুটো ড্রপ দিয়ে আবারো খেলা শুরু করতাম। এভাবেই অতিবাহিত করেছিলাম, বর্ষাকালের দিনের ছেলেবেলার শৈশব। যা এখনো আমাকে ভাবায়।
তৃতীয় অতিথিঃ @selinasathi1
ভেরিফাইড সদস্যঃ আমার বাংলা ব্লগ
মতামতঃ
ছোটবেলায় এরকম বর্ষাকালে মূলত আমরা বন্ধু বান্ধবী সকলে মিলে মাঠে খেলতে যেতাম আর মাঝে মাঝে পুকুরে গোসল করতে যেতাম। তবে আমি সাঁতার পারতাম না। একবার সেকি অবস্থা, বৃষ্টিতে ভিজে আমরা খেলার পরে অবশেষে পুকুরে গোসল করতে গিয়েছিলাম, তাও আবার বন্ধুদের কথা শুনে। আমি আসলে পুকুরে গোসল করতে গিয়ে পুকুরের কিনারায় ছিলাম, তবে চোর পুলিশ খেলাতে কোন কারণে হঠাৎই পানিতে ডুবে যাই। সেসময় আমার অন্য এক বন্ধু বুঝতে পেরেছিল আমি পানিতে ডুবে গিয়েছিলাম, অতঃপর সবাই মিলে আমাকে টেনে তুলেছিল। যদিও আমি এই ঘটনা বাসায় কাউকে বলিনি, তবে পরবর্তীতে আমার এক বান্ধবীর মাধ্যমে কলা গাছের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে সাঁতার শিখে যাই। তাছাড়া কাগজের নৌকো বানানো, বন্ধুরা মিলে হৈচৈ এসব ঘটনা আসলে শৈশবের বর্ষার দিনের স্মৃতিমধুর ঘটনা।
চতুর্থ অতিথিঃ @ah-agim
ভেরিফাইড সদস্যঃ আমার বাংলা ব্লগ
মতামতঃ
আমরা তখন ক্লাস ফোরে পড়ি সম্ভবত, বর্ষার দিনে স্কুলে যাওয়ার মজাই ছিল আলাদা। যেহেতু বর্ষার দিনে গ্রামের সৌন্দর্য থাকে আলাদা, তাছাড়া চতুর্দিকে নানা রকমের ফুল ফোটে। আমার খুব ভালোভাবে মনে আছে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে, এরকম বর্ষার দিনে স্কুলে গিয়েছিলাম। পথিমধ্যে কদম ফুলের গাছ দেখে আমাদের কদম ফুল নেওয়ার খুব ইচ্ছে জেগে ছিল, অতঃপর আমার এক বন্ধু গাছে উঠেছিল এবং গাছ থেকে কদম ফুল পেড়ে দিয়েছিল, তবে হঠাৎই বৃষ্টি আসার কারণে সে দ্রুত গাছ থেকে নামতে গিয়ে তার প্যান্ট ছিঁড়ে যায়। অবশেষে আমরা বৃষ্টির ভিতরেই খুব দ্রুত স্কুলে চলে আসি। স্কুলের ক্লাস রুমে ঢোকার পরে, তখন আমাদের ইংরেজি স্যার এসেছিল, আমাদের সবাইকে পড়া ধরেছিল, আমরা ইংরেজিতে আগে থেকেই একটু দুর্বল ছিলাম, ঐদিন কেউ পড়া দিতে পারেনি, সবাইকেই সামনে ডাকছিল এবং সবাইকে স্যার পিটিয়েছিল। তবে যখন আমার বন্ধুকে ডেকেছিল, আমার বন্ধু বলেছিল স্যার আমার প্যান্ট ছিঁড়ে গিয়েছে, যার কারণে সামনে যেতে পারছি না, অবশেষে স্যার তাকে আর ডাকেনি এবং মারেনি। অতঃপর স্যার ক্লাস থেকে যাওয়ার পরে, আমরা যখন আমার বন্ধুর কাছে গিয়েছিলাম, তখন আমাদের বন্ধু বলল আজ যদি তোদেরও প্যান্ট ছিঁড়ে যেত, তাহলে তোরাও স্যারের মার খাওয়ার হাত থেকে বেঁচে যেতি।
তাৎক্ষণিক অতিথি ও শ্রোতার মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
পুরস্কারের স্পন্সর কমিউনিটির প্রতিষ্ঠাতা @rme দাদা
মূলত এভাবেই আয়োজন করা হয়েছিল এবিবি উন্মুক্ত আড্ডা। আমাদের চিন্তাধারা প্রতিনিয়তই ব্যতিক্রম, তাই সব ব্যতিক্রম চিন্তা-ভাবনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই প্রতিনিয়ত সামনের দিকে। আশাকরি আমাদের সঙ্গে সকলেই থাকবেন, এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
ব্যস্ততার কারণে রবিবারের উন্মুক্ত আড্ডায় উপস্থিত থাকতে পারিনি। তবে আপনার পোস্ট পড়ে খুবই ভালো লাগলো ভাইয়া। অতিথিরা অনেক সুন্দর করে নিজেদের অনুভূতি তুলে ধরেছিলেন। বৃষ্টি ভেজা দিন মানেই ছোটবেলার অনেক স্মৃতি মনের মাঝে উকি যায়। ভাইয়া আপনার এই পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
শৈশবে বর্ষাকাল নিয়ে কিন্তু আমাদের সবার জীবনেই অনেক স্মৃতিময় দিন রয়েছে। আর অতিথিদের কাছ থেকে তাদের স্মৃতিচারণ মূলক কথাগুলো জানতে পেরে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। সবাই অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে পুরোটা আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। সবার মতামত আমার কাছে কিন্তু অনেক বেশি ভালো লেগেছে। ভাইয়া আপনি অনেক সুন্দর করে এটা সবার মাঝে উপস্থাপন করেছেন। যারা উপস্থিত থাকতে পারেনি এখানে, তারা কিন্তু পুরো পোস্ট পড়লে ভালোভাবেই পুরো টা জেনে নিতে পারবে।
বেশ কিছুদিন যাবৎ নানা সমস্যায় থাকায় কাজ হতে কিছুটা বিমুখ হয়ে পড়েছিলাম। তবে গতকাল যখন দেখলাম যে এবারের রবিবারের আড্ডার উম্মুক্তো পর্বে খুব সুন্দর একটি বিষয় কে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু করা হয়েছে তখন কিন্তু লোভ টা আর ধরে রাখতে পারিনি। কিছু বলার জন্য উদগ্রীব ছিলাম। আর প্রিয় শুভ ভাইও আমাকে সেই সুযোগটুকু করে দিয়েছেন।তাই সকল কে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই আমাকে একটু সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
আপনার গল্প আমার কাছেও বেশ ভালো লেগেছে এবং কেননা আপনি অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে বলেছেন, আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল।
প্রতিবারের মতো গতকালকের উন্মুক্ত আড্ডাডি আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছিলো। যেহেতু বিষয়টি উন্মুক্ত তাই যে কেউ আলোচনা করতে পারেন এই বিষয় সম্পর্কে। চার জনের অনুভূতি আমার বেশ ভালো লেগেছিলো। আপনি আজকে আবারো গতকালকের আড্ডাটি সাজিয়ে লিখে আমাদের সাথে শেয়ার করলেন ভালো লাগলো।
এজ রবিবারের উন্মুক্ত আড্ডা ভীষণ ভালো লেগেছে। এই বর্ষায় সকলের বর্ষা নিয়ে বলা স্মৃতি এক নস্টালজিয়ায় ডুবিয়ে ফেলেছিল। নিজের কিছু ছেলেবেলার স্মৃতি এই সুযোগে বলতে পেরে ভীষণ ভালো লেগেছে। সকলের সাথে গল্প করতে ভীষণ ভালো লাগে। আমার বাংলা ব্লগ এমন একটি নিজের পরিবারে পরিণত হয়েছে যেখানে একটি সপ্তাহ আড্ডায় না আসতে পারলে মনখারাপ হয়।
আপনার জীবনের ছেলেবেলার গল্পের সঙ্গে, আমার জীবনের ছেলেবেলার গল্পের কিছুটা সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিলাম, বেশ দারুণ বলেছেন আপনি।
সত্যিই আমাদের ছেলেবেলাগুলো যেন একরকম। আজ কত কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমরাও বদলে গেছি সময়ের হাত ধরে। তবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এই বার্তাটুকুই রেখে যেতে চাই।
https://x.com/sharifShuvo11/status/1807722716809875597?t=aGO3JUzcW3Za2MROIJ34rQ&s=19
বরাবরের মতো গতকালকেও বেশ উপভোগ করেছি পুরোটা সময়। তাছাড়া গতকালকের আড্ডার টপিকটা কিন্তু দারুণ ছিলো। অতিথিরা বর্ষাকালকে ঘিরে দারুণভাবে শৈশবের স্মৃতিচারণ করেছেন। এককথায় বলতে গেলে বেশ সাবলীলভাবে কথা বলেছেন অতিথিরা। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, অনেকদিন পর রবিবারের আড্ডায় গিভওয়ে জিততে পেরেছি। যাইহোক এতো চমৎকার ভাবে এই পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
গিভওয়ে জেতা অনেকটাই কঠিন বিষয়, তারপরেও ভালো লেগেছে আপনি দিতেছেন এটা জেনে।
রবিবারের আড্ডা মানেই আলাদা রকমের অনুভূতি। তবে এবারের আড্ডার টপিক দারুন ছিল। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই বৃষ্টির দিনের অনেক স্মৃতি রয়েছে। অতিথিদের কথা শুনে অনেক ভালো লেগেছে। ভাইয়া আপনি অনেক সুন্দর করে প্রতিটি বিষয় তুলে ধরেছেন এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
গতকালকে আমার কাছে সময়টা বেশ ভালই কেটেছে এবং সবার মজার মজার গল্প শুনেছি।
হ্যাংআউটের মত রবিবারের আড্ডাটা অনেক জমে উঠেছে আর রবিবারের আড্ডা মানে অন্যরকম একটি অনুভূতি। আড্ডার অতিথিরা দারুণভাবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন সত্যিই অসাধারণ ছিল। সেই সাথে আপনার দারুন উপস্থাপনা। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া পোস্টটি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।