অনু গল্প-অপরিচিতা||
আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।
বন্ধুরা, কেমন আছেন? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। অনু গল্প লিখতে আমার ভালো লাগে। যখন সময় পাই তখন অনু গল্প লিখি। আজকে আমি নতুন একটি গল্প শেয়ার করবো। আর সেই অনু গল্পের নাম দিয়েছি অপরিচিতা। তো বন্ধুরা চলুন আমার লেখা অনু গল্পটি পড়ে নেয়া যাক।
অনু গল্প-অপরিচিতা:
অনেক বছর পর আবারো সেই অপরিচিতার সাথে দেখা হয়ে গেল রাহাত সাহেবের। কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। এর মাঝে রাহাত সাহেব অপরিচিতাকে অনেক খুঁজেছে। কিন্তু কোথাও খুঁজে পায়নি। ঘটনাটি ঘটেছিল প্রায় পাঁচ বছর আগে। বৃষ্টিভেজা কোন এক দিনে রাহাত সাহেব প্রথম অপরিচিতা সেই মেয়েটিকে দেখেছিল। মেয়েটির নাম জানে না সে। এমনকি কোন ঠিকানাও জানেনা। দূর থেকে মেয়েটিকে দেখে ভালোবেসে ফেলেছিল। মেয়েটির মায়াবী মুখের মায়ায় পড়েছিল। মেয়েটি যখন দ্রুত রিক্সা থেকে নেমে যাচ্ছিল তখন রাহাত তার পিছু পিছু যাচ্ছিল। মেয়েটি রিকশা থেকে নেমে দ্রুতই বাসে উঠে পড়ে। তাই রাহাত আর তাকে কিছু বলতে পারেনি।
এরপর রাহাত সেই রিক্সায় উঠে পড়ে। রাহাতের কোথাও যাওয়ার বড্ড তারা ছিল। তাই সে দ্রুতই রিক্সায় গিয়ে বসে। রিক্সায় গিয়ে বসে দেখে মেয়েটি তার ডায়েরি রিক্সায় ফেলে চলে গেছে। হয়তো তাড়াহুড়ার কারণে নিতে ভুলে গেছে। ডায়েরির পাতা খুলে রাহাত যখন লেখাগুলো পড়ছিল তখন অন্য রকমের ভালো লাগা কাজ করছিল। মেয়েটির লেখা কবিতাগুলো রাহাতের খুবই ভালো লেগেছিল। রাহাত দেখতে দেখতে বেশ কিছু লিখা পড়ে ফেলেছে। এরই মাঝে রিক্সাওয়ালার ডাকে তার ঘোর কেটেছে। নিজের গন্তব্যে চলে এসেছে রাহাত। রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে চলে যায় নিজের প্রয়োজনীয় কাজে। প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করার পর যখন বাড়ি ফিরে তখন থেকেই আবারো ডায়েরি নিয়ে বসে পড়ে।
ডায়েরির লেখাগুলো যেন কারো জীবনের কথা বলছে। ডায়েরির কথাগুলো যেন অপরিচিতাকে বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে। তার চিন্তাধারা আর তার লেখার ধরন রাহাতকে বারবার মুগ্ধ করছে। মেয়েটিকে রাহাতের খুবই ভালো লেগেছিল। আর যখন বারবার তার ডায়েরির লেখাগুলো পড়ছিল তখন সেই ভালোলাগা আরো বেড়ে গিয়েছিল। এভাবে কেটে যায় পুরো দিন। পরেরদিন সকালবেলায় আবারও রাহাত সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। রাহাত ভেবেছিল হয়তো মেয়েটি আবারও আসবে। অনেকক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার পর রাহাত মন খারাপ করে ফিরে আসে। কারণ তার সেই অপরিচিতা সেই মেয়েটি আসেনি। এভাবে বেশ কয়েকদিন রাহাত সেখানে গিয়ে ফিরে আসে। মেয়েটির দেখা পায় না। রাহাতের ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে এখনো রাহাত ডায়েরির পাতা খুলে মেয়েটির লেখা কবিতা গুলো পড়ে আর মেয়েটিকে অনুভব করে। কেটে যায় বেশ কিছু বছর। হঠাৎ করে আবারো সেই অপরিচিতার দেখা পায় রাহাত। কিন্তু তাকে এই অবস্থায় দেখে মোটেও ভালো লাগছিল না তার।
এলোমেলো চুল, চোখের নিচে কালি পড়েছে তার। পাশে বসা ছোট্ট শিশুটির মলিন মুখ দেখে রাহাতের ভীষণ খারাপ লাগে। রাহাত যখনই তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিল তখনই মেয়েটি নিশ্চুপ হয়ে আনমনে অন্য কিছু ভাবছিল। এরপর সেখানে চলে আসে মেয়েটির বড় ভাই। মেয়েটির বড় ভাইয়ের কাছ থেকে রাহাত জানতে পারে মেয়েটির সামনেই এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে তার স্বামী। তারপর থেকেই মেয়েটি একদম নিশ্চুপ হয়ে গেছে। স্বামীর মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি সে। এমনকি ধীরে ধীরে মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে তার। এই কথা শুনে রাহাতের মন খারাপ হয়ে যায়। একটা সময় ক্ষনিকের দেখা সেই অপরিচিতা মেয়েটিকে রাহাত ভালোবেসে ফেলেছিল। তবে সময় বদলে গেছে আর ভালোবাসাও বদলে গেছে। কিন্তু তার জীবনের এই করুন পরিণতি মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল রাহাতের। এভাবেই হয়তো হাজারো অপরিচিতা আমাদের জীবনে আসে আবার হারিয়ে যায়। সময়ের ব্যবধানে কখনো তাদের সাথে দেখা হয় কখনো বা অপরিচিতাই থেকে যায়।
🥀ধন্যবাদ সকলকে।🌹
আমি মো: স্বপন । আমি একজন বাংলাদেশী। ব্যক্তিজীবনে আমি আইন পেশার সাথে জড়িত। এছাড়াও ফটোগ্রাফি, পেইন্টিং ও ব্লগিং করা হচ্ছে আমার অন্যতম শখ। আমার স্টিমিট আইডি নাম @shopon700। আমি ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে স্টিমিট ব্লগিং শুরু করি। আমি গর্বিত, কারণ আমি আমার বাংলা ব্লগের একজন ভেরিফাইড ব্লগার।
https://x.com/Monira93732137/status/1809116230995050637
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
খুব সুন্দর করে একটি অনু গল্প লিখে আমাদের মধ্যে শেয়ার করলেন। গল্পটা আমার খুব ভালো লাগলো। আসলে মাঝে মাঝে আমাদের চারিপাশে এমন অনেক ঘটনা দেখা যায়। পাঁচ বছর আগে একটি মেয়েকে দেখে ভালো লেগেছে। পরে তার পিছু নিয়ে ধরতে না পেরে সে রিক্সায় মেয়েটির ডায়েরি পেয়ে ডায়েরির ভিতরের লেখাগুলো পড়ে অপরিচিতা মেয়েটির প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পাঁচ বছর পর আবার যখন অপরিচিতা মেয়েটিকে অন্য রূপে খুজে পেল। এরকম হাজারও ভালোবাসার গল্প আমাদের চারপাশে রয়েছে।
কিছু কিছু মানুষের সাথে আমাদের হঠাৎ করেই দেখা হয়। আবার হঠাৎ করে হারিয়ে যায়। কোন একদিন চলার পথে আবারো দেখা হয়ে যায় আপু। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য প্রকাশ করার জন্য।
আপনার লেখা আজকের এই সুন্দর অনুগল্পটা পড়তে আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। তবে এই অনুগল্পের শেষটা যে এরকম হবে এটা একেবারে কল্পনাই করিনি। ভেবেছিলাম গল্পের শেষে হয়তো সুন্দর কিছু দেখব। যে মেয়েটাকে রাহাত এক পলকে দেখেই ভালোবেসে ফেলেছিল। কয়েক বছর পরে তার এরকম অবস্থা, আসলেই এটা মেনে নেওয়া যায় না। সেই মেয়েটার হাজবেন্ডের মৃত্যুর কথাটা শুনে একটু খারাপ লেগেছে। খুব অল্প বয়সে সে নিজের স্বামীকে হারিয়েছে। অনেক সুন্দর করে লিখেছেন আপনি গল্পটা।
আমার লেখা অনু গল্প আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম আপু। মেয়েটির এরকম পরিণতি হবে এটা কেউ জানতো না আপু। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।