অনু গল্প- মায়াবিনী||

in আমার বাংলা ব্লগ9 days ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।


বন্ধুরা, কেমন আছেন? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি একটি অনুগল্প আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো। আর গল্পটির নাম দিয়েছি মায়াবিনী। তো বন্ধুরা চলুন আমার লেখা গল্পটি পড়ে নেয়া যাক।

অনু গল্প- মায়াবিনী:

woman-6468147_1280.jpg
source


ছোটবেলা থেকেই সুজন নুপূরকে ভালোবাসতো। নুপূর সম্পর্কে তার মামাতো বোন ছিল। মনে মনে সুজন নুপূরকে অনেক পছন্দ করতো। কিন্তু কখনো বলতে পারেনি। সময়ের সাথে সাথে যখন তার ভালোলাগা বেড়ে গেল তখন হঠাৎ একদিন নুপূরকে তার মনের কথা জানালো। নুপূরও মনে মনে সুজনকে পছন্দ করতো কিন্তু বলতে পারিনি। এরপর থেকে মাঝে মাঝেই তাদের কথা হতো। চিঠির আদান-প্রদান হতো। এরপর থেকে মাঝে মাঝেই সুজন তার নানি বাড়িতে বেড়াতে আসতো। সুজনের মা সেভাবে কিছু বুঝতে পারতো না। সুজন কখনো মায়ের সাথে বেড়াতে আসতো কখনো একা একাই বেড়াতে আসতো। নুপূরকে দেখাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য। এভাবে কেটে যাচ্ছিল তাদের ভালোবাসার দিনগুলো। অন্যদিকে নুপূরের মা সুজনকে অনেক আদর করতেন। দুজন যেহেতু একই ক্লাসে পড়তো তাই নুপূরের মা ভাবতেন হয়তো তারা পড়াশোনার বিষয়ে আলোচনা করে। কিন্তু আসলে তো তারা একে অপরকে ভালোবাসতো। যেই ভালোবাসায় কোনো খাদ ছিল না। শৈশব থেকে যখন তারা কৈশরে পদার্পণ করেছিল তখনই তাদের দুটি অবুঝ মনে ভালোবাসার জন্ম হয়েছিল। যেই ভালোবাসা ছিল একদম নিষ্পাপ।

নুপূরের মায়াবী চোখের মায়ায় পড়েছিল সুজন। তাই নুপূরকে সে মায়াবিনী নামে ডাকতো। মায়াবিনি নামেই চিঠি পাঠাতো। আর প্রিয় মানুষটির চিঠির প্রত্যাশা করতো। নুপূরের এক প্রতিবেশী বোন সবকিছুই জানতো। সুজন যখন নুপূরের সাথে দেখা করার সুযোগ পেতো না তখন সেই মেয়েটির কাছে চিঠি দিয়ে চলে যেতো। তাদের চিঠির আদান-প্রদান বেশ ভালোভাবেই হতো। এরপর ধীরে ধীরে নুপূরের মায়ের বেশ সন্দেহ হয়। হঠাৎ একদিন নুপূরের বইয়ের ভেতরে একটি চিঠি পেয়েছিল তার মা। নুপূরের মা বুঝতে পারছিল না কি করবে। এরপর বাধ্য হয়ে নুপূরের বাবাকে সবকিছু জানায়। নুপুরের বাবা রেগে গিয়ে নিজের মেয়েকে অনেক শাসন করে। এমনকি তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সুজনের সাথে যোগাযোগ করা বন্ধ হয়ে যায় নুপূরের। অন্যদিকে সুজন বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছিল নুপূরের সাথে যোগাযোগ করার। কিন্তু কোন ভাবে কিছু করতে পারছিল না। অবশেষে নুপূরের এক মামাতো ভাইয়ের মাধ্যমে তার সাথে আবার যোগাযোগ হয়। দেখতে দেখতে তাদের পরীক্ষা চলে আসে। পরীক্ষার আগে দুজনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। কারণ তাদের দেখা করা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

একদিকে যেমন পরীক্ষা ঘনিয়ে এসেছিল অন্যদিকে নুপূরের বাবা নুপূরের জন্য ছেলে দেখা শুরু করেছিলেন। এমন সময় ভালো একটি ছেলের সন্ধান পান উনারা। নুপূর হঠাৎ করে যখন এই কথা সুজনকে জানায় তখন সুজন ভীষণ কষ্ট পায়। এরপর নুপূর অনেকবার সুজনকে বলেছিল তাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে। কিন্তু কোথাও যেন একটা বাধা থেকেই গিয়েছিল। সুজন পারছিল না নুপূরের এই সিদ্ধান্তে সম্মতি জানাতে। পারছিল না নুপূরকে ভুলে যেতে। দেখতে দেখতে পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। অন্যদিকে পরীক্ষার কয়েক দিন পরে পাত্রপক্ষ নুপূরকে দেখতে আসে। সেদিন নুপূরের ভীষণ মন খারাপ ছিল। তার মামাতো ভাইয়ের ফোন থেকে সুজনকে ফোন করে এবং বলে তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আর পাত্রপক্ষ তাকে আংটি পরিয়ে গিয়েছে। এই কথা শুনে সুজনের অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু নুপূরকে কিছু বুঝতে দেয় না। এরপর সুজন বলে আমাকে কিছুটা সময় দাও দেখি আমি কি করতে পারি।

অন্যদিকে সুজনের বাড়িতে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। সুজনের মা সবকিছু জানতে পারে। সুজনের মা বলে তার বাবা যদি এসব বিষয়ে জানতে পারে তাহলে তার মায়ের সমস্যা হয়ে যাবে। কারণ নুপূর ছিল তার ভাইয়ের মেয়ে। এবার সুজনের উপর নজরদারি শুরু হয়ে যায়। একদিকে সুজন নিজের ভালোবাসার মানুষটি হারাতে চলেছে অন্যদিকে নিজের মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুই করতে পারছিল না। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। দেখতে দেখতে নুপূরের বিয়ের দিন ঘনিয়ে এসেছিল। বিয়ের দিন সকালবেলায় নুপূর সুজনকে ফোন করেছিল। নুপূরের সেদিনের কথাগুলো সুজনকে আজও কাঁদায়। নুপূর বলেছিল আজ থেকে মনে করবে আমি মৃত। আমি তোমাকে ভালোবেসে তোমার হাত দুটো ধরে সারা জীবন বাঁচতে চেয়েছিলাম। আর আজ বুঝে গেছি আমার ভালোবাসা মিথ্যে ছিল। সুজন সেদিন সত্যি নিরুপায় ছিল। নুপূরকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার মত উপায় তার ছিল না। একদিকে মায়ের চোখের জল অন্যদিকে প্রিয় মানুষটিকে হারানোর কষ্ট সুজনকে মানসিকভাবে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিল।

এরপর কেটে গিয়েছে কয়েকটা বছর। হঠাৎ একদিন চলার পথে সুজনের সাথে নুপূরের দেখা হয়। কিন্তু কেউ কারো সাথে কথা বলতে পারেনি। নুপূর তার স্বামীর সাথে যাচ্ছিল। কোলে তার ফুটফুটে একটি বাচ্চা। নুপূর মায়াবী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। সুজন কিছুই বলতে পারছিল না। শুধু তার মায়াবীনিকে দেখেই যাচ্ছিল। যখন এতদিন পর সুজনের সাথে নুপূরের দেখা হয়েছিল তখন সুজন মানসিকভাবে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল। তার ভালোবাসার মায়াবিনীকে হারিয়ে যেমন কষ্ট পেয়েছিল তেমনি অনেকদিন পর তার মায়াবিনীকে দেখে হৃদয়ের কষ্টটা আরো বেড়ে গিয়েছিল। সুজন আজও তার প্রথম ভালোবাসা ভুলতে পারেনি। সুজন আজও তার মায়াবিনীর জন্য কাঁদে। হয়তো সারা জীবনেও তাকে কখনো ভুলতে পারবেনা। হয়তো সুজনের মনের সেই ভালোবাসা আজও রয়েই গেছে। কিন্তু তার প্রিয় মায়াবিনী অন্য কারো হয়ে গেছে।

🥀ধন্যবাদ সকলকে।🌹


আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20240504_102129.jpg

আমি মো: স্বপন । আমি একজন বাংলাদেশী। ব্যক্তিজীবনে আমি আইন পেশার সাথে জড়িত। এছাড়াও ফটোগ্রাফি, পেইন্টিং ও ব্লগিং করা হচ্ছে আমার অন্যতম শখ। আমার স্টিমিট আইডি নাম @shopon700। আমি ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে স্টিমিট ব্লগিং শুরু করি। আমি গর্বিত, কারণ আমি আমার বাংলা ব্লগের একজন ভেরিফাইড ব্লগার।


Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 9 days ago 

আপনার গল্পটা পড়ে সুজনের জন্য সত্যি অনেক খারাপ লাগলো। আসলে ভাইয়া প্রথম ভালোবাসাকে কখনো ভুলা যায়। আসলে ভাইয়া অনেক দিন পরে প্রিয় জনের সাথে দেখা হলে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। যাই হোক আপনার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে।

 8 days ago 

অনেকদিন পর ভালোবাসার প্রিয় মানুষের সাথে দেখা হলে অনেকটা খারাপ লাগে। কিন্তু যখন জানতে পারা যায় প্রিয় মানুষটা ভালো আছে তখন ভালোই লাগে। সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে জানাচ্ছি ধন্যবাদ।

 9 days ago 

জীবনের প্রথম ভালবাসা প্রথম স্মৃতি সেটা না যায় ভুলে থাকা,না যায় জীবন থেকে মুছে ফেলা। গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো, বিশেষ করে সুজন নুপুর কে মায়াবিনী বলে ডাকতো নুপুরের মায়াবী দুটি চোখের সৌন্দর্য দেখে। আর ভালোবাসার মানুষ যদি অনেক দিন পর সামনে আসে তাহলে তো মনটা খারাপ লাগার স্বাভাবিক ভালো লাগলো আপনার অন্য গল্প টি পড়ে ।

 8 days ago 

এটা একদম ঠিক আপু জীবনের প্রথম ভালবাসার মানুষকে কখনোই ভোলা যায় না। এত সুন্দর ভাবে গুছিয়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অসংখ্য ধন্যবাদ।

 9 days ago 

এমন অনেক সুজন নূপুরের প্রথম ভালোবাসা অনিচ্ছাতেও হারিয়ে যায়! দোয়া রইলো যেন সকল সুজন -নূপুররেরাও পরবর্তী জীবনে ভালো জীবনসঙ্গী পায়, ভালো থাকে যেন সকলের ভালোবাসার মানুষ!

 8 days ago 

ঠিক বলেছেন আপু এমন অনেক ভালোবাসা শেষ হয়ে যায়। পরিস্থিতিতে পড়ে প্রিয় মানুষটিকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।

 9 days ago 

জীবনের প্রথম ভালোবাসার মানুষটিকে হয়তো কখনো ভুলা যায় না। তাইতো সুজন আজও তার ভালোবাসার মানুষটিকে মনে রেখেছে। আর হঠাৎ করে তাদের দেখা হয়ে যাওয়াতে কষ্ট পেয়েছে। আপনার লেখা গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লেগেছে।

 8 days ago 

জীবনের প্রথম ভালোবাসা কখনোই ভুলা যায় না। তাই সুজন তার ভালোবাসার মানুষটিকে ভুলতে পারেনি। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।

 9 days ago 

ভাইয়া আপনার গল্পটি পড়ে সুজনের জন্য আমার অনেক খারাপ লেগেছে। আসলে পরিস্থিতি আমাদেরকে অনেক কিছুই বাধ্য করে। সুজন এক কঠিন সমস্যায় পড়ে যায়। সে কাকে রক্ষা করবে মাকে নাকি মায়াবিনী কে। সবচেয়ে বড় কথা হলো প্রথম প্রেম কখনোই ভুলা যায় না। সুজন যেমন মায়াবিনিকে ভুলতে পারেনি ঠিক তেমনি মায়াবিনি হয়তো সুজনকেও ভুলতে পারিনি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর অনুগল্প আমাদের সাথে শেয়ার করে নেয়ার জন্য।

 8 days ago 

এটা অবশ্য ঠিক বলেছেন আপু পরিস্থিতি অনেক কিছু করতে বাধ্য করে। সুজনের জীবনেও এমনটাই হয়েছিল আপু। মন্তব্য করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 8 days ago 

আসলে ভাই কিছু কিছু ভালোবাসা আছে মানুষকে সারাজীবন কষ্ট করতে হয়। যেমনটি সুজন এবং নুপুরের প্রেম। তবে তারা দুইজন আত্মীয়। চেষ্টা করলে তারা দুজন পালিয়ে বিয়ে করতে পারতেন। আসলে প্রেম করলেও অনেক সময় ফ্যামিলি কথা চিন্তা করতে হয়। আর এখন সুজন তার প্রিয় মানুষকে হঠাৎ করে দেখলেও তার কাছে কষ্ট লাগবে। চমৎকার একটি গল্প লিখে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 8 days ago 

কিছু ভালবাসা এভাবেই শেষ হয়ে যায়। সুজন এবং নুপুরের ভালোবাসা শেষ হয়ে গিয়েছিল। ধন্যবাদ আপু মন্তব্য করার জন্য।

 7 days ago 

এই গল্পটি নিঃসন্দেহে একটি হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প। সুজন ও নুপূরের নিষ্পাপ প্রেম, তাদের একে অপরের প্রতি গভীর টান, এবং পরিশেষে সমাজ ও পরিবারের কারণে তাদের বিচ্ছেদ, সবকিছুই খুব মর্মস্পর্শীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই গল্পে তাদের প্রেমের নিষ্ঠা ও ত্যাগ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় কীভাবে কখনও কখনও সমাজের প্রতিকূলতার সামনে ভালোবাসা হেরে যায়। গল্পটি পড়ে সত্যিই হৃদয় ভেঙে যায়। সুজন ও নুপূরের প্রতি পাঠকের সহানুভূতি ও ভালোবাসা জাগ্রত হয়। এমন ভালোবাসার গল্প চিরকাল মনে থাকবে।

[@redwanhossain]

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 56240.84
ETH 2996.70
USDT 1.00
SBD 2.21