ভিটেমাটি ছারা পরিবার
আমার বাংলা ব্লগ বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই। আশা করছি ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি আপনাদের আশীর্বাদ ও সৃষ্টিকর্তার কৃপায়।
আমি @shapladatta বাংলাদেশ থেকে। আমার বাংলা ব্লগের একজন ভেরিফাই নিয়মিত ইউজার। আমি গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সঙ্গে যুক্ত আছি।
ফেসবুকে এক ভাইয়ের পিঠার ফটোগ্রাফি পোস্ট দেখে পিঠা গুলো খুবই ভালো লাগলো এবং ওনার কাছে জানতে চাইলাম পিঠার নাম কি তখন ওনি বল্লেন মানিকগঞ্জের বিখ্যাত পিঠা সংসার পিঠা।পিঠা রেসিপি আপনাদের সাথে ভাগও করে নিলাম তবে মানিকগঞ্জ নামটা শুনে একটা সত্যি ঘটনা মনে পড়ে গেলো আর সেজন্য আজকের এই পোস্ট লিখতে বসালাম।
আমরা যখন মামার বাড়িতে যেতাম কালিপূজায় তখন দেখতাম যে মামার বাড়িতে সব আত্নীয় এক জায়গায় মানে মায়ের বাবা,কাকা,জেঠা,পিসি,মাসি,মামা সবাই এক গ্রামে বসবাস। যখন বুঝতে শিখলাম তখন খুবই আগ্রহ বাড়তে থাকলো যে সবার আত্নীয়দের আলাদা আলাদা বাড়ি থাকে কিন্তুু মামা বাড়িতে সবাই এক জায়গায় কেন।
তারপর লোমহর্ষক ঘটনা জানতে পেলাম।আমরা জানি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা আমাদের শস্য শ্যামলা আমাদের দেশও ভাষা আমাদের মাতৃভাষা বাংলা পেয়েছি আর এই যুদ্ধে আমাদের কে ভারত সাহায্য করেছে বলেই এই স্বাধীনতা পেয়েছি। ভারতের প্রতি আমাদের দেশ চিরকৃতজ্ঞ আমরা বাংলাদেশীরা কৃতজ্ঞ। মুক্তিযোদ্ধারা কখনোই এই অবদান কখনোই অস্বিকার করে না করবে না। ইতিহাস কথা বলে যতোই অপশক্তি মাথাচারা দিয়ে ৭১ কে কবর দিতে চাক না কেন এই অপশক্তির পতন হইবেই।
তো ১৯৭১ সালে সব থেকে বেশি আক্রান্ত হয় ঢাকা।সারাদেশে আক্রমণ চালালেও ঢাকা সব থেকে বেশি এবং আগে আক্রান্ত হয় পাকবাহীনিদের হাতে।আমার মায়েদের বাড়ি ছিলো ঢাকা মানিকগঞ্জে।গাইবান্ধায় আমার মায়ের মামার বাড়ি আর ভয়ে আমার দাদুকে মানিকগঞ্জ থেকে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে আসে এবং তখন আমার দাদু একা না এসে তার ভাই বোনদের কে সাথে নিয়ে আসে এবং শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করতে থাকে।
দাদুরা বনেদি পরিবার ছিলো। পুকুর,গরুর গাড়ি,অনেক জমিজমা এবং কাঠের দোতলা বাড়ি রেখে এসেছিলো যে যুদ্ধপরবর্তী সময় আবার যাবে আর সেই ভাবনা থেকে বাড়িতে তাদের কাজের মুসলিম এক লোককে রেখে এসেছিলো। বাড়ির বড়ো বড়ো সব সিন্দুক বাড়িতে সব ঠাকুরের বিগ্রহ সব দিঘিতে ডুবিয়ে দিয়ে আসে।আশা ছিলো যুদ্ধ শেষ হলে আবারও নিজের ভিটে মাটিতে ফিরবে।
দাদুরা পরিবার পরিজন নিয়ে আসার সময় শুরু কিছু স্বর্ণালংকার নিয়ে এসেছিলো আর কিছু তাদের ঘরেই মাটির নিচে পুতে রেখে এসেছিলো।যুদ্ধ শেষ দেশ স্বাধীন কিন্তুু দাদুদের স্বাধীনতা কই কারণ যে মুসলিম কাজের বিশ্বস্ততার লোককে রেখে এসেছিলো বাড়িতে তিনি নিজেই দখল করে বসে আছে সব কিছু।
আর ফিরতে পারলেন না দাদু তার বাপ,দাদুর ভিটেমাটিতে।তারপর থেকে দাদুর জীবন যুদ্ধ শুরু। দাদু যে টাকাপয়সা নিয়ে এসেছিলেন সেগুলোর কিছু দিয়ে গাইবান্ধা শহরে এক টুকরো জায়গা কিনে পাইকারি মসলার দোকান দিয়েছিলো আর তারপর আস্তে আস্তে দাদু তার শ্বশুরের কাছেই জায়গা কিনে নিয়ে বাড়ি আলাদা করে বসবাস শুরু করে।এরকম অন্য আত্নীয়রাও এখানে যুদ্ধের সময় এসে তাদের ভিটেমাটি আর গিয়ে ফেরত না পেয়ে এখানেই বসবাস করতে থাকে।সেই থেকে সব আত্নীয় এখনো একই জায়গায় থাকে।
দাদুর দুই ভাই অসহায় হয়ে নিজেদের ভিটেমাটিতে ফিরতে না পেরে মনের দুঃখে ভারতে চলে গিয়েছিলো আর আমার দাদু ও আমার দাদুর আর এক ভাই বাংলাদেশ গাইবান্ধায় থেকে যায় শ্বশুর বাড়িতে।দাদু যখন যুদ্ধের সময় আসে তখন এক ছেলে ছিলো পরে আমার দাদুর চার মেয়ে এবং আরো দুই ছেলে মোট সাত ছেলে মেয়ে হয় এবং দাদুর ভাইয়ের তিন ছেলে ও তিন মেয়ে হয়।
কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ এই অবস্থা। বিশ্বস্ত কাজের লোক সুযোগে সৎ ব্যবহার করেছে।আর ফিরতে পারেনি বেইমান লোকটির জন্য নিজের ভিটেমাটিতে।
এভাবে অনেক বছর কেটে যায় এবং আমার মায়ের বিয়ে হয় আমার মামারা বড়ো হয়ে কেউবা ব্যাবসা আবার কেউবা পড়াশুনা করতে থাকে।এসবের মাঝে মায়ের জেঠাতো ভাই খুব সাহসী শিক্ষিত ছেলে সে কাগজ পত্র নিয়ে একদিন তাদের ভিটেমাটি উদ্দেশ্যে মানিকগঞ্জে যায় এবং সেখানে গিয়ে দখলদার বাড়ির সবাই কে জানায় তাদের কাগজপত্র আছে তারাই এই বাড়ি জায়গা জমির মালিক তাদের জায়গা তারা ফেরত চায়।
এতো বছর পর দখলদারদেরও বংশ বিস্তার হয়ে গেছে অনেক।অনেক বসতি উঠেছে। মায়ের জেঠাতে ভাইকে তারা প্রথমে আদর আপ্যায়ন করেছে এবং খুব ভালো ব্যাবহার দেখিয়ে আবারও বিশ্বাস অর্জন করেছে।রাতে থাকতে দিয়েছে এবং তারপর থেকে আর আজ অবদি সেই ছেলে বাড়ি ফেরেনি।অনেক খোজাখুজি অনেক কিছু পরেও তাকে আর পাওয়া যায় নি।
পাওয়া যাবেই বা কি করে তাতে তো তারা খুন করেছে এবং লাশ গুম করে ফেলেছে।আজ অবদি তার আর লাশেরও কোন হদিস মেলেনি।তারপর থেকে আর ভয়ে কেউ নিজেদের ভিটেমাটির উদ্দেশ্যে কেউ যায় নি।
এতো বছর পর যখন এই গল্পটি শুনেছিলাম তখন বুঝতে পারছিলাম স্বার্থের জন্য মানুষ থেকে পশুতে পরিনত হয় মানুষ। তখন বলতাম কি বোকা পুলিশ কি ছিলো না দেশে আইন কি ছিলো না দেশে কিন্তুু আজ এতে বছর পর সেই সোনার বাংলার বর্তমান অবস্থা দেখে বুঝতে পারছি কেন সেদিন তারা আইনের প্রয়োগে জায়গাজমি ফিরে পায়নি কেন সেই মামা ভিটেমাটির উদ্দেশ্যে গিয়ে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিলো।কেন আজকেও সে গুম হয়ে আছে।কেন তার লাশ আজও পায়নি। পরিবার তার লাশটা পেলেও শান্তনা দিতে পারতো।বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি এসবের উত্তর খুঁজে পেয়েছি।
বড্ড ভয় বড্ড ভয় কাজ করছে আমার বুকের ভীতরটা কেঁপে ওঠে এমন কিছু ভাবতে গেলে।
সৃষ্টিকর্তা তুমি রক্ষা করো এই কথাটা ছারা আর কোন ভাষা জানা নেই।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।আবারও দেখা হবে অন্যকোন পোস্টের মাধ্যমে।
সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।
টাটা
পোস্ট | বিবরণ |
---|---|
পোস্ট তৈরি | @shapladatta |
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং |
ডিভাইস | OppoA95 |
লোকেশন | বাংলাদেশ |
আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।
আসলে আপু বর্তমান টাকার জন্য মানুষ সব কিছু করতে পারে।আসলে যারা এমন কাজ করে তারা মানুষ নয় পশুর চেয়ে খারাপ। আপনার পোস্ট পড়ে লোকটির জন্য অনেক খারাপ লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর লিখেছেন।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করেছেন জন্য।
সোর্স
এতো ভয়াবহ কাহিনী শুনে আপু আমার খুব খারাপ লাগছে!মানুষ এতো নিষ্ঠুর হতে পারে?আসলে স্বার্থ ছাড়া দুনিয়া অচল। টাকার জন্য মানুষ সবকিছু করতে পারে। আপনার এরকম লহ শোক কাহিনী শুনে কিছু বলার ভাষা নেই আপু সমবেদনা জানানো ছাড়া।
সত্যি ভয়াবহ কাহিনীটি।
আমাদের বিবেক নষ্ট হয়ে গেছে আপু। কারন আমরা মানুষ কিন্তু আমাদের মাঝে সেই মনুষ্যত্ববোধ নাই। টাকার কাছে আমরা হেরে গেছি। বিক্রি করে ফেলেছি আমাদের বিবেককে। আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক খারাপ লাগলো আপু।
ঠিক বলেছেন বিবেক নষ্ট হয়ে গেছে আমাদের।
কাছের লোককেই সবসময় বেশি বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখা যায়। দূরের মানুষ তা আর এগুলো সুযোগ পায় না। তারা কাছে থেকে এমন বিশ্বাস অর্জন করে যে পরে যাতে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে। যাই হোক আপনার দাদুদের গল্প শুনে খুব খারাপ লাগলো। বিশ্বাস করতে গিয়ে নিজেদেরই ভিটামাটি ছাড়া হতে হল।
ঠিক বলেছেন কাছের মানুষই বিশ্বাসঘাতকতা করে বেশি।