অঞ্জনার অক্ষাঙ্খিত মৃত্যু 🥲
হ্যালো,
আমার ব্লগবাসী বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই। আমি খুব একটা ভালো নই তার একমাত্র কারণ বিদ্যুৎ। আমাদের এলাকায় এত বেশি ঝামেলা করছে বিদ্যুৎ যা কল্পনার বাইরে একটানা সাত দিন বিদ্যুৎবিহীন ছিলাম গতকাল রাত্রে এসেছে বিদ্যুৎ। দেখা যাক কয়দিন থাকে আবার এই বিদুৎ। আজকে আমি যা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব তাই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক অকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
ঘটনাটি বেশ কয়েক বছর আগের তবে প্রতিবছর এরকম বর্ষার দিনে আমার ঘটনাটি মনে পড়বেই। হঠাৎ মনে পড়ে গেল মেঘলা আকাশ ও রিমঝিম বৃষ্টির কারণে তাই আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিলাম ঘটনা।
আমাদের চারপাশে কত মানুষরূপী পশু থাকে তার জ্বলন্ত প্রমাণিত এই ঘটনাটি। আসলে মানুষ দিন দিন পরশুতে রূপান্তরিত হচ্ছে কাকে বিশ্বাস করবো আর কাকে করবো না এটি ভেবে পাওয়া কঠিন।
তো চলুন দেখা যাক ঘটনাটি কি।
আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। আমি যে রাস্তা দিয়ে স্কুল যাওয়া আসা করতাম সে রাস্তার ধারেই অঞ্জনা দিদিদের বাড়ি। আমার এক বান্ধবীর জেঠাতো দিদি অঞ্জনা। অঞ্জনা দিদিরা ছিল পাঁচ বোন এক ভাই। কখনো সে ভাবে কথা হয়নি ওনার সঙ্গে।ওনাদের বাড়ির সামন দিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করার সুবাদে দেখা হতো মাঝে মাঝে। উনি তখন জব করতেন ব্রাক এনজিওতে। উচ্চতায় ছয় ফুট হবে চিকন লিক লিকে দুধে আলতায় গায়ের রং। দেখতে বেশ সুন্দরী তবে অন্যান্য বোনদের থেকে একটু কম সুন্দর। উনার বিয়ে হয় ওনার এই অফিসের ম্যানেজারের সঙ্গে। তবে পর্বতীতে চাকুরির কারনে আলাদা আলাদা জায়গায় বদলি হয়।বিয়ের কিছু দিনের মাথায় একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। ভীষণ সুখী পরিবার ছিলেন। মাঝে মাঝে দেখতাম বর অঞ্জনা দিদিকে বাইকে করে বাবার বাড়িতে রেখে যেতেন। অঞ্জনা দিদি মূলত বাবার বাড়িতেই বেশি থাকতেন জবের কারণে। এরপর উনি আমাদের পার্শ্ববর্তী থানা সাদুল্লাপুরে বদলি হয়ে যান এবং সেখানেই জব করতে থাকেন।ও বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন।
দিনটি ছিল আষাঢ় মাস।রাত দিন ২৪ ঘন্টা রিমঝিম বৃষ্টি। চার দিকে থৈ থৈ করে শুধু জল আর জল। চাকুরী তো আর বৃষ্টি বাদল কিছুই মানে না তাদের দায়িত্ব পালন করতেই হয়। ব্রাক এনজিও তে উনি অফিসের কাজ করলেও নতুন বদলি হওয়ার কারণে উনি কিস্তির তুলতেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে। প্রতিদিনের ন্যায় সেদিনও বৃষ্টি বাদল মাথায় নিয়ে ছাতা নিয়ে বেরিয়েছিলেন কিস্তি নেয়ার উদ্দেশ্যে। হয়তো অফিসে আসার আগে তার ছোট্ট মেয়েটিকে আদর করেই বেরিয়েছিলেন মেয়ে কি জানতো মায়ের এটাই শেষ আদর। মা কি জানতেন এটাই তার মেয়ের কাছ থেকে শেষ বিদায়। মেয়েকে শান্তনা দিয়েই নিশ্চিত যেতেন হয়তো মেয়েকে বলতেন অফিস থেকে তো একটু কাজ শেষ করেই আসবো এরকম প্রতিদিন বলেই নিশ্চয়ই আসতেন ছোট মেয়েটির কাছ থেকে। অঞ্জনা কি জানতো আজকেই মেয়ের কাছও স্বামীর কাছে শেষ বিদায়।অঞ্জনা প্রতিদিনের ন্যায় কিস্তি ওঠানোর জন্য গিয়েছিলেন যারা লোন করেছেন তাদের বাড়িতে।ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে জীবন ও জীবিকার তাগিদে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছিল অঞ্জনা।
বেশ কয়েকটি বাড়িতে অঞ্জনা কিস্তির টাকা উঠিয়ে আরেকটি বাড়িতে গেছে। সেদিন বৃষ্টির পরিমাণটি কেন জানি একটু বেশিই ছিল ঘন কালো মেঘ আর বৃষ্টি এক সেকেন্ড যেন বৃষ্টি থামছিল না অনবরত বৃষ্টি পড়েই যাচ্ছিলো।অঞ্জনা এবার যে বাড়িতে কিস্তি উঠানোর জন্য গেছে একদম নিরিবিলি একটি বাড়ি কাউকে দেখতে না পেয়ে অঞ্জনা যখন ডাকছিল তখন ঘর থেকে বেরিয়ে এসে লোকটি বলছিল বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছেন তো দিদি ভিতরে আসেন অঞ্জনা বলছিল না ভাইয়া ঠিক আছে যেতে হবে না ভিতরে। লোকটি একটি চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলছিল আরে আসেন না বারান্দায় বসেন বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছেন তো। অঞ্জনা সহজ সরল ভাবে বারান্দায় উঠে বসলো।অঞ্জনা হয়তো ভাবছিল বসলেই বৃষ্টি ছেড়ে যাবে। দিদি বসেন কিস্তির টাকা আনছি।অঞ্জনা হয়তো ভেবেছে একটু বসি টাকা আনলে নিয়ে চলে যাব ওই লোকটির কুনজর ছিল অঞ্জনার প্রতি হয়তো এইরকম কোন দিনের জন্যই অপেক্ষায় ছিল সে।
পুরা বাড়িতে কেউ ছিলেন না বউকে নাকি বাপের বাড়ি পাঠিয়েছিলেন সেদিন কিস্তি জেনেই পাঠিয়েছিলেন ধরা পড়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন ।হয় তো মনে মনে ছক কষেছিলো খারাপ উদ্দেশ্যের। অনরগল বৃষ্টি ঝরছে এর মধ্যে ঘর থেকে টাকা না নিয়ে আর একজন সঙ্গীকে নিয়ে ভয়ংকর রূপে অঞ্জনাকে টেনে হেচরে রুমের ভিতরে নিয়ে গেছে এবং দরজা আটকিয়ে দিয়েছে। অঞ্জনর ওড়না দিয়েই অঞ্জনার মুখ বেঁধে ফেলেছে। আসলে লোকটি ছিল নেশায় আসক্ত এবং জুয়ায় আসক্ত।সে তার নেশার ও জুয়ার সঙ্গীদের নিয়ে অঞ্জনার জন্যই অপেক্ষা করছিল । কারণ সে জানতই আজকে কিস্তি নিতেই আসবে। এরপর অঞ্জনা কে চারজন মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। অঞ্জনা তাদের হাতে পায়ে ধরে ছিল এবং কাকুতি মিনতি করেছেন যেন তারা তাকে না মেরে ফেলে । প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল অঞ্জনা যে তাকে ছেড়ে দিলে সে কাউকে কিচ্ছু বলবে না সে আর চাকরি করবে না।অনেক দূরে চলে যাবে। কিন্তু নরপশুদের তাতে মন গলে নি। ওদের চারজনের মাঝে একজন বলে উঠেছিল একে ছাড়া যাবে না একে মেরে ফেলতে হবে একে ছাড়লে সব গিয়ে পুলিশে বলে দেবে। তখন আমরা ফেসে যাবো কেস হয়ে যাবে আমাদের নামে। এ কথা বলার পর চারজন মিলে কেউ হাত কেউ পা চেপে ধরে বালিশ চাপা দিয়ে অঞ্জনা দিদিকে নির্মমভাবে খুন করেন তারা।
এদিকে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত বাসায় ফিরছে না অঞ্জনা।অঞ্জনার ছোট্ট মেয়েটিকে আর আটকানো যাচ্ছে না কারণ প্রতিদিন মাকে বাড়িতে পাঁচটার ভিতরেই পায়।অঞ্জনার বর মেয়েকে সামলাতে পাচ্ছিল না প্রথমে ভেবেছিল হয়তো অফিসের কোন কাজে আটকে গেছে অফিসে ফোন করে জেনে নেয় সে অফিসে যায়নি। কোন বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে গেছে কিংবা বাবার বাড়িতে গেছে কিন্তু না সব জায়গায় খোঁজখবর নিয়ে দেখা যায় অঞ্জনা কোথাও নেই। ফোন বন্ধ।
এবার যেন সবার ভয়ে হয় ভয় হয় এ কারণেই যে অঞ্জনা যেহেতু অনেক টাকা নিয়েই ঘোরাফেরা করে হয়তো ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছে কখনো তারা কল্পনা করেনি যে অঞ্জনর এমন নির্মম পরিণতি হবে।
এবার থানায় ডায়েরী করতে বাধ্য হয়।
কোন কোন এলাকায় অঞ্জনার ডিউটি ছিল সেসব এলাকায় খোঁজখবর নিতে থাকে পুলিশ এদিকে রাত গড়িয়ে সন্ধ্যা, পরদিন সারাদিন চলে গেছে অঞ্জনার খোঁজ মেলাতে পারিনি পুলিশ।
এদিকে ওই চার নরপশু অঞ্জনাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করার পর রাত্রির বেলায় বস্তা বন্দী করে কিছুটা দূরে এক খালে ফেলে দিয়ে এসেছে অঞ্জনা কে। পরদিন এক মহিলা ছাগল চরাতে গিয়ে বস্তা দেখতে পেয়ে এলাকা বাসীকে ডাকলে এলাকাবাসী থানায় ফোন করে এবং পুলিশ গিয়ে অঞ্জনার লাশ পায়।
অঞ্জনার বাড়িতে ফোন করা হয় অঞ্জনার পরিবারের সদস্যরা অঞ্জনার লাশ সনাক্ত করে।লাশ কে পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য। ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় এবং শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করার আলামত মেলে। অঞ্জনা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন দুটি জমজ বাচ্চার ভ্রণ পাওয়া গেছে অঞ্জনার পেটে ময়নাতদন্তে । অঞ্জনার হত্যাকারীরা সবাই ধরা পড়েছে তারা জবানবন্দীতে জানিয়েছে অঞ্জনা কে অনেকদিন থেকেই টার্গেটে রেখেছিলেন তারা। খুন করেছে মূলত পুলিশের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই। সত্যি কি তারা পুলিশের কাছ থেকে বাঁচতে পেয়েছে। আসলে ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম ঘটনাটি ঘটার পরপুরো এলাকায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল এমন ঘটনা দেখে। এই মৃত্যুর দায়ভার কার ছোট্ট একটি বাচ্চাকে মা হারা করলো খুনিরা।শুধু কি ছোট মেয়েটি অঞ্জনার বাবা-মা ভাই-বোনদের কি অবস্থা এই ঘটনার পর শুধু সেগুলোই ভাবি। শুধু কি অঞ্জনা কে খুন করেছে অঞ্জনার ভিতরেও দুটি ভ্রণ ছিল অঞ্জনার সাথে সাথে আরো দুটি খুন করেছে খুনিরা। যতবার স্কুলে যেতাম অঞ্জনা দের বাড়ি দেখলেই মনে পড়তো অঞ্জনা স্মৃতিগুলো সামনে ভাসতো অঞ্জনার মা সব সময় কান্না করত মেয়ের শোখে।অঞ্জনার খুনিরা জেলের ভিতর। উপযুক্ত শাস্তি মৃত্যুর বদলে মৃত্যু এটাই কাম্য তবে তিলে তিলে মৃত্যু হওয়া দরকার এরকম নরপশুদের। তাদেরকে বাঁচিয়ে রেখে শাস্তি দিয়ে বোঝানো দরকার তারা কতটা পাপী এবং কতটা পাপ কাজের শাস্তি পাচ্ছে।
আবারও দেখা হবে অন্য কোনদিন অন্য কোন পোস্টের মাধ্যমে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন নিরাপদে থাকুন।
টাটা
পোস্ট | বিবরণ |
---|---|
পোস্ট তৈরি | @shapladatta |
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং |
ডিভাইস | OppoA95 |
লোকেশন | বাংলাদেশ |
আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।
অঞ্জনার অক্ষাঙ্খিত মৃত্যু নিয়ে লেখাটি পড়ে চোখে পানি চলে আসলো। মানুষ পশুর চেয়েও অধম, তা না হলে এরকম পৈচাশিক কাজ করতে পারতো না।ওই নরপশুদের শাস্তি হয়েছে কিনা জানিনা, তবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। আর যেন কোন নারীর পরিনতি অঞ্জনার মত না হয়। আসলে আমাদের সমাজটা নারীবান্ধব না। স্বপ্ন দেখি একদিন নারীবান্ধব পরিবার-সমাজ-দেশ গড়ে উঠবে। লেখাটি শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু।
আমারও পোস্ট টি লেখার সময় চোখে জল এসেছিলো আপু।ধন্যবাদ আপু মন্তব্য করার জন্য।
গল্পটি পড়তে পড়তে আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। এ সমস্ত নর-পিচাশদের জন্য মেয়েরা কোথাও সুরক্ষিত নয়।না জানি অঞ্জনা কতটা কষ্ট পেয়েছে। আর তার মেয়েটা এবং পরিবারের লোকজনের উপর দিয়ে কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে। খুন করার পর কেউই চুপ থাকতে পারে না তাদেরকে কোনো না কোনো ভাবে ধরা হয়। তারা তো পারতো অঞ্জনার জীবনটা ভিক্ষা দিতে।এদের আসলে বেঁচে থাকার কোনো অধিকারই নেই।
ঠিক বলেছেন এদের মতো নরপশুদের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই পৃথিবীতে।