মাটির হাঁড়িতে পায়েস পরিবেশন করা নিয়ে || স্বরচিত কবিতা||~~

in আমার বাংলা ব্লগ7 days ago

আসসালামু আলাইকুম/আদাব

স্বরচিত কবিতা


সকলকে শুভেচ্ছা। আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আর আপনারা সবাই সব সময় ভালো থাকবেন,এটাই প্রত্যাশা করি।

1000023517.jpg




কবিতাটির মূলভাব

এই কবিতার পিছনের গল্পটি মূলত একটি বাঙালি গৃহিণীর জীবন থেকে উঠে আসা এক সাধারণ, কিন্তু অত্যন্ত মূল্যবান অভিজ্ঞতা। মাটির হাঁড়িতে পায়েস পরিবেশন করা, বা রান্না করা, বাঙালি সংস্কৃতির একটি অমূল্য অঙ্গ—এটি শুধুমাত্র খাবারের মাধ্যমেই শেষ হয় না। এটি একটি স্নেহশীল এবং মায়াময় অভিব্যক্তি, যা গৃহস্থালির চিরন্তন ঐতিহ্যকে তুলে ধরে।

বাঙালি রান্নায় পায়েস, বিশেষত মিষ্টি পায়েস, খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান রাখে। তবে মাটির হাঁড়ি এই পরিবেশনের মধ্যে একটি বিশেষ মাত্রা যোগ করে। মাটির হাঁড়ির ব্যবহার ঐতিহ্যগতভাবে ঘরের এক আদর্শ উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, কারণ এর মধ্যে খাবারের স্বাদ এবং গন্ধ আলাদা এক রকম স্নিগ্ধতা নিয়ে আসে। মাটির হাঁড়ি গরম বা ঠাণ্ডা—যে কোনো অবস্থাতেই খাবারের অর্গানিক স্বাদ অনেক বেশি প্রকাশ পায়।

এই কবিতায়, সেই সাধারণ অথচ বিশেষ মুহূর্তটিকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে, যেখানে একজন গৃহিণী নিজের হাতে রান্না করা পায়েসকে মাটির হাঁড়িতে পরিবেশন করছে, এবং এটি তার পরিবার, তার সম্পর্ক, এবং তার সংস্কৃতির একটি জীবন্ত চিত্র। কবিতাটি বাঙালি সংস্কৃতির শেকড়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করে।

এখানে প্রতিটি চামচ পায়েস যেন সেই সংস্কৃতির ভেতর লুকানো মিষ্টতা, ঐতিহ্য এবং অনুভূতির প্রতীক। গৃহিণীর হাতের মিষ্টি ও সুস্বাদু রান্না একদিকে যেমন ঘরকে শান্তি ও ভালোবাসায় পূর্ণ করে, তেমনি মাটির হাঁড়ি তার গভীরতা এবং ঐতিহ্যগত সত্ত্বাকে সজীব রাখে।

কবিতার মাধ্যমে, আমি সেই অনুভূতি এবং মুহূর্তটিকে চিত্রিত করতে চেয়েছি, যেখানে রান্না, পরিবেশন, এবং সংস্কৃতি এক সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে উঠে।

1000023535.jpg

কবিতা -"মাটির হাড়ি "

কলমে -সেলিনা সাথী

মাটির হাঁড়িতে পায়েস,
বাঙালি ঐতিহ্যের এক মিষ্টি ছোঁয়া,
যেখানে গৃহিণীর হাতে খুঁজে পাওয়া যায়
স্নেহ, মায়া ও ভালোবাসার সমাহার।
আজ আমি নিজ হাতে রান্না করে মাটির
হাঁড়িতে সাজিয়েছি সেই পায়েস,
গন্ধে ভরিয়ে উঠেছে ঘর, যেন এক
মোহনায় ভেসে যাচ্ছে সুগন্ধী স্নিগ্ধতা।

পানির মতো স্নিগ্ধ দুধ, আর মিষ্টি চিনি,
মিষ্টির প্রিয় রূপে পায়েসে পরিণত হয়েছে ভালোবাসার শেকড়।
মাটির হাঁড়ি, তার দেহে গ্রাম্য উষ্ণতা,
বস্তুটি যেন সেই স্বাভাবিক সঙ্গী,
যার মধ্যে হৃদয়ের সমস্ত নির্ভেজাল
ভালোবাসা ঢেলে দেয়া যায়।

গুড়ের খাসা, এলাচের সুবাস,
একটানা হালকা গরমে মিশে যায়
একে অপরের সঙ্গে।
কেবল শীতল হবার অপেক্ষায়,
যেন পায়েসটি ক্ষণে ক্ষণে তার
মিষ্টি রূপে খোলসে উঠে আসে।
যতটা সহজ, ততটাই মজাদার,
একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছে করে—
এ যেন সেই সুস্বাদু ঐতিহ্য, যা
প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে রয়ে যায়, চিরকাল।

মাটির হাঁড়ি—এ যেন শুধু খাবারের
পরিবেশন নয়, এটি এক রকম
সংস্কৃতির প্রতীক, যে হাঁড়িতে মিশে থাকে
পরিবারের গন্ধ,
অভ্যন্তরের সম্পর্কের গভীরতা,
অপ্রকাশিত প্রেমের কথা।
এভাবেই মাটির হাঁড়ির পায়েস,
বাঙালির শেকড়ের কথা বলে,
প্রতি চামচে ঐতিহ্যের এক অনুভব।

আজও আমি সেই পায়েস পরিবেশন করলাম,
মাটির হাঁড়ির স্নেহে ভরা,
এখানে শুধুই মিষ্টি স্বাদ নয়,
এখানে আমাদের ইতিহাস, আমাদের ভাতৃত্ব, আমাদের চিরন্তন ভালোবাসা।


1000023504.jpg


1000023351.jpg


বন্ধুরা আমার আজকের কবিতটি, নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আর আপনাদের ভালোলাগাই আমার সার্থকতা ও পরম পাওয়া। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তীতে আবারো সুন্দর সুন্দর কবিতা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব, আমি সেলিনা সাথী...

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

photo_2023-07-07_17-27-00.jpg

আমি সেলিনা সাথী। ছন্দের রাজ্যে, ছন্দরাণী কাব্যময়ী-কাব্যকন্যা বর্তমান প্রজন্মের নান্দনিক ও দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি সেলিনা সাথী। একধারে লেখক, কবি, বাচিক শিল্পী, সংগঠক, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার, মোটিভেটর ও সফল নারী উদ্যোক্তা তার পুরো নাম সেলিনা আক্তার সাথী। আর কাব্যিক নাম সেলিনা সাথী। আমি নীলফামারী সদর উপজেলায় ১৮ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আমার বাবা পিতা মরহুম শহিদুল ইসলাম ও মাতা রওশনারা বেগম। ছড়া কবিতা, ছোট গল্প, গান, প্রবন্ধ, ব্লগ ও উপন্যাস ইত্যাদি আমার লেখার মূল উপজীব্য। আমার লেখনীর সমৃদ্ধ একক এবং যৌথ কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৫ টি। আমার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই অশ্রু ভেজা রাত, উপন্যাস মিষ্টি প্রেম, যৌথ কাব্যগ্রন্থ একুশের বুকে প্রেম। জীবন যখন যেমন। সম্পাদিত বই 'ত্রিধারার মাঝি' 'নারীকণ্ঠ' 'কাব্যকলি'সহ আরো বেশ কয়েকটি বই পাঠকহমলে বেশ সমাদৃত। আমি তৃণমূল নারী নেতৃত্ব সংঘ বাংলাদেশ-এর নির্বাচিত সভাপতি। সাথী পাঠাগার, নারী সংসদ, সাথী প্রকাশন ও নীলফামারী সাহিত্য ও সংস্কৃতি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়াও আমি জেলা শাখার সভাপতি উত্তোরন পাবনা ও বাংলাদেশ বেসরকারি গ্রন্থাগার পরিষদ নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছি। তিনি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৪ সালে নীলফামারী জেলা ও রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ জয়িতা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। এছাড়াও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদান রাখায় আমি বহু সম্মামনা পদক অর্জন করেছি। যেমন সাহিত্যে খান মইনুদ্দিন পদক ২০১২। কবি আব্দুল হাকিম পদক ২০১৩। শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র কর্তৃক সম্ভাবনা স্মারক ২০১৩। সিনসা কাব্য সম্ভাবনা ২০১৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষে সম্মামনা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সম্মাননা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ১১৫ তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২০১৪। দৈনিক মানববার্তার সম্মামনার স্মারক ২০২৩। চাতক পুরস্কার চাতক অনন্যা নারী সম্মাননা ২০২৩ ওপার বাংলা মুর্শিদাবাদ থেকে মনোনীত হয়েছি।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



বিষয়: ক্রিয়েটিভ রাইটিং

কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......


Sort:  
 7 days ago 

বাহ বেশ চমৎকার। বাঙালির একটি ঐতিহ্যকে আপনি খুবই সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। মাঠির বাসন-কাসন গুলো যদিও বা এখন তেমন একটা লক্ষ্য করা যায় না তবে এগুলো কিন্তু বাঙালির পুরনো ঐতিহ্য। যাইহোক মাটির হাড়িতে পায়েস পরিবেশন সম্পর্কিত দারুন একটি কবিতা লিখেছেন কিন্তু। যে কবিতার মধ্যে বাঙালির ঐতিহ্যের কথাগুলি উঁকি দিয়ে জানান দিচ্ছে। যাই হোক বাঙালি ঐতিহ্য সম্পৃক্ত সুন্দর ভাব ময় কবিতাটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 7 days ago 

বাঙালির ঐতিহ্যকে নিয়ে লেখা কবিতাটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

 7 days ago 

কবিতা আর পায়েসের যুগলবন্দী অসাধারণ লাগলো। তুমি হলে গিয়ে জাত কবি। প্রথমে পায়েসের ছবিটা দেখে আমি ভাবলাম কালকেই তো কমেন্ট করলাম কোথায় গেল। তারপর আবার ভালো করে টাইটেলটা পড়লাম। ওমা! এতো কবিতা লিখেছ। সব বিষয় নিয়ে তোমার চমৎকার কবিতা লেখার হাতখানি যেন সোনায় মোড়া। ভীষণ ভালো লাগলো পড়ে।

 7 days ago 

ভাবলাম মাটির হাঁড়ি নিয়ে বাঙালি ঐতিহ্যকে একটু মেলে ধরি। আর সেই চিন্তা থেকে এই কবিতা লেখা। ভালো হোক মন্দ হোক যেকোন বিষয় নিয়ে লিখতে পারি। আমার কবিতা তোমার ভালো লাগে জেনে অনেক বেশি খুশি হলাম। এবং উজ্জীবিত হলাম। এভাবেই পাশে থেকো সব সময়।

 7 days ago 

মাটির হাঁড়িতে পায়েস। দারুন লিখলে কিন্তু কবিতাটা। সবথেকে বড় কথা সুন্দর একটি ভাবনাকে কবিতায় রূপদান করলে। মাটির হাঁড়িটা সত্যিই খুব সুন্দর দেখতে। এমন সুন্দর হাঁড়িতে পায়েস পরিবেশন করতে খুব ভালো লাগে। আর সেটিকে কাব্যিক রুপ দিয়ে তুমি পরিপূর্ণ গড়ে তুললে। অসাধারণ কবিতাটি। তোমার কবিতা দেখলেই আমি তাড়াতাড়ি পড়ে নিই।

 7 days ago 

তোমার মন্তব্য পড়ে অনেক বেশি উৎসাহ পাই। এবং উজ্জীবিত হই। অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা এভাবে পাশে থাকার জন্য।

 7 days ago 

মাটির হাঁড়ি দেখতে খুবই ভালো লাগে। আর খাবার পরিবেশন করলে আরো বেশি সুন্দর ভাবে ফুটে ওঠে। আপু আপনি চমৎকার কবিতা লিখেছেন। আপনার লেখা কবিতা পড়ে খুবই ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপু এই কবিতা আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।

 7 days ago 

মাটির হাঁড়ি নিয়ে কবিতাটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

 6 days ago 

ঠিক যেমন সুন্দর লাগছে দেখতে পায়েসটা তার চেয়েও বেশি আকর্ষণীয় আপনার কবিতা টা আপু। দারুণ লিখেছেন কবিতা টা। পায়েস তো বাঙালির একটা ঐতিহ্যবাহী খাবার। মাটির পাএে দারুণ পরিবেশন করেছেন। সবমিলিয়ে চমৎকার ছিল আপনার কবিতা টা। ধন্যবাদ আপনাকে।।

 6 days ago 

মাটির হাঁড়ি নিয়ে কবিতাটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। আসলে বাঙালির ঐতিহ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এই কবিতার মধ্য দিয়ে। আর পায়েসটা সত্যিই অনেক মজাদার হয়েছিল।

 6 days ago 

আপনি দেখছি আজকে খুবই সুন্দর করে মাটির হাঁড়িতে পায়েস পরিবেশন নিয়ে কবিতা লিখে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার লেখা কবিতা গুলো পড়লে আলাদা রকম ভালো লাগা কাজ করে। আসলে এখন পর্যন্ত কোন দিন মাটির পাতিলে রান্না করা পায়েস খাইনি।

 6 days ago 

মাটির হাঁড়িতে রেখে কিংবা মাটির হাঁড়িতে রান্না করা খাবার অনেকটাই স্বাস্থ্যসম্মত। এবং এর স্বাদ ও থাকে অটুট।

Coin Marketplace

STEEM 0.22
TRX 0.20
JST 0.034
BTC 98504.77
ETH 3362.26
USDT 1.00
SBD 3.06