স্বরচিত কবিতার || প্রয়োজন||~~
স্বরচিত -কবিতা-
সকলকে বিজয় মাসের রক্তিম শুভেচ্ছা। আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আর আপনারা সবাই সব সময় ভালো থাকবেন,এটাই প্রত্যাশা করি।
অনুভূতির কিছু কথা
জীবনের প্রতিটি দিনই আমাদের জন্য নতুন কিছু শিক্ষা নিয়ে আসে। "প্রয়োজন" কবিতার পেছনের গল্পটি আসলে আমার জীবনের অভিজ্ঞতারই একটি প্রতিফলন। আমরা সম্পর্ক তৈরি করি হৃদয়ের গভীর আবেগ থেকে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারি, অনেক সম্পর্কের গভীরে লুকিয়ে থাকে প্রয়োজনের নির্ভরতা।
এই কবিতাটি লেখার সময় আমি গভীরভাবে ভেবেছি সেই মুহূর্তগুলো নিয়ে, যখন দেখেছি আমার প্রতি মানুষের ভালোবাসা কিংবা মমতার আচরণ কেবল প্রয়োজনের সময়ে প্রকাশ পেয়েছে। সেই মুহূর্তগুলো হৃদয়ে কাঁটাগাছের মতো দাগ কেটেছিল। মানুষের মুখোশ, তাদের লেনদেনমুখী আচরণ—এগুলো আমাকে কষ্ট দিয়েছিল। তবে এই কষ্টই আমাকে আরও শক্ত করে তুলেছে।
কবিতার প্রতিটি শব্দই আমার হৃদয়ের ক্ষত থেকে উঠে এসেছে। তবে এটি শুধুই বেদনার গল্প নয়। জীবনের গভীর এক উপলব্ধি রয়েছে এর ভেতরে। প্রতিটি সম্পর্ক হয়তো সত্যি নয়, কিন্তু সেই সম্পর্কের ভাঙা টুকরোগুলোও আমাদের নতুন করে গড়তে শেখায়।
আমার জীবনে এমন সময় এসেছে, যখন আমি অনুভব করেছি, নিজেকে ভালোবাসা এবং নিজের স্বপ্নের প্রতি নিবেদিত থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই উপলব্ধিই আমাকে শিখিয়েছে প্রয়োজনহীন ভালোবাসার প্রকৃত সৌন্দর্য।
"প্রয়োজন" আমার একান্ত অভিজ্ঞতার গল্প, যা কেবল আমার নয়, বরং সেইসব মানুষেরও, যারা কখনো এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছে। আমি চাই, আমার এই কবিতা তাদের শক্তি আর প্রেরণার উৎস হয়ে উঠুক, যারা জীবনের শূন্যতার মাঝেও বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পান।
প্রয়োজনের দেয়াল যখন
মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়,
সম্পর্কগুলো যেন একেকটি
চুক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
যতক্ষণ প্রয়োজন থাকে,
ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়,
মমতার পায়ের ছাপ পড়ে প্রতিটি পথে।
কিন্তু প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে?
তখন সেই পথেই যেন শূন্যতার
কাঁটাগাছ জন্মায়,
যেন হৃদয়ের তৃষ্ণা মরে যায়।
প্রিয়জন, যার চোখে একসময়
জীবনের অর্থ দেখা যেত,
সে চোখগুলোই হঠাৎ সরে যায়।
দৃষ্টি এড়িয়ে যায়, কথা কমে যায়,
নাম ধাম হারিয়ে যায়।
যেন একটি লেনদেন ছিল,
যার মেয়াদ শেষ হয়েছে।
জীবন এমনই
মানুষ প্রয়োজনের মুখোশ পরে থাকে।
তুমি যখন কিছু দিতে পারো না,
তখন তোমার অস্তিত্বের
প্রয়োজনও ফুরিয়ে যায়।
সেই মুহূর্তে বুঝতে পারো,
সম্পর্ক মানে শুধু হৃদয়ের বন্ধন নয়,
এটা চাহিদার এক অদৃশ্য জাল।
তবু, কি আশ্চর্য!
আমরা আবারও ভালোবাসতে শিখি।
আবারও প্রয়োজন ছাড়া দিতে শিখি।
হয়তো কিছু সম্পর্ক সত্যি হয় না,
কিন্তু আমরা শিখি।
শিখি কাঁটাগাছের মধ্যেও
গোলাপ ফুটিয়ে তুলতে।
শিখি নিজের জন্য বাঁচতে।
তোমার প্রিয়জন হয়তো
মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে,
কিন্তু তুমি মুখ ফিরিয়ে নিও না
নিজের স্বপ্ন থেকে।
প্রয়োজনহীন ভালোবাসার
গল্পগুলোই তো প্রকৃত গল্প।
আর যদি মুখ ফিরিয়েও নিতে হয়,
তবে সেটা তোমার শর্তে নাও—
শক্তি আর মর্যাদার সঙ্গে।
জীবন তো অবিরাম চলার গল্প,
আর সেই গল্পে যারা থেমে যায়,
তাদের জন্য অপেক্ষা নয়,
বরং সামনের দিকে হাঁটার
প্রতিজ্ঞাই আসল প্রেরণা।
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
সময় রাত ১০: ৩৮
কবিতা কুটির -নীলফামারী।
বন্ধুরা আমার আজকের কবিতটি, নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আর আপনাদের ভালোলাগাই আমার সার্থকতা ও পরম পাওয়া। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তীতে আবারো সুন্দর সুন্দর কবিতা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব, আমি সেলিনা সাথী...
আমি সেলিনা সাথী। ছন্দের রাজ্যে, ছন্দরাণী কাব্যময়ী-কাব্যকন্যা বর্তমান প্রজন্মের নান্দনিক ও দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি সেলিনা সাথী। একধারে লেখক, কবি, বাচিক শিল্পী, সংগঠক, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার, মোটিভেটর ও সফল নারী উদ্যোক্তা তার পুরো নাম সেলিনা আক্তার সাথী। আর কাব্যিক নাম সেলিনা সাথী। আমি নীলফামারী সদর উপজেলায় ১৮ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আমার বাবা পিতা মরহুম শহিদুল ইসলাম ও মাতা রওশনারা বেগম। ছড়া কবিতা, ছোট গল্প, গান, প্রবন্ধ, ব্লগ ও উপন্যাস ইত্যাদি আমার লেখার মূল উপজীব্য। আমার লেখনীর সমৃদ্ধ একক এবং যৌথ কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৫ টি। আমার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই অশ্রু ভেজা রাত, উপন্যাস মিষ্টি প্রেম, যৌথ কাব্যগ্রন্থ একুশের বুকে প্রেম। জীবন যখন যেমন। সম্পাদিত বই 'ত্রিধারার মাঝি' 'নারীকণ্ঠ' 'কাব্যকলি'সহ আরো বেশ কয়েকটি বই পাঠকহমলে বেশ সমাদৃত। আমি তৃণমূল নারী নেতৃত্ব সংঘ বাংলাদেশ-এর নির্বাচিত সভাপতি। সাথী পাঠাগার, নারী সংসদ, সাথী প্রকাশন ও নীলফামারী সাহিত্য ও সংস্কৃতি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়াও আমি জেলা শাখার সভাপতি উত্তোরন পাবনা ও বাংলাদেশ বেসরকারি গ্রন্থাগার পরিষদ নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছি। তিনি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৪ সালে নীলফামারী জেলা ও রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ জয়িতা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। এছাড়াও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদান রাখায় আমি বহু সম্মামনা পদক অর্জন করেছি। যেমন সাহিত্যে খান মইনুদ্দিন পদক ২০১২। কবি আব্দুল হাকিম পদক ২০১৩। শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র কর্তৃক সম্ভাবনা স্মারক ২০১৩। সিনসা কাব্য সম্ভাবনা ২০১৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষে সম্মামনা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সম্মাননা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ১১৫ তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২০১৪। দৈনিক মানববার্তার সম্মামনার স্মারক ২০২৩। চাতক পুরস্কার চাতক অনন্যা নারী সম্মাননা ২০২৩ ওপার বাংলা মুর্শিদাবাদ থেকে মনোনীত হয়েছি।
বিষয়: ক্রিয়েটিভ রাইটিং
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
দারুন ছিল আজকের কবিতার প্রতিটি লাইন। যদিও আমি আগে থেকে জানি যে আপনি একজন ভালো মানের কবি। আর একজন ভালো মাপের কবিই পারে সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখে শ্রোতাদের কে বিনোদন দিতে। তবে কবিতার নিচের কথা গুলো বেশ ভালো লেগেছে।
আপনার লেখা কবিতাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। এত সুন্দর একটি কবিতা লিখেছেন, কবিতার ভাষাগুলো অসাধারণ ছিল।
আসলেই আপু কথাটা ঠিকই বলেছেন সম্পর্কগুলো যেন এক একটা চুক্তি। আমি নিজেও এখন এসে ব্যাপার টা রিয়েলাইজ করেছি। বাঁচতে হবে নিজের জন্য নিজেকে সময় দিতে হবে। কিন্তু আমরা সেটা খুব কমই করি। দারুণ লাগল আপনার কবিতা টা। ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।।
আপু সুন্দর অনুভূতি দিয়ে চমৎকার কবিতা লিখেছেন।প্রয়োজন কবিতাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। তবে আপনার কবিতা এমনিতে অসাধারণ। আপনার কবিতা থেকে অনেক কিছু শিখা যায় এবং উপলব্ধি করা যায়। চমৎকার ভাষা দিয়ে কবিতাটি লিখে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।