মায়ের হৃদয়💞 দুই শহরের মাঝখানে||~~
স্বরচিত -কবিতা-
সকলকে অনাবিল শুভেচ্ছা। আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আর আপনারা সবাই সব সময় ভালো থাকবেন,এটাই প্রত্যাশা করি।
মায়ের হৃদয়, দুই শহরের মাঝখানে
নীলফামারী থেকে যখন ঢাকায় এসেছিলাম, তখন কত আনন্দ, কত অপেক্ষা! সিয়াম-শিপুর কাছে থাকবো, ওদের সাথে সময় কাটাবো, প্রতিটি মুহূর্তকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নেবো—এই ভেবেই মনটা ভরে গিয়েছিল। বাস্তবতাও যেন তেমনই সুন্দর ছিল। প্রতিদিন সকালে ওদের ঘুম থেকে ডাকা, একসঙ্গে নাশতা করা, ছোট ছোট কথায় মায়ের স্নেহ ঢেলে দেওয়া, রাতের খাবার শেষে একসঙ্গে বসে গল্প করা—এসবই যেন জীবনের সবচেয়ে স্বর্গীয় অনুভূতি হয়ে উঠেছিল।
ঢাকার প্রতিটা দিন আমার কাছে যেন নতুন করে বেঁচে থাকার আনন্দ এনে দিয়েছিল। একসময় ছোট্ট সিয়াম, যে হাত ধরে হাঁটতে শিখেছিল, আজ সে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। শিপুও বড় হচ্ছে, নিজের জীবনকে গুছিয়ে নেওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ওদের সংগ্রামের সাক্ষী হয়ে থাকা, পাশে থেকে হাসিমুখে সাহস জোগানো—এসবই যেন আমার জীবনের এক নতুন অধ্যায়। মা হয়ে যখন সন্তানের ভালো থাকা দেখতে পাই, তখন পৃথিবীর সব পাওয়া যেন তুচ্ছ মনে হয়।
কিন্তু সময় কারও জন্য থেমে থাকে না। এবার ফেরার পালা। নীলফামারী ডাকছে, সেখানে কত কাজ পড়ে আছে! বড় ছেলের বিয়ে বলে কথা—নতুন একটা অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে আমাদের পরিবারের। কত আয়োজন, কত প্রস্তুতি! অতিথিদের আপ্যায়ন, কেনাকাটা, সাজসজ্জা—সব কিছুই তো মায়ের চোখে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
তবুও, বুকের কোথাও যেন এক অদ্ভুত শূন্যতা। বাসের টিকিট কাটা হয়ে গেছে, ব্যাগও গুছিয়ে নিয়েছি, কিন্তু মন কিছুতেই যেতে চাইছে না। সিয়াম-শিপুকে ছেড়ে যাওয়া মানে তো আমার হৃদয়ের এক টুকরো ছিন্ন হয়ে যাওয়া! মনে হচ্ছে, যেভাবে প্রথম দিন ওদের স্কুলে দিয়ে এসে মন কাঁদছিল, সেভাবেই আজও কষ্ট হচ্ছে।
সিয়াম যখন অসুস্থ ছিল, তখন এক মুহূর্তও ওর পাশ থেকে সরতে ইচ্ছা করতো না। এখন যখন ও কিছুটা সুস্থ, তখনও মনে হচ্ছে—আচ্ছা, ও ঠিকমতো খাচ্ছে তো? রাতে ঠিকঠাক ওষুধ নিচ্ছে তো? শিপু কী করছে? এসব ভাবনার জালেই পুরো মন আটকে আছে।
নীলফামারীতে ফিরে গেলে ব্যস্ততা হয়তো সব ভুলিয়ে দেবে, কিন্তু মায়ের মন তো কোথাও থেমে থাকে না। একদিকে বিয়ের আনন্দ, আয়োজন, নতুন অতিথিদের আগমন, অন্যদিকে ঢাকায় রেখে আসা দুই টুকরো হৃদয়ের জন্য অজানা উৎকণ্ঠা।
বাসের হালকা দলুনি যখন এসে গায়ে লাগে, মনে হয় একদিকে আমি ছুটে চলেছি, অন্যদিকে আমার ভালোবাসার বন্ধন দুই ছেলের কাছে পড়ে আছে। হয়তো দূরত্ব তৈরি হচ্ছে, কিন্তু মায়ের ভালোবাসা তো কখনও দূরে যেতে পারে না। মা তো সবসময়ই দুই জায়গায় থাকেন—শরীরে এক শহরে, আর মনে সন্তানের কাছে…
বাবাদের ছেড়ে যাওয়ার বেদনা ও মায়ের মন
ঢাকা শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলো পেরিয়ে যখন বিদায়ের মুহূর্ত চলে আসে, তখন বুকের ভেতর যেন এক অদ্ভুত শূন্যতা নেমে আসে। সিয়াম আর শিপুকে রেখে নীলফামারীর পথে পা বাড়ানো মানে যেন নিজের হৃদয়ের একটা অংশ রেখে যাওয়া। ওদের সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত ছিল স্বর্গের মতো—সকালবেলা একসঙ্গে নাশতা করা, রাতে গল্প করে সময় কাটানো, হঠাৎ কোনো খুনসুটি, কিংবা একসঙ্গে রান্না করে খাওয়ার আনন্দ—সবকিছুই মনের গহীনে চিরস্থায়ী হয়ে থাকে।
বন্ধুরা আমার আজকে মায়ের নীরব অনুভূতি , নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আর আপনাদের ভালোলাগাই আমার সার্থকতা ও পরম পাওয়া। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তীতে আবারো সুন্দর সুন্দর কবিতা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব, আমি সেলিনা সাথী...
আমি সেলিনা সাথী। ছন্দের রাজ্যে, ছন্দরাণী কাব্যময়ী-কাব্যকন্যা বর্তমান প্রজন্মের নান্দনিক ও দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি সেলিনা সাথী। একধারে লেখক, কবি, বাচিক শিল্পী, সংগঠক, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার, মোটিভেটর ও সফল নারী উদ্যোক্তা তার পুরো নাম সেলিনা আক্তার সাথী। আর কাব্যিক নাম সেলিনা সাথী। আমি নীলফামারী সদর উপজেলায় ১৮ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আমার বাবা পিতা মরহুম শহিদুল ইসলাম ও মাতা রওশনারা বেগম। ছড়া কবিতা, ছোট গল্প, গান, প্রবন্ধ, ব্লগ ও উপন্যাস ইত্যাদি আমার লেখার মূল উপজীব্য। আমার লেখনীর সমৃদ্ধ একক এবং যৌথ কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৫ টি। আমার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই অশ্রু ভেজা রাত, উপন্যাস মিষ্টি প্রেম, যৌথ কাব্যগ্রন্থ একুশের বুকে প্রেম। জীবন যখন যেমন। সম্পাদিত বই 'ত্রিধারার মাঝি' 'নারীকণ্ঠ' 'কাব্যকলি'সহ আরো বেশ কয়েকটি বই পাঠকহমলে বেশ সমাদৃত। আমি তৃণমূল নারী নেতৃত্ব সংঘ বাংলাদেশ-এর নির্বাচিত সভাপতি। সাথী পাঠাগার, নারী সংসদ, সাথী প্রকাশন ও নীলফামারী সাহিত্য ও সংস্কৃতি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়াও আমি জেলা শাখার সভাপতি উত্তোরন পাবনা ও বাংলাদেশ বেসরকারি গ্রন্থাগার পরিষদ নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছি। তিনি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৪ সালে নীলফামারী জেলা ও রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ জয়িতা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। এছাড়াও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদান রাখায় আমি বহু সম্মামনা পদক অর্জন করেছি। যেমন সাহিত্যে খান মইনুদ্দিন পদক ২০১২। কবি আব্দুল হাকিম পদক ২০১৩। শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র কর্তৃক সম্ভাবনা স্মারক ২০১৩। সিনসা কাব্য সম্ভাবনা ২০১৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষে সম্মামনা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সম্মাননা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ১১৫ তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২০১৪। দৈনিক মানববার্তার সম্মামনার স্মারক ২০২৩। চাতক পুরস্কার চাতক অনন্যা নারী সম্মাননা ২০২৩ ওপার বাংলা মুর্শিদাবাদ থেকে মনোনীত হয়েছি।
বিষয়: ক্রিয়েটিভ রাইটিং
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
বিদায়ের শূন্যতা কেবল একে অপরকে ছেড়ে যাওয়ার বেদনায় সীমাবদ্ধ থাকে না ।এটি সম্পর্কের গভীরতা, ভালোবাসা এবং একে অপরকে মিস করার অনুভূতিও তৈরি করে।এটি একটি খুবই স্পর্শকাতর এবং হৃদয়স্পর্শী অনুভূতি। বিদায়ের মুহূর্তে যেটা অনুভব করা হয়, তা আসলেই ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।