|| পুজোয় 'টাকিতে' রাইডিং কাম ট্যুর এর কাহিনী,দ্বিতীয় পর্ব || ১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্যে
আশাকরি সকলে ভালো আছেন। সবাইকে নমস্কার জানিয়ে আজকে আমি আমার লেখা শুরু করছি।
এর আগে আমি পূজোতে আমাদের রাইডিং কাম ট্যুরে টাকি যাওয়ার প্রথম পর্ব আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করেছিলাম, আজকে তার দ্বিতীয় অংশ শেয়ার করব।
প্রথম পর্বে অষ্টমীর দিন আমরা কোথায় কোথায় ঘুরেছি এবং সারাদিনের বর্ননা আপনাদের বলেছি,আজ বলবো নবমীর দিন এর কাহিনী।
তো নবমির সকাল বেলা আমরা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে ঠিক করি টাকির আরো যে কিছু দর্শনীয় স্থানগুলি রয়েছে সেই গুলিতে যাব। যেহেতু আমাদের কাছে বাইক ছিল তাই যাতায়াতে আমাদের কোন সমস্যা হয়নি ।অনায়েসেই আমরা গুগল ম্যাপ এর সাহায্য নিয়ে আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পেরেছিলাম।
আমরা ঠিক করি সর্বপ্রথমে আমরা যাব 'টাকি মিনি সুন্দরবন' নামে একটি জায়গা আছে ,সেখানে। আমাদের হোটেল থেকে সেটি বেশ খানিকটা পথ মোটামুটি ১৪ থেকে ১৫ কিলোমিটার। তো আমরা চারজন মিলে দুটি বাইকে করে সাথে সামান্য কিছু ড্রাই ফুড ,কেক ,বিস্কুট এসব নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আমাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
যাওয়ার পথে মোটামুটি ৬-৭ কিলোমিটার যাওয়ার পরে রাস্তায় একটি শ্মশান পড়ল। আবহাওয়া সেই সময় প্রচন্ড গরম ছিল তো আমরা একটু রেস্ট নেওয়ার জন্য ভেতরে ঢুকলাম।
ভেতরে দুটি চিতা ছিল যেগুলি সুন্দরভাবে ব্যারিকেড করা, যদিও সেখানে কোন জ্বলন্ত চিতা ছিলনা। চিতা দুটি উঁচু মতন একটি সিমেন্টের বেদির ওপরে সুন্দর করে সাজানো ছিল। এছাড়াও ভেতরে একটি বিশাল বটগাছ এবং দুটি টালির ঘর ছিল।
মোটামুটি ১০ মিনিট সেখানে কাটিয়ে একটু জল,বিস্কুট খেয়ে আমরা আবার আমাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
এরপর ২০-২৫ মিনিট বাইক চালানোর পর আমরা আমাদের গন্তব্য 'টাকি মিনি সুন্দরবন'এ পৌঁছে গেলাম।
যেহেতু টাকির বেশিরভাগটাই একটি বর্ডার এড়িয়া এবং সেই মিনি সুন্দরবন অঞ্চল ইচ্ছামতী নদীরএকদম তীরে( প্রথম পর্বে আপনাদের বলেছিলাম যে ইছামতি নদীই সেখানকার বর্ডার।ইছামতি নদীর এপারে ভারত ওপারে বাংলাদেশ) তাই সেখানে রেস্ট্রিকশন অনেক।
ঢোকার সাথে সাথে একটি কাউন্টারের সামনে আমাদের দুটি বাইক মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেক করা হলো তারপর আমাদেরও ভালো করে চেক করা হলো। এরপর সেখান থেকে এগিয়ে আরেকটি কাউন্টারে আমাদের প্রত্যেকের একটি করে আইডি নিয়ে নেওয়া হল এবং সবার নাম ,ফোন নাম্বার, বাড়ির এড্রেস ,ডিটেইলস সেখানে এন্ট্রি করে তারপরে ঢুকতে হলো এবং এই সব কাজগুলি সম্পন্ন করছিল বিএসএফের কর্মীরা।
এরপর সেই গেট থেকে মোটামুটি আরো ৭০০ মিটার মতো ভেতরে ঢোকার পরে আসলো আমাদের মূল গন্তব্য মিনি সুন্দরবন। সেখানে বাইক রাখার আলাদা গ্যারেজ ছিল, তো আমরা আমাদের বাইক গুলি গ্যারেজে রেখে বেরিয়ে পড়লাম।
মিনি সুন্দরবন অঞ্চল টি সুন্দরবনের মতোই দেখতে একটি ছোট্ট অংশ। সেখানে চারিদিকে সুন্দরী গাছ গরান গাছ এর মতন বিভিন্ন গাছ ভর্তি এবং মাটি পুরো কাদায় ভর্তি। কিছু কিছু গাছের ডালপালা মাটিতে এসে মিশেছে বট গাছের মতন।তার মধ্যে দিয়েই বেশ খানিকটা হেঁটে যাওয়ার পরে ইছামতি নদীর দেখা পাওয়া যায়। সেখানে দেখার বলতে এটুকুই যা।
কিন্তু ওই কাদা পেরিয়ে বিভিন্ন গাছের উপর দিয়ে ধরে ধরে ওইটুকু পথ পেরোলে ছিল বেশ কঠিন। আমরা চার ভাইয়ের মধ্যে আমার এক দাদা চটি পড়ে গেছিল জুতো ছিল, তাই সেই দাদা বললো তার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না রিস্ক হয়ে যাবে, অতএব তার যাওয়া হলো না। অনেক রিকুয়েস্ট করেও এই দাদাকে যাওয়ার জন্য রাজি করাতে পারলাম না, অগত্যা আমরা বাকি তিন জনই ভেতরে ঢুকলাম।
কিন্তু ভেতরে ঢোকার পর বুঝতে পারলাম সেই দাদা না এসে ভালোই করেছে কারণ ভেতরে যে পরিমাণে কাদামাটি ছিল চটি পরে তা পেরিয়ে ভেতরে ঢোকা অসম্ভব ব্যাপার হতো। আমাদের তিনজনের পায়ের জুতো থাকা সত্ত্বেও আমাদের বেশ সমস্যা হচ্ছিল সেই কাদামাটি পেরিয়ে ভেতরে যেতে।
তা সত্ত্বেও মোটামুটি ৮০ থেকে ৯০ মিটার পথ আমাদের ওইভাবে যেতে হলো এবং যেখানে সময় লাগলো প্রায়ই ১০ মিনিট।
শেষ প্রান্তে পৌঁছে গিয়ে কাদামাটির ভাবটা অনেকটাই কম বরং সেখানে মাটি টা অনেকটা শক্ত ছিল এবং গাছপালা তাই ছিল না বললেই চলে। সেখান থেকে মেরেকেটে ১৫ মিটার দূরত্ব ছিল ইছামতি নদীর পাড়। কিন্তু নদীর অত কাছে আমাদের যাওয়ার সাহস হয়নি, আমরা দূর থেকে দাঁড়িয়ে সেই নদীর শোভা দেখলাম এবং দেখলাম নদীর অপর পাড়ে 'সোনার বাংলা'। দূরত্ব এতটাই কম ছিল যেন মনে হচ্ছিল নদী পার করে চলে যাই, তো সেটাতো আর সম্ভব ছিল না। আমরা সেখানে দাঁড়িয়ে খানিকক্ষণ সময় কাটালাম ,কিছু ফটো তুললাম এবং তারপরে আবার সেই কাদা মাটির পথ অতিক্রম করে পরের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য আমাদের বাইকের কাছে ফেরত চলে আসলাম।
[নদীর ওপারে বাংলাদেশের ভূমি দেখা যাচ্ছে]
তো বন্ধুরা পরের গন্তব্যে যাওয়ার গল্প অন্য আরেকটি পোষ্ট আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো ,আজকে এখানেই শেষ করছি।ভালো থাকবেন সকলে,নমস্কার।
প্রত্যেকটি ফটো-MI-A1 মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় তোলা।
এবং প্রত্যেকটি ফটো 'টাকি' ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে গৃহীত।
পুজোয় 'টাকিতে' রাইডিং কাম ট্যুর সম্পর্কে সুন্দর উপস্থাপনা করেছেন গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো খুব সুন্দর মুহূর্ত পার করেছেন দেখছি পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম
ধন্যবাদ ভাইয়া,ভালো থাকবেন।