গল্পঃ সমাজের অসহায় ও এতিম সখিনার জীবনের গল্প-(পর্ব-৭) শেষ পর্ব।
বিকেলের শুভেচ্ছা,
আশা করি বন্ধুরা ক্লান্ত বিকেলে সবাই একটু ফ্রি সময় কাটাচ্ছেন। যেহেতু এই সময় সবার অফিস আদালত ছুটি হয়ে যায় আবার অনেকেরই অফিসে কাজ থাকে। তবে ম্যাক্সিমাম মানুষের অফিসের কাজ শেষ হয়ে যায় এই সময়ে। সবাই চেষ্টা করেন সবাই বাসায় ফিরে একটু বিরতি নিতে বিশ্রাম করতে। আশা করি সবার দিনকাল বেশ ভালো যাচ্ছে। নিশ্চয়ই আমিও ভালো আছি যেহেতু আজকে শনিবার একটু রিলাক্সে আছি। সেই সুযোগে আবার উপস্থিত হয়েছি নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আশা করি আমার আজকের শেয়ার করা পোস্ট আপনাদের ভালো লাগবে। বেশ কিছু দিন হচ্ছে আমি আপনাদের সাথে একটি বাস্তব জীবনের গল্প শেয়ার করতেছি। অসহায় সখিনার জীবনের বাস্তব গল্পটি আমি আজকে সপ্তম পর্ব ও শেষ পর্ব শেয়ার করবো। এর আগে আমি ষষ্ঠ পর্ব শেয়ার করেছিলাম. আপনাদের কাছ থেকে বেশ সুন্দর সুন্দর সাড়া পেয়েছি। আপনারা বেশ ভালো উৎসাহ দেন সব কিছুতে। চলুন বন্ধুরা তাহলেই গল্পটি পড়ে আসি—---
সখিনার যেহেতু আগে তিনটি সংসার ভেঙ্গে গেল তার দুঃখ লেগেই থাকতো। এখন তো বাচ্চারা বড় হয়ে গেছে। তাদের বিয়ে করালো এবং ছেলে মেয়েদের থেকে নাতি নাতনি হলো। সখিনা তাদেরকে নিয়ে দিন যাপন করতে থাকলো। যেহেতু তার ছোট ছেলে একটি বিবাহিত মেয়েকে বিয়ে করে আনলো যার কারণে তার মেজো ছেলে একটু অসন্তুষ্ট ছিলেন। যাক কি আর করার যা হয়ে গেল তা নিয়ে আর আফসোস করে কোন লাভ নেই। এখন হঠাৎ করে সখিনার মেজো ছেলে বিদেশ থেকে আসবে। মেজো ছেলের সাথে তার মামাতো বোনের বিয়ের সব ঠিক হয়ে গেছে আগে থেকে। তাই তারাও একটু বিরক্ত করছিল বিদেশ থেকে চলে আসার জন্য। যখন সখিনার মেজো ছেলে চলে আসবে তখন সেই সৌদি আরবের জেলখানায় ধরা খেয়ে গেল। যেহেতু তার ভিসা ছিল না এছাড়া আর একটি ভিসা তৈরি করতে গিয়ে তার একটা ঝামেলা হয়ে গেছিল।
সে কারণে তাকে বিদেশের জেলখানাতে পুরো দুই বছর থাকতে হয়। এতে করে সখিনার অনেক চিন্তা কাজ করছিল। কিন্তু কি আর করার ছেলেকে কখন ছেড়ে দেয় তার অপেক্ষায় ছিল সখিনা। তার ছোট ছেলের বউ এবং তার নাতি নিয়ে সখিনা শান্তিতে থাকলো এবং বিদেশ থেকে তার ছোট ছেলে টাকা পাঠাতো। হঠাৎ একদিন তার মেজো ছেলে জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়ে গেল। জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়ে সোজা ঘরে চলে আসলো। ঘরে চলে আসার পরে সবাই অনেক খুশি এখন। যেহেতু মেজো ছেলে চলে আসলো এখন বউ আনতে হবে। সেই তার মামাতো বোনকে নিয়ে আসার জন্য একটা দিন ধার্য করলো। যেহেতু মেয়ে আগে ঠিক করা আছে এখন শুধু বিয়ের অনুষ্ঠানের কেনাকাটা আর অন্য সবকিছু ঠিকঠাক করে নিলো। তবে সখিনার মেজো ছেলে বিদেশে থাকাকালীন তার বউয়ের দেনমোহরের স্বর্ণ সবকিছুই দিয়ে দিয়েছে। তাই মেজো ছেলের আর কোন চিন্তা ছিলনা শুধু বিয়ের খরচ আর তেমন টাকা খরচ হবে না।
এভাবে সবাই সহযোগিতা করে তার বিয়ের কাজটা সম্পন্ন করে দিল। যেহেতু সেই বিদেশ থেকে আসলো জেলখানা থেকে তার হাতে কোন টাকাই ছিল না। তাই সবাই বিয়েতে সহযোগিতা করলো। এখন সখিনার ঘরে দুই ছেলের বউ নিয়ে সখিনার দিন যাপন করতে লাগলো। কিন্তু কথাই বলে কপালে বেশি সুখ সয় না! যেহেতু সখিনার কপালটা এমন ছিল তাই দুঃখ লেগেই থাকতো সখিনার। দুই ছেলের বউয়ের মধ্যে লেগে গেল দ্বন্দ্ব। যেহেতু ছোট ছেলের বউ খুব সুন্দর ছিল। এছাড়াও বিবাহিত ছিল তাকে একদম সহ্য করতে পারত না মেজো ছেলেও মেজো ছেলের বউ। মেজো ছেলের বউ অর্থাৎ সখিনার ভাইয়ের মেয়ে সখিনার ছোট ছেলের বউকে অনেক হিংসে করত। মেজো ছেলের বউ তার হাজবেন্ডকে নানা ধরনের কথা শোনাতো তার ছোট ঝাঁকে নিয়ে। এভাবে তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো।
তখন কি করলো হঠাৎ করে একদিন একটা বড় ধরনের ঝগড়া হয়ে গেল। সেই ঝগড়া হওয়ার কারণে ছোট ছেলের বউ বাড়ি থেকে চলে গেল। এখন যেহেতু ছোট ছেলের বউ ঘর থেকে চলে গেল তাই ছোট ছেলে আর যোগাযোগ করতো না সখিনার সাথে। যখন ছোট ছেলে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিলে সখিনা মানসিকভাবে অনেক ভেঙ্গে পড়লো। যেহেতু এর আগেও বড় ছেলে তার বউকে নিয়ে আলাদা ঘর করে নিল। এখন আবার মেজো ছেলের কারণে এবং ছেলের বউয়ের কারণে ছোট ছেলেকে ঘর ছাড়া করে দিল। তাই সখিনা অনেক চেষ্টা করলো তাদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু কিছুতেই মেজো ছেলে এবং তার বউ মেনে নিচ্ছে না। সখিনা যখন তার মেজো ছেলেকে তার ছোট ভাইয়কে এবং ছোট ছেলের বউয়ের ফিরিয়ে আনতে বলতো তখন সখিনাকে অনেক কথা শুনাইতো মেজো ছেলে।
এভাবে দেখতে দেখতে বেশ ছয় মাস/এক বছর হয়ে গেল। কিন্তু ছোট ছেলের বউয়ের কোন নাম গন্ধ নেই এবং ছোট ছেলেরও কোন খবর নেই। তবে মাঝে মধ্যে ছোট ছেলে ফোন দিয়ে কথা শুনাইতো সখিনাকে। যেহেতু সেই ঘরে থাকতে পারলো না তার মেজো ভাইয়ের কারণে। কিন্তু কার খবর কে রাখে সেগুলো সখিনা বেশ ভালো বুঝতে পারলে ও কিছু করার ছিলো না সখিনার। এভাবে সেই টেনশন সহ্য করতে না পেরে হঠাৎ একদিন সখিনার বড় ধরনের সমস্যা হয়ে যায়। অর্থাৎ তার হাই প্রেসার বেড়ে যায় এবং বুকে ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। তখন সখিনাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সখিনাকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করালো সেখানে জানালো তার কোন সমস্যা হয়নি।
সখিনাকে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ নিলো আর ঘরে নিয়ে আসলো। রাতে সখিনা ঘরে এসে খুব সুন্দর করে খাবার দাবার খেয়ে ওষুধ খেলো। কিন্তু মাঝ রাতে সখিনা অশান্তি বেড়ে গেলো আর থাকলো এই দুনিয়াতে। সখিনা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। অবশেষে ছেলেদের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে সখিনাকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হলো। কারণটা হলো পারিবারিক অশান্তির কারণে এই দশা। জন্ম-মৃত্যু হচ্ছে একমাত্র সৃষ্টিকর্তার হাতে। তবে কিছু কিছু কারণে মানুষের অকালে মৃত্যু হয়। হয়তো তাদের পারিবারিক বন্ধন যদি সুন্দর থাকতো তাহলে সখিনা আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতো। কিন্তু সেই ছোট ছেলের চিন্তায় এবং মেজো ছেলের মানসিক যন্ত্রণায় বেশি দিন ঠিকে থাকতে পারল না। সখিনার জীবনের ঘটনাটি খুবই মর্মাহত ছিল।
তার সেই স্মৃতি গুলো আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। আশা করি আপনাদের কাছে পুরো গল্পের পর্ব গুলো পড়ে ভালো লাগলো বন্ধুরা। সময় দিয়ে ধারাবাহিক গল্পটি পড়ার জন্যই আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই সময় দিয়ে সাথে থাকার জন্য।
লেখার উৎস | গ্রামের বাস্তব একটি গল্প |
---|---|
ইমেজ সোর্স | কেনভা দিয়ে তৈরি |
অবস্থান | কক্সবাজার, বাংলাদেশ |
ক্যাটাগরি | গল্প লেখা |
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য।

🥀আল্লাহ হাফেজ সবাইকে🥀
আমি সামশুন নাহার হিরা। আমার ইউজার আইডি @samhunnahar। আমি আমার বাংলা ব্লগে কাজ করছি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে। আমি বাংলা ভাষায় লিখতে-পড়তে অনেক ভালবাসি। রান্না করতে আমি অনেক পছন্দ করি। তাছাড়া সময় পেলে ভ্রমণ করি আর প্রকৃতিকে অনুভব করি। ফটোগ্রাফি করতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। আমি মাঝে মাঝে মনের আবেগ দিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করি। আমার প্রিয় শখের মধ্যে তো গান গাওয়া অন্যতম। আমার মনের ভাব বাংলায় প্রাকাশ করতে পেরে অনেক আনন্দিত। তার জন্য আমার প্রাণের/ভালবাসার কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"কে অনেক ভালবাসি।
https://twitter.com/nahar_hera/status/1789276213816832139?t=6SVfotGYI1jg6WXh7znFlw&s=19
আপনার এই গল্পের কিছু পর্ব আমি পড়েছিলাম। তবে আজকের পর্বটি পড়ে খারাপ লাগলো আপু।অবশেষে সকিনা তার সন্তানদের অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে দুনিয়ার মায়া ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছে। এটা ঠিক বলেছেন জন্ম-মৃত্যু বিধাতার হাতে। তবে কিছু মৃত্যুতে মানুষেরও হাত থাকে। যাইহোক অসংখ্য ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।
গল্পটি আপনি সময় দিয়ে পড়লেন অনেক ভালো লাগলো।