ক্রিয়েটিভ রাইটিংঃ-দারিদ্রতার কারণে অবুঝ শিশু মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত।

in আমার বাংলা ব্লগyesterday

সবাই কেমন আছেন,

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় কমিউনিটির সম্মানিত ব্লগার ভাই ও বোনেরা। আশা করি বন্ধুরা আপনারা সবাই অনেক অনেক ভালো আছেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি আপনাদের দোয়ায় সৃষ্টিকর্তার অসীম রহমতে। অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকে একটু ফ্রি সময় কাটাচ্ছি। মাঝে মাঝে কাজের চাপ কমে গেলে খুবই ভালো লাগে। আজকে ছোট মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যেতে হলো না। যেহেতু গতকালকে তাদের স্কুলে ক্লাস পার্টি ছিল। আজকে আবার দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাস পার্টি ছিল। যেহেতু বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে কয়েকদিন পরে পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষা শুরু হলে হঠাৎ করে পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সবাই ঘোরাঘুরি জন্য বেরিয়ে পড়বে। তাই আগে থেকে সব স্কুলে ক্লাস পার্টি গুলো শেষ করে নেই। যেহেতু আজকে অন্য ক্লাসের ক্লাস পার্টি ছিল তাই আজকে ছোট মেয়ের ক্লাস অফ ছিল। তাই আজকে একটু অন্য দিনের চেয়ে ফ্রি সময় কাটালাম। যদিও একটু বের হয়েছিলাম সেখান থেকে এসে খাওয়া-দাওয়া করে একটু রেস্ট নিয়েছিলাম। ভাবলাম যে আপনাদের সাথে পোস্ট করে নিলে ভালো হয়।

vecteezy_ai-generated-a-cute-child-smiling-embracing-mother_38994871.jpg
Image Source Location

আজকে একটি আমাদের গ্রামে ঘটে যাওয়া একজন মেয়ের বাস্তব গল্প শেয়ার করব। আমাদের পাশের এক দরিদ্র পরিবার ছিল। সেই পরিবার এত দরিদ্রতা ছিল এত অভাব ছিল তারা কোন রকমের একবেলা খাইতো আরো দুই বেলা খেতে পারতো না এমন অবস্থা। এমনকি আমরা ছোট থাকতেই ওই ফ্যামিলির মেয়েরা আমাদের ঘরে এসে খাওয়া দাওয়া করতো। যাক সে দিকে আর যাচ্ছি না। সৃষ্টিকর্তা যাকে যেভাবেই রেখেছেন। তাদের ফ্যামিলিতে তারা তিন বোন ছিলেন। মা-বাবা ছিল এবং তাদের ছয় ভাই ছিলেন। তবে এত সন্তান থাকার সত্বেও কিন্তু সেই পরিবারে কোন ভাল ইনকাম হতো না। বিশেষ করে আমি যখন ছোট ছিলাম তখন তাদের পরিবারের সবাই ছোট ছিল বেশি ভাগ সন্তানেরা। আর যারা বড় ছিল তারা তেমন ভালো ইনকাম করতে পারত না।

তিন বোনের মধ্যে বড় মেয়ে ছিলেন আনচার বেগম। বিভিন্ন জায়গা থেকে তার জন্য বিয়ের সম্বন্ধ আসতে থাকে। কিন্তু গরিব ঘরের মেয়ে বলে ভালোভাবে বিয়ে দিতে পারছে না। ভালো প্রস্তাব আসলেও তারা ভালো ঘরে মেয়ে বিয়ে দিতে পারছে না যেহেতু অনেক দাবি দাওয়া থাকে। একদিন একটি প্রস্তাব আসলো অনেক দূর থেকে। সেই পরিবারে ছেলের মা বাবা ছিল না ভাই বোন ছিল। কিন্তু ছেলেটি দেখতে ভালো ছিল সুন্দর ছিলো। অবশ্যই সেই প্রস্তাবটি আনচার বেগমের খালাতো বোন আনছিল। যেহেতু তাদের ভালো লাগছিল ধুমদাম করে আনচার বেগমের বিয়ে হয়ে যায়। সবাই অনেক খুশি যেহেতু পরিবার থেকে একটি মেয়ে বিয়ে দিতে পারলে আরো দুই মেয়ে যুবতি হয়ে গেছে। আনচার বেগম বিয়ের পরে বাপের বাড়িতে বেড়াতে আসে। আনচার বেগমের মুখ থেকে যে কথাগুলো শুনলাম আমরা মোটেই ভালো ছিল না।

পরে শোনা যায় আনচার বেগমের স্বামী একজন বেকার ছিল। বিশেষ করে সেই বিভিন্ন ধরনের নেশাগ্রস্ত হয়ে থাকতো। আর নেশা করতে না পারলে তার অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে আনচার বেগমকে সেই নেশা করা জিনিসগুলো তার হাজবেন্ডকে প্রস্তুত করে পরিবেশন করে দিতেন। কি আর করার হাজবেন্ড যা বলতো সেই হুকুম মত চলতো। কথাই বলে যার কপালে দুঃখ আছে সেই দুঃখ কখনো যায় না। যেহেতু আনচার বেগমের বাপের বাড়িতে প্রচুর পরিমাণ অভাব ছিল। তারা চিন্তা করেছিলেন স্বামীর ঘরে গিয়ে একটু শান্তিতে থাকবে কিন্তু তা আর হলো না। সেখানেও একই অবস্থা এক বেলা খেয়ে দুই বেলা না খেয়ে থাকতো। মাঝে মাঝে কোন আবার খাবার একদম থাকতো না। অবশেষে আনচার বেগম সেখানে শ্বশুরবাড়ির পাশের একটি বাড়িতে মাঝেমধ্যে কাজ করতে যেত সেখান থেকে ভালো মন্দ খেতেন।

এরকম করতে করতে সেই ঘরে আনচার বেগমের একটি কন্যা সন্তান হল। কি আর করবে যেহেতু বাপের বাড়িতেও অভাব স্বামীর ঘরেও অভাব সেখানে আবার একটি বাচ্চা হয়ে গেল। তখন তারা দুঃখ কষ্টের মেনে নিতে শুরু করলেন। কিন্তু দিন যত যায় তার স্বামীর অবস্থা তত খারাপ হয়ে যায়। কথাই বলে না অভাবে পড়লে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালাই। ভালোবাসা ঘরে থাকে না জানালা দিয়ে পালিয়ে যাই। আনচার বেগমের সেই অবস্থা হয়েছিল। সেই চিন্তা করল এই স্বামীকে নিয়ে তার সারা জীবন চলবে না। সেই জন্য সিদ্ধান্ত নিলো সেই স্বামীর সংসার আর করবে না। হঠাৎ একদিন আনচার বেগম স্বামী আর মেয়ের সহ বাপের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। এখন আনচার বেগম তার ভাইদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিল তালাক নিয়ে নিবে। পরের দিন স্বামীকে তারা মারধর করে তালাক নামায় সাইন করে নিয়ে বাচ্চা মেয়েটিকে তার বাপের সাথে নিয়ে তাড়িয়ে দিলেন। সেদিন খুবই খারাপ লাগছিল আমার। কারণ একজন মা হয়ে তার সন্তানকেও ছেড়ে দিল। অবশেষে অভাবে পড়ে আনচার বেগম স্বামীকে তালাক দিলো সাথে বাচ্চাকে বাবার সাথে দিয়ে দিল।

এভাবে আনচার বেগম বুকের মধ্যে পাথর দিয়ে রাখল তার সন্তানের মায়া ত্যাগ করে দিল। যেহেতু সন্তান রাখলে তার ভাইয়েরা আনচার বেগমকে ঘরে রাখবেনা। সেই চিন্তা করল বাপের বাড়িতে অভাব সেই মেয়েকে রাখলে ভালো ঘরে আবার বিয়ে হবে না। এমন চিন্তা করে আনচার বেগম তার সন্তানের ভালোবাসা একেবারে বিচ্ছিন্ন করে দিল ত্যাগ করলো। হঠাৎ একদিন খবর পেল আনচার বেগমের সেই মেয়ে অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন। মেয়েটি অনেক সুন্দর ছিল একদম সাদা। চেহারাটা খুবই কিউট ছিল। আনচার বেগম সুন্দর ছিল তার স্বামী ও সুন্দর ছিল তাই তাদের সন্তান অনেক সুন্দর ছিল। এভাবে অভাবের কারণে একজন শিশু তার মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল। আমাদের পৃথিবীটা খুবই নিষ্ঠুর। আসলে অভাবের কারণে কেউ কাউকে সহজে চিনতে চাইনা।

আনচার বেগমের সেই মেয়ে মারা গেল। আর আনচার বেগম তার বাবার বাড়তে সুখ দুঃখে দিন কাটাতে থাকলো। সেই স্বামীর কোন খোঁজ খবর নাই। এভাবে চলতে চলতে আনচার বেগমের অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে গেল। যে যার মত সুখে শান্তিতে ঘর সংসার করতে লাগলো। অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানল সেই আনচার বেগমের অবুঝ শিশু কন্যা সন্তানটি। অভাবের কারণে সেই কন্যা সন্তানটি তার মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল। কথাই বলে অভাবে সবকিছুই হারায়। ভালোবাসা হারায় আর স্বভাব হারাই। সেটা আসলেই চিরন্তন সত্য।

আশা করি বন্ধুরা আমার আজকের শেয়ার করা বাস্তব গল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। তো বন্ধুরা আপনাদের কেমন লাগলো জানালে অনেক বেশি খুশি হব। গল্পটি নিয়ে আপনাদের কাছ থেকে মতামত জানতে চাই।

268712224_305654151337735_1271309276897107472_n.png

লেখার উৎসনিজের অনুভূতি থেকে
ইমেজ সোর্সভিক্টিজি ডট কম
অবস্থানকক্সবাজার, বাংলাদেশ
ক্যাটাগরিক্রিয়েটিভ রাইটিং


সবাইকে অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য।

268712224_305654151337735_1271309276897107472_n.png

🥀আল্লাহ হাফেজ সবাইকে🥀


আমার পরিচয়
আমি সামশুন নাহার হিরা। আমার ইউজার আইডি @samhunnahar। আমি আমার বাংলা ব্লগে কাজ করছি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে। আমি বাংলা ভাষায় লিখতে-পড়তে অনেক ভালবাসি। রান্না করতে আমি অনেক পছন্দ করি। তাছাড়া সময় পেলে ভ্রমণ করি আর প্রকৃতিকে অনুভব করি। ফটোগ্রাফি করতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। আমি মাঝে মাঝে মনের আবেগ দিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করি। আমার প্রিয় শখের মধ্যে তো গান গাওয়া অন্যতম। আমার মনের ভাব বাংলায় প্রাকাশ করতে পেরে অনেক আনন্দিত। তার জন্য আমার প্রাণের/ভালবাসার কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"কে অনেক ভালবাসি।

D5zH9SyxCKd9GJ4T6rkBdeqZw1coQAaQyCUzUF4FozBvW7DiLvzq9baKkST8T1mkhiizFXSFVv2PXDydTeMWpnYK2gToiY733FT9uwSdBSXWz7RnGmzsa8Pr9pGoyYaQFsuS3p.png

Banner_PUSS1.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 yesterday 

আমার আজকের টাস্কঃ-

Screenshot_20241124-183139~2.png

Screenshot_20241124-184024~2.png

Screenshot_20241124-184111~2.png

 yesterday 

একদম ঠিক বলেছেন আপু অভাবে সবকিছুই হারায়।মেয়েটির জন্য খুবই খারাপ লাগছে। সবাই তো যে যার মতো জীবনটা গুছিয়ে নিয়েছে কিন্তু মাঝখান থেকে বাচ্চাটার জীবন শেষ হয়ে গেল। এরকম ঘটনা আমাদের আশেপাশে অনেক আছে আপু। বেশ ভালো লাগলো আপনার শেয়ার করা গল্পটি পড়ে।

 yesterday 

খুব খারাপ লাগলো গল্পটা পড়ে।
আনচার বেগম এবং তার স্বামীকে এই পাপের জন্য দুনিয়া এবং আখিরাতে চরম শাস্তি পেতে হবে। ফুটফুটে একটা শিশুকে তারা মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছে এর থেকে ঘৃন্য কাজ আর কি হতে পারে।
খুব খারাপ হবে তাদের।

Coin Marketplace

STEEM 0.25
TRX 0.20
JST 0.036
BTC 94901.35
ETH 3495.37
USDT 1.00
SBD 3.47