মায়ের ঋণ গল্পের শেষ পর্ব
হ্যালো বন্ধুরা,
আপনার সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে এই গল্পের শেষ পর্বটি উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।
সোর্স
বেশ কয়েকদিন পর বিজয় অসুস্থ হয়ে পড়ে অফিসের কাজকর্ম ঠিকঠাক ভাবে করতে পারেনা। মিরা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় ডাক্তার তেমন কিছু বলতে পারেনা শুধু বলে হয়তো বা বড় ধরনের কোন সমস্যা হয়েছে। কিছু টেস্ট করতে বলে ডাক্তার। মিরা বিজয়কে নিয়ে সেই সব টেস্ট গুলো করায়। ডাক্তার বিজয়ের রিপোর্ট গুলো দেখে অবাক হয়ে যায়। পরবর্তীতে ডাক্তার মিরাকে এবং বিজয়কে হাসপাতালে আসতে বলে। বিজয় এবং মিরা দুজনেই হাসপাতালে এসে উপস্থিত হয়। ডাক্তারের সঙ্গেও দেখা করে। মিরা ডাক্তারকে বলে, কি হয়েছে ডাক্তার বাবু? ডাক্তার একটু চুপ থেকে তারপর বলে তার একটি কিডনি অচল হয়ে গেছে। কথাটি শোনার পর তাদের দুজনের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। বিজয় বলে এর কি কোন চিকিৎসা নাই। ডাক্তার বিজয় কে বলে অবশ্যই রয়েছে। বিজয় বলে ডাক্তার যত টাকা লাগবে আমি আপনাকে দিব আপনি চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। ডাক্তার বলে আপনার ড্যামেজ কিডনিটি ফেলে দিয়ে নতুন একটি কিডনি দিলেই আপনার কিডনি ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তার জন্য যে আপনার রক্তের সাথে এবং কিডনির সাথে ম্যাচিং দরকার। মিরা বলে ডাক্তার আপনি চেষ্টা করুন অবশ্যই আপনি পারবেন। ডাক্তার তাদেরকে আশ্বাস দেয় এবং কিছু ওষুধ দেয় সেগুলো খাওয়ার জন্য। বিজয়ের অন্যান্য রোগও হয় যার জন্য সে সঠিকভাবে চলাচল করতে পারছিল না।
বাড়িতে আসতেই মিরা বিষয়কে বলে, কতগুলো টাকা তোমার পিছনে আমার নষ্ট করতে হচ্ছে। তুমি কোন কাজেরই না তোমাকে বিয়ের পর থেকে আমাদের ব্যবসা সঠিকভাবে চলছে না লসের পরে লস হচ্ছে। তোমাকে বিয়ে করাটাই আমার ভুল হয়েছে। না তুমি আমাকে দিতে পারো সময়, না তুমি দিতে পারো অফিসে সময়। সব সময় শুধু মা মা করতে থাকো। বিজয় মিরাকে বলে, আমি এখন বুঝতে পারছি তোমাকে বিয়ে করে আমি কতটা ভুল করেছি। টাকা আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল। আর আজ যখন বুঝতে পারছি তখন আমার হাতে আর কিছুই নেই। আমি আমার মাকে কষ্ট দিয়েছি দিনের পর দিন তাকে অবহেলা করেছি। সে অসুস্থ হয়ে পড়লে, সে আমাকে দেখতে চেয়েছিল কিন্তু আমি যাইনি। আমি বুঝতে পারছি সৃষ্টিকর্তা তার ফল আমাকে দিচ্ছে। যাকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম সেই মানুষটা একটি টাকার মেশিন। সে টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেনা। আজ আমার এই অবস্থা তা দেখেও তুমি টাকা নিয়ে পড়ে আছ। মিরা বলে, বিজয় একদম বাজে কথা বলবে না। আমি তোমাকে জোর করে বিয়ে করিনি। বিয়ে করার আগে আমার বাবা তোমাকে সব কথা বলেছিল। তুমি তার কথায় রাজি হয়ে ছিলে। এখন তুমি আমাকে কোন দোষ দিতে পারবে না। বিজয় বলে এটাই ছিল আমার সবথেকে বড় ভুল। সেই ভুলের মাসুল আজ আমাকে গুনতে হচ্ছে।
মিরার সঙ্গে কথা শেষ করে বিজয় অসুস্থ শরীরে গাড়িটি বের করে সোজা চলে আসে গ্রামে তার মায়ের কাছে। মা তখন রান্না করছিল। বিজয় বাড়িতে এসে মা মা বলে চিৎকার করতে থাকে। বিজয়ের কণ্ঠ শুনে মা রান্না ফেলে ছুটে চলে আসে। এসে দেখে বাড়ির উঠানে বিজয় দাঁড়িয়ে আছে। বিজয়কে দেখে মা ছুটে চলে আসে বিজয়ের কাছে। মা এসে দেখতে পায় বিজয় চেহারাটা একদম ভেঙে গেছে। বিজয় মাকে দেখে নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে মাকে জড়িয়ে ধরে। আর বলতে থাকে মাগো তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি যে বড়ই পাপী। মা বলে, কি হয়েছে তোর?তোকে এমন লাগছে কেনো ?বিজয় বলে আমি খুব অসুস্থ মা। মা বলে কি হয়েছে তোর? শরীরের রোগের বাসা বেঁধেছে।একটা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। হয়তো আমি বেশি দিন বাঁচবো না। মা কথাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে তার একটি হাত দিয়ে বিজয়ের মুখ চেপে ধরে। আর বলে এমন কথা বলতে হয় না আমি যে তোর মা। আমি থাকতে তোর কিছুই হবে না। বিজয় বলে মাগো আমি তোমার ভালোবাসা বুঝতে পারিনি।টাকার নেশায় আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। তুমি অসুস্থ হয়ে দিনের পর দিন কাটিয়েছো। আমাকে তুমি দেখতে চেয়েছো কিন্তু আমি এতটাই পাপী আমি তোমাকে দেখতে আসতে পারিনি। কতই না অপমান তোমাকে আমি করেছি।তুমি মুখ বুজে সেটা সহ্য করে গেছে। মাগো তোমাকে আমি কষ্ট দিয়েছি ঈশ্বর সেই পাপের ফল আমাকে দিচ্ছে।
এই বলে বিজয় কান্না করতে করতে তার মায়ের দুটি পা জড়িয়ে ধরে।আর বলতে থাকে আমাকে তুমি ক্ষমা কর,আমাকে তুমি ক্ষমা করো। মা বলে ওরে আমার পাগল ছেলে। মায়ের কাছে ছেলে কি কোনদিন অপরাধ করে। আমিতো তোকে কোনদিন অভিশাপ দিনি। আমি বেঁচে থাকতে আমি তোর কিছুই হতে দেব না। আমার একটি কিডনি আমি তোকে দিয়ে দিব তুই আবার সুস্থ হয়ে উঠবি। বিজয় কথাটি শুনে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে আর বলতে থাকে মা মা মা 😭😭😭। আমি তোমাকে এত কষ্ট দিয়েছি তবুও তোমার আমার পতি এতো ভালোবাসা। মা বলে, চল আর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকিস না। তুই ভিতরে এসে বিশ্রাম কর। আমি তোর জন্য গরম গরম খাবার তৈরি করে নিয়ে আসছি। কিছুদিন পর বিজয় ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং তার মাকে নিয়ে যায়। সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার মায়ের সঙ্গে বিজয়ের কিডনিটি ম্যাচ করে। দীর্ঘক্ষণ অপারেশন করার পর ডাক্তার সফল হয়। এরমধ্যে বিজয়ের অপারেশনের কথা শুনে মিরা চলে আসে হাসপাতালে। মিরা তার ভুল বুঝতে পেরেছে। সে বুঝতে পেরেছে পৃথিবীতে স্বামী সবকিছু। স্বামী যদি না থাকে একজন স্ত্রীর কোন মূল্য থাকে না। তাই তো সে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বিজয়ের কাছে চলে আসে।
একদিন পর ডাক্তার বিজয় সঙ্গে দেখা করতে দেয় মিরাকে। মিরাকে দেখে বিজয় মুখটি ঘুরিয়ে রাখে। মিরা বিজয়ের দুটি পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। সে যা করেছে ভুল করেছে তাকে যেন বিজয় ক্ষমা করে দেয়। বিজয় তখন মিরাকে বলে, ক্ষমা যদি চাইতে হয় আমার মায়ের কাছে যাও। সে যদি তোমাকে ক্ষমা করে তাহলে আমিও তোমাকে ক্ষমা করে দেবো। এরপর মিরা বিজয়ের মায়ের কাছে যায়। আর যে মায়ের পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করে। মা বলে কে তুমি? এমন করে কাঁদছো কেন? মিরা তার পরিচয় দেয়। পরিচয় শোনার পর মা হেসে দিয়ে মিরাকে বলে তুমি আমার ছেলের বউ। তুমি পায়ের কাছে কেন রয়েছো আমার কাছে এসো তোমাকে একটু দেখি। মিরা তখন মায়ের কাছে যায় মা মাথায় হাত বুলিয়ে বলে তোমরা আমার সন্তান তোমাদের উপর আমার কোন রাগ। আমি তো চাই তোমরা সারাটা জীবন সুখে থাকো শান্তিতে থাকো। যাইহোক,সেদিনের পর থেকে বিজয়,মিরা ও তার মা সবাই একসঙ্গে বসবাস করতে শুরু করে। কয়েক বছর পর মিরা ও বিজয়ের জীবনে নতুন একটি সদস্য আসে। তাদের এখন একটি সুখী পরিবার।
পৃথিবীতে মায়ের ভালোবাসার কোন তুলনা হয় না। আমাদের সবার উচিত মাকে সম্মান দেওয়া। আসলে মা হাজার কষ্টে থাকলেও কখনো সন্তানকে অভিশাপ দেয় না।যাইহোক সবাই সবার ভুল বুঝতে পেরেছে জেনে অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর লিখেছেন।