শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো' গল্পের অষ্টম পর্ব
হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে 'শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো' গল্পের অষ্টম পর্বটি উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে। তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।
সোর্স
সুলতানা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখতে পায় রাতুল খাবার টেবিলে খাবার পরিবেশন করে বসে আছে। রাতুল সুলতানা কে ডাক দিয়ে খাবার খেতে আসতে বলে। খাবার দেখে সুলতানা দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে বসে খাইতে শুরু করে। সুলতানার খাওয়া দেখে রাতুল সুলতানা কে বলে।
রাতুল: ধীরে ধীরে খাবার খাও।
সুলতানা: আসলে অনেকদিন পর ভাত খাচ্ছি তো তাই নিজেকে সামলাতে পারিনি।
রাতুল: না জানি তুমি কতই কষ্ট করেছো। একটু খাবারের জন্য পথে পথে মানুষের কাছে ভিক্ষা করেছো। আজ থেকে তোমার আর খাবারের জন্য মানুষের কাছে হাত পাততে হবে না।
সুলতানা: তুমি আজ যা করেছ সেটা আমার আপন ভাই ও মনে হয় করতো না। রাস্তা থেকে উঠিয়ে এনে তোমার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছ। পেট ভরে খাইতে দিয়েছো। আসলে তুমি মহান, তুমি মহান।
রাতুল: এসব বলে তুমি আমাকে আর ছোট করো না। এটাতো আমার কর্তব্য।
সুলতানা: আমার একটা কথা রাখবে?
রাতুল: এমন কোন কথা বলো না যেটা আমি রাখতে পারব না।
সুলতানা: এখন বলবো না সকাল হোক তারপর না হয় তোমাকে বলবো। আজ তুমি অনেক কষ্ট করেছ তাই এখন আর তোমাকে বিরক্ত করব না তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
রাতুল: তুমি এখন না বললে রাতে আমার ঘুম হবে না।
সুলতানা: তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা না কিন্তু তারপরেও এখন তোমাকে বলতে চাই না।
রাতুল: আচ্ছা ঠিক আছে সকালে না হয় কথাগুলো শুনবো। তুমি ঘুমায় যাও আর কোন সমস্যা হলে অবশ্যই আমাকে ডাক দিবে।
সুলতানা: সমস্যার মাঝে থেকে তুমি আমাকে তুলে নিয়ে এসেছো। তাই মনে হয় না আর কোন সমস্যা হবে আমার।
পরবর্তীতে রাতুল ও সুলতানা তারা দুজনেই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। খুব ভোরে ওঠে সুলতানা নামাজ পড়ে রান্নাঘরে যে খাবার তৈরি করতে শুরু করে। সকাল হতেই রাতুল দেখতে পায় সুলতানা রান্নাঘরে খাবার তৈরি করছে। সঙ্গে সঙ্গে রাতুল সুলতানার কাছে যে সুলতানা কে বলে।
রাতুল: এসব কি করছো তুমি রেখে দাও আমি করে নেব।
সুলতানা: রাতুল তুমি আমার জন্য অনেক করেছো। আমি না হয় এইটুকু কাজ তোমার জন্য করি।
রাতুল: আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে মানা করবো না। কারণ এটা তোমার বাড়ি তোমার যা ইচ্ছা তুমি করতে পারো। আচ্ছা তোমার মেয়ে ঘুম থেকে উঠেছে।
সুলতানা: না ও এখনো ঘুমিয়ে আছে। অনেকটা দিন ভালোভাবে ঘুমাতে পারে না তো। তাই মনে হয় আজ সেই ঘুম পুষিয়ে নিচ্ছে।
রাতুল: আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু তোমার মেয়ের নাম কি? আমার তো জানা হয়নি।
সুলতানা: ওর নাম ফাতেমা।
রাতুল: খুব সুন্দর নাম। আচ্ছা তুমি রান্না কর, আমি একটা বার ফাতেমাকে দেখে আসি।
রাতুল চলে যায় ফাতেমার কাছে। যে দেখতে পায় ফাতেমা বিভোর ঘুমে। তাই তাকে আর না ডেকে কপালে চুম্বন করে রাতুল চলে আসে। রাতুল চলে যায় ফ্রেশ হতে। একটু পরে সুলতানা রাহুলকে ডাক দেয় খাবার খাওয়ার জন্য। খাবার খেতে এসেই দেখতে পায় ফাতেমা ঘুম থেকে উঠেছে। রাতুল ফাতেমাকে বলে ফ্রেশ হয়ে দ্রুত এসো একসঙ্গে আমরা সবাই খাব। ফাতেমা কিছুই বুঝতে পারে না তার কাছে সবকিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছিল। কারণ সে যখন রাতুলের বাসায় এসেছে তখন সে ঘুমিয়ে ছিল। আর ঘুম থেকে উঠেই সে দেখতে পায় নরম বিছানার উপর সে শুয়ে আছে। ফাতেমা জানে সে তার মায়ের সঙ্গে রাস্তার ফুটপাতে ঘুমিয়ে থাকে। কিন্তু এখন সে কোথায় ফাতেমা তার মাকে জিজ্ঞাসা করে।
ফাতেমা: মা মা আমরা কোথায় এসেছি?
সুলতানা: আজ থেকে আমরা এখানেই থাকবো।
ফাতেমা: সত্যি বলছ মা এটা আমাদের বাড়ি।
রাতুল: হ্যাঁ মা এটা তোমাদের বাড়ি।
ফাতেমা: মা এই কাকাটা কে?
সুলতানা: আমরা এই কাকার বাড়িতেই থাকব। এই বাড়িটা তোমার এই কাকার।
ফাতেমা: আজ থেকে আমরা আর রাস্তায় থাকবো না। আমার এই বাড়িটা খুবই পছন্দ হয়েছে।
রাতুল: হ্যাঁ আজ থেকে তুমি আর রাস্তার ফুটপাতে ঘুমাবে না। আজ থেকে তুমি নরম বিছানায় ঘুমাবে।
সুলতানা: দ্রুত খেতে বসো তোমার কাকা খাওয়া-দাওয়া করে আবার অফিসে যাবে।
রাতুল: না সুলতানা আজ অফিসে যাব না। আজ তোমাদের নিয়ে শপিংয়ে যাব, স্কুলেও যাব।
সুলতানা: কিন্তু কেনো?
রাতুল: কারণ ফাতেমার জামা প্যান্ট কিনতে হবে তোমার ব্রোকা কিনতে হবে। আর ফাতেমাকে স্কুলে ভর্তি করতে হবে।
সুলতানা: আমার এসব কিছুই লাগবেনা। তুমি তো আমাদের জন্য অনেক করছ আর করোনা আমাকে আর ঋণী করো না।
রাতুল: আমি আমার মেয়ের জন্যই করছি।
সুলতানা: তোমার মেয়ে কথাটা বুঝলাম না।
রাতুল: আজ যদি তোমার আর আমার বিবাহ হত তাহলে আমাদের সন্তান ফাতেমার মতন এত বড় হয়ে যেত।
রাতুলের মুখে এই কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সুলতানা খাওয়া ছেড়ে উঠে পড়ে। রাতুল বুঝতে পারে সেও আর না খেয়ে তার রুমে চলে যায়। এরপর রাতুল তাদেরকে নিয়ে মার্কেটে বের হয়। সবার জন্য পোশাক-আশাক নেওয়া হয়। ফাতেমার জন্য অনেক প্রকারের খেলনা কেনে রাতুল। ফাতেমা সেগুলো পেয়ে খুবই খুশি হয়। ফাতেমা রাতুলকে জড়িয়ে ধরে। ফাতেমা রাতুলকে জড়িয়ে ধরার সঙ্গে সঙ্গে রাতুলের দু চোখে জল নেমে আসে। সুলতানা সেগুলো দেখতে পায় কিন্তু কিছুই বলতে পারেনা। অন্যদিকে সুইটি দেখতে পায় অফিস টাইম পার হয়ে গিয়েছে কিন্তু রাতুলের কোন খোঁজ নাই। সে ভাবতে থাকে আজ পর্যন্ত রাতুল কোনদিন অফিস ছুটি করেনি। তাহলে আজ কি হল ওর কি শরীর খারাপ হলো। সুইটি রাতুলকে ফোন দেয়। কিন্তু রাতুল সুইটির ফোন রিসিভ করেনা। এটি দেখে সুইটি আরো অবাক হয়ে যায়। কারণ রাতুলকে সে অনেকদিন ধরে চেনে এমনটি কোনদিনও হয়নি যে রাতুল সুইটির ফোন রিসিভ করেনি। আসলে রাতুলের ফোন পকেটে সাইলেন্ট ছিল যার জন্য সুইটি ফোন দেওয়াতে রাতুল রিসিভ করতে পারেনি। কিন্তু এই বিষয়টি সুইটি জানতো না। সুইটির মনে মনে রাগ হতে থাকে সে ভাবতে থাকে সুলতানাকে পাওয়ার পর রাতুল তাকে ভুলে গিয়েছে। সে চিন্তা করে অফিস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাতুলের সঙ্গে সে দেখা করবে। যেই ভাবা সেই কাজ অফিস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুইটি সোজা চলে যায় রাতুলের বাসায়। কিন্তু সেখানে যেয়ে দেখতে পায় রাতুল বাসায় নেই। তার বুঝতে আর বাকি থাকলো না। সে বুঝতে পেরেছে রাতুলের একমাত্র অফিসে না যাওয়ার কারণ হলো সুলতানা। হয়তোবা তাকে নিয়ে রাতুল ঘুরতে বেরিয়েছে। সেখান থেকে সুইটি আরো রাগান্বিত হয়ে তার বাসায় চলে আসে। এসে আবারো রাতুলকে ফোন দেয় কিন্তু রাতুল আবারো ফোনটি রিসিভ করেনা। সব কাজ কাম শেষ করার পর রাতুল বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বাড়ি এসেই জানতে পারে সুইটি, তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। পরবর্তীতে ফ্রেশ হয়ে রাতে সুইটিকে ফোন দেয় রাতুল। অনেকবার ফোন দেওয়ার পর সুইটি রাতুলের ফোনটি রিসিভ করে জানায়।তার এখন ঘুম আসছে সে এখন কথা বলতে পারবে না। এই বলে ফোনটি কেটে দিয়ে বন্ধ করে রাখে।
শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো' গল্পের অষ্টম পর্ব পড়ে অনেক ভালো লাগলো। মাঝখানের একটি পর্ব পড়েছিলাম। আপনার গল্প পড়তে আমার কাছে খুব ভালো লাগে। রাতুল সুলতানা কে তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছে আর সুলতানার মেয়ে ফাতেমা এমন আরাম আয়েশ পেয়ে খুব খুশি হয়েছে দেখে ভালো লাগলো। অন্যদিকে সুইটির মনে সুলতানা কে নিয়ে রাতুলের প্রতি সন্দেহ হচ্ছে। দেখা যাক পরবর্তী পর্বে কি হয়।
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমার পোস্টটি দেখার জন্য।পরবর্তী পর্ব খুব শীঘ্রই সবার মাঝে উপস্থাপন করব। আশা করি, সেই পর্বটি ও সবার ভালো লাগবে।
দেখতে দেখতে এই গল্পের অষ্টম পর্ব শেষ হয়ে গেল। আর এই গল্পের প্রতিটা পর্ব আমার পড়া হয়েছে। সুলতানা এবং তার মেয়ে ফাতেমা এখন সুন্দরভাবে রাতুলের বাসায় আছে এটা জেনে খুব ভালো লাগলো। তবে অন্যদিকে দেখছি সুইটি অনেক রেগে আছে। এখন আবার কি হয় এটাই দেখতে হবে। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।