স্মৃতিতে ছোটবেলার শীতকাল - ধান, পিঠা আর শিন্নি।
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালো আছেন। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে শীতের আনাগোনা দেখা দিয়েছে। আজ মনে হলো শীত নিয়ে আমার ছোটবেলার স্মৃতি আপনাদের মাঝে তুলে ধরি।
আমি গ্রামে বড় হয়েছি। একটা গ্রামের যেসব গুন থাকা দরকার সবই ছিল আমার গ্রামের। মেঠো পথ আছে, কাঁচা ঘর আছে, নদী আছে, খাল আছে, চাষাবাদের জন্য জমি আছে। অর্থাৎ একটা গ্রামের যা যা দরকার সবই আছে। শীতের এই সময়টা ছিল ফসল তোলার সময়। বর্ষায় চাষাবাদ করা আমন ধান এ সময় পাঁকে। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই যেহেতু ছিল কৃষিজীবি, কম বেশি সবাই আমন ধান চাষ করত। ভ্যানে করে সে ধান নিয়ে আসা হতো। বাড়ির উঠোন ভরে যত ধানের বস্তায়। একসাথে অনেকগুলো ঘর ছিল আর সবারই অনেক বস্তায় বস্তায় ধান আসতো।
ধানের বস্তা গুলো একটার উপর আরেকটি রেখে দেওয়া হতো। আমাদের চাচা-মামা এবং বড় ভাইরা সেগুলোকে গোল করে ঘরের মতো বানাতে। উপরে প্লাস্টিকের চট বিছিয়ে দিত যাতে কুয়াশা না পড়ে। তখন চোরের উপদ্রব ছিল। ওনারা ওই ঘরের মধ্যে থেকে ধানের বস্তা পাহারা দিত। আমাদের বাড়ির বেশ বড় উঠান ছিল। কিন্তু সেখানে একসাথে সবার ধান শুকানোর মত জায়গা ছিল না। এজন্য আগে থেকেই সবাই আলোচনা করো রাখতো কে কবে কোথায় ধান শুকাবে। দুদিন ধান শুকানোর পর সেগুলোকে আবার সিদ্ধ করা হতো। তারপর আরো কয়েকদিন চলতো ধান শুকানো। যখন ধান পুরোপুরি শুকিয়ে চাল বের করার উপযোগী হত তখন ধান ভেঙ্গে চাল বের করা হতো।
এতো গেল ধানের গল্প। শীতকালের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল ভাপা পিঠা। সব ধান যে সিদ্ধ করা হতো এমন না। কিছু ধান রেখে দেওয়া হতো সিদ্ধ ছাড়াই। এসব ধানের চালকে আমরা বলতাম আল্পা চাল। এই চালগুলো রাখা হতো পিঠা বানানোর গুড়ি তৈরির জন্য। ঠিক আটা না ময়দা তা আমি জানিনা। এসব চাল ঢেঁকিতে গুড়ো করে এরপর সেগুলো রোদে শুকিয়ে পিঠা বানানোর উপযোগী করা হতো। যেদিন পিঠা বানানো হতো খুব উৎসব লেগে যেত। কারণ একেকজন গৃহিণী একসাথে ৫০০-৭০০ পিঠা বানাতো। কিছু পিঠা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পাঠানো হতো, কিছু পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যে বিলি করা হতো, আর কিছু নিজেরা রাখতো খাওয়ার জন্য। গুড়ো করা আটার সাথে খেজুরের গুড় মিশিয়ে ভাপা পিঠা বানানো হতো। কখনো কখনো আখের গুড়ও ব্যবহার করা হতো।
আমাদের ওই অঞ্চলের শীতকালের অন্যতম আকর্ষণ ছিল খেজুরের রস। শীতকাল আসলে খেজুর গাছ কাটা হতো। এখান থেকে রস বের হতো সারারাত। সেই রস সকাল বেলা খুব ভোরেই বিক্রি হয়ে যেত। সেই রস দিয়ে ক্ষীর বানানো হতো। আমরা ডাকতাম শিন্নি। আমার অন্যতম প্রিয় খাবার এই শিন্নি। খেজুরের রস, চাল এবং নারিকেল দিয়ে এই শিন্নি বানানো হতো। খেতে খুব মজা! খুব বেশিই মজা! আজ এ পর্যন্তই থাক।
আপনার আজকের এই স্মৃতিমেদুর ব্লগ পড়তে পড়তে আমিও ফিরে গেলাম আমার ছেলেবেলায়। সত্যি গ্রামের প্রকৃতি একেবারেই আলাদা। যারা গ্রামের পরিবেশে বড় হয়েছে জীবন যেদিকেই নিয়ে যায় সেই পরিবেশ সারা জীবনই যেন সেরা হয়ে থাকে। আপনাদের যেমন শীতকাল মানেই ভাপা পিঠের প্রচলন আমাদের এদিকে পুলি পিঠের প্রচলন। আরো একদম মাস পরে আসি নবান্ন উৎসব। কত রকমের ফুল পিঠে হয় আর সেই পুলি পিঠের জন্য যে চালগুড়া করা হতো তার এক আলাদা এই আনন্দ ছিল। আমাদের এদিকে তখন ঢেঁকি ছিল না হামান দিস্তায় গুড়ো হত। সারা দুপুর সেই ঠং ঠং আওয়াজ। অনেকগুলো স্মৃতির কথা বলে ফেললাম আপনার ব্লগটি পড়ে। খুব সাবলীল গদ্যে লিখেছেন। ভালো লাগলো।
আমি আবারও নস্টালজিক হয়ে গেলাম আপনার কমেন্ট পড়ে। ❤️
খুব সুন্দর মন্তব্য করেছেন দিদি। ধন্যবাদ।
আমি নিজেও এতটা বছর গ্রামেই কাটিয়েছি। গ্রামে যেন শীতটা বেশি উপভোগ করা যায়। শীতের সময় ভাপা পিঠা টা বেশি ভালো লাগত আমার। এবং ধান কেটে ফেলার পর একেবারে খালি মাঠ। এটাও বেশ ছিল। সুন্দর ছিল আপনার পোস্ট টা। শীতকাল নিয়ে আপনার স্মৃতিচারণ টা বেশ ছিল।
ধন্যবাদ ভাই। গ্রামের জীবনই অন্য রকম। আপনার কমেন্ট পড়ে ভালো লাগলো।