পাইরেসি - বাংলা সিনেমা এবং মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংসের অন্যতম কারণ।

in আমার বাংলা ব্লগ5 days ago

আসসালামু ওয়ালাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদের সাথে আমাদের দেশের একটি বড় সমস্যা পাইরেসি নিয়ে কথা বলব। পাইরেসির কারণে আমাদের দেশের দুটি বড় শিল্প ইন্ডাস্ট্রি, সিনেমা এবং মিউজিক, ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।


movie-3057394_1280.jpg

Image by MasterTux from Pixabay


বলা হয় বাংলা গান এবং বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগ ছিল ৮০ এবং ৯০ এর দশক। সে সময় বহু বাংলাদেশী সিনেমা দর্শক প্রিয়তা পেয়েছে। হাল আমলে আমরা যেসব সিনেমা নিয়ে কথা বলি, যেগুলোকে আমরা চির সবুজ কিংবা কাল্ট হিসেবে গণ্য করি, সবগুলোই কিন্তু ওই সময় নির্মিত সিনেমা। ফারুক, আব্দুর রাজ্জাক রাজ, সোহেল রানা, আলমগীর, ববিতা, শাবানা, জসিম, সালমান শাহ, যার কথাই বলি না কেন তারা সবাই ওই সময়ের আর্টিস্ট।

উচিৎ ছিল এই সময়ে আধুনিক যুগে, অত্যাধুনিক ক্যামেরার সামনে, আধুনিক প্রযুক্তি সহকারে বাংলাদেশের সিনেমা আরো তরতরীয় উপরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে বরং দিন দিন বাংলাদেশী সিনেমা যেন পিছু হটছে। দেশে সিনেপ্লেক্স এর সংখ্যা বাড়লেও সেখানে বাড়নি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা। বরং সিনেপ্লেক্সগুলোতে রমরমা ব্যবসা করছে ভিন্ন দেশি, ভিন্ন ভাষার সিনেমাগুলো। কখনো কি ভেবেছেন কেন এমনটা হচ্ছে?

বাংলাদেশের জনপ্রিয় যত সংগীত শিল্পী রয়েছে তাদের বেশির ভাগই ২০০০ সালের পরে, অর্থাৎ এই শতকে নতুন অ্যালবাম খুব একটা বাজারে নিয়ে আসেনি। যে কয়েকটি অ্যালবাম হিট হয়েছে তার সবগুলো আমরা হাতের আঙ্গুলে গুনে শেষ করতে পারবো। কখনো কি ভেবেছেন এমনটা কেন হল? যেখানে বাংলা গান আমার মতে বিশ্বের অন্যতম সেরা যুগান্তকারী গান উপহার দিয়েছিল। আমাদের আজম খান, লাকি আকন্দ, কুমার বিশ্বজিৎ, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, সুকান্ত ভট্টাচার্য, বাপ্পা মজুমদার কিংবা রক ব্যান্ডগুলোর দিকে যদি তাকাই তাহলে বহু নাম পাওয়া যাবে যারা গত শতকের শেষ দিকে বাংলা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। এ শতকের শুরুর দশকে আমরা বেশ কয়েকটি ভালো গান পেয়েছিলাম। কিন্তু তারপরে হঠাৎ করেই যেন এই ইন্ডাস্ট্রি মুখ থুবড়ে পড়ল। এর কারণটা কি?

এর কয়েকটি বড় কারণ রয়েছে। প্রথম কারণটি হচ্ছে সহজলভ্যতা। ইন্টারনেটের কারণে এখন আমরা খুব সহজেই একটিমাত্র গান বাছাই করে সেই গানটি শুনতে পারি। প্রয়োজন মত কোন সিনেমা দেখতে মন চাইলে সেটা বাসায় বসে মোবাইলে কিংবা টিভির স্ক্রিনে ডাউনলোড করে দেখতে পারি। আগে সে সুযোগটা ছিল না। গানের জন্য অ্যালবাম কিনতে হত কিংবা সিনেমা দেখার জন্য সিনেমা হলে যাওয়া লাগত। যেহেতু এখন আর সিনেমা হলে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না, নিজের বাড়িতে বসেই সিনেমা দেখা যায়, তাই সিনেমা হলগুলো দিন দিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গুটিকতক যা আছে তারাও হয়তো বেশিদিন টিকবে না। হয় সিনেপ্লেক্সে রূপান্তরিত হবে না হয় একদমই উড়ে যাবে।

কিন্তু এটা হওয়ার কোন কারণ ছিল না। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় মুভি ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। বলিউড, টলিউড, কলিউড, টালিউড, মালায়ম ইত্যাদি ইত্যাদি বহু ইন্ডাস্ট্রিজ হয়েছে যারা প্রতিবছরই নিজেদেরকে গত বছরের তুলনায় নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন সিনেমা নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে। প্রতি বছরই নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। তাহলে কি তাদের দেশে মোবাইল নেই? তাদের দেশে কি ইন্টারনেট ব্যবস্থা নেই? সবই আছে। কিন্তু তাদের মধ্যে আমাদের মত নিজেদের শিল্পকে হত্যা করার পরিকল্পনা নেই। আমাদের দেশে যা হয়, কোন সিনেমা কিংবা গান যদি নতুন বের হয় ওই দিনই তার পাইরেসি বাজারে চলে আসে। যেটাকে আমরা বলি হল প্রিন্ট। এ ধরনের পাইরেসি যখন ঘটে, মানুষ আর ঘাটের টাকা খরচ করে সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে যায় না। তারা বাড়িতে বসে সিনেমা ডাউনলোড করেই দেখে ফেলে। এতে করে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি হচ্ছে এবং এভাবে চলতে থাকলে একদিন এই ইন্ডাস্ট্রিগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।

দ্বিতীয় যে কারণটি, কোয়ালিটিগত সমস্যা। বাংলা সিনেমা এখন আর মানুষ দেখে না এর বড় একটি কারণ হলো সিনেমার কোয়ালিটির লোপ পেয়েছে। হাজার বছর ধরে কিংবা সারেং বউ এর মত সিনেমা এখন আর এই দেশে নির্মিত হয় না। এখনকার সিনেমা গুলো খুবই সস্তা জনপ্রিয়তার পিছু হাঁটছে। না আছে মান, না আছে সম্মান। কিছুই নেই! কেন মানুষ নিজের পকেটের টাকা খরচ করে এসব জিনিস দেখতে যাবে?

যারা গান গাচ্ছে, নিজেদের মধ্যে কোন সৃষ্টিশীলতা নেই। বিদেশি কোন এক অজানা গানের অজানা সুর তারা নকল করে নিজেরা গান গায়। এখন আধুনিক যুগ। কোনভাবেই মানুষকে বোকা বানানো যাবে না। এরকম চুরি-চাতুরি করে মানুষের সাথে পেরে ওঠা যাবে না। দর্শক-শ্রোতারা ঠিকই ধরে ফেলবে কোথা থেকে কোন গানটি চুরি করা হয়েছে। কোথা থেকে কোন সুরটি নকল করা হয়েছে। যার ফলে মানুষ এসব কোয়ালিটিহীন গান এবং সিনেমা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

এর মানে হলো, কিছু পাইরেসি দর্শকদের পক্ষ থেকে হয়, কিছু পাইরেসি শিল্পিরা নিজেরা করে। যার কারনে আদতে শিল্পেরই ক্ষতি হচ্ছে। খুব শীঘ্রই বাংলাদেশে সৃজনশীল, রুচিশীল, নতুন ধরনের শিল্পকর্ম আশা করা যাচ্ছে না। পাইরেসি আমাদের বিশাল ক্ষতি করছে।


PUSS_gif.gif

নিজের সম্পর্কে
আমি মুহাম্মদ সাব্বির আকিব। জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি। জেলাঃ চাঁদপুর, থানাঃ ফরিদগঞ্জ। থাকি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানাধীন দক্ষিণ গাজীরচট নামক স্থানে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রসায়নে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে একটি ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্ট হিসাবে কর্মরত রয়েছি। বিবাহিত এবং আল্লাহ একটি পুত্র সন্তানের জনক করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
Sort:  
 5 days ago 


az_recorder_20250115_220341.jpg

Tweet from own a/c


az_recorder_20250115_220432.jpg

CoinMarketCap Post


az_recorder_20250115_220610.jpg

az_recorder_20250115_220539.jpg

DEX + Others Vote Screenshot


az_recorder_20250115_220627.jpg

Super Walk

 5 days ago 

বাংলা সিনেমা ও গানের সৃজনশীলতার অভাব এবং পাইরেসির নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে যে বিশ্লেষণ করেছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচাতে সৃজনশীল উদ্যোগ ও পাইরেসি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। ধন্যবাদ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য।

 5 days ago 

ঠিক বলেছেন। এই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া এখন সময়ের দাবি। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.23
TRX 0.24
JST 0.038
BTC 104901.64
ETH 3329.53
SBD 4.90