আমার বাংলা ব্লগ। অজ গায়ে এক টুকরো শহরের গল্প। ১০% পে-আউট লাজুক খ্যাক এর জন্য।
চলুন যাওয়া যাক মূল পর্ব।
অজ গায়ে এক টুকরো শহরের গল্প।
আমি এবার ঈদের ছুটি পেয়ে গেছি পঁচিশ শে রমজান ঈদের ৪/৫ দিন আগে। তবে বাড়িতে যাওয়ার পর আমি পুরোপুরি নেটওয়ার্কের বাইরে চলে গিয়েছিলাম। কারন আমার ঘরে তেমন একটা নেটওয়ার্ক থাকে না। আর ঈদের আনন্দে বাড়িতে গিয়ে রাস্তায় অথবা দোকানপাটে কোন রকম কাজ করা প্রায় অসম্ভব। তাই অনেক গল্পই জমে আছে। আর ঈদের ছুটি আপনাদের দোয়ায় ভাল ভাবে কাটিয়ে এখন শহরে এসে আবার নিজের কর্মস্থলে ব্যস্ততায় পড়ে গেছি। আশাকরি আস্তে আস্তে সব কিছু আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ইনশা-আল্লাহ।
দিনটি ছিল ২৯ শে রমজান, সকালবেলায় বাড়িতে টুকিটাকি কাজ করে বাড়ি থেকে বের হলাম দূরসম্পর্কের চাচাতো বোনের শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে। সাথে কাউকে নেই নাই, আমি একাই ছিলাম। কারন সে অনেক গরীব তাকে কিছু সহযোগিতা করতে হবে সেই আশা নিয়েই বাড়ি থেকে বের হওয়া। আমাদের বাড়ি থেকে মোটামুটি দশ থেকে বারো কিলোমিটার দূরে যেতে হবে। যেতে যেতে বেলা প্রায় বারোটা বেজে গেছে। তখন তাকে ফোন করলাম যে একটু বাড়ি থেকে বেরিয়ে আয়, দুপুর হয়ে গেছে আমার নামাজ পড়তে হবে। আমি বাড়িতে যাব না, সারাদিন রোজা রাখছি আর এখন বাড়িতে গিয়ে আর কি করব। চার-পাঁচবার ফোন করা হয়েছে তার কোন হদিস পাচ্ছিনা। আর সে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার কারণ হচ্ছে আমি যাতে তার ঘরে যাই।
অবশেষে মেইন রাস্তা ধরে আমি একটু সামনের দিকে হাটা শুরু করলাম। গ্রামটা খুব সুন্দর লাগছিল, কেন জানি মনে হচ্ছে সামনে হয়তো আরো সুন্দর কিছু অপেক্ষা করছে। তখন মন চাইলেও যে মোবাইলটা বের করে দুই একটা ফটোগ্রাফি করি। যতই সামনে যাচ্ছি আমার চোখটা কেন যেন ঝলমল করছে। মনে হচ্ছে আমি কোন শহরে প্রবেশ করছি। কেন জানি পাল্টে যাচ্ছে, যতই সামনের দিকে যাচ্ছি ততই সৌন্দর্য ভাড়ছে।
আমিও থেমে নেই, একপা দুপা করে এই রোদের মধ্যে হাটছি। তখন হঠাৎ দেখি একটি বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে একটা পুকুর। বাড়ির ভিতরে একটা বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে পরিবেশটা আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় লাগছে তাই ছবি তুলছি। মন বলছে না আরেকটু সামনে যেই,যেতেই দেখি বিশাল বড় প্রজেক্ট দেখে তো আমার চোখ কপালে উঠে গেল। অনেক অর্থ ব্যয় করে চতুর্পাশে রেলিং দিয়েছে এবং দারুন একটা মাছের প্রজেক্ট করেছে। তখন আমি অনুমান করলাম হয়তো কোনো প্রভাবশালী ধনী ব্যক্তির কাজ। তবে এ ভরদুপুরে আশেপাশে কাউকে দেখতে পেলাম না।
এপাশ-ওপাশ তাকাতেই চোখ কপালে উঠে গেল, মনে হলো আমি ঢাকা শহরের মধ্যে কোন আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়েছি। এত সুন্দর একটা রেস্টহাউজ চতুর্পাশে বাগান নিরিবিলি নির্জন কোন সাড়াশব্দ নেই অবাক হয়ে গেলাম। পরে আস্তে আস্তে খোঁজ নিতে লাগলাম যে এটা কার বাড়ি এই জায়গাগুলোর কার। ভাবছি এত সময় ধরে ঘুরছি নিজের মতো করে ছবি তুলছি কিন্তু আমার চাচাতো বোনের কোন হদিস নেই। তাই আমি নিজের আনন্দেই আরো কিছুক্ষণ সময় ব্যয় করছি ছবি তোলার জন্য। যতই সামনে যাচ্ছি ততই যেন সৌন্দর্য বেড়ে চলেছে।
সামনে হাঁটতে হাঁটতে ফটোগ্রাফি করছি আর ভাবছি এত বড় ধনী ব্যক্তি এ অজগায়ে কোথায় থেকে এলো আর নামটাই বা কি। তখন নিজের মনের মধ্যে কৌতুহলী জাগলো, জানা খুব প্রয়োজন কিন্তু জিজ্ঞেস করার মত কোন লোক আশেপাশে দেখতে পাচ্ছি না। তাই নিজেই নিজের সাথে জল্পনা-কল্পনায় কথাগুলো বলছি।
এটা মাছের প্রজেক্ট এর মেইনগেট এখানে একটা বৈঠক খানা তৈরি করা হয়েছে এবং খুব সুন্দর করে কারু কাজ করে এটা তৈরি করা হয়েছে। ছোট্ট একটা ঘরের মতো এখানে বসে হয়তোবা বড়শিতে মাছ ধরে। তখন আর বুঝতে বাকি রইলো না যে লোকটা মনে হয় অনেক সখিন এবং ধনাঢ্য ব্যক্তি, তার রুচি আছে বলতে হবে।
আচ্ছা আস্তে এক পা দু পা করে সামনের দিকেই চলেছি। ধীরে ধীরে মনে হচ্ছে আমি কোন অজানা শহরে এসে পড়েছি। তখন কেন যেন হঠাৎ করে মনের ভিতর একটু ভয়ও হচ্ছে। যদি কোনো নির্দিষ্ট এলাকা থাকে যে এর ভিতরে বা বাইরে যাওয়া যাবে না। মনে হাজারো জল্পনা নিয়ে সামনে এগোচ্ছি। ইচ্ছে করছে ছবি তুলছি, অজগায়ে রাস্তা বলে কথা আঁকাবাঁকা পথ, টানিং অনেক বেশি। কিন্তু এটা গায়ের রাস্তা বলে আমার মনে হচ্ছে না। আমি জানিনা আমার বন্ধুরা এবার কি ভাবছেন।
হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে নাম না জানা ওই ধনী ব্যক্তির বাড়ির গেটের সামনে এসে পড়লাম। তখন এই ভর দুপুরে কড়া আর তাপদাহে মধ্যে একটা সেলফি নিলাম। কিন্তু মোবাইলের ক্যামেরার দিকে অথবা আকাশের দিকে তাকানো প্রায় আমার জন্য অসম্ভব। এতটাই রোদের তাপ যা সহ্য করা খুব কঠিন। আমার ঘামে পুরো শরীর ভিজে আছে। তবুও চোখের সৌন্দর্য বলে কথা, সুন্দর্য উপভোগ করা প্রত্যেকটা মানুষেরই কৃষ্ণ বটে।
অবশেষে দেখতে পেলাম নাম-না-জানা ওই দনির রাজপ্রসাদ। বিশাল বাগান বাড়িতে দেখতে, খুবই সুন্দর চারদিকে সবুজ আর সবুজ, মাঠ উঠোন জুড়ে শুধু সবুজ ঘাস। একটা পশু পাখি ও নেই উঠানে। তখন নিজেও চিন্তা করছি এত বড় বাড়ি এত বড় মাছের প্রজেক্ট, খামারবাড়ি শত্যি আশ্চর্যজনক। আমাকে মুগ্ধ করে দিয়েছে, এতটাই মুগ্ধ হয়েছি যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আসলে কিছু কিছু অঞ্চলে গোবরে পদ্মফুল ফুটে থাকে। কিন্তু আমরা জানি না যে আসলে গোবরে পদ্মফুল হয়। পরিশেষে জানতে পারলাম নাম সালাউদ্দিন একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। আমাদের কুমিল্লা জেলা নাঙ্গলকোট থানার আওতাধীন। তবে এইটা আমাদেরই একই থানা অন্য একটা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত।
এতটাই তীব্র রোদ এবং গরম পরছে যে আমার টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। তখন আবার পুনরায় পিছনের দিকে হাটা শুরু করলাম এবং ছোট বোনকে ফোন দিতে শুরু করলাম। অবশেষে সে আসলো তার সাথে দেখা হলো। আর ওই ধনী ব্যক্তির নামটা অবশ্য বোন থেকেই জানতে পেরেছি। বোনের দুর সম্পর্কের ভাসুর হয়। তাঁকে বেশ কিছু টাকা দিয়ে আমি আমার গন্তব্য স্থলে ফিরে যাব। তবে বোন অনেক রিকোয়েস্ট করেছে থাকার জন্য, তবে আমার পক্ষে থাকা সম্ভব না। আমি আবার ফিরে আসলাম। কারন আমার সমাজের মসজিদে ইফতার মাহফিলের আয়োজন ছিল এবং সেখানে আমি একজন দাওয়াতি মেহমান ছিলাম। সে গল্প আপনাদের সাথে আরেক দিন শেয়ার করব, আজকে এই পর্যন্তই।
বন্ধুরা কেমন লেগেছে অজগায়ে এক টুকরো শহরের গল্প। আশা করি সকলেরই ভালো লাগবে। ভাল মন্দ কমেন্টে জানাবেন, সাপোর্ট দিয়ে পাশে থাকবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
গ্রামাঞ্চলে এরকম আলিশান বাড়ি সাধারণত দেখা যায় না। সবাইতো শহরে বাড়ি করা নিয়েই ব্যস্ত।
কিন্তু যাদের অর্ধেক সম্পত্তি আছে তারা তাদের গ্রামে এরকম আকর্ষণীয় বাড়ি করতেই পারে। বছরে একদিন হলেও তো গ্রামে যাওয়া হয়।
জানিনা এই ব্যক্তি কি উদ্দেশ্যে আলিশান বাড়ি বানিয়েছে । তবে আমার কাছে খুব ভালো লাগলো ব্যাপারটা।
একটা মানুষের একেক রকম স্বাধ হয়, তাই হয়তো তৈরি করেছেন। মন্তব্য করার জন্য শুভেচ্ছা রইল।
আসলে গোবরে পদ্মফুল ফোঁটে কথাটি একটা কথার কথা মাত্র। তবে সেটা বাস্তবে কখনো দেখিনি। অজ পাড়াগাঁয়ে এত চমৎকার বাগানবাড়ি আসলে সেরকম একটা ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। আপনার গল্পটি খুবই মনোযোগ দিয়ে পড়লাম বেশ ভালো লেগেছে। তবে বুঝতে পারলাম আপনি খুব দিল দরদি মানুষ। হয়তো আরো অনেককে এইভাবে সহযোগিতা করেছেন। আসলেই সহযোগিতা করার মাধ্যমে অনেক প্রশান্তি পাওয়া যায়। আত্মীয়-স্বজন গরীব হলেও সামান্য কিছু সহযোগিতা তাদের মুখের হাসি দেখতে অনেক ভালো লাগে। সবাই যদি এভাবে গরিব আত্মীয়-স্বজনের পাশে থাকতো তাহলে হয়তো এই মধ্যবিত্ত গরিব আত্মীয়-স্বজন গুলো খুব একটা কষ্ট পেত না। যাই হোক ভালো লেগেছে দোয়া রইল। পরবর্তী ইফতার পার্টির দাওয়াত এর গল্প শোনার অপেক্ষায় রইলাম।
আপনি বরাবরই আমাকে খুব উৎসাহ দিয়ে থাকেন। আর আপনার এই উৎসাহ গুলো আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে অনেক সহযোগিতা করে। এবং নতুন কিছু করতেও ভাবায়। আপনি ঠিকই বলেছেন আমাদের সবারই উচিত প্রত্যেকে প্রত্যেকের পাশে বিপদে দাঁড়ানো। তবে সাধ থাকলেও অনেক সময় স্বাধ্যে থাকেনা। যাইহোক আপনার এত প্রশংসার জন্য আপনার প্রতি রইল ভালোবাসা অবিরাম।
আসলে গ্রাম অঞ্চল এত সুন্দর রেস্ট হাউজ খামারবাড়ি দেখলে সবারই ভাল লাগবে। তবে আপনি এই খামারবাড়িতে কেন্দ্র করে দারুন অনুভুতি গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আমাদের দেশে এখনও অনেক সুখী মানুষ আছে যারা শখ করে আনন্দ মিটানোর জন্য অনেক সুন্দর আকর্ষনীয় বাড়িঘর করে থাকে। এত সুন্দর বাড়িঘর করে উদ্দেশ্য হচ্ছে নিরব প্রকৃতিতে বসবাস করা। যাইহোক আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর ভাবে বিস্তারিত বিষয় গুলো আমাদের মাঝে তত্ত্ব রোদের মধ্য দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তোলা ছবি বর্ণনা করার জন্য।
আসলে আপু ঠিকই বলেছেন। তবে আমার এলাকায় আলিশান বড় বড় বাড়ি আছে। আমাদের নিজেদের বাড়িতে আছে। তবে আমি যেখানে গিয়েছিলাম সেখানে দরিদ্র মানুষ বেশি। এবং কৃষক একটু বেশি একেবারেই গ্রাম অঞ্চল, তাই আমার কাছে একটু বেশি অবাক লেগেছিল।তাই আপনাদের মাঝে শেয়ার করা। আর আপনার কাছে ভালো লেগেছে আপনি খুব সুন্দর করে আপনার মনের ভাবগুলো শেয়ার করেছেন। আপনার প্রতি রইল ভালোবাসা অবিরাম।
ভাই লেখনীর সাথে ফটোগ্রাফি গুলো সেই জমে গিয়েছে, আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে, অনেকদিন পর আপনার পোস্ট দেখতে পেলাম, আর ভাই আপনার বাসা কোথায় আমার জানতে চায় মন, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
ভাই আপনার কাছে ভাল লেগেছে জেনে খুবই আনন্দ অনুভব করছি। আমার বাসা হচ্ছে যাত্রাবাড়ী, আর হোম ডিসটিক হচ্ছে কুমিল্লা। নাঙ্গলকোট থানার অন্তর্ভুক্ত। সত্যিই আপনি আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ। আপনার কাছ থেকে প্রশংসা পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। আপনার জন্য রইল ভালোবাসা অবিরাম।
ভালোবাসা অবিরাম প্রিয় ভাই
অনেক ভালো লাগলো আপনার গল্পটি পড়ে। এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়ে গেল। বোনকেউ সাহায্য করা হলো সেই সঙ্গে পোষ্টের জন্য দারুন একটি গল্প তৈরি হয়ে গেল। আমাদের দেশে এমন অসংখ্য ধনী আছে যারা শহরের বাইরে এমন গ্রামীণ নিরিবিলি পরিবেশে নিজেদের বাগান বাড়ি তৈরি করে। যা দেখলে সত্যিই মনে ঈর্ষা জাগে। তবে বেশি ভালো লাগলো গরিব বোনের প্রতি আপনার ভালোবাসা দেখে। ধন্যবাদ ভাই
হ্যাঁ ভাইয়া আপনি ঠিকই বলেছেন, ধনী ব্যক্তিরা প্রায় জায়গায় বাগান বাড়ি তৈরি করে। আর সাহায্যের কথা বললেন, আসলে আমরা প্রত্যেকে মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো খুবই জরুরী। তাহলে মনুষ্যত্ব বেঁচে থাকবে মানুষের মাঝে। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
আপনি দারুন করে ঈদের ছুটি উপভোগ করেছেন।গ্রামীন পরিবেশে শহরের এমন আগমন নিশ্চয়ই দারুন ভাবিয়ে তোলে।মাছের প্রজেক্টের এমন বিলাসিতায় ভবন হয়তো আগে দেখা হয় নাই।
হুম ঠিক তাই ভাইয়া। মন্তব্য করে সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।