আমার বাংলা ব্লগ। আমার কর্মক্ষেত্রের কিছু অনুভূতি। ১০% পে-আউট লাজুক খ্যাক এর জন্য।
কথা না বাড়িয়ে চলুন যাওয়া যাক মূল পর্বে।
ফটোগ্রাফি - ১
![]() |
---|
শুরুতেই একটা সেলফি না দিলে কেমন যানি ফাঁকা ফাঁকা লাগে ব্লগটি, তাই আমি একটা সেলফি নিলাম। এটা হচ্ছে আমার মিলের প্রোডাকশনের ফিনিশিং সাইট। যেটাকে আমরা কুলিংবেড বলি। আমি একে একে আপনাদের সাথে আমার মিলের কিছু অংশের ফটোগ্রাফি শেয়ার করছি।
রোলিং মিল নিয়ে কিছু কথা।
বন্ধুরা আপনারা সবাই কমবেশি জানেন আমি একটা জব করি এবং আমি এর আগে মোটামুটি আমার অনেক বন্ধুর সাথে কথা হয়েছে যে আমি একজন টেকনিশিয়ান। সেই সুবাদে আমি আজকে আবারো বলছি আমি একজন রোলিং মিলের সিনিয়র টেকনিশিয়ান এর ফোরম্যান। আমার চাকরি জীবনের প্রায় ২০ বছর প্লাস হয়ে গেছে। এ ২০ বছর চাকরি জীবনে আমার অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে যা কল্পনার বাহিরে। আমার শরীরের প্রতিটা অংশে গরম লোহার পোড়া ক্ষত দাগ আছে যা না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। আমি আর সেদিকে যাচ্ছিনা অন্য প্রসঙ্গে বলছি।
একটা কথা না বললেই নয় আমি আমার বাংলা ব্লগে যখন কাজ শুরু করি তখন আমার মিলের সম্পর্কে অনেকগুলো পোস্ট করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমি পোস্টগুলোতে কোনো সাপোর্ট পাইনি। হয়তো আমি ভালোভাবে ব্লগগুলো লিখতে পারেনি বা উপস্থাপন করতে পারেনি। সেটা নিয়ে আমি আফসোস করি না। তখনও আমার একটা ইচ্ছে ছিল যে একসময় না একসময় আমি ঠিকই পারব।
ফটোগ্রাফি - ২
![]() |
---|
এটা হচ্ছে রিহিডিং ফার্নেস। এখানে রোলিং মিলে যে লোহা দিয়ে রড বানানো হয় সে লোহাগুলো হিট করা হয়। আর এই লোহাগুলো টেম্পারেচার থাকে ১১৫০ থেকে ১২৮০ পর্যন্ত। আর এখান থেকে ব্লেড হিট করার পরে মিলে দিকে ট্র্যান্সফার করা হয়।
শীত কালীন সময়ে রোলিং মিলের চাকরির মজাটাই আলাদা। যার কারণ হচ্ছে বাইরে যতই শীতের পড়োক না কেন ভিতরে গরমের শেষ নেই। মিলের ভিতরে প্রবেশ করলেই যখন মিলটা চালু হয় তখন খুবি পাতলা একটা টি-শার্ট হলেই যথেষ্ট কারণ অতিরিক্ত গরম। লোহার তাপমাত্রা প্রায় ১২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস , এই গরমের মধ্যে শীতের কাপড় গায়ে রাখা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
ফটোগ্রাফি - ৩
![]() |
---|
এটা হচ্ছে আমার মিলের প্রথমে এস্টেন্ড। আরে এইটার নাম হচ্ছে রাপিং মিল। এখানে আপনারা লাল এবং হলুদ বর্ণের যা দেখতে পাচ্ছেন এটি আর কিছুই নয়। এটা হচ্ছে উত্তপ্ত লোহার টুকরা। যেগুলো অটোতে চলে এবং পাশে যে মানুষগুলো দাঁড়িয়ে আছে বসে আছে, এখানে যদি কোন লোহার টুকরো ফেঁসে যায় তখন ওদের কাজ হচ্ছে এগুলো ছাড়িয়ে দেওয়া।
রোলিং মিলে যারা চাকরি করে তাদের আসার সময় টা সঠিক টাইম বলতে পারে কিন্তু যাওয়ার সময় এর কোন ঠিক নেই। কখন রাত গেল কখন সন্ধ্যা হলো টের পাওয়া খুবই মুশকিল। কারণ টেকনিকেল কাজ গুলো এমনই হয়। এবং অনেক কষ্টে আমার কর্মজীবনের শুরুতে, আমি যখন কাজ শুরু করেছিলাম তখন আমি কখনও কল্পনাও করিনি যে আমি রোলিং মিলে চাকরি করতে পারবো। এ দীর্ঘ সময় আমি পাড়ি দিয়ে অনেক দিন ধরে চাকরি করছি এবং সফল হয়েছি।
ফটোগ্রাফি - ৪
![]() |
---|
![]() |
---|
এগুলো হচ্ছে রোলিং মিলের রিপিটার। এই গুলোতে মাল টুইষ্টারের সাহায্যে অটোতে ঘুরে যায়। এবং কি লুফিং হয়ে এগুলো বাইরের দিকে প্রসারিত হতে থাকে এবং অন্যদিকে আবার অন্য এস্টেন্ডে ট্রান্সফার হতে থাকে।
গরম কালে রোলিং মিলে চাকরি এত কষ্টকর যা কল্পনা করা যায় না। একেতো বাহির থেকে সূর্যের রোদের তাপ, তার মধ্যে মিলের ভিতরে লোহার উত্তপ্ত গরম সারাদিন শরীরে ঘাম পড়ে। আর রুলিং মিলে যারা কাজ করে তাদের রক্তচোষা পরিশ্রমের টাকা ইনকাম করে। এত পরিশ্রমের পরেও সবার মুখে হাসি খুশি শেষ নেই। আমি মনে করি সারাবিশ্বে অন্যান্য কর্মক্ষেত্রের তুলনায় রোলিং মিলে কর্মক্ষেত্র কষ্টের একটা জায়গা। যেখানে সবাই চাকরি করতে পারে না। এবং সবাই টিকে থাকতে পারে না। যদি ১০০ জন লোক নিয়োগ দেওয়া হয় তার মধ্যে চার পাঁচজন টিকে তাহলে বুঝতেই পারছেন রোলিং মিল কর্মক্ষেত্র টি কত কষ্টের।
ফটোগ্রাফি - ৫
![]() |
---|
এটা হচ্ছে আমার বিলের মধ্য অংশ। এটাকে আমরা কন্টিনিউস নীল বলি। আর এই মিলটি সম্পুর্ন সোজা। আমরা এটাকে কনটিনিউস মিল বলি।
ফটোগ্রাফি - ৬
![]() |
---|
এটা হচ্ছে কুলিং বেড বলি। যেখানে রডগুলো ফিনিশিং হয় লাস্ট এস্টেপে এসে পড়ে। এখান থেকে মাল গুলো ধরে ধরে ওরা সোজা করে রাখে। সবগুলো মাল এখানে এস্টেট বা সোজা করে সাজানো থাকে এ কারণে আমরা এটাকে কুলিং বেড বলি। আর যে বক্সটি দেখতে পাচ্ছেন ওটাকে বলে টুইন চ্যানেল।
ফটোগ্রাফি - ৭
![]() |
---|
এখানে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন আমি আমার মিলের উত্তপ্ত লোহার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। চোখ খুলতে পারতেছি না এত তাপমাত্রা। তবুও আপনাদের দেখানোর জন্য একটা সেলফি নিলাম। এটা জনসাধারনের হস্যের বাইরে। চাইলে কেউ এই তাপমাত্রা হস্য করতে পারবে না। শরীরের চামড়া পুড়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। আরে লোহার টুকরো গুলো যদি মানুষের শরীরের সাথে লাগে মানুষের শরীর মোমের মতো গলে যায় অর্থাৎ আমরা যেটাকে বলি পুড়ে গেছে।
আমি আমার মিলের কিছু ফটোগ্রাফি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। এবং আমার মিল সম্পর্কে মোটামুটি কিছু ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। আপনাদের সার্পোট পেলে আমি আমার মিলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে আলোচনা করব, এবং আপনাদের সামনে তুলে ধরব। আশাকরি ভালো মন্দ কমেন্টে জানাবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
চারপাশে উত্তপ্ত লোহা গুলো দেখে কেন জানি ভয় লাগছে আমার। এখানে শ্রমিকরা কত পরিশ্রম করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে এটা ভেবে কষ্ট পাচ্ছি। আমাদের বাস্তব জীবন বড়ই কঠিন। জীবনে চলার পথে অর্থের প্রয়োজন। এমনও মানুষ রয়েছে যারা শীতকাল গরমকাল সবকিছু উপেক্ষা করে উত্তপ্ত লোহার সাথেই কাজ করে যাচ্ছে। গরমের মধ্যে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয় শ্রমিকদের। আপনার পোস্টটি পড়ার পর আপনাকে কি মন্তব্য করব সেটা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি ভাইয়া। কেন জানি মনের কোনে কষ্টের অনুভূতি হচ্ছে। ভাইয়া আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আপনার কমেন্টটি পড়ে এবং কি আপনার আবেগ জড়ানো কথাগুলো শুনে আমার চোখে পানি চলে এসেছে। আসলে আমাদের যারা লোহার জগতে বিশেষ করে রোলিং মিলে চাকরি করি তাদের কষ্টের সীমানেই। এবং কি তাদের প্রতিটা পয়সা তাদের রক্তের বিনিময়ে আয় করা। যাইহোক আপনি বুঝতে পেরেছেন এটা জেনে নিজের কাছে খুবই ভালো লাগছে। আপনার জন্য ভালোবাসা অবিরাম আপু।
আপনি ভাইয়া আপনার কর্মক্ষেত্রের অনেক সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করেছেন যদিও আমার কোন ধারনা ছিলোনা তবে আপনার পোস্ট পড়ে বুঝতে পারলাম অনেক কঠিন এবং কষ্টের কাজ। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো
আপনার এই বুঝতে পারার মাঝে আনন্দ খুঁজে পেয়েছি। এবং আপনি অনেক সুন্দর করে লিখেছেন। আমি আপনাকে জানাতে পেরেছি এটাই আমার সার্থকতা। আপনার জন্য ভালোবাসা অবিরাম ভাইয়া।
ভাইয়া, আপনার কাজটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।তাছাড়া আপনি খুবই পরিশ্রমী একজন মানুষ।আপনার চাকরি জীবন 20 বছর হয়ে গেছে ।সেক্ষেত্রে আপনি আমাদের চেয়ে অনেক সিনিয়র।আপনার কাজের প্রতি সম্মান রইলো।ধন্যবাদ ও শুভকামনা ভাইয়া।
আরে আপনি সিনিয়র বলছেন কেন সবেতো মাত্র 26 ছলে আপনার সমবয়সীই হবো, হাহাহা। আপনার কমেন্ট পড়ে খুবই ভালো লেগেছে। আপনি বুঝতে পেরেছেন কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ হ্যাঁ একশভাগ সত্য। এবং আপনার প্রতি রইল গবির ভালোবাসা।
ভাইয়া আপনার লেখার ভিত্তিতে বলেছি।কিন্তু আপনি 6 বছর বয়স থেকে চাকরি করছেন জানা ছিল না।আপনার 26 হলে ও সেটাকে সিনিয়র বলা চলে,আমার তো সবে 18+.সেক্ষেত্রে কখনোই সমবয়সী নই।
রি-রুলিং মিলের, সাথে জীবনকে উপভোগ করতে পেরেছেন।আসলে এটা সবার দ্বারা সম্ভব হয়না।আপনি সুস্থ থেকে কাজ করুন,এই কামনা করছি।
আপনার মন্তব্যটি যদিও অনেক ছোট তবেই আপনি অনেক কিছু বুঝিয়েছেন। আপনার গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
🌹